রে লিন্ডওয়াল
৩ অক্টোবর, ১৯২১ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের মাস্কট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
নান্দনিক নির্যাস ও বিশুদ্ধতাকে ক্রিকেটীয় সৌন্দর্য্যে উপস্থাপন করেছিলেন। দৌঁড়ে উইকেটে চলে যেতেন না। দৌঁড়ের শেষদিকে গতি বাড়িয়ে দিতেন ও বাহু মেলে ধরে শেষ মুহূর্তে দীর্ঘ কদমে বল ফেলতেন। বাহুকে ৪৫ ডিগ্রিতে নিয়ে আসতেন। জিম লেকার স্বর্গ সমতুল্য ক্রিকেট পিচের একপ্রান্ত রে লিন্ডওয়াল ও অপরপ্রান্ত বিষেন সিং বেদী’র জন্যে বরাদ্দ রেখেছেন। প্লাম ওয়ার্নার একবার উচ্চস্বরে লিন্ডওয়ালের দৌঁড়ানোর ভঙ্গীমাকে ‘পয়েট্রি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলার হিসেবে ছন্দোবদ্ধ দৌঁড়ে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন।
১৯৪১-৪২ মৌসুম থেকে ১৯৬১-৬২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুইন্সল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থান করেন।
১৯৪৬ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৬১ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৪৫-৪৬ মৌসুমে বিল ব্রাউনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। কিউইদের বিপক্ষে টেস্টের ইতিহাসে এটিই অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী খেলা ছিল। ২৯ মার্চ, ১৯৪৬ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। কলিন ম্যাককুল, আর্নি টোশ্যাক, ইয়ান জনসন, কেন মিউলম্যান ও কিথ মিলারের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। দলের একমাত্র ইনিংসে শূন্য রানে জ্যাক কাউয়ি’র শিকারে পরিণত হন। এছাড়াও, ১/১৩ ও ১/১৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। চার-দিন নিয়ে গড়া ঐ টেস্টটি দুই দিনে শেষ হয়ে যায়। স্বাগতিক দল ৪২ ও ৫৪ রানে গুটিয়ে গেলে প্রতিপক্ষের কাছে ইনিংস ও ১০৩ রানে পরাভূত হয়।
ব্যাট হাতে নিয়েও স্বীয় প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে এমসিজিতে নববর্ষের টেস্টে শতক হাঁকান। নয় নম্বরে অবস্থান করে তৎকালীন দ্বিতীয় দ্রুততম শতরানের ইনিংস খেলেন। এরপর, সিডনিতে ৭/৬৩ পান। অ্যাডিলেড টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ৭/৩৮ লাভ করে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে দেন। ফলশ্রুতিতে, ১৯৪৮ সালে দলের সাথে ইংল্যান্ড গমনের সুযোগ পান। ‘অপরাজেয় দলটির’ অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হন। পরবর্তীতে এ ধারা এক দশকের অধিক সময় ধরে রাখেন।
১৯৪৯-৫০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে লিন্ডসে হ্যাসেটের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৪৯ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/২২ ও ০/২৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ইনিংস ও ৮৫ রানে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৫৯-৬০ মৌসুমে রিচি বেনো’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের অন্যতম সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ২৩ জানুয়ারি, ১৯৬০ তারিখে কলকাতায় অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে স্বাগতিক ভারতে বিপক্ষে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২/৪৪ ও ১/৬৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১০ রান তুলে রামাকান্ত দেশাইয়ের বলে বিদেয় নেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
প্রকৃত মানসম্পন্ন প্রথম ফাস্ট বোলার হিসেবে টেস্টে দুই শতাধিক উইকেট পেয়েছিলেন। টেস্টগুলো থেকে ২৩.০৩ গড়ে ২২৮ উইকেট দখল করেন। প্রাপ্ত উইকেটের ৪০% বোল্ড করে পেয়েছেন। এছাড়াও, ২১.১৫ গড়ে দুই শতক সহযোগে ১৫০২ রান তুলেছেন। সবগুলো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়ে ২১.৩৫ গড়ে ৭৯৪ উইকেট পেয়েছেন ও ২১.৮২ গড়ে ৫০৪২ রান সংগ্রহ করেছেন।
১৯৪৯ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৬৫ সালে নববর্ষের সম্মাননায় ক্রিকেটে অসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ এমবিই উপাধীতে ভূষিত হন।
ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বী ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। স্বীয় স্ত্রীকে নিয়ে পুষ্পকেন্দ্র পরিচালনা করতেন। এ দম্পতির এক পুত্র ও এক কন্যা রয়েছে। ২৩ জুন, ১৯৯৬ তারিখে কুইন্সল্যান্ডের গ্রীনসলোপস এলাকায় ৭৪ বছর ২৬৪ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।