| |

জাহাঙ্গীর খান

১ ফেব্রুয়ারি, ১৯১০ তারিখে তৎকালীন পাঞ্জাব প্রদেশের জলন্ধরের বাস্তি গুজান এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৩০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

দ্রুততর বোলিং করতেন ও বলে পর্যাপ্ত পেস আনয়ণে সক্ষমতা দেখিয়েছেন। মোহাম্মদ নিসারঅমর সিংয়ের যোগ্য সহচর ছিলেন। এছাড়াও, ক্রিকেট খেলা চলাকালীন চড়ুইকে মেরেছিলেন। ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের সূচনাপর্বে প্রধান অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে ভারতের প্রথম দুই সফরে তাঁদের সমপর্যায়ের না হলেও সন্দেহাতীতভাবে গুণমানসম্পন্ন অল-রাউন্ডার ছিলেন। কিন্তু প্রায়শঃই তাঁকে উপেক্ষিত হতে হয়েছিল।

ছোটখাটো গড়ন ও মোটাসোটা ছিলেন। তাঁরা একত্রে মাঠে নামলে স্থানীয় ইংরেজদের বিভ্রান্তি পড়তে হতো যে কোন খেলোয়াড় দলের ফাস্ট বোলার। গতিশীলতা না থাকলে প্রায়শঃই দ্রুত বোলিং করতেন। মিতব্যয়ী বোলিং করতেন। পেসে ভিন্নতা আনতেন ও সময়ে সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে দ্রুততর বল ফেলতেন। অসম্ভব দম ও নিখুঁত ভাব বজায় রেখে ফাস্ট বোলারদের উপযোগী করে তুলেন। এছাড়াও, বলকে সজোরে আঘাত করতেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৪ শতক সহযোগে ২২.৩২ গড়ে ৩৩২৭ রান তুলেন। বল হাতে নিয়ে বারোবার পাঁচ-উইকেট ও দুইবার দশ উইকেটের সন্ধান পান। ২৫.৩৪ গড়ে ৩২৮ উইকেট দখল করেছিলেন তিনি।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার সাথে জড়িত ক্রিকেটপ্রেমী পরিবারে জন্ম। কোয়াড্রাঙ্গুলার প্রতিযোগিতায় মুসলিম দলের সদস্য ও ১৯১১ সালে ভারতীয় একাদশের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যাওয়া খান সালাম-উদ-দীনের ভ্রাতৃষ্পুত্র তিনি। সালাম-উদ-দীনের পুত্র মাসুদ সালাহউদ্দীন তাঁর তুলনায় পাঁচ বছরের ছোট ছিলেন। উভয়েই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে মানসম্পন্ন ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার ছিলেন।

১৯২৮-২৯ মৌসুম থেকে ১৯৫১-৫২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মুসলিম, নর্দার্ন ইন্ডিয়া, পাঞ্জাব ও সাউদার্ন পাঞ্জাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে খেলেছেন। ১৯২৮-২৯ মৌসুমে লাহোর প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েই তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলেন। হিন্দু দলের বিপক্ষে ১০৮ এবং ২/২৫ ও ৭/৪২ পান। খেলায় তাঁর দল ইনিংস ব্যবধানে জয় পায়। তিনদিন পর আবারও ইউরোপিয়ান্স দলের বিপক্ষে সাফল্য পান। ৬/৪৯ ও ৪/৪৮ পান। দুই খেলা থেকে ১৯ উইকেট ও একটি শতরানের ইনিংস খেলে আকস্মিকভাবে স্বীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। পরের মৌসুমে একই প্রতিযোগিতায় ইউরোপিয়ান্সের বিপক্ষে ৮/৩৩ নিয়ে ব্যক্তিগত সেরা সাফল্যের সন্ধান পান। মোহাম্মদ নিসারকে পাশ কাটিয়ে মুসলিম দলের প্রধান বোলারে পরিণত হন। লাহোরে ভারতীয় একাদশের বিপক্ষে বাদ-বাকী দলের সদস্যরূপে ৬/৪১ নিয়ে ভারতের প্রথম আন্তর্জাতিক সফরে স্বীয় স্থান নিশ্চিত করেন।

১৯৩২ থেকে ১৯৩৬ সময়কালে ভারতের পক্ষে চারটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৩২ সালে সি.কে. নায়ড়ু’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। এ সফরে প্রস্তুতিমূলক খেলায় গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে ৫/১০০ ও অক্সফোর্ডের বিপক্ষে ৫/৮৯ পান। কেমব্রিজের বিপক্ষে খেলায় তিনি ১২৬ রান খরচায় ৬ উইকেট দখল করেছিলেন।

ভারতের সর্বপ্রথম টেস্টে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেন। ২৫ জুন, ১৯৩২ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। দলের অন্য সকলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। মোহাম্মদ নিসার ও অমর সিং স্বাগতিকদের সংগ্রহকে ১৯/৩ করার পর জাহাঙ্গীর খান ও সিকে নায়ড়ুকে তাঁদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়। উভয়েই বোলিংয়ে নিখুঁতভাব বজায় রাখেন। ১৭-৭-২৬-০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। দ্বিতীয় ইনিংসে সরাবজী কোলা’র হাতে ফ্রাঙ্ক ওলিকে বিদেয় করেন। ডগলাস জারডিনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলটি ২৭৫/৮ তুলে ইনিংস ঘোষণা করলে ভারত দল খেলা থেকে ছিটকে পড়ে। ৩৪৬ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকা ভারত দলে ৩০-১২-৫০-৪ বোলিং বিশ্লেষণ করেন। এগুলোই তাঁর একমাত্র উইকেট ছিল। ঐ টেস্টে সফরকারীরা ১৫৮ রানে পরাজিত হয়েছিল। ঐ মৌসুমে তিনি তাঁর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে তৎপর ছিলেন। ২০ গড়ে ৪২০ রান ও ৩০.৩৮ গড়ে ৫০ উইকেট দখল করেছিলেন।

১৯৩৬ সালে বিজিয়ানাগ্রামের মহারাজা’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৫ আগস্ট, ১৯৩৬ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৯ ও ১ রান সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৬৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয় পায় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে।

অবিভক্ত ভারতে বর্শা নিক্ষেপে জাতীয় রেকর্ড গড়েন। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ এম্পায়ার গেমসে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ভারত বিভাজনের পর পাকিস্তানে চলে যান। জাতীয় দল নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও, পাকিস্তানের শিক্ষাবিভাগের পরিচালক হিসেবে মনোনীত হন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। তাঁর সন্তান মজিদ খান ও নাতি বাজিদ খান পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছে। এরফলে, জর্জ হ্যাডলি’র সন্তান রন হ্যাডলি ও নাতি ডিন হ্যাডলি’র পর দ্বিতীয় পরিবার হিসেবে তিন প্রজন্মের টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে নিজেদেরকে পরিচিতি ঘটান। ২৩ জুলাই, ১৯৮৮ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে ৭৮ বছর ১৭৩ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

Similar Posts

  • |

    নিকোলাস থিউনিসেন

    ৪ মে, ১৮৬৭ তারিখে কেপ কলোনির কোলসবার্গ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৮৮০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। কার্যকর অফ-কাটার প্রয়োগ করতেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৮৮৮-৮৯ মৌসুম থেকে ১৮৮৯-৯০ মৌসুম পর্যন্ত…

  • | | | |

    ফ্রাঙ্ক মিচেল

    ১৩ আগস্ট, ১৮৭২ তারিখে ইয়র্কশায়ারের মার্কেট উইটন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা – উভয় দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। তন্মধ্যে, দক্ষিণ আফ্রিকা দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ইয়র্কভিত্তিক সেন্ট পিটার্স স্কুলে পড়াশুনো করেন। এখানে শেষ দুই মৌসুমে প্রথম একাদশের…

  • | |

    হ্যারি জাপ

    ১৯ নভেম্বর, ১৮৪১ তারিখে সারের ডর্কিং এলাকায় জন্মগ্রহণকারী পেশাদার ক্রিকেটার ও আম্পায়ার ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষণ কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, ডানহাতে শীর্ষসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৮৭০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। মূলতঃ রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। খুব দ্রুত ক্রিকেটে সহজাত দক্ষতার বিকাশে তৎপর হন। ১৮৬১ সালে সারে কোল্টসের পক্ষে খেলেন। ১৮৬২ সালেও তেমন সফলতার স্বাক্ষর রাখেননি।…

  • |

    শহীদ মাহমুদ

    ১৭ মার্চ, ১৯৩৯ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন ও বামহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। বামহাতে ব্যাটিং উদ্বোধন করতেন ও কার্যকর মিডিয়াম-পেস বোলিংয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুম থেকে ১৯৬৯-৭০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন।…

  • | | | |

    আব্দুল কাদির

    ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৫ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। তাসত্ত্বেও, দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে নিয়েও যথেষ্ট ভূমিকা রেখে গেছেন। পাশাপাশি, পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের কিংবদন্তীতুল্য স্পিন যাদুকর। অগণিত ব্যাটসম্যানের রহস্যের পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। সর্বোপরি, ১৯৮০-এর দশকে লেগ-স্পিনের বর্ণাঢ্যময়…

  • | |

    লেস অ্যামিস

    ৩ ডিসেম্বর, ১৯০৫ তারিখে কেন্টের এলহাম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। দলে মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। পাশাপাশি, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। সন্দেহাতীতভাবে ও খুব সহজেই বিংশ শতাব্দীতে ক্রিকেটের সেরা উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যানের মর্যাদাপ্রাপ্ত হয়েছেন। খেলাকালীন তাঁর চেয়েও দক্ষ উইকেট-রক্ষক থাকলেও কেবলমাত্র ব্যাটিংয়ের কল্যাণে ১৯৩০-এর দশকে…