Skip to content

২৭ জুলাই, ১৯৬৯ তারিখে নাটালের পিটারমারিৎজবার্গে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। সর্বোপরি, ফিল্ডিংয়ে তাঁর অসম্ভব দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

১৯৮৮-৮৯ মৌসুম থেকে ২০০৩-০৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন সরব রেখেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে কোয়াজুলু-নাটাল ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে গ্লুচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, আয়ারল্যান্ডের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৯৬ সালে আটলান্টা অলিম্পিক প্রতিযোগিতাকে ঘিরে হকির যাচাই-বাছাইয়ে অংশগ্রহণের জন্যে আমন্ত্রণ পান। তবে, আঘাতের কারণে বাদ পড়েন।

১৯৯২ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ৫২ টেস্ট ও ২৪৫টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে সিডনিতে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে বর্ণাঢ্যময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সূত্রপাত ঘটান।

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। মার্চ, ১৯৭০ সালের পর নিজ দেশে এটি দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টেস্ট খেলা ছিল। ১৩ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। জিমি কুক, ব্রায়ান ম্যাকমিলান, ব্রেন্ট শ্যুলজ ও ওমর হেনরি’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৪১ ও ২৬* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। প্রবীণ আম্রে’র অসাধারণ শতকে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৯৩ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলেন। ঐ বছর কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২৫ আগস্ট, ১৯৯৩ তারিখে মোরাতুয়ায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৮ ও ১০১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৯১ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। খেলায় তিনি ৮ ও ১০১* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র বীরোচিত ভূমিকায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একদিনের আন্তর্জাতিকে একমাত্র ফিল্ডার হিসেবে খেলায় ৫টি ক্যাচ তালুবন্দী করার ন্যায় বিরল কীর্তির সাথে নিজেকে জড়িত করেন। ১৪ নভেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে মুম্বইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অসাধারণ এ রেকর্ড গড়েছিলেন।

১৯৯৪ সালে কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৮ আগস্ট, ১৯৯৪ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংকালীন আঘাতের কবলে পড়লে ব্যক্তিগত ৮ ও দলীয় ১০৬/৪ থাকাকালে রিটায়ার্ড হার্ট হন। খেলায় তিনি ৮ ও ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ডেভন ম্যালকমের অনবদ্য বোলিংশৈলী প্রদর্শনের সুবাদে সফরকারীরা ৮ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।

১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে নিজ দেশে সেলিম মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৯ জানুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেন। ব্যাট হাতে নিয়ে ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৭২ ও ১৬ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্সের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩২৪ রানে জয় পায়।

২০০০ সালে শন পোলকের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের অন্যতম সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ৬ আগস্ট, ২০০০ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেন। খেলায় তিনি ২১ ও ৫৪ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে মুত্তিয়া মুরালিধরনের শিকারের পরিণত হন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। মুত্তিয়া মুরালিধরনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে আঙ্গুলে আঘাত পেলে খেলোয়াড়ী জীবনের অকাল সমাপ্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। খুব শীঘ্রই অবসর গ্রহণ করেন। ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ তারিখে পচেফস্ট্রুমে কেনিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ ওডিআইয়ে অংশ নেন। তবে, কাউন্টি ক্রিকেটে গ্লুচেস্টারশায়ারের পক্ষে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। সকল স্তরের ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের হিসাব নির্বাহীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর এক পর্যায়ে কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। দক্ষিণ আফ্রিকা দলসহ আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ফিল্ডিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন। এপ্রিল, ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পর্যটন সংস্থা তাঁকে ভারতের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে মনোনীত করে। নভেম্বর, ২০২০ সালে সুইডেনের প্রধান কোচ হিসেবে মনোনীত হন। ব্রায়ান লারা, শচীন তেন্ডুলকর, বীরেন্দ্র শেহবাগ, তিলকরত্নে দিলশান ও ব্রেট লি’র সাথে রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ টি১০ ক্রিকেট লীগকে ঘিরে প্রচারণায় অংশ নেন।

১৯৯৯ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। এসএবিসিথ্রীয়ের গ্রেট সাউথ আফ্রিকান্স টেলিভিশন ধারাবাহিকে শীর্ষ ১০০ দক্ষিণ আফ্রিকানের মধ্যে ভোটে ২৯তম স্থান অধিকার করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। প্রথম পত্নী কেট ম্যাকার্থি টেস্ট ক্রিকেটার কুয়ান ম্যাকার্থি’র ভ্রাতুষ্পুত্রী ছিলেন। কেটের সাথে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে, মেলানি উল্ফ নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। প্রথমদিকের অন্যতম ক্রিকেটার হিসেবে পিতৃত্বজনিত ছুটি নেন। এ পর্যায়ে তাঁর কন্যা জন্মগ্রহণ করে। তিন কন্যা – ড্যানিয়েলা, রোজ ও ইন্ডিয়া রয়েছে। খেলোয়াড়ী জীবনের এক পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় যে-কোন খেলোয়াড়ের তুলনায় সর্বাধিক বাণিজ্যিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন।