৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৬ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের মারিকভিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও রেফারি ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক ও গুগলি বোলিংয়ের পাশাপাশি মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৫২-৫৩ মৌসুম থেকে ১৯৭৭-৭৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলস ও ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৯৫৭ থেকে ১৯৭৮ সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ৬২ টেস্ট ও দুইটিমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে ইয়ান ক্রেগের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ২৩ ডিসেম্বর, ১৯৫৭ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে অংশ নেন। লিন্ডসে ক্লাইন, ওয়ালি গ্রাউট ও ইয়ান মেকিফের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৬০ ও ২৩* রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
৬ মে, ১৯৬৫ তারিখে জোয়েল গার্নার, মাইকেল হোল্ডিং, কলিন ক্রফ্ট ও স্যার অ্যান্ডি রবার্টস – পেসার চতুষ্টয়ের পূর্বসূরী ওয়েস হল, চার্লি গ্রিফিথ, গ্যারি সোবার্স ও ল্যান্স গিবসের বিপক্ষে আড়াই দিন ব্যাটিং করেন অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী ব্যাটিং জুটি বব সিম্পসন ও বিল লরি। তাঁরা স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৮২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অদ্যাবধি তাঁদের রেকর্ড অক্ষত রয়েছে। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে বিল লরি’র নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলীয় দলের সদস্যরূপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম পাঁচ ইনিংস থেকে তাঁরা মাত্র ৩৯ রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়েন। জর্জটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের এ চতুর্থ টেস্টটি অবশ্য ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।
প্রথম দিন শেষে তাঁরা ২৩৬ রানে নিরবিচ্ছিন্ন ছিলেন। বিল লরি ১০২ রানে ও তিনি ১৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন। এক পর্যায়ে জানুয়ারি, ১৯৩৬ সালে বিল ব্রাউন ও জ্যাক ফিঙ্গলটনের সংগৃহীত প্রথম উইকেটের তৎকালীন ২৩৩ রানের রেকর্ড অতিক্রম করেন। দ্বিতীয় দিনে তাঁরা টেস্ট ইতিহাসের প্রথম উদ্বোধনী জুটি হিসেবে উভয়ে দ্বি-শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। অবশেষে ওয়েস হলের বোলিংয়ে তিনি ২০১ রানে বিদেয় নিলে এ জুটি ভেঙ্গে যায়। ইতোমধ্যে স্কোরবোর্ডে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটিতে ৩৮২ রান সংগৃহীত হয়। স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও বিল পন্সফোর্ডের সৃষ্ট অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ সংগৃহীত ৪৫১ রানের চেয়ে ৬৯ কম ছিল। যদি তাঁরা আরও ৩২ রান তুলতে পারতেন তাহলে বিনু মানকড় ও পঙ্কজ রায়ের সংগৃহীত ৪১৩ রানের উদ্বোধনী জুটিতে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলতে পারতেন।
১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে অজি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৬৬ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ৩৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৩৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫৩ ও ১৮ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। পাশাপাশি, বল হাতে নিয়ে ২/৫৯ ও ২/৯৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ৬ উইকেটে জয়লাভ করলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
অবসর ভেঙ্গে ৪১ বছর বয়সে পুণরায় খেলার জগতে ফিরে আসেন। ৪২ বছর ৮৯ দিন বয়স নিয়ে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে দলকে নেতৃত্ব দেন। এরফলে, ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম বয়োজ্যেষ্ঠ অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন।
১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ৩১ মার্চ, ১৯৭৮ তারিখে জর্জটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৬৭ ও ৪ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৩৪ ও ১/৭০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। সফরকারীরা ৩ উইকেটে জয়লাভ করলেও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ২৮ এপ্রিল, ১৯৭৮ তারিখে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৬ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ১/৩৮ ও ০/৪৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
১৯৬৫ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষষেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। একই বছরে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার ও ১৯৬৭ সালে সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেট অ্যানুয়েল কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৭৮ সালে রাণী জন্মদিনের সম্মাননায় অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া পদবীতে ভূষিত হন। ২০০৭ সালে অফিসার অব দি অর্ডারে উন্নীত হন। ২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ান স্পোর্টস মেডেল ও ২০০০ সালে সেন্টেনারি মেডেল লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে স্পোর্ট অস্ট্রেলিয়া হল অব ফেম, ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট হল অব ফেম এবং ২০১৩ সালে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ডব্লিউ.ডি এন্ড এইচ.ও. উইলস অব অস্ট্রেলিয়া নামীয় সিগারেট ও তামাকজাত প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও, আইসিসি রেফারি হিসেবে তিনটি টেস্ট খেলা পরিচালনা করেছেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের কোচের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও, ল্যাঙ্কাশায়ারের কোচ হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। সিডনিতে বসবাস করতেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। তাঁর দুই কন্যা রয়েছে। অস্ট্রেলীয় টেস্ট ক্রিকেটার এএমজে হিলডিচ সম্পর্কে তাঁর জামাতা। ১৬ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে ৮৯ বছর ১৯৪ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
