১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে মাদ্রাজের পশ্চিম মাম্বালাম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামেন। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিচ্ছেন।
২০০৬-০৭ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে দক্ষিণাঞ্চল ও তামিলনাড়ু এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওরচেস্টারশায়ার ও নটিংহ্যামশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, চেন্নাই সুপার কিংস, দিল্লি ক্যাপিটালস, ডিন্ডিগাল ড্রাগন্স, ইন্ডিয়া সিমেন্টস ও রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসের পক্ষে খেলেছেন। ৯ ডিসেম্বর, ২০০৬ তারিখে চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত হরিয়াণা বনাম তামিলনাড়ুর মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান।
রবিন সিংয়ের পর ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় তামিলনাড়ুর অন্যতম সেরা তারকা খেলোয়াড়। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি (১.৮৮ মিটার) উচ্চতার দীর্ঘ দেহ নিয়ে ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করেন। বলকে উভয় দিক দিয়েই স্পিন করাতে সক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন। অফ-স্পিনারদের গুগলি ধরনের ক্যারম বল নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর আবির্ভাব ঘটে। অজন্তা মেন্ডিসের উত্থান ও ক্যারম বলের প্রচলনের পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কয়েকজন বোলারকে খেলতে দেখা গেলেও তাঁর ন্যায় অন্য কেউ সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি।
২০১০ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে খুব দ্রুত ভারতের শীর্ষস্থানীয় স্পিনার হিসেবে তাঁর উত্থান ঘটে। আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছেন। সীমিত-ওভারের উপযোগী সঠিকমানের খেলোয়াড় হিসেবে নিজের পরিচিতি ঘটিয়েছেন। বুদ্ধিমত্তা সহযোগে বৈচিত্র্যময় বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হন।
ব্যাট হাতে নিয়েও সমান দক্ষতা প্রদর্শন করে চলেছেন। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের অনেকের কাছেই দলে তাঁর প্রধান ভূমিকা হিসেবে বোলিংয়ের বিষয়টি খটকা লেগে যায়। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুরদিকে ইনিংস উদ্বোধনে নামতেন। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৭ দলের সদস্যরূপে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছিলেন। তবে, ছন্দহীনতার কারণে রোহিত শর্মা’র পরিবর্তে স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। তামিলনাড়ু ও দক্ষিণাঞ্চলের পক্ষে মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলেছেন। শুরুটা ফাস্ট বোলার হিসেবে ঘটলেও খুব শীঘ্রই স্পিন বোলারে পরিণত করেন নিজেকে।
তাঁর পিতা রবিচন্দ্রন ক্লাব পর্যায়ের ক্রিকেটে ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলতেন। ধীরলয়ে খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে ক্রিকেট বল হাতে নিয়ে অফ-স্পিন বোলিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপক সফলতার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন ও ভারতের শীর্ষ স্পিনারে রূপান্তরিত হন। ভারতের টি২০ লীগে অংশ নেয়ার ফলে বেশ সফলতার সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরেছেন। দলীয় সঙ্গীরা তাঁকে আদরের সাথে ‘অ্যাশ’ ডাকনামে ডেকে থাকেন। তাঁকে অনেকটা সৌভাগ্যবান বলতে হয়। অনিল কুম্বলে ও হরভজন সিংয়ের সফলতম স্পিন যুগের শেষে ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর উত্থানপর্ব শুরু হয়। মাঠ পরিবর্তনের সাথে নিজেকে নিয়মিতভাবে পরিবর্তিত করতে সক্ষম হন ও নিজ দেশের পিচের সুবিধে নিয়ে উইকেট লাভে নিজেকে সমৃদ্ধ করে তুলছেন।
২০০৬-০৭ মৌসুমে ১৯ বছর বয়সে নিজ রাজ্য দল তামিলনাড়ুর পক্ষে রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায় দূর্দান্ত অভিষেক হয়। এক মৌসুম বাদেই অবিরাম পরিশ্রম করে ক্যারম বলে আয়ত্ত্ব আনেন। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে অজন্তা মেন্ডিস তা ধরে রাখতে সক্ষম হলেও তিনি নিরবিচ্ছিন্নভাবে লেগে থাকেন। এছাড়াও, দিলীপ ট্রফিতে দক্ষিণাঞ্চলের পক্ষে নিয়মিতভাবে অংশ নিচ্ছে। খেলার ধারাবাহিকতা রাখার সুবাদে ইন্ডিয়ান টি২০ লীগের দ্বিতীয় মৌসুমে নিজেকে তুলে ধরেন। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের ২০১০ সালের আসরে চেন্নাই সুপার কিংসের পক্ষে খেলেন। শুরুটা অবশ্য তেমন ভালো হয়নি। পরবর্তীতে অবশ্য দারুণ খেলার স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর আস্থা কুড়ান। এছাড়াও, তামিলনাড়ুর পক্ষে বল ও ব্যাট – উভয় বিভাগেই সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। জাতীয় দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা পান।
২০১০ সাল থেকে ভারতের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। মে, ২০১০ সালে ২৩ বছর বয়সে জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় সিরিজকে ঘিরে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করে। ৫ জুন, ২০১০ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার অপর দল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ৩২ বল থেকে ৩৮ রান ও ২/৫০ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। অক্টোবরে নিজ দেশে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন-ওডিআই নিয়ে গড়া সিরিজে খেলার সুযোগ পান। একটি খেলায় নয় ওভারে ১/৩৪ বোলিং করেন। তবে, এর পরপরই ৬২-এর অধিক গড়ে হতাশাব্যঞ্জক বোলিং করলে তাঁর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েন।
২০১০-১১ মৌসুমে দলে আসা-যাবার পালায় ছিলেন। বিস্ময়করভাবে তাঁকে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় হরভজন সিং ও পিযুষ চাওলা’র সাথে ১৫-সদস্যের ভারত দলে রাখা হয়। তবে, মাত্র দুই খেলায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান ও তেমন সফলতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। হরভজন সিংয়ের কারণে খুব কমই দলে খেলার সুযোগ পেতেন। তন্মধ্যে, কোয়ার্টার-ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেছিলেন। মার্চ, ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অংশ নেয়ার মাধ্যমে বিশ্বকাপে প্রথম খেলেন। নির্ধারিত দশ-ওভারে ২/৪১ পান। বিশ্বকাপে তাঁর দল শিরোপা জয় করলেও সেমি-ফাইনাল কিংবা ফাইনালে তাঁকে খেলানো হয়নি। এরপর থেকেই ভারতের স্পিন বোলিং আক্রমণের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে বর্তায়। ভারতীয় পরিবেশেই অধিকাংশ সফলতার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেন।
২৫ বছর বয়সে ২০১১-১২ মৌসুমে নিজ দেশে ড্যারেন স্যামি’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ৬ নভেম্বর, ২০১১ তারিখে দিল্লিতে শুরু হওয়া সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে উমেশ যাদবের সাথে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। ঐ খেলায় নয় উইকেট দখল করেন। এরফলে, নরেন্দ্র হিরবাণী’র ১৬ উইকেট লাভের পর অভিষেকে দ্বিতীয় ভারতীয় বোলার হিসেবে সেরা খেলা উপহার দেন।
বেশ ভালো খেলেন। খেলায় তাঁর দল ৫ উইকেটে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে ৩/৮১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬/৪৭ নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এরফলে, তৃতীয় ভারতীয় খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেকে এ পুরস্কার লাভের অধিকারী হন। একই সিরিজে তৃতীয় ভারতীয় খেলোয়াড় হিসেবে একই খেলায় শতক হাঁকানোসহ পাঁচ-উইকেট লাভের কীর্তিগাঁথা স্থাপন করেন। পরবর্তীতে, অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কারপ্রাপ্ত হন। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া ঐ সিরিজে ২২ উইকেট পেয়েছিলেন।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের চতুর্থ জোড়া হিসেবে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও প্রজ্ঞান ওঝা এ সিরিজে উভয়ে ২০ বা তদূর্ধ্ব উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। তাঁরা এ দূর্লভ কৃতিত্বের অধিকারী হন। দু’জনে মিলে সর্বমোট ৪২ উইকেট পেয়েছিলেন। অশ্বিন ২২টি ও ওঝা ২০টি উইকেট লাভ করেন। ঐ সিরিজে ভারত দল ২-০ ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিল। এরপর থেকেই তিন ধরনের ক্রিকেটের সবকটিতেই ভারতের প্রধান স্পিনার হিসেবে স্বীয় স্থান পাকাপোক্ত করে ফেলেন। অফ-স্পিন ও ক্যারম বলে বৈচিত্র্যতা আনয়ণে ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হন।
২০১২ সালের শেষদিকে টেস্টে ভারতের দ্রুততম ৫০ উইকেট লাভের অধিকারী হন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে এ মাইলফলক স্পর্শ করেন। প্রথম ষোল টেস্টে নয়বার পাঁচ-উইকেট পান। ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সাল থেকে তিনি আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেন। ২০১২-১৩ মৌসুমে নিজ দেশে শেন ওয়াটসনের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত খেলেন। ২২ মার্চ, ২০১৩ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ৫/৫৭ ও ২/৫৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, রবীন্দ্র জাদেজা’র অসামান্য অল-রাউন্ড নৈপুণ্যে ৬ উইকেটে জয় পেলে স্বাগতিকরা ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।
এ সিরিজে চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ২০ রান ও ২৯ উইকেট দখল করেন। চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এটিই যে-কোন ভারতীয় বোলারের সেরা সাফল্যরূপে স্বীকৃতি পায়। এরফলে, তৃতীয় ভারতীয় বোলার হিসেবে একক সিরিজে ২৫ বা ততোধিক উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ঐ সিরিজে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজ পুরস্কারে ভূষিত হন।
এরপর, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে নিজস্ব দ্বিতীয় টেস্ট শতকসহ অষ্টাদশ টেস্টে অংশ নিয়ে ১০০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এরফলে, ইরাপল্লী প্রসন্নের ২০ টেস্ট থেকে ১০০ উইকেট দখলের ন্যায় ভারতীয় রেকর্ড নিজের করে নেন। রোহিত শর্মা’র সাথে সপ্তম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ ২৮০ রান তুলেন। এছাড়াও, টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যে-কোন উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
২০১৩ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা বিজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। পাঁচ খেলায় অংশ নিয়ে ৮ উইকেট দখল করে যৌথভাবে পঞ্চম সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীতে পরিণত হন। তন্মধ্যে, ২০-ওভারের চূড়ান্ত খেলায় নির্ধারিত চার ওভারে ২/১৫ পান। এরপর থেকেই ওডিআই দলে নিয়মিত সদস্যের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন।
সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে তাঁর মাঝে বোলিংয়ে জড়তা ভাব লক্ষ্য করা যায় ও বোলিং ভঙ্গীমা নিয়ে প্রশ্নবোধকতা সৃষ্টি হয়। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে দল থেকে বাদ পড়েন। নিজ দেশের বাইরে ও স্পিন অনুপযোগী পরিবেশেও নিজেকে সামলে নেন। ২০১৪-১৫ মৌসুমে বিদেশের মাটিতে সাফল্য পেতে শুরু করেন। আবারও নিজেকে ভারতের শীর্ষ স্পিনারের ভূমিকায় অবতীর্ণ করেন।
২০১৫ সালে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ২০ আগস্ট, ২০১৫ তারিখ থেকে শুরু হওয়া কলম্বোর পিএসএসে কুমার সাঙ্গাকারা’র সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন। ২ ও ১৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ২/৭৬ ও ৫/৪২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, কেএল রাহুলের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীতে সফরকারীরা ২৭৮ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ২৮ আগস্ট, ২০১৫ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৫ ও ৫৮ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ০/৩৩ ও ৪/৬৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, চেতেশ্বর পুজারা’র ব্যাটিংয়ের কল্যাণে সফরকারীরা ১১৭ রানে জয়লাভ করে ও ২-১ ব্যবধানে তাঁর দল সিরিজ জয় করে। এ সিরিজে তিনি অপূর্ব খেলেন। ২১ উইকেট লাভের পাশাপাশি ৯৪ রান সংগ্রহ করেন। ফলশ্রুতিতে, ম্যান অব দ্য সিরিজ পুরস্কার পান।
একই বছরের শেষদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজ থেকে ৩১ উইকেট পান। বোলিংয়ে বৈচিত্র্যতা আনয়ণে সফলতা পান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়েও কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছেন। অফ-স্পিন বোলার হিসেবে আবির্ভূত হবার পূর্বে এক পর্যায়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামতেন। ইতোমধ্যে টেস্টে নিজ নামের পার্শ্বে ছয়টি শতরানের ইনিংস লিখিয়েছেন। এছাড়াও, ওডিআইয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৬৫ রান তুলেছেন।
২০১৫-১৬ মৌসুমে নিজ দেশে হাশিম আমলা’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ৫৬ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ২/২৬ ও ৫/৬১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। অজিঙ্কা রাহানে’র জোড়া শতকের বদৌলতে স্বাগতিকরা ৩৩৭ রানে জয়লাভ করলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ১০১ রান সংগ্রহসহ ৩১ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৫ ও ২০১৬ সালে টেস্টে শীর্ষস্থানীয় উইকেট শিকারীতে পরিণত হন। টেস্ট অভিষেকের পর থেকে বিশ্বে সর্বাধিক উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। তবে, টেস্টে তাঁর উত্থান ঘটলেও সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে খেলার মান কমতে শুরু করে ও পরবর্তীতে সাধারণ মানে পরিণত হতে থাকে।
অফ-স্পিন বোলিংয়ের পাশাপাশি তাঁর ব্যাটিংও বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে। টেস্টে ভারতের ছয় নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নেমে থাকেন। তিন সহস্রাধিক রানের পাশাপাশি পাঁচ শতাধিক উইকেট পেয়েছেন।
২০১৪ সালে অর্জুন পদক লাভ করেন। ২০১৬ সালে আইসিসি বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদা লাভসহ ২০১৩, ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে আইসিসি বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে মনোনীত হন। ২০১০-১১ ও ২০১৫-১৬ মৌসুমে ভারতের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিসিসিআই কর্তৃক দিলীপ সরদেশাই পুরস্কার পান। ২০১২-১৩ মৌসুমে বিসিসিআই কর্তৃক বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে পলি উমরিগড় পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬-১৭ মৌসুমে সিয়েট বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন।
তৃতীয় ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট অভিষেকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার লাভের অধিকারী হন। ১২৮ রান খরচায় খেলায় নয় উইকেট নিয়ে অভিষেকে ভারতের দ্বিতীয় সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে দুইবার খেলায় শতকসহ পাঁচ-উইকেট পান। ৯ টেস্ট থেকে ৫০ উইকেট দখল করে ভারতের দ্রুততম বোলারের মর্যাদা পান। ১৮ টেস্টে অংশ নিয়ে শততম উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করে নিজ প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। এ পর্যায়ে ভারতের দ্রুততম ও সর্বকালের তালিকায় পঞ্চম দ্রুততম শত উইকেট পান। অস্ট্রেলীয় স্পিনার ক্ল্যারি গ্রিমেটের পর দ্রুততম ২০০ টেস্ট উইকেট পান। ২০১৭ সালের শুরুতে ডেনিস লিলি’র রেকর্ড ভেঙ্গে নিজের করে নেন। ৪৫ টেস্ট থেকে ২৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ৫৪তম টেস্টে ৩০০ উইকেট নিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েন। চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২৮ উইকেট দখল করে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর মর্যাদা পাচ্ছেন। ৬৬ টেস্টে ৩৫০ উইকেট নিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েন।
ব্যাট হাতে নিয়েও ধ্রুপদীশৈলীর ব্যাটিং করে থাকেন। অফ-স্পিনার হিসেবে আবির্ভূত হবার পূর্বে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামতেন। নিচেরসারির দারুণ ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি ঘটিয়েছেন। সঠিকমানের শট খেলে নিজস্ব প্রথম টেস্ট সিরিজেই শতক হাঁকানোর কৃতিত্বের অধিকারী হন।
১২ জুন, ২০১০ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি২০আইয়ে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। নির্ধারিত চার ওভারে ১/২২ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। সুন্দর খেলার কারণে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় সিরিজে নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। তবে, প্রজ্ঞান ওঝা ও রবীন্দ্র জাদেজা’র শ্রেয়তর খেলা প্রদর্শনের কারণে তাঁকে আর ঐ সিরিজে খেলানো হয়নি।
২০১৪ সালের এশিয়া কাপে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশগামী ভারতীয় দলে পুণরায় স্বীয় স্থান ফিরে পান। ২০১৪ সালের আইসিসি বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায়ও অংশ নেন তিনি। ঐ প্রতিযোগিতাগুলোয় ভারতের সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দারুণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে আইসিসি ও ক্রিকইনফো – উভয় সংস্থা থেকেই ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে প্রতিযোগিতার সেরা একাদশে তাঁকে ঠাঁই দেয়া হয়।
প্রথম ভারতীয় বোলার হিসেবে টি২০আইয়ে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। টি২০আইয়ে ৫২ উইকেট নিয়ে ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হয়েছেন। এক মৌসুমে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে সর্বাধিক ৬৪ উইকেট পেয়েছেন।
২০১৭ সাল বাদে ইন্ডিয়ান টি২০ লীগের প্রত্যেক আসরেই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিলেন ও সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ঐ সালে আঘাতের কারণে খেলতে পারেননি। আইপিএলে বোলিং উদ্বোধনে নামতেন, শেষদিকেও বোলিং করতেন, দলের প্রয়োজনে উইকেট লাভে তৎপরতা দেখাতেন। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ম্যান অব দ্য সিরিজ পুরস্কার লাভ করেন।
এমএস ধোনি’র ছত্রচ্ছায়ায় অবস্থান করে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চেন্নাই সুপার কিংসের পক্ষে খেলেন। ২০১০ ও ২০১১ সালে ১৩ ও ২০ উইকেট নিয়ে উপর্যুপরী দলের শিরোপা বিজয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। চেন্নাই সুপার কিংসের উপর দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হলে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসের সদস্য হন। তন্মধ্যে, ২০১৬ সালে নিজস্ব শততম উইকেট পান। ২০১৮ সালে ₹৭.৬ কোটি রূপীর বিনিময়ে কিংস ইলাভেন পাঞ্জাব দলের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। সেখানে অবস্থানকালে ২৯ বছর বয়সে তিনি দলের অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। ঐ দুই মৌসুমে ২৫ উইকেট শিকার করেছিলেন। ২০১৯ সালের আইপিএল আসরে জোস বাটলারকে মানকড়ীয় পন্থায় বিদেয় করে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছেন। ২০২০ সালে দিল্লির সদস্য হন।
৩২ বছর বয়সে ২০১৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধ্বে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে নটিংহ্যামশায়ারের পক্ষে খেলার চুক্তিবদ্ধ হন। অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার জেমস প্যাটিনসনের যোগদানের ফলে নটসের বিদেশী খেলোয়াড় হিসেবে যুক্ত হন। ক্লাবে স্বল্পকালীন সময় অবস্থান করেন ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড় হিসেবে ব্যাট ও বল – উভয় বিভাগেই সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। মাত্র কয়েকটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন ও দলটি প্রথম বিভাগে সর্বনিম্ন স্থানে পৌঁছে। ট্রেন্ট ব্রিজে এসেক্সের বিপক্ষে প্রথম খেলেন। ৬০ ওভারে ৩/১৬২ বোলিং পরিসংখ্যান গড়লেও প্রতিপক্ষ দল ইনিংস ব্যবধানে জয়ী হয়। দুই খেলা পর সারের বিপক্ষে ৬/৬৯ ও ৬/৭৫ লাভ করেন। সব মিলিয়ে পাঁচ খেলা থেকে ৩৪ উইকেট পান। ব্যাট হাতে নিয়ে ৩৭ ঊর্ধ্ব গড়ে ৩৩৯ রান তুলেন। সর্বোচ্চ করেন অপরাজিত ৬৬ রান। ফলশ্রুতিতে, ব্যাটিং গড়ে কাউন্টি দলটির শীর্ষে ও বোলিং গড়ে দ্বিতীয় স্থানে পৌছেন। এ মৌসুম শেষে টেস্ট খেলার জন্যে ভারতে চলে যান। এ পর্যায়ে ৩৪২ উইকেট নিয়ে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট সংগ্রাহক ছিলেন।
২০১৬-১৭ মৌসুমে নিজ দেশে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৮ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে ইন্দোরে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা সাফল্য ছিল ৭/৬৬। খেলায় তিনি ৬/৮১ ও ৭/৫৯ লাভ করেন। তবে, ব্যাট হাতে মাঠে নামেননি। তাঁর স্মরণীয় বোলিং সাফল্যে স্বাগতিকরা ৩২১ রানে জয় পেলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৭ সালে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ৩ আগস্ট, ২০১৭ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ৫৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৫/৬৯ ও ২/১৩২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, রবীন্দ্র জাদেজা’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ৫৩ রানে জয়ে পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
২০১৯-২০ মৌসুমে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৩/৯৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ০ ও ৪ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসেই টিম সাউদি’র শিকারে পরিণত হন। তবে, টিম সাউদি’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
২০২০-২১ মৌসুমে নিজ দেশে জো রুটের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণ খেলেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ তারিখে চেন্নাইয়ে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ১৩ ও ১০৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৫/৪৩ ও ৩/৫৩ বোলিং বিশ্লেষণ গড়েন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর সুবাদে স্বাগতিকরা ৩১৭ রানের ব্যবধানে টেস্টে জয় পায় ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ৪ মার্চ, ২০২১ তারিখে আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ১/১৪ ও ০/১৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, অপরাজিত ৯৬ রানের ইনিংস খেলেন। তবে, ঋষভ পন্তের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলায় স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৫ রানে জয় পেয়ে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। ১৮৯ রান ও ৩২ উইকেট লাভ করে অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কারণে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২১-২২ মৌসুমে নিজ দেশে টম ল্যাথামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণ খেলেন। ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ তারিখে মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। একমাত্র ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে শূন্য রানে বিদেয় নেন। এছাড়াও, ৪/৮ ও ৪/৩৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, মৈয়াঙ্ক আগরওয়ালের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলায় তাঁর দল ৩৭২ রানে জয় পেয়ে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। ৭০ রানসহ ১৪ উইকেট দখল করে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২২-২৩ মৌসুমে কেএল রাহুলের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে বাংলাদেশ সফরে যান। ২২ ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৪/৭১ ও ২/৬৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৪২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। তাঁর অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা তিন উইকেটে জয় পায় ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেছিলেন।
২০২৩-২৪ মৌসুমে নিজ দেশে বেন স্টোকসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ৭ মার্চ, ২০২৪ তারিখে ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে দারুণ খেলেন। খেলায় তিনি ৪/৫১ ও ৫/৭৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, কুলদীপ যাদবের অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে ঐ টেস্টে তাঁর দল ইনিংস ও ৬৪ রানে জয়লাভসহ ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
২০২৪-২৫ মৌসুমে নিজ দেশে টম ল্যাথামের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে ওয়াংখেড়েতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ০/৪৭ ও ৩/৬৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৬ ও ৮ রান সংগ্রহের পাশাপাশি একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, এজাজ প্যাটেলের স্মরণীয় বোলিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা মাত্র ২৫ রানে জয়লাভ করলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
একই মৌসুমে রোহিত শর্মা’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২২ ও ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৫৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ট্রাভিস হেডের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে সফরকারীরা ১০ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
টেস্টের ঊনিশজন শীর্ষ অল-রাউন্ডারের অন্যতম হিসেবে ২০০ উইকেট ও ৩০০০ রানের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী। ভিভিএস লক্ষ্মণের অভিমত, আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামার পাশাপাশি খেলা জয়ী বোলার তিনি। আকাশ চোপড়া’র মতে, নিজ দেশে ডিউকস বলেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন। সঞ্জয় মাঞ্জরেকার মন্তব্য করেন যে, দায়িত্ব সচেতন খেলোয়াড় তিনি। তাঁর উইকেট সংগ্রহের যোগ্যতা নিশ্চিত বলা যায়। রিকি পন্টিং মনে করেন যে, যদি তিনি ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলেন তাহলে দূর্দান্ত ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ১৩ নভেম্বর, ২০১১ তারিখে শৈশবের বান্ধবী পৃথ্বী নারায়ণনের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েছেন। ১১ জুলাই, ২০১৫ তারিখে এ দম্পতির আখিরা নাম্নী এক কন্যা সন্তান রয়েছে। এরপর, ডিসেম্বর, ২০১৬ সালে আধ্যা নাম্নী দ্বিতীয় কন্যার জন্ম হয়।