৩০ ডিসেম্বর, ১৯৯৪ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে তিনি মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত তিনি। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিচ্ছেন।
‘কিলা’ ডাকনামে ভূষিত কাইল জেমিসন ৬ ফুট ৮ ইঞ্চির দীর্ঘ উচ্চতার অধিকারী। বেশ লম্বাটে গড়ন নিয়ে বোলিং কর্মে অগ্রসর হন ও পেস বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হন। এছাড়াও, নিচেরসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে অনেক সময়ই ব্যাট হাতে মারকুটে ব্যাটিং করেন। ২০১৪-১৫ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রেখেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে অকল্যান্ড ও ক্যান্টারবারির প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
২৫ অক্টোবর, ২০১৪ তারিখে ক্যান্টারবারির সদস্যরূপে ওয়েলিংটনের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। তবে, ২৫ অক্টোবর, ২০১৪ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় তিনি উইকেট শূন্য অবস্থায় মাঠ ত্যাগ করতে বাধ্য হন ও কোন রানের সন্ধান পাননি। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেকের পূর্বেই অবশ্য লিস্ট-এ ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ২ এপ্রিল, ২০১৪ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে ওয়েলিংটনের বিপক্ষে প্রথম খেলেন। কাকতালীয়ভাবে ঐ খেলায়ও কোন উইকেট কিংবা রান তুলতে পারেননি।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের পক্ষে খেলেছেন। ব্যাঙ্গালোরভিত্তিক বিশেষ প্রাধিকারপ্রাপ্ত দলটির পক্ষে ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো ১৫ কোটি রূপীর বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হন।
২০২০ সাল থেকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০১৯-২০ মৌসুমে নিজ দেশে বিরাট কোহলি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন। ২৫ রান সংগ্রহ করেন এবং পৃথ্বী শ’ ও নবদীপ সাইনিকে বিদেয় করে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। পাঁচ খেলা থেকে পাঁচ উইকেট পান।
অল্প কয়েকদিন পর একই সফরের ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত একই দলের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৪/৩৯ ও ০/৪৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে একবার মাঠে নেমে ৪৪ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, টিম সাউদি’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
দ্বিতীয় টেস্টে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। হ্যাগলে ওভালে অনুষ্ঠিত ঐ খেলার প্রথম ইনিংসে পাঁচ-উইকেট তুলে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের জয়ের ভিত গড়ে তুলেন। প্রথম ছয় টেস্ট থেকে ১৩.২৭ গড়ে ৩৬ উইকেট দখল করেছেন।
কোভিড-১৯ বৈশ্বিক অতিমারীর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি২০আই খেলেন। দূর্ভাগ্যবশতঃ টি২০আই ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরতে হিমশিম খান। প্রথম আট খেলা থেকে চার উইকেটের সন্ধান পান। এছাড়াও, ওভারপ্রতি ৯.৮ রান খরচ করে ফেলেন।
২০২০-২১ মৌসুমে নিজ দেশে জেসন হোল্ডারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৫০ রানে পৌঁছানোকালে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ৫১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, দলীয় অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের দূর্দান্ত ব্যাটিং সাফল্যে সফরকারীরা ইনিংস ও ১৩৪ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই মৌসুমে নিজ দেশে মোহাম্মদ রিজওয়ানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৩ জানুয়ারি, ২০২১ তারিখে সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৫/৬৯ ও ৬/৪৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৩০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১৭৬ রানে জয় পেয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০২১ সালে কেন উইলিয়ামসনের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের সদস্যরূপে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের চূড়ান্ত খেলায় অংশ নিতে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১৮ জুন, ২০২১ তারিখে সাউদাম্পটনে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় ভারতের বিপক্ষে খেলেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৫/৩১ ও ২/৩০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে নিউজিল্যান্ড দল ৮ উইকেটে জয়লাভ করে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।
২০২৩-২৪ মৌসুমে নিজ দেশে নীল ব্রান্ডের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকান দলের মুখোমুখি হন। ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখে মাউন্ট মুঙ্গানুইয়ে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার মাঠে নেমে ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ২/৩৫ ও ৪/৫৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, রচিন রবীন্দ্রের অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে সফরকারীরা ২৮১ রানে পরাজিত হলে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ তারিখে তাঁকে সেরা টেস্ট বোলার হিসেবে ২০২১ সালের ইএসপিএনক্রিকইনফো পুরস্কার প্রদান করা হয়।