Skip to content

আমিনুল ইসলাম

1 min read

২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে ঢাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও রেফারি। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

‘বুলবুল’ ডাকনামে পরিচিত ছিলেন। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম থেকে ২০০২-০৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে ঢাকা বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বিমান বাংলাদেশের পক্ষে খেলেছেন। পেশাদারী পর্যায়ে ফুটবলার ছিলেন। আঘাতের কারণে তিনি ক্রিকেটারে পরিণত হন। বেশ দেরীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নেয়ার সুযোগ পান।

তিনবার আইসিসি ট্রফি প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তন্মধ্যে, ১৯৯৭ সালের শিরোপা বিজয়ে প্রধান ভূমিকা রাখেন। এরফলে, তৎকালীন সহযোগী দেশটি প্রথমবারের মতো ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দলকে জয় এনে দেন।

১৯৮৮ থেকে ২০০২ সময়কালে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বমোট ১৩ টেস্ট ও ৩৯টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। টেস্টে মর্যাদা লাভের পূর্বে বাংলাদেশের অন্যতম তারকা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ২০০০-০১ মৌসুমে নিজ দেশে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে নিজের সেরা সময় পার করে যুক্ত ছিলেন। ১০ নভেম্বর, ২০০০ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অন্য সকলের সাথে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেক টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখতে বেশ তৎপর ছিলেন। ধৈর্য্যশীল ১৪৫ রানের দূর্দান্ত শতক হাঁকান। এরফলে নিজেকে আরও এক ধাঁপ উঁচুতে নিয়ে যান।

ফলশ্রুতিতে, অস্ট্রেলিয়ার প্রথম আনুষ্ঠানিক টেস্টে চার্লস ব্যানারম্যানের ১৬৫ রানের ইনিংসের পর অভিষেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রাহকে পরিণত হন। আট ঘণ্টা ও ৫৫ মিনিটব্যাপী ক্রিজে অবস্থান করে এ সফলতা পান ও শেষ খেলোয়াড় হিসেবে মাঠ ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে একই দলের বিপক্ষে মোহাম্মদ আশরাফুল ১৫৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তাঁর রেকর্ড ভঙ্গ করেন। তুলনামূলকভাবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় কম অভিজ্ঞতাপুষ্ট খেলোয়াড় হিসেবে সবশেষে বিদেয় নেন। এ সফলতা ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনে তাঁর সেরা অর্জন ছিল। ঐ টেস্টে ১৪৫ ও ৬ রানের ইনিংস খেলে অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ব্যানারম্যান (৪৪৭), আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়ানের (৪৪০) পর আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়ে ৪৩২ পয়েন্ট লাভ করেন। এরপর তিনি সাধারণমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করলেও ঐ ইনিংসের কল্যাণে জাতীয় বীরে পরিণত হয়েছিলেন। ভারতীয় বোলারদের বিপক্ষে খেলতেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন। তবে, সুনীল জোশী’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৯ উইকেটে জয়লাভ করে।

এরপূর্বে, ১৯৯৮ সালে মোহালিতে অনুষ্ঠিত ওডিআইয়ে ভারতের বিপক্ষে ৭০ রানের ব্যক্তিগত সেরা ইনিংস খেলেন। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করেন। এ পর্যায়ে স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দলের বিজয়ে নেতৃত্ব দেন।

টেস্ট ক্রিকেটে তেমন সফলতা পাননি। ঐ শতরানের পর আর মাত্র দুইটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন ও ২১ গড়ে রান তুলেন। ওডিআইয়ের পরিসংখ্যান পর্বটিও ঠিক একইমানের ছিল। তিনটি অর্ধ-শতক সহযোগে ২৩ গড়ে রান পেয়েছেন। সাধারণমানের গড়ে বাংলাদেশ দলে খেলে খুব কম প্রভাব ফেললেও বাংলাদেশের অধিনায়কদ্বয় – মিনহাজুল আবেদীন ও আকরাম খানের সাথে ত্রি-রত্নের অন্যতম হিসেবে মাঠে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ১৯৯০-এর দশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের সূচনালগ্নে তাঁরা একযোগে প্রাণবন্ত চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

১৯৮৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সাথে প্রথমবারের মতো সংশ্লিষ্ট হন। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত যুবদের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী আসরে আইসিসি অ্যাসোসিয়েটস ইয়ং ক্রিকেটার্স দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। ব্যাট হাতে তেমন সাড়া জাগাতে না পারলেও ছয় উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, ব্রায়ান লারা তাঁর শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। একই বছরের ২৭ অক্টোবর, ১৯৮৮ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। বাংলাদেশ দলে মাঝারিসারিতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষে বেশ কয়েক বছর অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন।

দৃঢ় চিত্তে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। স্পিনারদের বিপক্ষে দূর্দান্ত খেললেও মান সম্পন্ন ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে বেশ হিমশিম খেতেন। তাসত্ত্বেও, নিজস্ব দ্বিতীয় টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এরপর, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আরেকটি অর্ধ-শতক করেন ও উদীয়মান মোহাম্মদ আশরাফুলের অভিষেকে প্রথম শতরান লাভে সহায়তার হাত প্রসারিত করেন। এরফলে, বাংলাদেশের অভিষেকে দুইটি শতরানের সাথে নিজেকে জড়ান।

২০০২-০৩ মৌসুমে নিজ দেশে রিডলি জ্যাকবসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ৮ ডিসেম্বর, ২০০২ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৫ ও ১২ রান সংগ্রহ করেন। জার্মেইন লসনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে ঐ টেস্টে তাঁর দল ইনিংস ও ৩১০ রানে পরাভূত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল।

আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেননি তিনি। এরপর, কোচিং জগতের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ক্রিকেট ভিক্টোরিয়া থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের কোচিং প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। মেলবোর্ন ও সিডনির ক্লাব দলকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আবাহনী লিমিটেডের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন। ২০০৭ সালে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলে কাজ করেন ও স্বল্প সময়ের জন্যে ক্রিকেট ভিক্টোরিয়ায় যুক্ত ছিলেন। আইসিসি’র ক্রিকেট ডেভেলপম্যান্ট ব্যবস্থাপক হিসেবে ক্রিকেটের উত্তরণের জন্যে চীন, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মিয়ানমারে কাজ করছেন। এছাড়াও, রেফারির দায়িত্বে ছিলেন। হাবিবুল বাশার সতীর্থ খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে সর্বকালের সেরা বাংলাদেশী টেস্ট একাদশ গঠন করেন। তন্মধ্যে, তাঁকেও এ তালিকায় ঠাঁই দিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।