Skip to content

৬ এপ্রিল, ১৯৫৬ তারিখে মহারাষ্ট্রের রাজাপুর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

লম্বাটে ও শীর্ণকায় গড়নের অধিকারী। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুম থেকে ১৯৯১-৯২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বোম্বে দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, স্টাফোর্ডশায়ারের পক্ষে খেলেছেন।

সর্বকালের অন্যতম সেরা ভারতীয় ব্যাটসম্যান। ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৭ সময়কালে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন ও বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হন। অপ্রত্যাশিতভাবে বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় হিসেবে পরিগণিত হন। ১৯৮৭ সালে ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার টেড ডেক্সটার, দুই পরিসংখ্যানবিদ গর্ডন ভিন্স ও রব ইস্টাওয়েকে সাথে নিয়ে প্রণীত ডিলোইটস রেটিংসে বিস্ময়করভাবে তাঁকে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যানের মর্যাদা দেয়া হয়। সাধারণ জনগণ, গণমাধ্যম ও সাবেক ক্রিকেটারেরা এ র‍্যাঙ্কিংয়ে বিমোহিত হয়ে পড়ে ও কম্পিউটারের কারসাজিরূপে উল্লেখ করে। ভারতীয়দের কাছে ক্রিকেটীয় বীর হিসেবে তেমন স্বীকৃতি পাননি তিনি। মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর উপযোগিতা সম্পর্কে তেমন কোন সন্দেহ ছিল না। উইকেটের সম্মুখ বরাবরে ড্রাইভ মারায় তিনি দুর্দমনীয় ছিলেন। খেলা শেষে দলে তাঁর অবদানের বিষয় নিয়ে তেমন কিছু ভাবতেন না, একাকী থাকতেন।

ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তী সুনীল গাভাস্কারের পার্শ্বে থেকে প্রায়শঃই ম্লান হয়ে পড়তেন। তাসত্ত্বেও অল-রাউন্ডার কপিল দেব তাঁকে সুনীল গাভাস্কারের সাথে ‘ছোটে নবাব’ হিসেবে ডাকতেন। ১৯৮৭ সালের শেষদিকে নম্বরের পুণঃবিন্যাস ঘটিয়ে আইসিসি রেটিং প্রথায় রূপান্তরিত করা হলে এ পর্যায়েও তিনি বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড়ের অবস্থান ধরে রাখেন। এ পর্যায়ে বিশ্ববাসী তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেয়। এরপর থেকে অসাধারণ খেলা উপহার দিতে থাকেন। ১৯৮৩ সালের গ্রীষ্মকাল থেকে শুরু করে ১৯৮৭ সালের শেষদিক পর্যন্ত সুনীল গাভাস্কার, ভিভ রিচার্ডসজাভেদ মিয়াঁদাদের চেয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ইনিংসপ্রতি ১৫-২০ রানে নিজেকে এগিয়েছিলেন।

আশির দশকে সন্দেহাতীতভাবে ভারতের শীর্ষ ব্যাটসম্যানের পরিচিতি লাভ করেন। সুনীল গাভাস্কার, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ও মহিন্দর অমরনাথের চেয়ে অধিকতর স্বতঃস্ফূর্ত ও ধারাবাহিতার সাথে রান তুলে নিজেকে এগিয়ে রেখেছিলেন। তখনো পর্যন্ত মাঝে-মধ্যেই সমর্থকেরা খুব কমই কম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করতো। প্রচলিত রয়েছে যে, যদি ডেভিড গাওয়ার ভারতে ও দিলীপ বেঙ্গসরকার ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করতেন তাহলে তাঁরা উভয়েই জাতীয় প্রতীকে পরিণত হতেন। ডেভিড গাওয়ারের ধ্রুপদীশৈলীর ক্রীড়া প্রদর্শন ভারতে অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেলেও ইংরেজদের কাছে সন্দেহজনক ছিল। অপরদিকে পেশাদারী বিমুখতা ও অন্তর্মুখিতার কারণে ভারতীয় তারকার খেতাব থেকে বঞ্চিত হলেও ইংরেজদের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল আকাশচুম্বী।

অনেকগুলো বছর অধিনায়কের দাবীদার হওয়া থেকে তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। তবে, বিস্ময়করভাবে ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা ছুটলে দল নির্বাচকমণ্ডলীর কিছুটা নাগালে চলে আসেন। ভাগ্য তাঁকে প্রচার বিমুখতা রাখলেও ১৬ বছর দলে নিয়মিতভাবে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। এ অর্জনের মাঝে কেবলমাত্র দুইটি খেলায় অংশ নিতে পারেননি। সেগুলো ছিল – ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চূড়ান্ত খেলা ও ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমের ঐতিহাসিক টাই টেস্ট ছিল।

এক খেলায় অভিজ্ঞতাপুষ্ট থাকা অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ইরানী ট্রফি প্রতিযোগিতায় নাগপুরে প্রথম অংশ নেন। খুব কম সময়ই ঘরোয়া ক্রিকেটের আক্রমণাত্মক খেলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে দেন। দর্শনীয়, সঠিকমানের, ধ্রুপদীশৈলীর খেলা উপহার দিলেও নাগপুরের ঐ খেলা ছাড়া আর তাঁকে বিধ্বংসীরূপে খেলতে দেখা যায়নি। ইরানী ট্রফির ঐ ইনিংসের সুবাদে সিকে নায়ড়ু’র কাছ থেকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা কুড়ান। এরপর থেকে ‘কর্নেল’ ডাকনামে পরিচিতি পান। এ ফলাফলের স্বীকৃতিস্বরূপ নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমনার্থে ভারত দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন।

১৯৭৬ থেকে ১৯৯২ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ১১৬ টেস্ট ও ১২৯টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। সুরিন্দর অমরনাথ ও সৈয়দ কিরমানি’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। নিউজিল্যান্ডের পিচে মাঝারিসারির উপযোগী ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁকে ইনিংস উদ্বোধনে নামানো হয়। ঐ টেস্টে তাঁর দল ৮ উইকেটে জয় পায় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। ৭ ও ৬ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। স্বল্প রান সংগ্রহের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বর্ণাঢ্যময় যাত্রা শুরু হয় তাঁর।

একই সফরের ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৬ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ১৬ ও ৩০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। একই সফরের ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন।

মাইকেল হোল্ডিংয়ের বলগুলো অনেকাংশে বডিলাইনের কাছাকাছি পর্যায়ের ছিল ও অধিনায়ক বিষেন বেদীকে ৫ উইকেট পতনের পরপরই ইনিংস ঘোষণা করতে বাধ্য হতে হয়। তাসত্ত্বেও কিংস্টনে পাল্টা আক্রমণ শেনে ৩৯ রানের মারমুখী ইনিংস খেলেন। এ ইনিংস বাদে তাঁর ভূমিকা বেশ নাজুক পর্যায়ের ছিল।

১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে এক পর্যায়ে তাঁকে নিচেরদিকে ব্যাটিংয়ে নামানো হলে এ অবস্থানে থেকে স্বীয় প্রজ্ঞা ও মেধার পরিচয় দেন। সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে ৪৯৩ রানের জয়ের অসম্ভব লক্ষ্যমাত্রায় নেমে বেশ সাহসিকতার সাথে কার্যকর ৭৮ রানের দূর্দান্ত ইনিংস খেলেন। অবশেষে ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে নিজ দেশে আলভিন কালীচরণের নেতৃত্বাধীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট হন। তিন নম্বর অবস্থানে পুণরায় খেলার সুযোগ পান। ইডেন গার্ডেন্সে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। অপরাজিত ১৫৭ রান তুলেন ও সুনীল গাভাস্কারের সাথে ৩৪৪ রানের নিরবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে সুনাম কুড়ান। ঐ সিরিজেই দিল্লিতে অনুষ্ঠিত টেস্টে আরও একটি শতরানের ইনিংস খেলেন।

ইংল্যান্ড সফরে তিনি ক্রিকেটের স্বর্গভূমির প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা জানান দেন। লর্ডসে নিশ্চিত পরাজয়ের কবলে পড়া অবস্থায় ১০৩ রান তুলেন। এরফলে, লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে ঠাঁই করে নেন। এ পর্যায়ে গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথের সাথে ২১০ রানের জুটি গড়েছিলেন। ওভালে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে ভারতের ৪৩৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এক পর্যায়ে বব উইলিসের বলে মাথার পিছন দিকে আঘাত পান।

নিজ দেশে ফিরেও বড় ধরনের রান সংগ্রহের ধারা অব্যাহত রাখেন। ব্যাঙ্গালোরে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শতক হাঁকান। এরপর আসিফ ইকবালের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দলের বিপক্ষে দিল্লি টেস্টে সমূহ পরাজয়ের মুখোমুখি হলে নিজেকে মেলে ধরেন। ৩৯০ রানের অসম্ভব জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় অগ্রসর হলে ১৪৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। এক পঞ্জিকাবর্ষে সহস্র রান তুলেন ও বিশ্বের অন্যতম উদীয়মান তরুণ ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিগণিত হন। পরবর্তী কয়েক বছর তাঁর ব্যাটিংয়ে কিছুটা স্থবিরতা ভাব লক্ষ্য করা যায়।

১৯৮২ সালে পুণরায় বিদেশের মাটিতে স্বরূপ ধারন করেন। পিঠ দেয়ালে থাকা অবস্থায় লর্ডসে ১৫৭ রানের বিস্ময়কর ইনিংস উপহার দেন। অ্যান্টিগুয়ার সেন্ট জোন্সে ম্যালকম মার্শাল, অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং ও উইনস্টন ডেভিসের ন্যায় বোলারদের রুখে দিয়ে মাত্র ১০৩ মোকাবেলান্তে ৯৪ রানের মনোরম ইনিংস খেলেন। তবে, ধারাবাহিকতা রক্ষার অভাবে ১৯৮৩ সালের শীতকাল পর্যন্ত কিছুকাল ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে স্বর্ণালী মৌসুমে থাকা মহিন্দর অমরনাথের কাছে তিন নম্বর অবস্থানে স্থানচ্যুতি ঘটে।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় পরাজয়বরণের পর ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দল ভারত গমনের পর পরিবর্তনের ছোঁয়া তাঁর মাঝে লক্ষ্য করা যায়। ঐ প্রতিযোগিতার গ্রুপ পর্বের খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ম্যালকম মার্শালের বাউন্সারে আঘাত পান। ফলশ্রুতিতে প্রতিযোগিতার পরবর্তী খেলাগুলোয় অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হন। ভারত সফরে ম্যালকম মার্শাল স্বরূপ ধারন করেন ও ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কাছে আতঙ্কের পাত্রে পরিণত হন। এছাড়াও, মাইকেল হোল্ডিং, উইনস্টন ডেভিস ও ওয়েন ড্যানিয়েলের বল মোকাবেলা করে তিনি ব্যাটিংয়ে ঝলকানি দেখান। দুই শতক ও দুই অর্ধ-শতক সহযোগে গড়ের দিক দিয়ে শীর্ষ স্থান অধিকার করেন।

২৯ অক্টোবর, ১৯৮৩ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ঐ টেস্টে ১৫৯ ও ৬৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে স্বাগতিকরা এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

এরপর বোম্বেতে ১৩৫ বল থেকে দূর্দান্ত ১০০ রান তুলেন। এ সিরিজ শেষে ক্লাইভ লয়েড তাঁকে পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে চিত্রিত করেন। মাইকেল হোল্ডিং তাঁকে শক্ত প্রতিরক্ষাব্যূহের অধিকারী ব্যাটসম্যানরূপে আখ্যায়িত করেন। ভারতের তিন নম্বর অবস্থানে পুণরায় স্বীয় স্থান দখল করেন।

১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে ডেভিড গাওয়ারের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দল ভারত সফরে আসে ও মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন সফরকারীদেরকে একচোট নিয়ে রানের ফুলঝুরি ছোটান। তিনি কয়েকটি স্বল্প রানের ইনিংস খেলেন। পরবর্তীতে কানপুরে ১৩৭ রান তুলে ছন্দ ফিরে পান। এ পর্যায়ে তরুণ মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের রেকর্ডসংখ্যক তৃতীয় শতক হাঁকাতে সহায়তা করেন।

১৯৮৫ সালের বেনসন এন্ড হেজেস মিনি বিশ্বকাপের শিরোপা বিজয়ী ভারত দলের অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন। সেমি-ফাইনালে কপিল দেবের সাথে জোড়ালো ভূমিকা রেখে দলের অগ্রযাত্রায় দারুণ প্রভাব ফেলেন। মহিন্দর অমরনাথ, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ও দিলীপ বেঙ্গসরকারের অংশগ্রহণে দৃশ্যতঃ মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ের অবস্থান মজবুত রূপ ধারন করে। স্বেচ্ছায় তিনি চার নম্বর অবস্থানে চলে যান। খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিন পর্যন্ত এ অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নামতেন। এক ধাঁপ পিছিয়ে থেকে সফল হলেও রান সংগ্রহে প্রভাব ফেলে। প্রায়শঃই ব্র্যাডম্যানসুলভ গড়ে রান পেতেন।

শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কার্যকর ইনিংস খেলেন। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে কলম্বোর এসএসসিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে (৯৮*) নব্বুইয়ের কোটায় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের সাথে নিজেকে জড়ান। পরবর্তীতে, ২০০১ সালে সৌরভ গাঙ্গুলী ক্যান্ডিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৮* রান সংগ্রহ করে তাঁর সমকক্ষ হন। এছাড়াও, ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে মাদ্রাজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথ ৯৭* ও ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে দিল্লিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অজিত ওয়াড়েকর ৯১* রান সংগ্রহ করে নব্বুইয়ের কোটায় অপরাজিত ছিলেন।

তবে, ১৯৮৬ সালে কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড সফরে বিস্ময়করভাবে রান সংগ্রহে তৎপরতা দেখাতে শুরু করেন। লর্ডসে উপর্যুপরি তৃতীয় শতকের সন্ধান পান। এ অর্জনটি সফরকারী ব্যাটসম্যানের জন্যে অসম্ভব অর্জন ছিল। সুনিয়ন্ত্রিত পন্থায় অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের মাধ্যমে ভারত দল ১৫ বছর পর ইংল্যান্ডের মাটিতে জয় পায়। পরের খেলাটি সংবাদ শিরোনামে পরিণত হওয়া ১৯ জুন, ১৯৮৬ তারিখে লিডসে অনুষ্ঠিত হয়। মেঘাবৃত আবহাওয়ায় প্রত্যেক বোলারই ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। কোন ব্যাটসম্যানই ৩৬-এর অধিক রান না পেলেও তিনি ৬১ ও ১০২* রানের ইনিংস খেলেছিলেন। তাঁর অনবদ্য ও অপূর্ব ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলায় স্বাগতিকরা ২৭৯ রানের জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। দেশে ফিরেও খেলার এ ধারা অব্যাহত রাখেন। বোম্বেতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৬৪ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন।

সফরকারী শ্রীলঙ্কা দল নাগপুর ও কটকে পরাভূত হয়। ১৫৭ ও ১৬৬ রান তুলেছিলেন তিনি। তন্মধ্যে, শেষের সংগ্রহটি তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা সংগ্রহ ছিল। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে নিজ দেশে দিলীপ মেন্ডিসের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ২৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে নাগপুরে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলেন। চমৎকার খেলেছিলেন। ১৫৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, মনিন্দার সিংয়ের অনবদ্য ক্রীড়াশৈলীতে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১০৬ রানে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। মনিন্দার সিংয়ের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

এরপর, একই সফরের ৪ জানুয়ারি, ১৯৮৭ তারিখে কটকে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১৬৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, দলীয় অধিনায়ক কপিল দেবের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৬৭ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। এ সিরিজে ৩৭৬ রান সংগ্রহ করে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, আব্দুল কাদির ও তৌসিফ আহমেদকে রুখে দিয়ে পুরো শীতকালে স্বতঃস্ফূর্ত রান তুলতে থাকেন। মাদ্রাজে ৯৬ রান তুলে যাত্রা শুরু করেন। আহমেদাবাদে ১০৯ ও ব্যাঙ্গালোরে ৫০ রানের দূরন্ত ইনিংস খেলেন। অশোক মানকড় তাঁকে স্পিনের বিপক্ষে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা করেন।

১৯৮৭ সালের রিলায়েন্স কাপ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ভারত দল সহঃস্বাগতিক দেশের মর্যাদা লাভকালীন তিনি অধিনায়কত্ব লাভের অন্যতম দাবীদার ছিলেন। ঐ প্রতিযোগিতায় তাঁকে কপিল দেবের সহকারী হিসেবে রাখা হয়। দারুণ ছন্দে আরোহণ করে ঐ প্রতিযোগিতায় ৫৭ গড়ে ও ৮৯ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেন। অনেকেরই অভিমত, তিনি উপেক্ষার শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। তবে, সেমি-ফাইনালে ভারত দল বিদেয় নিলে কপিল দেবের পরিবর্তে তাঁকে দলের নেতৃত্ব দেয়ার জন্যে মনোনীত করা হয়েছিল।

অধিনায়ক হিসেবে তাঁর সময়কাল সুখে-দুঃখে মেশানো ছিল। আপাতদৃষ্টিতে বেশ দূর্বলতর ছিল। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, সেগুলো বেশ উঁচু ও নীচুমূখী ছিল। নেতৃত্ব দেয়া ১০ টেস্টের ৭টিই ছিল প্রবল প্রতাপশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ভারতে সফরে আসলে অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্টে ১০২ রান তুলেন। কষ্টার্জিত ঐ ইনিংসটি অন্যতম মনোমুগ্ধকর টেস্ট ইনিংস হিসেবে পরিগণিত হয়। তবে, ভিভ রিচার্ডসের দূর্দান্ত শতকে ভর করে সফরকারীরা ৫ উইকেটে জয় তুলে নেয়। এরপর ইডেন গার্ডেন্সে আরও একটি শতরানের ইনিংস খেলেন। তবে, উইনস্টন ডেভিসের বলে কব্জি ভেঙে যায় ও ঐ মৌসুমে খেলার জগৎ থেকে তাঁকে দূরে থাকতে হয়। এ পর্যায়ে ডিলোইট রেটিংসে বিশ্বের ১নং ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করেছিলেন। ১৬ টেস্টে ব্যাটিং গড়কে ৩৮ থেকে ৪৬-এ নিয়ে যান। আট শতকে সহযোগে ১০১.৯৩ গড়ে ১৬৩১ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

প্রথম কয়েকটি টেস্টে একাকী দলকে এগিয়ে নিয়ে গেলেও পরবর্তীতে ভাঙা হাতের কারণে মাঠের বাইরে থেকে নরেন্দ্র হিরবাণী’র বিস্ময়কর সাফল্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে সমতা আনয়ণের বিষয়টি অবলোকন করেন। বোর্ডের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে তাঁর। টেস্ট খেলাগুলোকে ঘিরে ইংরেজ দৈনিকগুলোয় কলাম লিখতে থাকেন। প্রকাশ্যে গণমাধ্যম থেকে দূরে থাকার নীতি অনুসরণ করার বিষয়টি অবজ্ঞা করেন। অধিনায়কের আঘাতের সুযোগে বিসিসিআই তাঁকে ছয় মাসের জন্যে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। শারজায় গুরুত্বহীন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। পরবর্তী মৌসুমের শুরুতে স্বরূপ ধারন করেন।

শারজায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস আক্রমণ রুখে দিয়ে ৭৬ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেলেন। আঘাত থেকে ফিরে এসে প্যাট প্যাটারসন, কার্টলি অ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশ ও উইনস্টন বেঞ্জামিনের বল হেলমেটবিহীন মোকাবেলা করেছিলেন। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ প্রতিযোগিতায় ভারতে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন।

১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে নিজ দেশে জন রাইটের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে ভারত দল ২-১ ব্যবধানে সিরিজে জয় করে। ১২ নভেম্বর, ১৯৮৮ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ভারতের প্রথম ইনিংসে দলের সংগ্রহ ১৮৪/২ থাকাকালীন ৭৩ রান তুলে মাঠের বাইরে চলে যান। এরপর, দলের সংগ্রহ ২৫৪/৫ থাকাকালে পুণরায় মাঠে নামেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে একবার ব্যাটিংয়ে নেমে তিনি ৭৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ১৭২ রানে জয় পেলে স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

দূর্ভাগ্যজনকভাবে নিজস্ব শততম টেস্টে বিপরীতমুখী ফলাফলের সাথে জড়িয়ে পরেন। দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যর্থ হন। ২৫ ও শূন্য রান করেছিলেন। এ সিরিজটিই তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বশেষ সাফল্য ছিল। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত পরবর্তী সিরিজটি বিপর্যয়কর ছিল।

আশির দশকের সূচনালগ্নে দ্রুতগতিসম্পন্ন ক্যারিবীয় বোলারদের বিপক্ষে হাল্কা ওজনের ব্যাট ব্যবহার করতেন। এরফলে প্রায়শঃই কাটের মাধ্যমে রান সংগ্রহে তৎপরতা দেখাতেন। প্রয়োজনে পুলের সাহায্যে রান তুলতেও দ্বিধাবোধ করতেন না। এক পর্যায়ে সামনের পায়ের উপরে ভর করে সফলতা লাভের পাশাপাশি দ্রুতগতির বোলারদেরকেও একচোট নেন। ভারতের মাটিতে কোর্টনি ওয়ালশ, প্যাট প্যাটারসন ও উইনস্টন বেঞ্জামিনের বল থেকে রানে পেলেও তা ১৯৮৩ সালের তুলনায় বেশ ধীরলয়ে সংগৃহীত হয়েছিল। যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে যান, তখন তাঁর এ কৌশল গ্রহণ ব্যর্থতায় রূপ নেয়। ভারতে দল চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে পরাভূত হয়। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন।

স্বাক্ষাৎকারে দলীয় ব্যাটসম্যানদের উপর ক্ষোভ ঝরান। এরফলে তাঁর জনপ্রিয়তায় বিরূপ প্রভাব ফেলে। বিসিসিআইয়ের অনুমতি ব্যতিরেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গমনের কারণে অন্য পাঁচজন ক্রিকেটারের সাথে তাঁকেও দুই বছর নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়। এ নিষেধাজ্ঞা পরবর্তীতে প্রত্যাহার করে নেয়া হলেও তাঁর উপরে থেকে যায়।

পরবর্তী মৌসুমে কৃষ শ্রীকান্তকে অধিনায়ক হিসেবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হয়। এরপর পাকিস্তান গমনার্থে মানসিক চাপের বিষয়টি উল্লেখ করে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। এর পরপরই নিউজিল্যান্ড গমনে তাঁকে উপেক্ষিত করা হয়। নবজ্যোৎ সিধু’র আঘাতের কারণে তাঁকে পরবর্তীতে দলে যুক্ত করা হয়। নেপিয়ার টেস্টে শূন্য রানে দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। অকল্যান্ডে ধৈর্যশীল ৪৭ রান সংগ্রহ করেন। অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের সাথে শতরানের জুটি গড়ে রাজ সিং দুঙ্গারপুরের ’৯০ দশকের সেরা দলে ঠাঁই পান।

১৯৮৯-৯০ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯০ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৬৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ইয়ান স্মিথের অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্র হলেও স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

১৯৯০ সালের গ্রীষ্মে ইংল্যান্ড গমনার্থে দলের সদস্য হন। এ দেশের বিপক্ষেই সুখকর স্মৃতি ও অগণিত রান পেয়েছেন। একদিনের সিরিজে দুইটি মনোমুগ্ধকর ইনিংস উপহার দেন। তবে, টেস্টে বিফল হন। লর্ডসের প্রাচুর্যতায় পরিপূর্ণ খেলায় উপর্যুপরি চতুর্থ শতক হাঁকানোর দিকে অগ্রসর হলেও ৫২ রানে থেমে যান। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া গমনার্থে তাঁকে দলে রাখা হয়নি। দল নির্বাচকমণ্ডলী তরুণদেরকে অগ্রাধিকার দেন। এছাড়াও শারীরিক সুস্থতার বিষয়টিও জড়িত ছিল।

দলে পুণরায় অন্তর্ভুক্তির পূর্বে ঘরোয়া পর্যায়ের ক্রিকেটে শেষ ঝলকানি দেখান। হরিয়াণার বিপক্ষে রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় নাটকীয় ফলাফলে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। শেষদিনে বিদ্যুৎগতিতে ১৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। প্রায় অসম্ভব জয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন মাত্র দুই রানের জন্যে তা সম্ভবপর হয়নি। কপিল দেব ও দিলীপ বেঙ্গসরকারের মধ্যে অন্যতম ধ্রুপদীশৈলীর সাহসী ইনিংস ছিল। বোম্বে থেকে আসা বেঙ্গসরকার সেরা অল-রাউন্ডারের বিপক্ষে এ পর্বে সফল ছিলেন। তাঁর বল থেকে দুইটি ছক্কা এবং যোগেন্দ্র ভাণ্ডারী’র পাঁচ বল থেকে ৬, ৪, ৬, ৬ ও ৪ হাঁকান। অবেয় কুরুবিল্লা রান-আউটের শিকারে পরিণত হলে বোম্বে দলকে নিরাশ হতে হয়। অশ্রুসিক্ত নয়নে তিনি মাঠে বসে পড়েন। তবে, এ ইনিংসের কল্যাণে তাঁর অস্ট্রেলিয়া গমনের পথ সুগম হয়।

১৯৯১-৯২ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। শেষ সিরিজটি অবশ্য সেরা ব্যাটসম্যানের জন্যে সুখকর হয়নি। প্রথম তিন টেস্ট থেকে দুইটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেললেও ভারতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁকে একদিনের খেলাগুলো থেকে বাইরে রাখে। তৃতীয় ও চতুর্থ টেস্টের মাঝে বেনসন এন্ড হেজেস ত্রি-দেশীয় সিরিজের মাঝখানের তিন সপ্তাহ মাঠের বাইরে অলস সময় অতিবাহিত করেন। এরপর টেস্ট শুরু হলে তিনি ছন্দ হারিয়ে ফেলেন।

১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। এক ও চার রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলায় তাঁর দল ৩০০ রানে পরাজিত হলে স্বাগতিকরা ৪-০ ব্যবধানে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ভারতে ফিরেও খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা ইনিংস খেলেন। রঞ্জী ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে মধ্যপ্রদেশের বিপক্ষে ২৮৪ রান তুলেন। নরেন্দ্র হিরবাণী ও রাজেশ চৌহানের বলে রানের ফুলঝুরি ছোটান। তবে, দিল্লির বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে বোম্বে দলের বিদেয় নেয়ার প্রেক্ষিতে ক্রিকেট থেকে নিজের অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। অবসর গ্রহণকালীন সুনীল গাভাস্কারের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৬ টেস্টে অংশগ্রহণ, ৬৮৬৮ রান ও ১৭ শতক হাঁকান। ৪২.১৩ গড়ে রান পেলেও খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে এসে গড় বেশ বৃদ্ধি পায়।

বেশ লম্বাটে গড়নের অধিকারী ছিলেন। ব্যাটিংকালে পরিহিত গ্লাভস প্যাড স্পর্শ করতো। মাঠের চারদিকে দৃষ্টিপাত করতেন। দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নেন, হাতল ধরার দিকে নজর দেন, বোলারের দিকে তাকান, নিচের ঝুঁকেন, মাথা উঁচু করেন। এরপর বল না আসা পর্যন্ত এ ধারা চলমান রাখেন। সবসময় না হলেও বল আসার পূর্বে সামনের পায়ের ব্যবহার ঘটাতেন। কভার পয়েন্ট ও এক্সট্রা-কভার অঞ্চলে ড্রাইভের মাধ্যমে বল ঠেলে দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। তাঁর অন-ড্রাইভগুলো বেশ দৃষ্টিনন্দন ছিল। মিড-অন ও মিড-উইকেটের মাঝামাঝি বল ফেলে দীর্ঘদিন ধরে ইংরেজ বোলারদের কাছ থেকে এ শটটি ‘রাইফেল-শট’ নামে পরিচিতি লাভ করে। তরুণ বয়সে হুক খেলতে ভালোবাসতেন। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় তা থেকে দূরে সড়ে যান। তবে খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে রান খরায় ভুগতে থাকলে পুণরায় তা খেলতে শুরু করেন। পাশাপাশি দর্শনীয়তার সাথে পুল মারতেন। দিল্লিতে মাইকেল হোল্ডিংয়ের বল থেকে এ সাফল্য পান। এক সময়ের মন্ত্রণাদাতা সুনীল গাভাস্কারের সাথে মতবিরোধে লিপ্ত হন। তবে, অধিকাংশ সময়েই তাঁরা একত্রে খেলেছিলেন। বিসিসিআইয়ের সাথে খুব বেশী মতবিরোধ ঘটেনি তাঁর। তবে, দলে দায়বদ্ধতার প্রশ্নে তাঁর ভূমিকা নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেননি। এমনকি খেলোয়াড়ী জীবন থেকে দীর্ঘ সময় পরও এ চিন্তাধারার ব্যতয় ঘটেনি।

১৯৭৬ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৮১ সালে অর্জুন পদক ও ১৯৮৭ সালে পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও, ১৯৮৭ সালে উইজডেন বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন।

মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার নির্বাচনে বিলাসরাও দেশমুখের কাছে পরাজিত হন। আশির দশকের শেষদিকে শ্রীচক্র টায়ার্সের বিজ্ঞাপন চিত্রে তাঁকে দেখা যায়। যাত্রী হিসেবে অপেক্ষারত অবস্থায় মোটর সাইকেলে কৃষ্ণমাচারী শ্রীকান্তের পিছনে আরোহী ছিলেন। গৃহে অবস্থানকালে ক্রিজে অবস্থানের বিষয়ের আলাপচারিতায় মগ্ন থাকেন। আশির দশকের ভীতিদায়ক পেস বোলারদের মুখোমুখি হবার বিষয়ের আলোকপাত করতেন। ম্যালকম মার্শালের সাথে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশ উল্লেখযোগ্য ছিল।

এক পর্যায়ে প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সময়কালে বিসিসিআইয়ের দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।