৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ তারিখে অ্যাডিলেডের পার্কসাইড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

স্টার্ট ক্লাবের পক্ষে ১৯১৫ থেকে ১৯২৭ সালের মধ্যে ১১৪ খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। এ সময়ে ক্লাব ও রাজ্য দল – উভয়টির পক্ষে অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। দুইবার স্টার্টের সেরা ও খেলোয়াড়ীসূলভ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯১৫, ১৯১৯ ও ১৯২৬ সালের প্রিমিয়ারশীপ দলের সদস্য ছিলেন। ১৯২০ সালে সাউথ অ্যাডিলেডের মাগারি পদক লাভে ড্যান মোরিয়ার্টির পর রানার-আপ হন। উভয়েই সমানসংখ্যক ভোট পেলে লীগ আম্পায়ারদের ভোটে দ্বিতীয় হন। ১৯৯৮ সালে এসএএনএফএল পুরস্কারে ভূষিত হন। খেলোয়াড় হিসেবে তিনি বেশ ঠাণ্ডা মেজাজের অধিকারী ছিলেন। বুদ্ধিমত্তা সহযোগে নিখুঁত পাসে নিজেকে মূল্যবান খেলোয়াড়ে পরিণত করেছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের অধিকাংশ সময়ই সেন্টারম্যান অবস্থানে খেলেছেন।

হিসাবরক্ষক ভ্যালেন্টাইন ইয়াক্সলি রিচার্ডস ও মাতা রেবেকা মেরি দম্পতির সন্তান ছিলেন। কায়ার কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। রাজ্যের সরকারী চাকুরীজীবি ছিলেন। সাপ্তাহিক ছুটিতে বিশেষতঃ শনিবারের দিনগুলোয় একগুচ্ছ ক্রীড়ায় অংশ নিতেন। ১৯১৮-১৯ মৌসুম থেকে ১৯৩৭-৩৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯২৪ থেকে ১৯৩৬ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ১৯ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯২৪-২৫ মৌসুমে নিজ দেশে আর্থার জিলিগানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১৯ ডিসেম্বর, ১৯২৪ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। আর্থার রিচার্ডসন ও বিল পন্সফোর্ডের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৪২ ও ১৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ১৯৩ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে কিছুটা দেরীতে ২৪ বছর বয়সে খেলার সুযোগ ঘটে। তবে, ১৯১৯ সালের দিকে রাজ্য পর্যায়ের ক্রিকেটে খেলা শুরু করেন। ১৯২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয়সারির দলের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন ও নিউজিল্যান্ড গমন করেন।

১৯২৮ সালে নিউজিল্যান্ড ও ১৯৩৫-৩৬ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। তন্মধ্যে, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেই অধিনায়ক হিসেবে সফল ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল না হলেও অস্ট্রেলিয়া দল ঐ সিরিজে ৪-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে। ১৯৩০ সালসহ ১৯৩২ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত দলের সহঃঅধিনায়ক হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। এছাড়াও, সাউথ অস্ট্রেলিয়া দলের নেতৃত্বে ছিলেন।

১৯৩৫-৩৬ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে অজি দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। ৯ উইকেটে জয়লাভ করলে সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৬ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৪৫ রান সংগ্রহসহ ছয়টি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। সফরকারীরা ইনিংস ও ৬ রানে জয়লাভ করলে ৪-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

অংশগ্রহণকৃত টেস্টগুলো থেকে এক শতক সহযোগে ৭০৬ রান তুলেছিলেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ২৭টি শতরান সহযোগে ৩৭.৬৩ গড়ে ১০৭২৭ রান সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৮ উইকেট দখল করেছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বহুমূখী ক্রীড়াবিদ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছেন। তবে, ক্রিকেট খেলার দিকেই তিনি অধিক মনোযোগী ছিলেন। প্রতিভাবান অস্ট্রেলীয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও ডন ব্র্যাডম্যানের সাথে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখেননি। নিজ রাজ্য দলসহ অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন ফুটবলার হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন। এ দুইটি প্রধান খেলায় অংশগ্রহণ ছাড়াও বেসবল ও ল্যাক্রোজে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, জিমন্যাস্টিক্স, সাঁতার, টেনিস, বাস্কেটবলসহ রাজ্য পর্যায়ে গল্ফে অংশ নিয়েছিলেন। ক্রিকেটার পরিচয়ের বাইরে গণমাধ্যম কর্মী, লেখক, চাকুরীজীবি, বিক্রয়কর্মী, ধারাভাষ্যকারসহ আরও অনেকগুলো পেশায় জড়িত ছিলেন।

১৯৫৪ সালে রাণীর জন্মদিনের সম্মাননায় ক্রিকেটে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ওবিই পদবীতে ভূষিত হন। অ্যাডিলেড ওভালের ফটক তাঁর সম্মানার্থে নামকরণ করা হয়। ‘দ্য ভিক্টর রিচার্ডসন স্টোরি’ শীর্ষক গ্রন্থে আর. এস. হুইটিংটনের সাথে যৌথ লেখকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ভিডা যোভনি নাপমান নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির তিন কন্যা ও এক পুত্র ছিল। তাঁর নাতি ইয়ান চ্যাপেল, গ্রেগ চ্যাপেলট্রেভর চ্যাপেল অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পরবর্তীকালে তিনি পেগি প্যাট্রিসিয়া চান্ডলার নাম্নী বিধবা ও সেবিকাকে বিয়ে করেন। এ সংসারে কোন সন্তানাদি ছিল না। টেলিভিশনে খেলা দেখাকালীন ৩০ অক্টোবর, ১৯৬৯ তারিখে ৭৫ বছর ৫৩ দিন বয়সে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার ফুলারটনের নিজ গৃহে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • |

    জ্যাক হবস

    ১৬ ডিসেম্বর, ১৮৮২ তারিখে কেমব্রিজে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। ইংরেজ ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান ছিলেন। প্রথম পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে ১৯৫৩ সালে নাইট উপাধীতে ভূষিত হয়েছিলেন। প্রায় ত্রিশ বছর পেশাদারী পর্যায়ে ক্রিকেট খেলেছেন। হার্বার্ট সাটক্লিফ ও লেন হাটনের সাথে তাঁকেও বৈশ্বিকভাবে সেরা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের মর্যাদা দেয়া হয়। ‘দ্য মাস্টার’ নামে পরিচিত ছিলেন। দীর্ঘ খেলোয়াড়ী জীবনে…

  • | | |

    ইমরান খান

    ৫ অক্টোবর, ১৯৫২ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, প্রশাসক, তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রধান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। মূখ্যতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্ণাঢ্যময় চরিত্রের অধিকারী। পাকিস্তানী ক্রিকেটে প্রধান পটপরিবর্তনকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। পাকিস্তানের ক্রিকেটকে আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হৃদপিণ্ডতুল্য ভূমিকা…

  • |

    সেলিম ইউসুফ

    ৭ ডিসেম্বর, ১৯৫৯ তারিখে সিন্ধু প্রদেশের করাচীতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। পাকিস্তানের পক্ষে টেস্ট ও ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭৮-৭৯ মৌসুম থেকে ১৯৯৬-৯৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে অ্যালাইড ব্যাংক, পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, পাকিস্তান কাস্টমস ও সিন্ধুর…

  • |

    মধুসূদন রেগে

    ১৮ মার্চ, ১৯২৪ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পানভেলে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৪০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৪৪-৪৫ মৌসুম থেকে ১৯৫৪-৫৫ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। একগুঁয়েমিপূর্ণ মনোভাব…

  • | | | | |

    অজিত ওয়াড়েকর

    ১ এপ্রিল, ১৯৪১ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ, রেফারি ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে মিডিয়াম কিংবা স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। লিকলিকে গড়নের অধিকারী হলেও বলে সপাটে আঘাত করতে পারতেন। নিজস্ব ব্যাটিং কৌশল গ্রহণে অগ্রসর…

  • |

    শার্ল উইলোবি

    ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭৪ তারিখে কেপ প্রভিন্সের কেপটাউনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ২০০০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ওয়েনবার্গ বয়েজ হাই স্কুলে অধ্যয়ন শেষে স্টেলেনবশ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো করেন। সেন্ট জেমস প্লেস ওয়েলথ ম্যানেজম্যান্ট একাডেমি থেকে স্নাতক লাভ করেন। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম থেকে…