২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৮ তারিখে সারের এপসোমের উডকোট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অংশগ্রহণ করেছিলেন।
১৯২৮ সালে ভবিষ্যতের শ্বশুর বিল ব্রুক অপর দুই সারে ও ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার অ্যান্ডি স্যান্ডহাম এবং হার্বার্ট স্ট্রাডউইকের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতায় বিদ্যালয় জীবন সম্পন্ন করেন। তাঁর ক্রিকেট জীবন দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথমটি সারে ও ইংল্যান্ড দলের পক্ষে মনে-প্রাণে ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলেছেন। দ্বিতীয়টি কোচ হিসেবে প্রায় ৪০ বছর ইংল্যান্ডের সেরা ক্রিকেট স্কুল পরিচালনা করেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সব মিলিয়ে ৩৬২টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।
১৯৩৬ থেকে ১৯৪৬ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সব মিলিয়ে চারটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। এ সময়ে দলে ফাস্ট বোলারের ঘাটতি ছিল। তিনটি টেস্টে নিজের স্বর্ণালী সময় ১৯৩৬ ও ১৯৩৭ সালে খেলেন। ১৯৩৬ সালে নিজ দেশে বিজিয়ানাগ্রামের মহারাজা’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৫ জুলাই, ১৯৩৬ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। আর্থার ফাগ ও লরি ফিশলকের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ০/৩৯ ও ০/৬১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, দলের একমাত্র ইনিংসে তাঁকে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৩৭ সালে নিজ দেশে কার্লি পেজের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৪ আগস্ট, ১৯৩৭ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে অ্যালবি রবার্টসের উইকেট লাভ করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা সাফল্য ছিল ২/৪৯৫। খেলায় তিনি ৩/৮৫ ও ১/৪২ লাভ করেন। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নেয়ার প্রয়োজন পড়েনি তাঁর। একটি ক্যাচ মুঠোয় পুড়েছিলেন। তবে, খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৬ সালে নিজ দেশে ইফতিখার আলী খান পতৌদি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৭ আগস্ট, ১৯৪৬ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। এ পর্যায়ে ৩৮ বছর বয়সে সারে ও ইংল্যান্ডের বোলিং তারকা অ্যালেক বেডসারের সাথে বোলিং উদ্বোধনে নেমেছিলেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত ঐ খেলায় তিনি ১/৫৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, দলের একমাত্র ইনিংসে তাঁকে ব্যাট হাতে মাঠে নামতে হয়নি। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
খেলোয়াড়ী জীবন শেষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোচ হিসেবে সুনাম কুড়ান। ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি সাংবাদিকতার সাথে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও, ১৯৫৩ সালের চলচ্চিত্র ‘দ্য ফাইনাল টেস্টে’ কারিগরী পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বযুদ্ধকালীন সেনাবাহিনীতে কোম্পানি সার্জেন্ট মেজর হিসেবে আর্মি ফিজিক্যাল ট্রেনিং কোরে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে, মেজর পদে অধিষ্ঠিত হন।
ওয়ান্ডসওয়ার্থের ইস্ট হিল এলাকায় নিজ নামে ইনডোর ক্রিকেট স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বেশ কয়েকটি দেশের তরুণ খেলোয়াড়েরা তাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তাঁর অগণিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফ্রাঙ্ক টাইসন, কলিন কাউড্রে, টম গ্রেভনি, গ্যারি সোবার্স, রোহন কানহাই, কেন ব্যারিংটন, হানিফ মোহাম্মদ, ফ্রেড টিটমাস, ভিভ রিচার্ডস, সুনীল গাভাস্কার, অ্যান্ডি রবার্টস, ইয়ান বিশপ ক্রিকেট জগতে বেশ সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ১৯৩৮ সালে হার্বার্ট স্ট্রাডউইক ও ১৯৪৬ সালে অ্যান্ডি স্যান্ডহামের মালিকানার অংশ ক্রয় করলে এ বিদ্যালয়ের একক স্বত্ত্বাধিকারী হন। ইংল্যান্ড, সারে ও সমারসেটের প্রতিনিধিত্বকারী – আর্থার ওয়েলার্ড ও জন ম্যাকমাহনকে ঐ বিদ্যালয়ের কোচ হিসেবে নিযুক্তি দেন। ক্রিকেট কোচিংয়ে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৮ সালে তাঁকে এমবিই উপাধীতে ভূষিত করা হয়।
৭ অক্টোবর, ২০০১ তারিখে সাউথ লন্ডন এলাকায় ৯৩ বছর ২২১ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। মৃত্যুকালীন তিনি বয়োজ্যেষ্ঠ ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন। তাঁর মৃত্যুর ফলে নিউজিল্যান্ডের লিন্ডসে ওয়ের এ সম্মাননার অধিকারী হন।