| | | |

ইফতিখার আলী খান পতৌদি

১৬ মার্চ, ১৯১০ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের পতৌদি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ইংল্যান্ড ও ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। তন্মধ্যে, ভারত দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

পতৌদির অষ্টম নবাব ছিলেন। ধৈর্য্যশীল, দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ চিত্তে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। ৬ ফুট উচ্চতার অধিকারী ইফতিখার আলী খান পতৌদি ‘প্যাট’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। লাহোরের চিফস কলেজ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯২৮ সালে কেন্টের বিপক্ষে খেলে ব্লু লাভ করেন। লাহোরভিত্তিক চিফস কলেজে পড়াশুনোকালীন ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে পড়েন। উচ্চতর পড়াশোনার জন্যে ইংল্যান্ড গমন করেন। অক্সফোর্ডভিত্তিক বলিওল কলেজে ভর্তি হন। সেখানে থাকাকালীন কেন্ট ও ইংল্যান্ডের বিখ্যাত অল-রাউন্ডার ফ্রাঙ্ক ওলি’র কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

১৯২৮ থেকে ১৯৪৬ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওরচেস্টারশায়ার এবং ভারতীয় ক্রিকেটে সাউদার্ন পাঞ্জাব ও ওয়েস্টার্ন ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, পাতিয়ালার মহারাজা একাদশ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৩১ সালে ১৪৫৪ রান তুলেন। তন্মধ্যে, লর্ডসে কেমব্রিজের বিপক্ষে ২৩৮ রানের ইনিংস খেলেন। এরফলে, ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অ্যাশেজ সিরিজ খেলতে তাঁকে মনোনীত করা হয়। ব্যাপকভাবে বিশ্বেস করা হয় যে, লর্ডসে জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে শতক হাঁকানোর কারণেই তিনি এ সুযোগ পেয়েছিলেন। এ পর্যায়ে ওরচেস্টারশায়ারের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন।

১৯৩২ থেকে ১৯৪৬ সময়কালে ছয়টিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে ডগলাস জার্ডিনের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২ ডিসেম্বর, ১৯৩২ তারিখে সিডনিতে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যাটসম্যান হিসেবে রঞ্জিতসিংজী ও দিলীপসিংজী’র পদাঙ্ক অনুসরণে তিনিও অ্যাশেজ অভিষেকে শতরানের ইনিংস খেলে ঐতিহ্য বহন করেছেন। বডিলাইন সিরিজের এসসিজি টেস্টে ৩৮০ বল মোকাবেলান্তে ১০২ রান তুলেছিলেন তিনি। খেলায় তাঁর দল ১০ উইকেটে জয়লাভ করে ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

বিস্ময়করভাবে দিলীপসিংজী’র বিকল্প খেলোয়াড় হিসেবে তাঁকে দলে রাখা হয়েছিল। তবে, পরের টেস্টেই অধিনায়ক ডগলাস জার্ডিনের কূটকৌশল প্রয়োগের বিষয়ে মতবিরোধ ঘটায় তাঁকে মাঠের বাইরে অবস্থান করতে হয়। এরফলে, সফর শেষ হবার পূর্বেই দেশে ফেরৎ পাঠানো হয়। দূর্ভাগ্যবশতঃ বডিলাইনের বিপক্ষে অবস্থান করায় তাঁকে ডগলাস জার্ডিনের কোপানলে পড়তে হয়। এ সময়ে তিনি বলেন যে, ‘তুমি কি আমার আদেশ অগ্রাহ্য করছ!’ এরফলে তিনি ইংল্যান্ডের পক্ষে মাত্র ৩ টেস্টে অংশ নিতে পেরেছিলেন।

ইংল্যান্ডে ফিরে ঐ গ্রীষ্মে ৪৮.৫৮ গড়ে ১৭৪৯ রান তুলেছিলেন। তন্মধ্যে, সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান একাদশের বিপক্ষে ১৬২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে এক উইকেটে জয় এনে দিয়েছিলেন। গ্লামারগনের বিপক্ষে ১২৩ রান তুললেও অন্য কেউ ৩০ রান তুলতে পারেননি। কেন্টের বিপক্ষে ২২৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। স্মর্তব্য যে, ঐ খেলায় টিচ ফ্রিম্যানের দূর্দান্ত বোলিংয়ের বিপক্ষে রুখে দাঁড়ানো স্বল্প কয়েকজন ব্যাটসম্যানের অন্যতম ছিলেন। ঐ মৌসুমের শেষদিকে অপরাজিত ২৩১ ও ২২২ রানের উপর্যুপরী ইনিংস উপহার দেন। এক পর্যায়ে স্বাস্থ্যহানি ঘটলে ভারতে ফিরে আসেন।

১৯৩৬ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে ভারত দলের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত হলেও ভিজ্জি এ দৌঁড়ে এগিয়ে যান। তবে, এক দশক পর ১৯৪৬ সালে ভারত দলকে ইংল্যান্ড সফরে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। এরফলে, একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ইংল্যান্ড ও ভারত – উভয় দলের পক্ষে খেলার গৌরব অর্জন করেন। কিন্তু, ঐ সিরিজে সফরকারী দল ১-০ ব্যবধানে পরাজিত হয়। ১৭ আগস্ট, ১৯৪৬ তারিখে ওভালে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। একমাত্র ইনিংসে ৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ইংল্যান্ড সফর শেষে দূর্বল স্বাস্থ্যের কারণে অবসর গ্রহণ করেন। সব মিলিয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ২৯ শতক সহযোগে ৪৮.৬১ গড়ে ৮৭৫০ রান তুলেছেন। অধিকাংশই এমসিসি, অক্সফোর্ড ও ওরচেস্টারের পক্ষে খেলেছেন এবং তিনটি দলের পক্ষে খেলে ৫০ ঊর্ধ্ব গড়ে রান সংগ্রহ করেছেন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে অংশগ্রহণকৃত টেস্টগুলো থেকে ১৯.৯০ গড়ে ১৯৯ রান পেয়েছেন। বহুমূখী ক্রীড়া প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। এছাড়াও ভারতের পক্ষে হকি খেলায় অংশ নিয়েছেন। ক্রিকেটের বাইরে হকি, পোলো ও বিলিয়ার্ডসে দক্ষ ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ইংল্যান্ড সফরের পাঁচ বছর পর ৫ জানুয়ারি, ১৯৫২ তারিখে মাত্র ৪১ বছর ২৯৫ দিন বয়সে নতুন দিল্লিতে পোলো খেলাকালীন তাঁর দেহাবসান ঘটে। ঐদিন তাঁর সন্তান মনসুর আলী খান পতৌদি’র একাদশ জন্মদিন ছিল। মনসুর আলী খানও ভারত দলকে টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

Similar Posts

  • |

    শুভাগত হোম

    ১১ নভেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটিংয়ের দিকেই অধিক মনোনিবেশ ঘটান। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। পাশাপাশি কার্যকর অফ-ব্রেক বোলিং করে থাকেন। ২০১০-এর দশকে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে অংশ নিয়েছেন। ২০০৯-১০ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে মধ্যাঞ্চল, ঢাকা বিভাগ ও রাজশাহী বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বরিশাল…

  • | | |

    অ্যালান স্টিল

    ২৪ সেপ্টেম্বর, ১৮৫৮ তারিখে ল্যাঙ্কাশায়ারের ওয়েস্ট ডার্বি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। দলে মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। ১৮৮০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ইংল্যান্ড দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জন্ম সনদে তিনি ‘অ্যালান গিবসন স্টিল’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। মার্লবোরা কলেজে অধ্যয়ন শেষে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো করেছেন। অসাধারণ অল-রাউন্ডার হিসেবে সুনাম…

  • |

    আলবার্ট প্যাডমোর

    ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৪৬ তারিখে বার্বাডোসের হলস ভিলেজ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৭০-এর দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। লিকলিকে গড়নের অধিকারী। তাঁর বোলিংয়ের ধরন অনেকাংশেই ল্যান্স গিবসের অনুরূপ ছিল। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৭২-৭৩…

  • | |

    রবিন পিটারসন

    ৪ আগস্ট, ১৯৭৯ তারিখে কেপ প্রভিন্সের পোর্ট এলিজাবেথে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারঙ্গমতা প্রদর্শন করেছেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংশৈলীর স্বাক্ষর রেখেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। কোন স্পিন কোচের শরণাপন্ন হওয়া ব্যতিরেকে খেলার জগতে প্রবেশ করেন। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার…

  • | |

    ফিল সিমন্স

    ১৮ এপ্রিল, ১৯৬৩ তারিখে ত্রিনিদাদের অ্যারিমা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা প্রদর্শন করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। কৈশোরে সকল ধরনের খেলায় পারদর্শী ছিলেন। তবে, পরবর্তীতে ক্রিকেটের দিকেই অধিক ঝুঁকে পড়েন। গর্ডন গ্রীনিজকে…

  • | |

    দেবাং গান্ধী

    ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ তারিখে গুজরাতের ভাবনগর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম থেকে ২০০৫-০৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।…