২৩ মে, ১৯১৮ তারিখে মিডলসেক্সের হেনডন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে রিস্ট স্পিন বোলিং করতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
উইকেটের সর্বত্র বিস্তৃত স্ট্রোকপ্লের কারণে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। ১৯৩৬ থেকে ১৯৬৪ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে মিডলসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, হোলকার ও ইউরোপিয়ান্সের পক্ষে খেলেছেন।
ডব্লিউজি গ্রেস ও ইয়ান বোথামের ন্যায় স্বল্পসংখ্যক ক্রিকেটারদের অন্যতম হিসেবে তিনি ব্রিটিশ ঐতিহ্য তুলে ধরতে সচেষ্ট ছিলেন। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুর দিকে ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবলে দক্ষ ছিলেন। আর্সেনালের পক্ষে নিয়মিতভাবে আউটসাইড-লেফ্ট এলাকায় তাঁর উপস্থিতি ছিল। তবে, হাঁটুর আঘাতের কারণে ফুটবল খেলা থেকে বিরত থাকেন ও ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এক পর্যায়ে তাঁর হাঁটুর বিষয়ে জাতীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হতো। কিন্তু, নিয়মিতভাবে ব্যথার কবলে পড়া ও ১৯৫০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্যর্থ হলে ক্রিকেটের ইতিহাসে খুব কম ক্রিকেট বিশ্লেষকই তাঁর মাঝে আশার আলো দেখতে পেয়েছিলেন।
১৯৩৭ থেকে ১৯৫৭ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৭৮ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ৫০.০৬ গড়ে ৫৮০৭ রান তুলেছিলেন। ১৯৩৭ সালে নিজ দেশে কার্লি পেজের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। এরই মাধ্যমে বর্ণাঢ্যময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সূচনা ঘটান। ১৪ আগস্ট, ১৯৩৭ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। সিরিল ওয়াশব্রুক ও অস্টিন ম্যাথুজের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৬৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ২/৩৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ মুঠোয় পুড়েছিলেন। তবে, খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৪৭ সালের গ্রীষ্মে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। বিল এডরিচের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৩৮১৬ রান তুলেন। তন্মধ্যে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচ টেস্ট থেকে ৭৫৩ রান তুলেছিলেন। ১৯৪৯ সালে লর্ডসে ১১৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ড দলের সঙ্কট মোচনে অগ্রসর হয়েছিলেন। এ ইনিংসের কল্যাণে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে চিত্রিত করেন। প্রথম দিনে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকে। ১১২/৫ থাকা অবস্থায় ট্রেভর বেইলি’র সাথে উইকেটে যোগ দেন। এ জুটি ১৮৯ রান তুলে। কেবলমাত্র পরিস্থিতির উত্তরণের পর নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট হন। তবে, দিনের শেষভাগে তাঁদের দ্রুত উইকেটের পতন ঘটলে অধিনায়ক জর্জ মান ইনিংস ঘোষণা করেন। তবে, বাদ-বাকী পনেরো মিনিট সফরকারীরা কোন উইকেট না হারিয়েই দিন শেষ করে। এছাড়াও, ১৯৩৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২০ ও ১৯৪৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০৮ রানের ইনিংস খেলে লর্ডস অনার্স বোর্ডে পুণরায় নিজেকে তালিকাভুক্ত করেন।
১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে ওয়ালি হ্যামন্ডের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২১ মার্চ, ১৯৪৭ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলায় দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।
১৯৪৭ সালে নিজ দেশে অ্যালান মেলভিলের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ৭ জুন, ১৯৪৭ তারিখে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৪৭ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৬৫ ও ১৬৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৬ ও ০/১৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে জর্জ মানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের অন্যতম সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৪৮ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৭২ ও ২৮ রান সংগ্রহসহ চারটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৫ ও ১/১১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ২ উইকেটে জয়লাভ করে সফরকারীরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৫১ সালে নিজ দেশে ডাডলি নোর্সের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ৭ জুন, ১৯৫১ তারিখে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১১২ ও ৫ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ঐ খেলায় সফরকারীরা ৭১ রানে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে নিজ দেশে পিটার মে’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। এ সিরিজে স্বাগতিক দল ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে ২-২ ব্যবধানে সিরিজে সমতা আনয়ণে সমর্থ হয়। ১ মার্চ, ১৯৫৭ তারিখে পোর্ট এলিজাবেথের জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০ ও ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৫৮ রানে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ড্রয়ে পরিণত হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবলে দক্ষ ছিলেন। ১৯৩৯ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ২৩ এপ্রিল, ১৯৯৭ তারিখে বার্কশায়ারের উইন্ডসর এলাকায় ৭৮ বছর ৩৩৫ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। আরসিডি কম্পটন ও পিএমডি কম্পটন নামীয় সন্তানের জনক।