২৫ আগস্ট, ১৯৫২ তারিখে মোরাতুয়ায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও কোচ। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, উইকেট-রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
শক্ত মজবুত গড়নের অধিকারী হিসেবে যে-কোন স্তরের ক্রিকেটে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতেন। ১৯৭১-৭২ মৌসুম থেকে ১৯৯০-৯১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৭৫ থেকে ১৯৮৯ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ২৪ টেস্ট ও ৭৯টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ৭ জুন, ১৯৭৫ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জগতে প্রবেশ করেন।
টেস্ট ক্রিকেটে মর্যাদা লাভের পর থেকে শ্রীলঙ্কার শুরুর দিনগুলোয় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলেন। ১৯৭২ সালে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে প্রথম খেললেও প্রায় ৩০ বছর বয়সে প্রথম টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৮১-৮২ মৌসুমে নিজ দেশে কিথ ফ্লেচারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। একই সফরের ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। কলম্বোর পিএসএসে অন্য সকলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এরফলে, শ্রীলঙ্কার টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেন। শুরুটা নড়বড়ে অবস্থায় থাকলেও খুব দ্রুত পায়ের কারুকাজে নিজেকে সামলে নেন। ১৭ ও ২৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, জন এম্বুরি’র অসাধারণ বোলিংয়ের কল্যাণে সফরকারীরা ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয়। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসের তৃতীয় টেস্টে অধিনায়কের অতিরিক্ত দায়িত্ব কাঁধে বর্তায়।
১৯৮২-৮৩ মৌসুমে বান্দুলা বর্ণাপুরা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে ভারত গমন করেন। ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৮২ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। উভয় ইনিংসেই ১০৫ রান করে সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর জোড়া শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
দুই বছর পর লর্ডসেও একই কৃতিত্বের কাছাকাছি অবস্থানে ছিলেন। ১৯৮৪ সালের গ্রীষ্মে লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১১১ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে লর্ডস অনার্স বোর্ডে নিজেকে ঠাঁই করে নেন। ক্রিকেটের স্বর্গভূমিতে শ্রীলঙ্কার টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম অধিনায়কত্ব করার গৌরব অর্জন করেন। শুরুতে সিদাথ ওয়েতিমুনি’র লর্ডসে প্রথম শতক হাঁকানোর ঘটনা অবলোকনের পর দলের সংগ্রহ ২৯২/৪ থাকা অবস্থায় মাঠে নামেন। ১৪৩ বলে এগারোটি চার ও তিনটি ছক্কার সাহায্যে এ রান তুলেন। ৪৯১/৭ তুলে ইনিংস ঘোষণা করা হয় ও ইংল্যান্ড দল প্রতিরক্ষা গড়ে তুলে খেলাটিকে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৪ রান তুলেছিলেন।
১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে নিজ দেশে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৪ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে কলম্বোর সিসিসিতে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১৯ ও ১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ইনিংস ও ৬১ রানে পরাজিত করে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্ট ও সিরিজ বিজয়ে দলকে সুচারূরূপে নেতৃত্ব দেন। ৬২.০০ গড়ে ৩১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এরপর, পরবর্তী শীতকালে পাকিস্তানের বিপক্ষে আরও একটি শতক হাঁকান। তবে, এর পরপরই তাঁর খেলায় ছন্দ হারাতে শুরু করে। নিজের শেষ দশ টেস্ট থেকে মাত্র দুইটি অর্ধ-শতরানের সন্ধান পেয়েছিলেন।
১৯৮৮ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে রঞ্জন মাদুগালে’র কাছে অধিনায়কত্ব হস্তান্তর করতে হয়। ঐ বছর রঞ্জন মাদুগালে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফর যান। ২৫ আগস্ট, ১৯৮৮ তারিখ থেকে শুরু হওয়া লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। নিজস্ব শেষ টেস্টে ৫৬ রান তুলে স্বীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে ২১ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, রবি রত্নায়েকে’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন স্বত্ত্বেও স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পায়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পরও শ্রীলঙ্কার সাথে জড়িত ছিলেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলের সফলতায় ব্যবস্থাপকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে ওমান জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপূর্বে ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।