১ অক্টোবর, ১৯৩৭ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন। উইকেটের চতুর্পার্শ্বে স্ট্রোকের ফুলঝুড়ি ছোটাতেন। তবে, ড্রাইভের মাঝেই তিনি তাঁর নান্দনিকতা ও শক্তিমত্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেন। এছাড়াও, তিনি অফ-স্পিন বোলিং করে দলে ভূমিকা রাখতেন। ১৯৫৪-৫৫ মৌসুম থেকে ১৯৭১-৭২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে করাচী, লাহোর, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স, পাকিস্তান রেলওয়েজ, পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট ও পাঞ্জাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় দলের পক্ষে খেলেছেন।
১৯৫৮ থেকে ১৯৭৩ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ৪১ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে আব্দুল কারদারের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ১৭ জানুয়ারি, ১৯৫৮ তারিখে ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। নাসিম-উল-গণি ও হাসিব আহসানের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১৩ ও ৬৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, হানিফ মোহাম্মদের ত্রি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ওয়াজির মোহাম্মদের সাথে ১৬৯ রানের জুটি গড়ে দ্বি-পক্ষীয় নতুন রেকর্ড গড়েন। পরবর্তীতে, ২৯ নভেম্বর, ১৯৯৭ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ইনজামাম-উল-হক (১৭৭) ও আমির সোহেলের (১৬০) মধ্যকার তৃতীয় উইকেটে ৩২৩ রানের জুটি গড়লে তাঁদের রেকর্ড ভেঙ্গে পড়ে। নিজস্ব প্রথম টেস্ট সিরিজে ৫০৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। বড় ধরনের রান সংগ্রহের দিকেই তাঁর নজর ছিল। টেস্ট পর্যায়ে পাঁচটি শতকের তিনটিই দেড় শতাধিক রানের ছিল।
১৯৬২ সালে ইংল্যান্ড সফরে নিজের স্বাভাবিক সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ভঙ্গী পাল্টিয়ে ফেলেন। সিম উপযোগী পিচে ফাস্ট বোলারদেরকে আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের প্রয়াস চালান। তবে, এ কৌশল গ্রহণ সাময়িক সফলতা এনে দিয়েছিল।
১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে হানিফ মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২২ জানুয়ারি, ১৯৬৫ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১১ ও ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৪০ ও ০/০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৬৭ সালে হানিফ মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১০ আগস্ট, ১৯৬৭ তারিখে নটিংহামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৪৪ ও ৬৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
দূর্ভাগ্যজনকভাবে টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের আকস্মিক ইতি ঘটিয়ে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে পিঠের আঘাতের কারণে নিজেকে অপ্রস্তুত ঘোষণা করে খেলায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। এরপূর্বে মেলবোর্নে ডেনিস লিলি’র সাথে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে মেজাজ বিগড়ে ফেলেন। সিডনিতে ডেনিস লিলি তাঁর দক্ষতার বিকাশ ঘটান ও পাকিস্তান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সাঈদ আহমেদের আঘাতের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে দেশে ফেরৎ পাঠায়।
এক পর্যায়ে পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে তিনটি টেস্টে দলকে ড্র করান। ১৯৭২-৭৩ মৌসুমে ইন্তিখাব আলমের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭২ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৫০ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলায় সফরকারীরা ৯২ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
ইউনুস আহমেদ সম্পর্কে তাঁর সৎভাই ছিলেন। ২০ মার্চ, ২০২৪ তারিখে লাহোরে ৮৬ বছর ১৭১ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।