৪ জুন, ১৯৯১ তারিখে ক্রাইস্টচার্চের ক্যান্টারবারিতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখছেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করে থাকেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি, দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
৬ ফুট (১.৮৩ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। জেরার্ড স্টোকস ও ডেবোরা স্টোকস দম্পতির সন্তান। পিতা রাগবি লীগের খেলোয়াড় ও কোচ ছিলেন। ওয়ার্কিংটন টাউন রাগবি লীগ ক্লাবের প্রধান কোচ মনোনীত হবার সুবাদে ১২ বছর বয়সে পরিবারের সাথে নিউজিল্যান্ড থেকে ইংল্যান্ডে চলে আসেন। ককারমাউথ এলাকায় শৈশবকাল অতিবাহিত করেন ও ককারমাউথ ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলতে শুরু করেন। শুরু থেকে স্বীয় প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটান। ডারহাম একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২০১০ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ভারতের বিপক্ষে দারুণ শতক হাঁকান।
২০০৯-১০ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডারহাম ও নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ইংল্যান্ড লায়ন্স, ইংল্যান্ড পারফরম্যান্স প্রোগ্রাম, মেলবোর্ন রেনেগাডেস, রাজস্থান রয়্যালস ও রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসের পক্ষে খেলেছেন। ১৮ বছর বয়সে ডারহামের পক্ষে ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করেন। ২০০৯ সালে সারের বিপক্ষে একদিনের খেলায় প্রথম অংশ নেন। ২৯ মার্চ, ২০১০ তারিখে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব বনাম ডারহামের মধ্যকার খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক ঘটে।
২০১১ সালে দূর্দান্ত সময় অতিবাহিত করেন। রানের ফুলঝুড়িসহ উইকেট লাভ করতে থাকেন সমানতালে। হ্যাম্পশায়ারের বিপক্ষে দারুণ শতক হাঁকান। এক পর্যায়ে এক ওভারে পাঁচটি ছক্কার মার মেরেছিলেন। এক মাস পর সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো শতরানের ইনিংস খেলে ঘরোয়া আসরে বেশ সাড়া জাগান। তবে, আঙ্গুল ভেঙ্গে ফেলেন। তাসত্ত্বেও, ইংল্যান্ড লায়ন্সের পক্ষে খেলতে থাকেন। ঐ বছরের শেষদিকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজ খেলার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা লাভ করেন।
২০১১ সাল থেকে ইংল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে খেলছেন। টেস্টের ঊনিশজন শীর্ষ অল-রাউন্ডারের অন্যতম হিসেবে ২০০ উইকেট ও ৩০০০ রানের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী। ২৫ আগস্ট, ২০১১ তারিখে ডাবলিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জগতে প্রবেশ করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি২০আইয়ে প্রথম খেলেন।
২০১৩-১৪ মৌসুমে অ্যালাস্টেয়ার কুকের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ৫ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ২/৭০ ও ০/২০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ১ ও ২৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মিচেল জনসনের অনবদ্য বোলিংয়ে সফরকারীরা ২১৮ রানে পরাজয়বরণ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
২০১৫ সালে নিজ দেশে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২১ মে, ২০১৫ তারিখে লন্ডনের লর্ডসে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন ও ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৪৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৯২ ও ১০১ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে মার্ক ক্রেগের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১০৫ ও ৩/৩৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ১২৪ রানে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৫-১৬ মৌসুমে অ্যালাস্টেয়ার কুকের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৪ জানুয়ারি, ২০১৬ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে এম মরকেলের তৃতীয় উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৩/৫৩ ও ২/৪২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। স্টুয়ার্ট ব্রডের অসাধারণ বোলিংয়ের বদৌলতে সফরকারীরা ৭ উইকেটে জয়লাভ করলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী ইংল্যান্ড দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন।
২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জ্যাক লিচের সাথে জুটি গড়ে ইংল্যান্ড দলকে নাটকীয় জয় এনে দেন। তাঁরা দশম উইকেটে ৭৬* রানের নিরবচ্ছিন্ন জুটি গড়ে এ কীর্তিগাঁথা রচনা করেন। চতুর্থ ইনিংসে তাঁদের জুটি ১৯৯৪ সালে ইনজামাম-উল-হক – মুশতাক আহমেদের গড়া ৫৭ রানের তৎকালীন রেকর্ড ভঙ্গ করে। পরবর্তীকালে একই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কুশল পেরেরা – বিশ্ব ফার্নান্দো এ অবস্থানে ৭৮* রানের জুটি গড়ে রেকর্ড গড়েন।
২০১৯-২০ মৌসুমে জো রুটের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী উপহার দেন। ১৬ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৯৪ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৪০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১২০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/২৬ ও ০/৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। অলি পোপের অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৫৩ রানে পরাজিত হলে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
এরপর, ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২ ও ২৮ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৪৭ ও ২/৪৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, মার্ক উডের অসাধারণ অল-রাউন্ড সাফল্যে সফরকারীরা ১৯১ রানে জয়লাভ করলে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ৩১৮ রান সংগ্রহসহ ১০ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২৬ সালে নিজ দেশে শুভমান গিলের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৩ জুলাই, ২০২৫ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতে বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৫/৭২ ও ১/৩৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে দলের একমাত্র ইনিংসে ১৪১ রান তুলেছিলেন। তাঁর অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।
২০১০ ও ২০১১ সালে এনবিসি ডেনিস কম্পটন পুরস্কার পান। ২০১৬ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ডিসেম্বর, ২০১৯ সালে ওবিই উপাধীতে ভূষিত হন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ২০১৭ সালে ক্লেয়ার র্যাটক্লিফ নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেছেন। লেটন নামীয় পুত্র ও লিব্বি নাম্নী কন্যা সন্তানের জনক।