Skip to content

১ এপ্রিল, ১৯৫৭ তারিখে কেন্টের টানব্রিজ ওয়েলসে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

‘স্টোট’, ‘লুবো’ কিংবা ‘লু’ ডাকনামে পরিচিত ডেভিড গাওয়ার ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ক্যান্টারবারির কিংস স্কুলে অধ্যয়ন করেন। অতঃপর, লন্ডনভিত্তিক ইউনিভার্সিটি কলেজে পড়াশুনো করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ার ও লিচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ড্রাইভে তাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল। লেগ-সাইডে খেলতেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।

১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ১১৭ টেস্ট ও ১১৪টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৮ সালে নিজ দেশে ওয়াসিম বারি’র নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২৪ মে, ১৯৭৮ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। একই সফরে ১ জুন, ১৯৭৮ তারিখে বার্মিংহামের এজবাস্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৫৮ রানে সিকান্দার বখতের বলে বিদেয় নেন। ক্রিস ওল্ডের বোলিং দাপটে সফরকারীরা ইনিংস ও ৫৭ রানে পরাভূত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

১৯৭৮ সালে নিজ দেশে মার্ক বার্জেসের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৭ জুলাই, ১৯৭৮ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৫৯ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। এছাড়াও, টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতকের সন্ধান পান। ১১১ ও ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ শতকের বদৌলতে সফরকারী ৭ উইকেটে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৭৯-৮০ মৌসুমে দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ৪ জানুয়ারি, ১৯৮০ তারিখের সিডনি টেস্টে অংশ নেন। ডেনিস লিলি’র ন্যায় বোলারদের রুখে দিয়ে ৯৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন।

১৯৮২-৮৩ মৌসুমে বব উইলিসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৬ নভেম্বর, ১৯৮২ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ১৮ ও ৩৪ রান সংগ্রহ করেন। কেপলার ওয়েসেলসের অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের সুবাদে সফরকারীরা ৭ উইকেটে পরাজিত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

১৯৮৩ সালে নিজ দেশে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১১ আগস্ট, ১৯৮৩ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। দর্শনীয় শতরানের ইনিংস খেলেন। এ শতকের কল্যাণে ক্রিকেটের স্বর্গভূমি খ্যাত লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে প্রথমবারের মতো ঠাঁই করে নেন। এ পর্যায়ে ক্রিস টাভারে’র সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ১৪৯ রানের জুটি গড়েন। ২০০ বল মোকাবেলা করে ষোলটি চারের মারে এ রান তুলেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরপর, দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ৩৪ রান তুলে দল ১২৭ রানে জয় পেলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ঐ খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে পাকিস্তান সফরে যান। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১৯ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৯ ও ১৭৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এ শতক হাঁকাতে ৪২৩ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে ২৮৪ বল মোকাবেলায় ১৬টি চারের সাহায্যে করেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, সরফরাজ নওয়াজের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে। ৪৪৯ রান সংগ্রহ করে সেলিম মালিকের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে ভারত সফরে ইংল্যান্ডের সিরিজ বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৫ সালে নিজ দেশে অ্যাশেজ সিরিজ বিজয়ে অংশ নেন। সাত শতাধিক রান তুলে দলকে ৩-১ ব্যবধানে জয় এনে দেন।

১৯৮৬ সালে নিজ দেশে জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। ২১ আগস্ট, ১৯৮৬ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, জন রাইটের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। এ সিরিজে ২৯৩ রান সংগ্রহ করে রিচার্ড হ্যাডলি’র সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯২ সালে জাভেদ মিয়াঁদাদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৬ আগস্ট, ১৯৯২ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২৭ ও ১ রান সংগ্রহ করেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়াকার ইউনুসের বলে বিদেয় বিদেয় নিয়েছিলেন। ওয়াসিম আকরামের অনবদ্য বোলিং কৃতিত্বে ঐ টেস্টে সফরকারীরা দশ উইকেটে জয়লাভ করে ও ২-১ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। স্কাই ধারাভাষ্যকার দলে যোগ দেন। এছাড়াও, কবি ও চিত্রকর হিসেবে পরিচিতি পান।