২০ মার্চ, ১৯৮৯ তারিখে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ ইনিংস উদ্বোধনে নেমে থাকেন। বামহাতে ব্যাটিং করেন। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০০৪-০৫ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে চট্টগ্রাম বিভাগ ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ তারিখে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম বিভাগ বনাম সিলেট বিভাগের মধ্যকার খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। এছাড়াও, দূরন্ত রাজশাহী, চিটাগং ভাইকিংস, চিটাগং কিংস, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, ঢাকা প্লাটুন, ফরচুন বরিশাল, ওয়েলিংটন, পুনে ওয়ারিয়র্স, সেন্ট লুসিয়া জুকস, লাহোর কালান্দার্স ও পেশাওয়ার জালমির পক্ষে খেলেছেন।
বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে উপমহাদেশের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের আক্রমণাত্মক ধাঁচের অভাবের বিষয়ে প্রবলভাবে আলোচিত হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। পূর্ববর্তী বছরগুলোয় বীরেন্দ্র শেহয়াগ, সনথ জয়সুরিয়া ও শচীন তেন্ডুলকর এ অভাব ক্ষাণিকটা ঘুঁচিয়ে দিয়েছিলেন। তবে, পরবর্তীতে ঐ তালিকায় বাংলাদেশ থেকেও তিনি যুক্ত হন ও বিশ্ববাসীর নজর কাড়েন। তাঁকে ভালবাসুন কিংবা ঘৃণা করুন, কোনক্রমেই তাঁর সহজাত প্রতিভাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। এক সময় অবশ্য অযাচিত দূর্বল শট খেলে উইকেট বিসর্জন দিয়ে অগণিত দর্শক-সমর্থকের মন ভেঙ্গে দিতেন। অবশ্য এ পর্যায়ের বিদায়ের ক্ষেত্রে বোলারদের চাতুর্য্যতাই অধিক ভূমিকা রাখতো। তাসত্ত্বেও, সেরা ইনিংসগুলো খেলে বাংলাদেশের বিজয়ে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতেন। সন্দেহাতীতভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পেয়েছেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের উত্তরণে বামহাতে ব্যাটিং করে দেশের অন্যতম মারকুটে ব্যাটসম্যানরূপে সন্দেহাতীতভাবে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হন। অফ-সাইডের দিকেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও বোলার বরাবর ড্রাইভ মারতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ২১তম জন্মদিনের পূর্বেই বাংলাদেশের অন্যতম নিয়মিত ব্যাটসম্যানের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে, বছরের পর বছর ধরে শীর্ষসারির ব্যাটসম্যানরূপে পরিগণিত হয়ে আসছেন।
২০০৫ সালের শেষদিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পক্ষে খেলাকালীন নিজের প্রতিশ্রুতিশীলতার স্বাক্ষর রাখেন। মাত্র ৭১ বলে ১১২ রান তুলে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন। ২০০৬ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। তাঁর এ সাফল্য দল নির্বাচকমণ্ডলীর অগোচরে ছিল না ও দ্রুত তাঁকে জাতীয় দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
কনিষ্ঠ ভ্রাতা নাফিস ইকবাল খান বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও চাচা আকরাম খান বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। পিতা সন্তানদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ছোটখাটো ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে ৩৩৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত মধ্যাঞ্চল বনাম পূর্বাঞ্চলের মধ্যকার খেলায় দ্বিতীয় বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ত্রি-শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। এরফলে, মার্চ, ২০০৭ সালে রাকিবুল হাসানের সংগৃহীত ৩১৩ রানের সংগ্রহকে ছাঁপিয়ে যান।
২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ১৮ বছর বয়সে ২০০৭ সালে জিম্বাবুয়ে সফর করেন। ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। মাত্র ৫ রান সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাসত্ত্বেও, দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁর উপর আস্থা রেখেছিলেন।
মাত্র দুইটি খেলায় অংশগ্রহণের পরপরই ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্যে আমন্ত্রণ বার্তা পান। ঐ প্রতিযোগিতায় নিম্নমূখী রানের খেলায় ভারতের বিপক্ষে দারুণ খেলেন। সম্মুখসারিতে থেকে আক্রমণধর্মী খেলা উপহার দিয়ে ৫৩ রানের মনোরম অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন ও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বিজয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। জহির খানের বল মোকাবেলা করে সোজা ছক্কা হাঁকান ও প্রতিযোগিতার সেরা শটগুলোর অন্যতম ছিল। তবে, এরপর থেকে ধারাবাহিক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করতে পারেননি। নয় খেলায় অংশ নিয়ে কেবলমাত্র ১৭২ রান সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
২০০৮ সালে মোহাম্মদ আশরাফুলের অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ দলের সাথে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৪ জানুয়ারি, ২০০৮ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে জুনায়েদ সিদ্দিকী ও সাজিদুল ইসলামের সাথে একযোগে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। দৃষ্টিনন্দন ৮৪ রান তুলে অভিষেক পর্বকে স্মরণীয় করে রাখেন। ঐ টেস্টে জোড়া অর্ধ-শতক হাঁকান। তবে, স্বাগতিক দল ৯ উইকেটে জয় তুলে নিয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
এরপর থেকে দৃশ্যতঃ শীর্ষসারিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে সক্ষম হন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম শতরানের ইনিংস খেলেন। ওডিআইয়ে কিছুটা ধারাবাহিকতাহীন ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করলেও টেস্টে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখেন। ২০০৯ সালে সেন্ট ভিনসেন্টে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। ২০০৯ সালে কিংস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম শতরানের ইনিংস খেলে দলকে বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট বিজয়ে প্রভূতঃ সহায়তা করেন।
এরপর, ২০০৯ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেকে আরও মেলে ধরেন। চার্লস কভেন্ট্রি ১৯৪ রান তুলে ওডিআইয়ে পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান সাঈদ আনোয়ারের সমান রান তুলে অপরাজিত থাকেন। তবে, পাল্টা আক্রমণ শেনে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস উপহার দেন। সাতটি চার ও ছয়টি ছক্কা সহযোগে ১৫৪ রান তুলে বাংলাদেশের বিজয়ে অসম্ভব ভূমিকা পালন করেন ও নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েন।
ঢাকায় ভারতের বিপক্ষে ১৫১ রানের ইনিংস খেলেন। তবে, ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষেই মূলতঃ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ও নিজেকে অধিক মেলে ধরেন। নিজ দেশে ও বিদেশে প্রতিপক্ষীয় দলটির বিপক্ষে সেরা ছন্দে ছিলেন। প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ছয় টেস্টে অংশ নিয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব রান করেন পাঁচটি। টেস্টের ছয়টি ইনিংসের পাঁচটিতেই অর্ধ-শতাধিক রান তুলেছিলেন। তন্মধ্যে, মে, ২০১০ সালে লর্ডসে ১০৩ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস ছিল। ইংল্যান্ড সফরে স্মরণীয় মুহূর্ত উদযাপিত করেন। শতক হাঁকিয়ে প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজের জায়গা করে নেন। ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে ছক্কা হাঁকিয়ে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন। দুই ছক্কা ও ১৫ চারের সমন্বয়ে ১০০ বল মোকাবেলায় এ সাফল্য পান ও দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর দল ৩৮২ রান সংগ্রহ করে। ঐ টেস্টে তাঁর দল আট উইকেটে পরাজিত হয়।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে আরও একটি শতক হাঁকিয়ে দূর্দান্ত গ্রীষ্ম অতিবাহিত করেন। উপর্যুপরী শতরানের ইনিংস খেলার সুবাদে তাঁকে সহঃঅধিনায়কের মর্যাদা দেয়া হয়। ২০১০ সালে বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের মধ্যে টেস্টে দ্রুততম সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ অর্জনের জন্যে তিনি মাত্র ১৯ ইনিংস খেলেছিলেন। সুন্দর ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। এছাড়াও, গ্রায়েম সোয়ান ও বীরেন্দ্র শেহবাগকে পাশ কাটিয়ে বর্ষসেরা টেস্ট খেলোয়াড়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন।
সকল স্তরের ক্রিকেটে সহঃঅধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের ওডিআই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
জুন, ২০১১ সালে সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ারের পক্ষে খেলেন। জাতীয় দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআই সিরিজ খেলার জন্যে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাওয়া ডেভিড হাসি’র পরিবর্তে স্বল্পকালীন সময়ের জন্যে যুক্ত হয়েছিলেন। তবে, ব্যাট হাতে তেমন সফল হননি। পাঁচটি টি২০ খেলায় সব মিলিয়ে মাত্র ১০৪ রান তুলেন। সর্বোচ্চ করেন ৪৭ রান। ওরচেস্টারশায়ারে সাকিব আল হাসানের বোলিংয়ের বিপক্ষে ক্রমাগত চাপে থাকার বিষয়টি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বিশালভাবে আলোচিত হয়। নটিংহাম পোস্টে মন্তব্য করা হয় যে, ‘খাঁটিমানের তবে দৃষ্টিনন্দন নয়। আরও ভালো করতেন, তবে, যা করেছেন তা নেহায়েত মন্দ নয়।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে স্বেচ্ছায় ছয় বছর নির্বাসিত থাকার পর জিম্বাবুয়ে দলের টেস্টে প্রত্যাবর্তন ও দীর্ঘ চৌদ্দ মাসের অধিক সময় টেস্ট খেলা থেকে বঞ্চিত বাংলাদেশ দলকে নিয়ে এক টেস্ট ও পাঁচটি ওডিআই খেলার উদ্দেশ্য নিয়ে জিম্বাবুয়ে গমন করেন। সংবাদ সম্মেলনে জিম্বাবুয়ের বোলারদের বিপক্ষে কম চাপ থাকার কথা বললেও টেস্টে মাত্র ৫৮ রান তুলতে সমর্থ হন ও বাংলাদেশ দল পরাজিত হয়। ওডিআই সিরিজেও ৩-২ ব্যবধানে পরাজিত বাংলাদেশ দলের সকল ব্যাটসম্যানই ব্যর্থতার পরিচয় দেন। পাঁচ খেলায় ৩১.৪০ গড়ে মাত্র ১৫৭ রান তুলতে পেরেছিলেন। ঐ সিরিজের পর দূর্বল নেতৃত্বের কারণে বিসিবি কর্তৃক সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবালকে যথাক্রমে অধিনায়ক ও সহঃঅধিনায়কত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ৭০ রানের ইনিংস খেললেও ভারতের কাছে পরাজিত হয় বাংলাদেশ দল। এছাড়াও মাত্র ১৫৭ রান সংগ্রহ করলে বাংলাদেশ দল কোয়ার্টার-ফাইনালে খেলার সুযোগ পায়নি। অক্টোবর, ২০১১ সালে সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের মর্যাদা লাভ করেন। চার ইনিংসে দুইটি অর্ধ-শতক সহযোগে ১৮৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন।
বিসিবি’র ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে চিটাগং কিংসের ‘প্রতীকি খেলোয়াড়’ হিসেবে মনোনীত হন। তবে, কুঁচকির আঘাতের কারণে মাত্র দুইটি খেলায় অংশ নিতে পেরেছিলেন ও মোটে ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। মার্চ, ২০১২ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে টাইফয়েড জ্বর থেকে সদ্য আরোগ্য লাভের পর বিসিবি সভাপতি মোস্তফা কামালের নির্দেশক্রমে শুরুতে দলের বাইরে থাকেন। তবে, নির্বাচকমণ্ডলীর উপর হস্তক্ষেপের ন্যায় বিতর্কের উদ্রেক ঘটে ও এক পর্যায়ে দলে যুক্ত হন। উপর্যুপরী চারটি অর্ধ-শতক হাঁকান। এরফলে, ওডিআইয়ে প্রথম বাংলাদেশী খেলোয়াড় হিসেবে এ কৃতিত্বের সাথে জড়িত হন। অপ্রত্যাশিতভাবে স্বাগতিক দল চূড়ান্ত খেলায় পৌঁছে ও পাকিস্তানের কাছে মাত্র দুই রানে পরাজিত হয়।
২০১২ সালে ইন্ডিয়ান টি২০ লীগের পঞ্চম আসরে বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত দল পুনে ওয়ারিয়র্সের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন ও আঘাতপ্রাপ্ত জেমস হোপসের স্থলাভিষিক্ত হন। তবে, দলের পক্ষে কোন খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি। এপ্রিলে বিসিবি কর্তৃক শীর্ষ খেলোয়াড় হিসেবে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে চুক্তিতে উপনীত হন। অক্টোবরের শেষদিকে নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া টি২০ প্রতিযোগিতা এইচআরভি কাপে ওয়েলিংটন ফায়ারবার্ডসের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। এরফলে, প্রথম বাংলাদেশী খেলোয়াড় হিসেবে নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া লীগে অংশ নেন।
২০১২ সালের শেষদিকে সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআই ও টেস্টের দুই খেলার সিরিজে অর্ধ-শতক করলে বাংলাদেশ ওডিআইয়ে জয় পায়; তবে, টেস্ট সিরিজ ও একমাত্র টি২০আইয়ে পরাজিত হয়। টি২০আইয়ে ৮৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। এ সিরিজের পর নিউজিল্যান্ডে ফিরে যান। ৩৮.৬৬ গড়ে দুইটি অর্ধ-শতক সহযোগে ২৩২ রান তুলেন। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন ও বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে দূরন্ত রাজশাহীকে নেতৃত্ব দেন।
মার্চ, ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে যান, তবে, প্রথম টেস্ট খেলার জন্যে বিবেচিত হননি। দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নিয়ে ১০ ও ৫৯ রান তুলেন। প্রথম ওডিআইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে শতরান হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। ১৩৬ বলে ১১২ রান তুলেছিলেন তিনি। ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কা দল বাংলাদেশে আসলেও তিনি এ সিরিজের বাইরে ছিলেন ও নাকের সমস্যার কারণে ওডিআইয়ে অংশ নিতে পারেননি। ২০১৪ সালের এশিয়া কাপ ও বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দলে ফিরে আসেন। তবে আশানুরূপ রান সংগ্রহে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। জুলাই, ২০১৪ সালে লর্ডসে দ্বি-শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে বিশ্ব একাদশের সদস্য ছিলেন।
নভেম্বর-ডিসেম্বর, ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলার পর বাম পায়ের হাটুতে অস্ত্রোপচার করতে হয়। অস্ট্রেলিয়ায় অস্ত্রোপচারের পর ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পূর্বে আরোগ্য লাভ করেন। তবে, ছয় ইনিংসে মাত্র ১৫৪ রান তুলতে পেরেছিলেন। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ রানের ইনিংস খেলে প্রতিপক্ষকে ৩১৯ রানের লক্ষ্যমাত্রায় ভিত্তি গড়েন।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার পর ২০১৫ সালে নিজ দেশে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। সফররত পাকিস্তান দলের বিপক্ষে পুণরায় নিজেকে মেলে ধরেন ও দূর্দান্ত খেলেন। তিন-খেলা নিয়ে গড়া ওডিআই সিরিজে ১৩২, ১১৬ ও ৬৪ রান সংগ্রহ করেন। ম্যান অব দ্য সিরিজের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো পাকিস্তান দলকে ‘বাংলাওয়াশ’ করতে স্মরণীয় ভূমিকা রাখেন। টেস্টেও খেলার এ ধারা বহমান রাখেন।
২৮ এপ্রিল, ২০১৫ তারিখে খুলনায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৬ রানের দ্বি-শতক হাঁকিয়ে বাংলাদেশ দলকে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে ড্র করাতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেন। এরফলে, দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে ২৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
একই বছরের ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ বিজয়ে অন্যতম প্রধান সদস্যের দায়িত্বে ছিলেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন খেলায় ১৩২ রান সংগ্রহ করলেও ২০১৫ সালে নিজ দেশের দ্বি-পক্ষীয় চারটি ওডিআই সিরিজের প্রত্যেকটিতে বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন।
২০১৬ সালে প্রথম সন্তানের ভূমিষ্ঠের কারণে এশিয়া কাপ থেকে স্বীয় নাম প্রত্যাহার করে নেন। কনিষ্ঠায় আঘাত পেলে তিন সপ্তাহের জন্যে মাঠের বাইরে অবস্থান করেন। তবে, একই বছরে ভারতে অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশ দলকে বাছাইপর্বে অংশ নিতে হয় ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন। প্রতিযোগিতার প্রথম খেলায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৮৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। ওমানের বিপক্ষে অবশ্যই জয়লাভের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৬৩ বলে ১০৩ রান তুলেন। এরফলে, টি২০আইয়ে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে শতরানের গৌরব অর্জন করেন। পাশাপাশি, বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে সকল স্তরের ক্রিকেটে শতক হাঁকানোর কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। তবে, সুপার-টেন পর্যায়ে একইমানের খেলা উপহার দিতে পারেননি ও দল কোন খেলায় জয় পায়নি।
২০১৬-১৭ মৌসুমে শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট জয়েও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে প্রথম ও তৃতীয় ওডিআইয়ে যথাক্রমে ৮০ ও ১১৮ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ বিজয়ে প্রভূতঃ ভূমিকা পালন করেন। অক্টোবর, ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলাকালীন প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে ওডিআইয়ে ৫০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। বৃহৎ সংস্করণের খেলায়ও সেরা ছন্দে ছিলেন। শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে নিজস্ব অষ্টম টেস্ট শতরান হাঁকান। এরপর, দ্বিতীয় ইনিংসে ৪০ রান তুলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট বিজয়সহ দুই টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-১ ব্যবধানে ড্র করতে যথাযথ ভূমিকা পালন করেন।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে অর্ধ-শতক বাদে ২০১৭ সালের শুরুতে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। মার্চ, ২০১৭ সালের পূর্ব-পর্যন্ত নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পুণরায় স্ব-মূর্তি ধারণ করেন। দুই-খেলা নিয়ে গড়া সিরিজে ২০৭ রান তুলেন। বাংলাদেশের শততম টেস্টে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৮২ রান তুলে ১৯১ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করেন। ৫০ ওভারের খেলায় নিজস্ব অষ্টম শতরান করেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওডিআইয়ে এ সাফল্য পান। ২০১৭ সালে প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০০০ রান সংগ্রহ করার কৃতিত্বের অধিকারী হন। এছাড়াও, একই বছরে বিশ্ব একাদশে তাঁকে রাখা হয়।
আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের অংশগ্রহণে ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতায়ও রান সংগ্রহে তৎপর ছিলেন। প্রায় ৬৬ গড়ে ১৯৯ রান তুলেছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রতিযোগিতায়ও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে সফল হন। ৯৫, ০ ও ৭০ করেন। তবে, কোয়ার্টার-ফাইনালে ভারতের কাছে পরাজিত হলে বাংলাদেশ দলকে বিদেয় নিতে হয়।
২০১৯ সালের বিশ্বকাপের পূর্বেকার দুই বছরে ওডিআইয়ে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেছেন। এ বিশ্বকাপে নিজস্ব ২০০তম ওডিআইয়ে অংশ নেন। ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ তারিখে ঢাকায় সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট খেলেন।
২০২২-২৩ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যান্ডি ম্যাকব্রায়ানের নেতৃত্বাধীন আয়ারল্যান্ড দলের মুখোমুখি হন। ৪ এপ্রিল, ২০২৩ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে ২১ ও ৩১ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মুশফিকুর রহিমের অনবদ্য ব্যাটিংয়ের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৭ উইকেটের ব্যবধানে জয় পেয়েছিল। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
এক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের মর্যাদা পেয়েছেন। দ্বিতীয় বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ৩০০০ রান ও ওডিআইয়ে ৫০০০ রান তুলেছেন। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টি২০আইয়ে ১০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
হাবিবুল বাশার সতীর্থ খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে সর্বকালের সেরা বাংলাদেশী টেস্ট একাদশ গঠন করেন। তন্মধ্যে, তাঁকেও এ তালিকায় ঠাঁই দিয়েছেন। ৬ জুন, ২০২৩ তারিখে অশ্রুসিক্ত নয়নে সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।