Skip to content

স্যামি গুইলেন

1 min read

২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯২৪ তারিখে ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিং করতেন তিনি। ১৯৫০-এর দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

‘স্যামি’ ডাকনামে পরিচিত ছিলেন। চরম উত্থান-পতনে ঘেরা জীবন অতিবাহিত করলেও সর্বদাই সৎভাবে জীবনযাপন করতেন। ১৯৪৮ সালে ত্রিনিদাদ বনাম এমসিসি’র মধ্যকার খেলায় ‘স্যাম’ ডাকনাম লাভ করেন। গভর্নমেন্ট হাউজে চাপানের আসর বসে ও মি. স্যামসন জুলিয়ান নামে পরিচিতি ঘটানো হলে উভয় দলেই হাসির খোড়াক জোগায়। একমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ড – এ দুই দলের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, মাত্র ১৪জন ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে দুই দেশের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেন।

১৯৪৭-৪৮ মৌসুম থেকে ১৯৬০-৬১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারির প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৫১ থেকে ১৯৫৬ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আটটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। তন্মধ্যে, ১৯৫১-৫২ মৌসুম ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে পাঁচটি ও নিউজিল্যান্ডে বসবাস করার চার বছর পর নিউজিল্যান্ডের সদস্যরূপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাদ-বাকী তিনটি টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন।

১৯৫১-৫২ মৌসুমে জন গডার্ডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গমনার্থে ছয় মাসের সফরে বের হন। এ সফরের মাধ্যমেই তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের মোড় ঘুরে যায়। ২২ ডিসেম্বর, ১৯৫১ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সদস্যরূপে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ৬ উইকেটে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। এ সফর শেষ হবার পরপরই দলটি নিউজিল্যান্ডে দুই-টেস্টের সিরিজে অংশ নেয়।

একই মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে ল্যাঙ্কাস্টার পার্কে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ২৩ রানে পৌঁছানোকালে পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে পরাভূত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে নিজ দেশে ডেনিস অ্যাটকিনসনের নেতৃত্বাধীন স্বীয় মাতৃভূমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হন। প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট খেলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ১৫ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৬৪ রানে পরাভূত হলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

একই সফরের ৯ মার্চ, ১৯৫৬ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৬ ও ৪১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ ও একটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। অন্যতম স্বর্ণালী মুহূর্তে থেকে শেষ টেস্টে ভূমিকা রাখেন। আল্ফ ভ্যালেন্টাইনকে স্ট্যাম্পিং করে ২৬ বছর ও ৪৫ টেস্টে অংশ নেয়ার পর নিউজিল্যান্ডের প্রথম টেস্ট বিজয়ে অনবদ্য অবদান রাখেন। খেলায় তাঁর দল ১৯০ রানে জয় পেলেও ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। এ খেলার পরপরই অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।

ক্রাইস্টচার্চে প্রথম টেস্টে অংশ নিয়ে সামান্য ভূমিকা পালন করলেও তিনি এখানেই তাঁর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা দেখতে পান। মরিস কুকসন নামীয় স্থানীয় বাসিন্দার সাথে সৌজন্য স্বাক্ষাতে মিলিত হন ও পরবর্তীতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। দেশে ফেরার পূর্বক্ষণে তিনি বন্ধুকে নিউজিল্যান্ডকে ভালোবাসার কথা জানান এবং তিনি এখানে বসবাসের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন।

১৯৫২ সালের শেষদিকে নিউজিল্যান্ডে ফিরে আসেন ও সেখানেই মৃত্যুপূর্ব পর্যন্ত বসবাস করেন। ক্রাইস্টচার্চে চাকুরী করেন ও ওয়েস্ট ক্রাইস্টচার্চ ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দেন। ১৯৫৩ সালে সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় ও ধনী মহিলা ভালমাই বার্গের সাথে পরিচিত হন। পরবর্তীতে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তাঁদের সংসারে চার সন্তান ছিল। নয় বছর পর পরিবারের সাথে অর্ধাঙ্গীনিকে পরিচয় করাতে ত্রিনিদাদে ফিরে আসেন। এক বছর অবস্থানের কথা বললেও তিনি দেড় বছর ছিলেন ও সাবেক কুইন্স পার্ক ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলেন। ১৯৫৬ সালে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট অ্যালমেনাক কর্তৃক বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ২০০৫ সালে স্বীয় জীবনকে ঘিরে ‘দ্য স্যাম গুইলেন স্টোরি: ক্যালিপ্সো কিউই’ শীর্ষক গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এ গ্রন্থে ক্রিকেট, তাঁর ভালোবাসা ও জীবনের দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ১ মার্চ, ২০১৩ তারিখে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে ৮৮ বছর ১৫৮ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।