মার্ক ওয়াহ
২ জুন, ১৯৬৫ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের ক্যান্টারবারি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
পিতা ব্যাংক কর্মকর্তা ও মাতা নিউ সাউথ ওয়েলসের শিক্ষা বিভাগের অধীন শিক্ষক ছিলেন। স্টিভ ওয়াহ ছাড়াও ডিন ওয়াহ ও ড্যানিয়েল ওয়াহ নামীয় তাঁর আরও দুই ভাই রয়েছে। খেলাধূলার সাথে তাঁর পরিবারের সখ্যতা রয়েছে। ডিন ওয়াহ অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম-শ্রেণী ও লিস্ট-এ ক্রিকেটে অংশ নিয়েছে। ড্যানিয়েল নিউ সাউথ ওয়েলসের অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলেছে। তাঁর দাদা এডওয়ার্ড ঘোড়দৌড়ের প্রশিক্ষক, পিতা রজার ও মাতা বেভার্লি অনূর্ধ্ব-১৪ পর্যায়ে টেনিস খেলেছেন। তাঁর স্ত্রী কিম ওয়াহ ঘোড়দৌড় প্রশিক্ষক হিসেবে সিডনি কাপের শিরোপা জয়ে অংশ নেন।
শৈশবকাল থেকেই খেলাধূলার প্রতি অনুরাগ গড়ে উঠে। শুরুতে ফুটবল, ক্রিকেট ও টেনিসের প্রতি জড়িত ছিলেন। সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে নিউ সাউথ ওয়েলস প্রাইমারি স্কুলের ফুটবল দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। ক্রিকেটে যুক্ত হবার পূর্বে সিডনি ক্রোয়াশিয়া ফুটবল দলের প্রতিনিধিত্ব করেন।
১৯৮৫-৮৬ মৌসুম থেকে ২০০৩-০৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলস এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
প্রায় দেড় দশক অস্ট্রেলিয়া দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দর্শনীয় স্ট্রোক খেলতেন। এছাড়াও, স্লিপ অঞ্চলে ফিল্ডিং করে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছেন। এ সকল কারণে সর্বকালের অন্যতম সেরা তারকা খেলোয়াড়ের মর্যাদা লাভ করেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে মিডিয়াম পেস বোলিং করলেও পরবর্তীতে স্পিন বোলিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন। অপর যমজ ভ্রাতা স্টিভ ওয়াহ’র তুলনায় ৪ মিনিটের ছোট ছিলেন। এরফলে তিনি ‘জুনিয়র’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। কাকতালীয়ভাবে টেস্ট দলে স্বীয় ভ্রাতার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। উভয়েই শতাধিক টেস্ট খেলেছেন।
১৯৮৮ থেকে ২০০২ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ১২৮ টেস্ট ও ২৪৪টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। বর্ণাঢ্য খেলোয়াড়ী জীবনে ষোলো হাজারের অধিক আন্তর্জাতিক রান পেয়েছেন। ১১ ডিসেম্বর, ১৯৮৮ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন।
১৯৯০-৯১ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রাহাম গুচের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২৫ জানুয়ারি, ১৯৯১ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেক টেস্টে শতরান হাঁকানোর কৃতিত্বের অধিকারী হন। ১৩৮ ও ২৩ রান তুলে উভয় ক্ষেত্রেই ডেভন ম্যালকমের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দীসহ ০/১৩ ও ০/৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে নিজ দেশে কেন রাদারফোর্ডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৬ নভেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে হোবার্টে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ১১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৭ ও ১/৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। পাশাপাশি, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২২২ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২০ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১৬ রানে পৌঁছানোকালে ৪৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ৮৬ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্টিভ ওয়াহ’র দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৭০ রানে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। প্রসঙ্গতঃ, এটিই উভয় দলের মধ্যকার উদ্বোধনী টেস্ট ছিল। ১৪ অক্টোবর, ১৯৯৯ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র-টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৯০ রান সংগ্রহসহ পাঁচটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। দলীয় অধিনায়কের অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে পরাজয়বরণ করে।
২০০১ সালে দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। লর্ডসে অনুষ্ঠিত টেস্টে ১০৮ রানে ইনিংস খেলার সুবাদে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দলের জয়ের ভিত্তি এনে দেন। প্রতিপক্ষের সংগ্রহ ১৮৭ হলে অস্ট্রেলিয়া দলের সংগ্রহ এক পর্যায়ে ২৭/২ হয়। এ পর্যায়ে ইনিংস মজবুত করতে তৎপর হন। অন-সাইডে বেশ সরব থাকেন এবং ড্যারেন গফ ও অ্যান্ড্রু ক্যাডিকের বল মোকাবেলা করে এ সাফল্য পান। চতুর্থ উইকেটে যমজ ভ্রাতা স্টিভ ওয়াহ’র সাথে ১০৭ রান তুলেন। মিড-অন এলাকা থেকে ড্যারেন গফের সরাসরি নিক্ষেপে স্ট্যাম্পে আঘাত হানে।
২০০২-০৩ মৌসুমে স্টিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের অন্যতম সদস্যরূপে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। ১৯ অক্টোবর, ২০০২ তারিখে শারজায় অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্ট খেলেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ২৩ রান সংগ্রহসহ দু্ইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১০ ও ০/৩৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। শেন ওয়ার্নের সুন্দর বোলিং নৈপুণ্যে ইনিংস ও ২০ রানে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পরও ক্রিকেটের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। রড মার্শ ও ট্রেভর হন্সের সাথে তিনিও অস্ট্রেলিয়ার দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যরূপে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯১ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। জানুয়ারি, ২০০৫ সালে মেম্বার অব দি অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া পদবীতে ভূষিত হন।