আকরাম খান
১ নভেম্বর, ১৯৬৮ তারিখে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৯০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধ্বে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের শুরুরদিকের প্রকৃত মানসম্পন্ন ক্রিকেট তারকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। কোমড় বেশ মোটা ও স্থূল দেহের অধিকারী ছিলেন। চট্টগ্রামের সূর্যসন্তান হিসেবে ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশ দলের উত্তরণে অন্যতম ভূমিকা রেখে গেছেন। এ সময়েই আইসিসি’র সহযোগী দেশ থেকে পূর্ণাঙ্গ সদস্যের মর্যাদা পায় বাংলাদেশ দল। আমিনুল ইসলাম ও মিনহাজুল আবেদীনকে সাথে নিয়ে মাঝারিসারিতে দক্ষতার সাথে দলকে পরিচালনা করেছিলেন। তাঁদের অবিশ্রান্ত প্রচেষ্টার ফলেই দেশের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয় ও বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বাংলাদেশ দল। দ্রুততার সাথে রান সংগ্রহের প্রবণতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। স্পিন বোলিং মোকাবেলায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।
ক্রীড়ানুরাগী পরিবারের সন্তান তিনি। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে চট্টগ্রাম বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম থেকে ২০০৪ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনে সরব ছিলেন। ঢাকার লীগে অংশগ্রহণকারী চট্টগ্রামভিত্তিক ক্লাব বাংলাদেশ রেলওয়েজের পক্ষে খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করেন। খুব দ্রুততার সাথে নিজেকে মেলে ধরেন ও দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দল আবাহনীর পক্ষে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতাসমূহে অংশ নেন। ঐ বছরই ওডিআইয়ে অভিষেক হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিনিধিত্বমূলক দলের সদস্য থেকে নিজেকে যুক্ত রাখেন ও এক পর্যায়ে বিশ্বকাপের দিকে নিয়ে যান। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি বিজয়ী দলের নেতৃত্বে ছিলেন। অস্তিত্বের লড়াইয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৬৮ রানে অপরাজিত থেকে দলকে সেমি-ফাইনালে নিয়ে যান। স্কটল্যান্ডকে পরাভূত করে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে স্বর্ণালী মুহূর্ত উদযাপিত করেন।
১৯৮৮ থেকে ২০০৩ সময়কালে বাংলাদেশের পক্ষে আটটিমাত্র টেস্ট ও ৪৪টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। তন্মধ্যে, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তান দলের বিপক্ষে দলের জয়ে অংশ নেন। ২৯ অক্টোবর, ১৯৮৮ তারিখে চট্টগ্রামে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জগতে প্রবেশ করেন।
১০ নভেম্বর, ২০০০ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ভারতের বিপক্ষে দলের অন্য সকলের সাথে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। ৩৫ ও ২ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। সফরকারী দল ৯ উইকেটে জয়লাভ করে। এরপর, আরও চার বছর টেস্ট খেলেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার পেস বোলিং আক্রমণ যথাযথভাবে মোকাবেলায় অগ্রসর হয়েছিলেন। তবে, অংশগ্রহণকৃত টেস্টগুলো থেকে কোন অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলতে পারেননি।
২০০২-০৩ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১ মে, ২০০৩ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ১৩ ও ২৩ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। ঐ টেস্টে সফরকারীরা ইনিংস ও ১৮ রানে জয় পেয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
অবসর গ্রহণের পর ২০০৭ সালে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য হন। ২০১১ সালে প্রধান দল নির্বাচক হন। পদত্যাগ করার পর মার্চ, ২০১২ সালে পুণরায় দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সম্পর্কে তিনি বাংলাদেশী টেস্ট ক্রিকেটার নাফিস ইকবাল ও তামিম ইকবালের চাচা হন।