Skip to content

হাবিবুল বাশার

1 min read

১৭ আগস্ট, ১৯৭২ তারিখে কুষ্টিয়া জেলার নাগাকান্দা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-স্পিন বোলিংয়ে দক্ষ ছিলেন। বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ‘সুমন’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্যরূপে এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম থেকে ২০০৯-১০ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে খুলনা বিভাগ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ঢাকা ওয়ারিয়র্সের পক্ষে খেলেছেন।

প্রায়শঃই তাঁকে বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচনায় আনা হয় থাকে। দূরন্তপনা ও আবেগ প্রবণতার সংমিশ্রণ নিয়ে স্ট্রোক খেলায় নিপুণতার মাধ্যমে প্রকৃতমানের টেস্ট খেলোয়াড়ের মর্যাদা পেয়েছেন। মিড-উইকেট বরাবর পরিচ্ছন্ন ড্রাইভের মাধ্যমে অধিকাংশ রান সংগ্রহ করেছিলেন। আবার, হুক মারার ন্যায় হিলডিচ ধরনের প্রবণতায় অধিকাংশ সময় ক্রিজ থেকে চলে আসতে হয়েছে। মাঝারিসারিতেই অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন।

১৯৯৫ সাল থেকে বাংলাদেশ দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। ১৯৯৫ থেকে ২০০৮ সময়কালে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বমোট ৫০ টেস্ট ও ১১১টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলার সুযোগ পান। ৬ এপ্রিল, ১৯৯৫ তারিখে শারজায় অনুষ্ঠিত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। আঘাতের কারণে এশিয়া কাপসহ ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ দলের পক্ষে খেলতে পারেননি। বাংলাদেশ দল ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও তাঁকে দলে রাখা হয়নি। তবে, এডি বার্লো’র তত্ত্বাবধানে ব্যাটিং অনুশীলন কর্ম চালিয়ে যেতে থাকেন ও দলে ফিরে আসেন।

উদ্বোধনী টেস্টের পূর্বে দলের বাইরে ছিলেন। কিন্তু, ক্রমাগত সাফল্যের কারণে বাংলাদেশী গণমাধ্যমে দল নির্বাচকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রবল সমালোচনা হতে থাকে। এক পর্যায়ে তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়। অতঃপর, ২০০০ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে খেলেন। ২০০০-০১ মৌসুমে নিজ দেশে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ভারত দলের মুখোমুখি হন। বাংলাদেশ দলের উদ্বোধনী টেস্টের পূর্বে বল শূন্য ভাসানোর অভ্যাস ছিল। ১০ নভেম্বর, ২০০০ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে দলের সকলের সাথে তাঁর একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। দূর্দান্ত অর্ধ-শতক হাঁকান। এরপর থেকে আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ৭১ ও ৩০ রান সংগ্রহ করে উভয় ক্ষেত্রেই হুকে বিদেয় নেন।

প্রথম টেস্ট খেলার পর বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে পরবর্তী দশকেও খেলার উপযোগী হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলেন। তবে, সাত বছর দলের অন্যতম নিয়মিত খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান। টেস্ট ক্রিকেটে ক্রমাগত অর্ধ-শতরান হাঁকানোর কারণে দ্রুত ‘মি. ফিফটি’ নামে আখ্যায়িত হন। সব মিলিয়ে ২৪টি অর্ধ-শতকের পাশাপাশি তিনটি শতক পেয়েছেন। তন্মধ্যে, প্রথম শতরানটি ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সংগ্রহ করেন ও দলের প্রথম ইনিংসে বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করাতে বিরাট ভূমিকা রাখেন। ১০৮ রান তেমন সংগ্রহ না হলেও নিঃসন্দেহে পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের কাছে খুব সহজেই সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলেন।

২০০২-০৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে খালেদ মাসুদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৮ অক্টোবর, ২০০২ তারিখে ইস্ট লন্ডনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩৮ ও ২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। গ্রায়েম স্মিথের অনবদ্য দ্বি-শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ১০৭ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

২০০৩ সালে পরবর্তী টেস্ট শতরান করেন। করাচীতে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে এ শতরানটি বাংলাদেশ দলকে খেলায় ফিরিয়ে আনতে সবিশেষ ভূমিকা রাখে। শেষ শতরানটি গ্রোস আইলেটে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করেন। ১১৩ রান তুলে দলকে জয়ের সূবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। পরবর্তীতে অবশ্য সম্মানজনক ড্রয়ের দিকে খেলাটি গড়ায়। তবে, একদিনের আন্তর্জাতিকে ব্যতিক্রমধর্মী চিত্র লক্ষ্য করা যায়। আক্রমণাত্মক ধাঁচের ব্যাটিংয়ের কারণে ১১১টি খেলায় অংশ নিলেও ২২-এর কম গড়ে রান তুলতে পেরেছিলেন।

২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়কের মর্যাদা পান। তাঁর নেতৃত্বে দলটি বেশ কিছু সফলতার সাথে যুক্ত হয়। এ পর্যায়ে এল আইসিসি ওডিআই র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ দল জিম্বাবুয়ের উপরে অবস্থান করে। সীমিত-ওভারের খেলাগুলোয় অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পায়। সংক্ষিপ্ত সময় বাংলাদেশ দল বৈশ্বিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আভাষ দেয়।

২০০৪ সালে হারারেতে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকে জোড়া শূন্য রান তুলেন। তবে, ডেভ হোয়াটমোরের সাথে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশ দলে শৃঙ্খলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন। খালেদ মাসুদ, খালেদ মাহমুদ ও মোহাম্মদ রফিকের ন্যায় অভিজ্ঞতাপুষ্ট খেলোয়াড়দের সাথে তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করে অগ্রসর হন। জানুয়ারি, ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত খেলায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলের ২২৬ রানের ব্যবধানে প্রথম টেস্ট ও সিরিজ বিজয়ী দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। প্রথম টেস্ট জয়ে জোড়া অর্ধ-শতক (৯৪ ও ৫৫) হাঁকান। এছাড়াও, প্রথমবারের মতো ওডিআই সিরিজ জয় করে তাঁর দল।

জুন, ২০০৫ সালে অধিনায়ক হিসেবে সুন্দর মুহূর্ত উদযাপন করেন। কার্ডিফে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের অংশগ্রহণে ত্রি-দেশীয় সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলের পাঁচ উইকেটের জয়লাভ বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অঘটন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। চতুর্থ উইকেটে শতকধারী মোহাম্মদ আশরাফুলের সাথে ১৩০ রানের জুটি গড়েন। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের নেতৃত্বে ছিলেন। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে জয়লাভ করে বাংলাদেশ দল তাদের অন্যতম সেরা ফলাফল অর্জন করে। প্রথমবারের মতো দল সুপার-এইট পর্বে খেলার সুযোগ পায়। তবে, এ প্রতিযোগিতায় তিনি মোটেই ব্যক্তিগতভাবে সফল হননি। মাত্র ১৩.১২ গড়ে রান সংগ্রহ করেন ও ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ করেন ৩২ রান।

রান খরায় ভোগাসহ ক্রমাগত অধিনায়ক হিসেবে ব্যর্থতার চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশ পেতে থাকে। এরফলে, বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার পর ২০০৭ সালে মোহাম্মদ আশরাফুলকে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয়। তিনি টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দানের ইচ্ছে পোষণ করলেও দল নির্বাচকমণ্ডলী তা প্রত্যাখান করে। ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন।

২০০৭-০৮ মৌসুমে মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১২ জানুয়ারি, ২০০৮ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সফররত বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১ ও ২৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৩৭ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।

২০০৭-০৮ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ তারিখে ঢাকায় সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১১ ও ২ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, জ্যাক ক্যালিসের বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৫ উইকেটে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে অমর্যাদাকর রেকর্ডের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। ২৮২ বল ডেলিভারি করে ২১৭ রান খরচ করেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি।

অনুমোদনবিহীন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে যুক্ত হন। আইসিএলে ঢাকা ওয়ারিয়র্সের নেতৃত্বে ছিলেন। ফলশ্রুতিতে, ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন। দুই বছর খেলার পর ২০০৯ সালে আইসিএল থেকে চলে আসেন। এরপর অবশ্য তাঁর উপর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে খুলনা বিভাগীয় দলের পক্ষে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। ২০০৯-১০ মৌসুম শেষে পেশাদারী ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশে ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে মনোনীত হন। এক পর্যায়ে প্রশাসনের দিকে জড়িয়ে পড়েন। ২০১১ সালে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যরূপে আকরাম খান ও মিনহাজুল আবেদিনের সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।