Skip to content

আসিফ ইকবাল

1 min read

৬ জুন, ১৯৪৩ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও রেফারি। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়েও পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ক্রিকেটপ্রেমী পরিবারের সন্তান। তাঁর কয়েকজন চাচা উচ্চ স্তরের ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ভারতীয় অধিনায়ক ও অফ-স্পিনার গুলাম আহমেদের ভ্রাতৃষ্পুত্র তিনি। যৌথ পরিবারে বড় হন। ঘরের সর্বত্র ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হতো ও কিশোর আসিফ তাঁর চাচাদের উৎসাহে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে থাকেন। ক্রিকেটকে ঘিরে স্বপ্নের জাল রচনা করেন। তিনি একদা বলেছিলেন, তাঁর মা তাঁকে খেলার জন্যেই জন্ম দিয়েছেন। ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা সম্পর্কে তাঁর আত্মীয়া।

‘জিমি’ ডাকনামে ভূষিত আসিফ ইকবাল ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। হায়দ্রাবাদভিত্তিক মাদ্রাসা-ই-আলিয়া স্কুল ও ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন। এছাড়াও, করাচীর এসএম কলেজে পড়াশুনো করেছেন। ১৯৫৯-৬০ মৌসুম থেকে ১৯৮২ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে হায়দ্রাবাদ, করাচী, পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংক ও পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, করাচী ব্লুজ, করাচী হোয়াইটস, দক্ষিণাঞ্চল, পাকিস্তান ঈগলেটসের পক্ষে খেলেছেন।

পাকিস্তান ও কেন্ট দলে খেলাকালীন অগণিত শুভাকাঙ্খীর কাছ থেকে উৎসাহ পেতেন। কিন্তু, পাতানো খেলার বিতর্কে জড়িয়ে তাঁদের সংখ্যা অনেক কমে যায়। ভারতের হায়দ্রাবাদে ক্রিকেট খেলায় সিদ্ধহস্তের অধিকারী হন। ভারত বিভাজনের পর পাকিস্তানে চলে যান। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে সিম বোলার ছিলেন। সেখানে আউটসুইং সহযোগে বোলিং উদ্বোধন করতেন। পরবর্তীতে নির্ভিকচিত্তে ব্যাটিংয়ে মনোনিবেশ ঘটান। পায়ের কারুকাজের পূর্ণতা ছিল ও কভার ড্রাইভে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।

ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। এ পর্যায়ে কলিন কাউড্রে, অ্যালান নট ও ডেরেক আন্ডারউডের ন্যায় তারকাদের সাথে একত্রে খেলেছেন। ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ক্লাবটিতে খেলেন ও শেষদিকে দলটির অধিনায়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

১৯৬৪ থেকে ১৯৮০ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ৫৮ টেস্ট ও ১০টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে নিজ দেশে বব সিম্পসনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ২৪ অক্টোবর, ১৯৬৪ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। আব্দুল কাদির, বিলি ইবাদুল্লাহ, মজিদ খান, পারভেজ সাজ্জাদ ও শাফকাত রানা’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৪১ ও ৩৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৬৮ ও ০/২৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।

১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে হানিফ মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২২ জানুয়ারি, ১৯৬৫ তারিখে ওয়েলিংটনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৪১ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৩০ ও ৫২* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে সাফল্য পান। এসএন ম্যাকগ্রিগরকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ২/৬৮। খেলায় তিনি ৫/৪৮ ও ১/৩৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে প্রথমবারের মতো পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। স্বাগতিক দলের শেষ ছয় উইকেট মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে পতন ঘটে। তন্মধ্যে, শেষ চার উইকেটের পতন হয় মাত্র পাঁচ বলে। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ২৯ জানুয়ারি, ১৯৬৫ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩ ও ০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/৫২ ও ১/৪০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৬৭ সালে ইন্তিখাব আলমের সাথে নবম উইকেট জুটিতে ১৯০ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ২৮ আগস্ট, ১৯৬৭ তারিখে ওভালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ রানের জুটি গড়ে দলকে খেলায় ফিরিয়ে আনেন। দ্বিতীয় ইনিংসে দলের সংগ্রহ ৬৫/৮ থাকাকালে এ দু’জন ২৫৫ রানে নিয়ে যান। তাসত্ত্বেও স্বাগতিকরা খেলায় আট উইকেট জয় পায়। পরবর্তীতে, ১৯৯৮ সালে জোহানেসবার্গে মার্ক বাউচার ও প্যাট সিমকক্স পাকিস্তানের বিপক্ষে নবম উইকেটে ১৯৫ রান তুলে তাঁদের রেকর্ড ভেঙ্গে নিজেদের করে নেন।

১৯৭২-৭৩ মৌসুমে ইন্তিখাব আলমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১৪৭ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১৭৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ইনিংস ও ১৬৬ রানের ব্যবধানে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে নিজ দেশে জন পার্কারের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৯ অক্টোবর, ১৯৭৬ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ১৬৬ রানের অপূর্ব ইনিংস খেলেন। এ পর্যায়ে অপর অভিষেকধারী জাভেদ মিয়াঁদাদের (১৬৩) সাথে পঞ্চম উইকেটে ২৮১ রানের জুটি গড়ে নতুন পাকিস্তানী রেকর্ড দাঁড় করান। পিটার প্যাথেরিক এ জুটি ভেঙ্গে ফেলেন ও নিজের প্রথম টেস্টের প্রথমদিনে হ্যাট্রিক করেন। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার খেলায় এম.জে.সি. অলমের পর তিনি এ সফলতা পান। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৭৯-৮০ মৌসুমে পাকিস্তানী দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ভারত সফরে যান। ২৯ জানুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের ষষ্ঠ টেস্টে অংশ নেন। ৫* ও ১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল।

১৯৬৮ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১৯৭৩ সালে ওয়াল্টার লরেন্স ট্রফি লাভ করেন। ১৯৭৯-৮০ মৌসুমে পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ভারত সফরে যান। এ সফরেই প্রথম পাতানো খেলার অভিযোগ আসে। পরবর্তীতে, ক্রিকেট পরিচালক হিসেবে শারজায় এ ধরনের অনেকগুলো ঘটনায় কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেছেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ১৯৯৩ সালে আইসিসি ম্যাচ রেফারি হিসেবে মনোনীত হন। একটি টেস্ট ও তিনটি ওডিআই পরিচালনা করেছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। বর্তমানে লন্ডনে সস্ত্রীক বসবাস করছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।