Skip to content

রিচি বেনো

1 min read

৬ অক্টোবর, ১৯৩০ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের পেনরিথে জন্মগ্রহণকারী ফরাসী বংশোদ্ভূত বিখ্যাত ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, সাংবাদিক ও লেখক ছিলেন। খুব স্বল্পসংখ্যক ক্রিকেটারই তাঁর ন্যায় স্বার্থকভাবে খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। অল-রাউন্ডার হিসেবে লেগ-স্পিন বোলিং করতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলের অধিনায়কত্ব করেছেন।

অন্যান্য বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় স্পিনারের ন্যায় বড় মাপের স্পিনার না হলেও পিচে অপ্রত্যাশিতভাবে বাউন্স আনয়ণ করতে পারতেন। পাশাপাশি, গুগলি, টপ-স্পিন ও পরবর্তীকালে ফ্লিপার প্রয়োগ করতেন। এছাড়াও, বুদ্ধিমত্তা সহযোগে তড়িৎগতিতে খেলার কারণে সুনাম অর্জন করেছিলেন। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের অন্যতম বর্ণাঢ্য অধিনায়কের মর্যাদা পান ও পরবর্তীকালে ক্রিকেট বিশ্বে অবিসংবাদিত ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

সেরা অস্ট্রেলীয় পন্থা অবলম্বনে লেগ-স্পিন বোলিং করতেন। পিছনের পায়ে ভর রেখে বলকে সপাটে মারতেন। অপূর্ব ভঙ্গীমা ক্যাচ তালুবন্দী করতেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি মারকুটে ভূমিকায় অংশ নিতেন। ঐ সময়ে কাছাকাছি এলাকার অন্যতম সেরা ফিল্ডার ছিলেন। ক্ল্যারি গ্রিমেট ও বিল ও’রিলির স্বর্ণালী দিনের সাথে আধুনিক যুগের শেন ওয়ার্নের মধ্যে লেগ-স্পিনে সেঁতুবন্ধন গড়ে তুলেন।

রিচি বেনো সম্পর্কে এক বাক্যে জানতে চাইলে বলা হবে যে, তিনি প্রভাববিস্তারকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের অবসর গ্রহণের পর থেকে অস্ট্রেলিয়া দল সাধারণমানে পরিণত হলে তিনি দলকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যান ও পূর্বের ন্যায় সেরা দলে পরিণত করতে সবিশেষ ভূমিকা রাখেন। তাঁর প্রভাবে খেলাকে সেরাদের কাতারে নিয়ে গেলে তাঁর অংশগ্রহণ ছিল সর্বোৎকৃষ্ট।

ছয় বছর বয়সে প্রতিযোগিতাধর্মী ক্রিকেটে অংশ নেয়া শুরু করেন। ১৮ বছর বয়সে ১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে নিউ সাউথ ওয়েলসের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। খুব দ্রুত তাঁকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যেতে হয়। মেলবোর্নে ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে খেলায় জ্যাক ড্যানিয়েলের বল মাথায় আঘাত হানে। এরফলে, খুলিতে ফাটল ধরে ও পুরো মৌসুম তাঁকে মাঠের বাইরে অবস্থান করতে হয়। সময়ের সাথে সাথে দলে স্বীয় স্থান পাকাপোক্ত করেন।

১৯৫২ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৬৩ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৫১-৫২ মৌসুমে টেস্ট ক্রিকেটে সাধারণমানের অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ঐ মৌসুমে নিজ দেশে জেফ্রি স্টলমেয়ারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৫ জানুয়ারি, ১৯৫২ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কলিন ম্যাকডোনাল্ড ও জর্জ থমসের সাথে একযোগে টেস্ট অভিষেক হয়। স্বাগতিকরা ২০২ রানে জয় পেলে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

টেস্ট ক্রিকেটের শুরুর দিনগুলোয় তেমন সফলতা পাননি। তবে, ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমের গ্রীষ্মে দারুণ খেলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফুলঝুড়ি ছোটান। ঐ মৌসুমে ৬২ গড়ে ৮১১ রান সংগ্রহের পাশাপাশি ৩৫ উইকেট দখল করেছিলেন। খেলায় ছন্দ আনয়ণের সাথে সাথে টেস্ট ক্রিকেটেও দারুণ খেলেন।

১৯৫৫ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে নিজেকে মেলে ধরার প্রয়াস চালান। অসামান্য ব্যাটিং করেন। সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে ৭৮ মিনিটে শতক হাঁকিয়ে তৎকালীন তৃতীয় দ্রুততম ইনিংস খেলেন ও ১২১ রান তুলে অস্ট্রেলিয়া দলের ৩-০ ব্যবধানের সিরিজ বিজয়ে অংশ নেন। এছাড়াও, বল হাতে সফল ছিলেন। এ সিরিজে সব মিলিয়ে ৪১ গড়ে রান সংগ্রহ করেন ও ২৭ গড়ে ১৮ উইকেট নিয়ে নিজের আগমনী বার্তা তুলে ধরেন।

তবে, ভারতের বিপক্ষেই তিনি অধিকতর সফল ছিলেন। ১৯৫৬ সালের সিরিজটিতে স্পিনার বিপক্ষে দারুণ খেলেন। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২৩ উইকেট পান। এ পর্যায়ে নিজের একমাত্র দশ উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ঐ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া দল ২-০ ব্যবধানে জয় পায়। ১৯৫৯ সালে ভারত সফরে আরও সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১৯ গড়ে ২৯ উইকেট দখল করেন। পরিসংখ্যানগতভাবে ভারতের মাটিতে আট টেস্টে অংশ নিয়ে ১৮ গড়ে ৫২ উইকেট পেয়েছিলেন যা প্রকৃত অর্থে স্মরণীয় অর্জন ছিল।

টেস্টে অংশগ্রহণের প্রথম ছয় বছর তেমন ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করতে না পারলেও ১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে ইয়ান ক্রেগের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকায় অল-রাউন্ডার হিসেবে পরিপূর্ণভাবে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। ঐ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। এ সময়ে নিজের স্বর্ণালী সময়ে অবস্থান করেছিলেন তিনি। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৫৫ গড়ে ৩২৯ রান সংগ্রহের পাশাপাশি ৩০ উইকেট দখল করেন।

২৩ ডিসেম্বর, ১৯৫৭ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১২১ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/১১৫ ও ০/১৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

এরপর, ২৪ জানুয়ারি, ১৯৫৮ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫ ও ২০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৫/১১৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিয়ে গড়ালে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে এগিয়ে যায়।

এ সফরের ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৮ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে সিবি ফন রাইনেভেল্ডের দ্বিতীয় উইকেট লাভ করে টেস্টে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১/৩৪ ও ৫/৮২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৪৩ ও ৬* রান সংগ্রহ করেন। স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে পরাজিত হলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।

এরপর, আরও একটি স্মরণীয় অর্জনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অধিনায়ক হিসেবে সহজাত দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। বারো বছরের টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের অর্ধেক সময়ই অস্ট্রেলিয়া দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেন। সব মিলিয়ে ২৮ টেস্টে দলের নেতৃত্বে ছিলেন। তাঁর অধিনায়কত্বকালে অস্ট্রেলিয়া দল কোন সিরিজে পরাজয়বরণ করেনি। তন্মধ্যে, ১২ টেস্টে অস্ট্রেলিয়া দলকে জয় এনে দেন ও চারটিতে তাঁর দল পরাজিত হলেও কোন সিরিজেই তাঁর দল হারেনি।

১৯৫৮-৫৯ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজ থেকে তাঁর অধিনায়কত্বের যাত্রা শুরু হয়। দারুণ কুশলতার স্বাক্ষর রাখেন। এ সময়ে অন্যতম সেরা বোলারদের একজন ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া দল ৪-০ ব্যবধানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের মাধ্যমে অ্যাশেজ করায়ত্ত্ব করে। এরপর থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত একাধারে পাঁচটি সিরিজে অস্ট্রেলিয়া দল বিজয়ী হয়েছিল। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্ব ও ক্রিকেটীয় প্রজ্ঞা দর্শকদেরকে ক্রিকেটের দিকে আগ্রহান্বিত করে তুলে।

ঐ সময়ে মাঠে আবেগ প্রদর্শনের বিষয়টি পরিচিতি না পেলেও বোতাম খোলা অবস্থায় ঢিলেঢালা শার্ট পরিধান করে দণ্ডায়মান থাকতেন, ভ্রু উঁচুতে তুলতেন ও উইকেটের পতন হলে কোলাকুলি করতেন। ভীতিহীন চিত্তে চলাফেরা করতেন ও দলকে পরিচালিত করেছেন। ব্যাটিং ও বোলিং-উভয় বিভাগে দারুণ খেলে দর্শকদের মন জয় করেছেন।

খেলোয়াড়ী জীবনের স্বর্ণালী সময়ে আরোহণকালে ১৯৬০-৬১ মৌসুমে ফ্রাঙ্ক ওরেলের নেতৃত্বাধীন সফরকারী ক্যারিবীয় দলের বিপক্ষে তাঁর হার না মানার পরিচয় লক্ষ্য করা যায়। এ সিরিজের মাধ্যমে ক্রিকেটের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যায়। ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে ২৩৩ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় স্বাগতিকরা ধাবিত হলে এক পর্যায়ে ৯২/৬ হলে দৃশ্যতঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের দিকে পাল্লা ঝুঁকে পড়ে। তবে, সপ্তম উইকেটে অ্যালান ডেভিডসনকে সাথে নিয়ে ১৩৪ রানের জুটি গড়েন ও দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে আসেন। তিনি বিদেয় নিলেও নিচেরসারির ব্যাটসম্যানদের কারণে খেলাটি টাই হয়। এটিই টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম টাইয়ের ঘটনা ছিল। তাঁর অধিনায়কত্বে টেস্ট ক্রিকেট আরও আকর্ষণীয় হয় ও ২-১ ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়া দল সিরিজ জয় করে। রোমাঞ্চকর, আক্রমণাত্মক ও আকর্ষণীয় অধিনায়কত্বের ছাঁপ পাঁচ টেস্টের সবকটিতেই লক্ষ্য করা যায়।

১৯৬৩-৬৪ মৌসুমে নিজ দেশে ট্রেভর গডার্ডের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ৬ ডিসেম্বর, ১৯৬৩ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৩০ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/৬৮ ও ০/৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৪ তারিখে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১১ ও ৩ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৪/১১৮ ও ০/২৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এ খেলাটিও নিষ্পত্তি না হলে সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে আঘাতে জর্জরিত হয়ে পড়েন। ১৯৬৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। এ সময়ে ৬৩ টেস্ট থেকে ২২০১ রান ও ২৪৮ উইকেট দখল করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলসের পক্ষাবলম্বন করেন ও ৭৩টি খেলায় ৩৭৪৯ রান ও ২৬৬ উইকেট পান। তন্মধ্যে, ৩২ খেলায় দলকে নেতৃত্ব দেন।

১৯৬১ সালে মেম্বার অব দি অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার পদবী লাভ করেন। ১৯৬২ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। এ প্রসঙ্গে উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাকে মন্তব্য করা হয় যে, ‘যদি কোন খেলোয়াড় অপরাপর খেলোয়াড়ের তুলনায় অধিক ভালো জানেন, খেলাকে ফিরিয়ে আনতে পারেন, তাহলে তিনি রিচার্ড বেনো।’ পরের বছর ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্টে ২০০০ রান ও ২০০ উইকেট লাভের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী হন। এছাড়াও, টেস্টে সর্বোচ্চসংখ্যক উইকেট দখল করে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ২০০৭ সালে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।

ক্রিকেট বিশ্লেষক ছিলেন ও সাংবাদিকতার দিকে তাঁর আগ্রহ ছিল। খেলোয়াড়ী জীবনে থাকাকালীন ক্রীড়া সাংবাদিকতায় অংশ নিয়েছেন। ১৯৫৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ শেষে বিবিসি’র উপস্থাপক হিসেবে দুই সপ্তাহের জন্যে প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দেন। প্রথমবারের মতো বিবিসি’র টেস্ট ম্যাচ স্পেশালে আমন্ত্রিত অতিথি হন। তিন বছর পর ১৯৬০ সালে খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পূর্বে বিবিসি ধারাভাষ্যকার দলে প্রথম যোগ দেন ও পরবর্তীতে টেলিভিশনে ধারাভাষ্যকর্মে অংশ নেন।

১৯৬০ সালে লন্ডনের দ্য নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের ক্রীড়া প্রতিবেদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ টেলিভিশন ও ২০১৩ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলীয় টেলিভিশনে ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার হিসেবে অংশ নিতেন। অস্ট্রেলিয়ায় বিবিসি ও চ্যানেল নাইনে কাজ করেন। ভাষাগত দক্ষতা ও বিশ্লেষণধর্মী উপস্থাপনার এক পর্যায়ে সাধারণ দর্শক-শ্রোতাদের কাছে তিনি ‘ক্রিকেট ধারাভাষ্যকর্মের মহাপ্রভুরূপে’ পরিচিতি পান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট লেখক, সাংবাদিক ও অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া হল অব ফেমের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য গিডিওন হেই মন্তব্য করেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বাধিক প্রভাববিস্তারকারী ক্রিকেটার ও ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

ধূসর চুলের অধিকারী ছিলেন। তাঁর বিশ্লেষণাত্মক মনোবৃত্তি বিখ্যাত ক্রিকেটারদের পাশাপাশি প্রশাসকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। শেন ওয়ার্ন তাঁকে মন্ত্রণাদাতা হিসেবে বিবেচনায় এনেছেন। ইয়ান চ্যাপেল তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিতে উদগ্রীব থাকতেন ও অস্ট্রেলীয় ধনকুবের ক্যারি প্যাকার তাঁকে বিশ্ব সিরিজ চ্যাম্পিয়নশীপ পরিচালনার জন্যে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে চ্যানেল নাইনে ক্যারি প্যাকারের সাথে বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে পেশাদারী পর্যায়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে পরামর্শক, শুভেচ্ছা দূত এবং ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এ বছর ক্যারি প্যাকারের ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটের ভিত্তি আনয়ণে জোড়ালো ভূমিকা রাখেন। ইয়ান চ্যাপেল ও শেন ওয়ার্ন প্রমূখের গুরু হিসেবে ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বাপেক্ষা প্রভাববিস্তারকারী ক্রিকেটার ও ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

বেশ কয়েকটি ক্রিকেট বিষয়ক গ্রন্থ লিখেছেন। তন্মধ্যে, ‘রিচি বেনোজ ওয়ে অব ক্রিকেট’ (১৯৬২), ‘এ টেল অব টু টেস্টস’ (১৯৬২), ‘দি আপিল অব ক্রিকেট’ (১৯৯৫) ও ‘মাই স্পিন অন ক্রিকেট’ (২০০৫) অন্যতম। তাঁর আত্মজীবনী ‘এনিথিং বাট’ পর্যালোচনা করে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট লেখক হ্যারল্ড ডি অ্যান্ড্রু লিখেছেন যে, ‘সম্ভবতঃ স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের পর রিচি বেনো অন্যতম সেরা ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব, খেলোয়াড়, গবেষক, লেখক, সমালোচক, গ্রন্থাকার, সংগঠক, পরামর্শক ও খেলার ছাত্র ছিলেন।’ ১০ এপ্রিল, ২০১৫ তারিখে ৮৪ বছর ১৮৬ দিন বয়সে সিডনিতে পরলোকগমন করেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।