Skip to content

ওয়ালি হ্যামন্ড

1 min read

১৯ জুন, ১৯০৩ তারিখে কেন্টের বাকল্যান্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটিং কর্মে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। ইংল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

সিরেনচেস্টার গ্রামার স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। প্রায় যে-কোন বয়সী প্রজন্মের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করবেন। কেন্টে জন্মগ্রহণ করলেও ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে গ্লুচেস্টারশায়ার দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, সাউথ আফ্রিকা এয়ার ফোর্সের পক্ষে খেলেছেন। ১৯২০ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন।

১৯২৭ থেকে ১৯৪৭ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৮৫ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ২২ শতক সহযোগে ৫৮.৪৫ গড়ে ৭২৪৯ রান সংগ্রহ করেছেন। তন্মধ্যে, ১৩১ ইনিংস থেকে দ্রুততম সাত হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ১৯২৭-২৮ মৌসুমে রনি স্ট্যানিফোর্থের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯২৭ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। জিওফ্রে লেগ, ইয়ান পিবলস, রনি স্ট্যানিফোর্থ, বব ওয়াট ও ইউয়ার্ট অ্যাস্টিলের সাথে একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথমবারের মতো টেস্টে পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। খেলায় তিনি ০/২১ ও ৫/৩৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৫১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ১০ উইকেটে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

একই সফরের ২১ জানুয়ারি, ১৯২৮ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৫১ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৯০ ও ১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

১৯২৮-২৯ মৌসুমে ইংল্যান্ড দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। এ সফরে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে চার শতক সহযোগে ১১৩.১২ গড়ে ৯০৫ রান তুলে এক সিরিজে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছেন। এরপর থেকে এক দশক ক্রিকেট বিশ্বে নিজের প্রভাব বিস্তার অব্যাহত রাখেন। চার বছর পূর্বে এক সিরিজে হার্বার্ট সাটক্লিফের গড়া ৭৩৪ রানের বিশ্বরেকর্ড নিজের করে নেন। ১৯৩৩ সালে এক ইনিংসে ১০টি ছক্কা হাঁকিয়ে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে অবস্থান করেন। ব্র্যাডম্যান যুগে খেলে চারবার তাঁর তুলনায় অধিক ছক্কা হাঁকান।

১৯২৯ সালে নিজ দেশে নামি ডিনের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৯ জুন, ১৯২৯ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৭ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৮ ও ৫ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে ডেনিস মরকেলের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/১৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

এরপর, ১৭ আগস্ট, ১৯২৯ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৭ ও ১০১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

১৯৩০-৩১ মৌসুমে পার্সি চ্যাপম্যানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৩০ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৪৯ ও ৬৩ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/৬৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ২৮ রানে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই সফরের ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩১ তারিখে ডারবানের কিংসমিডে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২৯ ও ২৮ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৩৬ ও ০/২৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

১৯৩১ সালে নিজ দেশে টম লরি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৯ জুলাই, ১৯৩১ তারিখে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাটিং করে ১০০* রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ইনিংস ও ২৬ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

১৯৩২-৩৩ মৌসুমে বব ওয়াটের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ৩১ মার্চ, ১৯৩৩ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ১০৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ২৫১ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৩৬* রান সংগ্রহ করে তৎকালীন বিশ্বরেকর্ড গড়েন। এছাড়াও, ০/১১ ও ০/৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ‘ওয়ালি হ্যামন্ডের টেস্ট’ নামে পরিচিত খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় শেষ হয়।

১৯৩৫ সালে নিজ দেশে হার্ভি ওয়েডের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১৭ আগস্ট, ১৯৩৫ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। প্রথম ইনিংসে ৩৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৪৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ৬৫ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, বল হাতে ০/২৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

১৯৩৭ সালে নিজ দেশে কার্লি পেজের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৬ জুন, ১৯৩৭ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ১১২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৪০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৩৮-৩৯ মৌসুমে এমসিসি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৩৮ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৬০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২৪ ও ৫৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/২৭ ও ১/১৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ৩ মার্চ, ১৯৩৯ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৬৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ২৪ ও ১৪০ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে এরিক ডাল্টনের শিকারে পরিণত হন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, ০/৩৪ ও ০/৩০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে এমসিসি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২১ মার্চ, ১৯৪৭ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলায় দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। ১৯২৮ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১৯২৯ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে আসার পর ডরোথি নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে, অন্য নারীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৩৮-৩৯ মৌসুমে এমসিসি দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সিবিল ডোরিন নেস-হার্ভে নামীয় রমণীর সাথে পরিচয় ঘটে। ১৯৪৭ সালে তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এ দম্পতির তিন সন্তান ছিল। ১৯৫১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা চলে যান। ডারবানে গাড়ীর প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। ১৯৫৯ সালে নাটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্রীড়া প্রশাসক হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৬০ সালে গুরুতর গাড়ী দূর্ঘটনার কবলে পড়েন। ১৯৬১ সালে নিজস্ব শেষ শতক হাঁকান। ১ জুলাই, ১৯৬৫ তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার ২১, পার্ক লেন, ক্লুফ, নাটাল এলাকায় হৃদযন্ত্র ক্রীয়ায় নিজ গৃহে ৬২ বছর ১২ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। ৬ জুলাই, ১৯৬৫ তারিখে ডারবানের মুর রোড ক্রিম্যাটোরিয়ামে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।