Skip to content

জহির আব্বাস

1 min read

২৪ জুলাই, ১৯৪৭ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, রেফারি ও প্রশাসক। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ধ্রুপদীশৈলীর অধিকারী ও দর্শনীয় ব্যাটসম্যান ছিলেন। পাকিস্তানের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিগণিত হন। শীর্ণকায় ও চশমা পরিহিত তরুণ অবস্থায় খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। খেলোয়াড়ী জীবনের অধিকাংশ সময়ই চশমা পরিধান করে খেলেছেন। খেলায় তাঁর মনোযোগের ধরন অসাধারণ ছিল। ‘জেড’ ডাকনামে পরিচিতি পেয়েছিলেন।

তিনি যখন ক্রিজে অবস্থান করতেন পুরো বিষয়টিই সাধারণভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন। লম্বাটে গড়ন ও দর্শনীয় ভঙ্গীমায় সামনের কিংবা পিছনের পায়ে সমান ভর রেখে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। প্রায়শঃই বলকে মিড-শটে পরিণত করতেন। ধ্রুপদীশৈলীর দৃষ্টিনন্দন খেলা উপহার দেয়াকালীন তাঁকে কখনো স্ট্রোক মারতে তড়িঘরি কিংবা ভুল শট খেলতে দেখা যায়নি। হাতলের পিছনে শীর্ষে হাত রেখে শেষ মুহূর্তে বলকে উইকেটের উভয় পার্শ্বে সজোরে আঘাত করে সীমানা বরাবর প্রেরণ করতেন। সংগৃহীত রানের বিরাট অংশ বাউন্ডারি থেকে পেয়েছেন।

চশমা পরিধান করা সত্ত্বেও ঈগলের ন্যায় দৃষ্টি ধারন করতেন। এছাড়াও, স্কোয়াশ খেলায় পটু ছিলেন। তাঁর ব্যাটিংয়ে দাম্ভিকতার ছোঁয়া না থাকলেও ছন্দোবদ্ধতা, সহজাত নড়াচড়া, ইনিংসে ভিত্তি আনয়ণ ও সীমাহীন সৌন্দর্য্যে পরিপূর্ণ ছিল। নির্ভুলতা ও সময়জ্ঞানের বিষয়টি তাঁর প্রধান শক্তিমত্ততা ছিল। তবে, বলকে যখন আঘাত করতেন, তখন তা সপাটে ছিল। ফাঁকা জায়গায় বল ফেলতেন ও বল খুব কম সময়ই সোজা ফিল্ডারের কাছে যেতো।

প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন গুণাবলীর অধিকারী। দৃষ্টিনন্দন, মারকুটে, ফুরফুরে মেজাজে শক্তিশালী কব্জীর মোচড়ে দূর্দান্ত স্ট্রোকপ্লে মারতেন। যে-কোন উইকেটে ও যে-কোন ধরনের বোলিংয়ের বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরতে পারতেন। মনসংযোগের মাত্রাও বেশ উচ্চ পর্যায়ের ছিল ও দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাট হাতে অবস্থান করতেন। ক্রিজে তাঁর উপস্থিতিতে গ্যালারিতে উপস্থিত সমর্থক ও টেলিভিশনে দর্শকদের মনে সাড়া জাগানোসহ বোলারদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠতো।

১৯৬৫-৬৬ মৌসুম থেকে ১৯৮৬-৮৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে দাউদ ক্লাব, করাচী, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স, পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টম্যান্ট ও সিন্ধু এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে গ্লুচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৬৯ থেকে ১৯৮৫ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ৭৮ টেস্ট ও ৬২টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রাহাম ডাউলিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৪ অক্টোবর, ১৯৬৯ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নিয়ে বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের যাত্রা শুরু করেন। মোহাম্মদ নাজির, সাদিক মোহাম্মদ ও ইউনুস আহমেদের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১২ ও ২৭ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

৪ জুন, ১৯৭১ তারিখে বার্মিংহামের এজবাস্টন স্টেডিয়ামে পর্বতসম ২৭৪ রান তুলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের ইনিংস খেলেন ও স্বীয় প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটান। এ রান সংগ্রহের জন্যে দশ ঘণ্টা দশ মিনিট সময় ক্রিজে অবস্থান করেছিলেন। এটিই তাঁর সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা ব্যক্তিগত ইনিংস ছিল। নিজস্ব দ্বিতীয় টেস্টে এ সফলতা পান। প্রথম দিনে ১৫৯ রানের অপরাজিত থাকেন। ২৬১ রানে থাকাকালীন প্রথম এশীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ২১ বছরের মধ্যে এক কাউন্টি মৌসুমে সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন। বিদেশের মাটিতে ও ইংল্যান্ডের প্রতিকূল পরিবেশে এ ইনিংস খেলে ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচন করেন।

তাঁর এ আত্মবিশ্বাসী মনোভাব ও খবরদারিত্বের কারণে ইংল্যান্ডের বেশ কয়েক বছর কাউন্টি ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। কাউন্টি ক্রিকেটে তাঁকে দলে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে দলগুলো নড়চড়ে বসে। ১৯৭২ থেকে ১৯৮৪ সময়কালে গ্লুচেস্টারশায়ারের কাল্ট বীরে পরিণত হন। এ দলের পক্ষেই সম্পূর্ণ সময় খেলেছিলেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮২ সময়কালে প্রত্যেক বছরেই কমপক্ষে সহস্র রানের সন্ধান পেয়েছেন। তন্মধ্যে, ১৯৭৬ সালে ২৫৪৪ ও ১৯৮১ সালে ২৩০৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় বোলার মাইক হুইটনি’র দৃষ্টিকোণে লাল-বলের ক্রিকেটের শীর্ষ একাদশে ঠাঁই পেয়েছেন। গ্লুচেস্টারে থাকাকালীন তাঁরা একত্রে খেলেছিলেন। ১৯৭২ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন।

তিন বছর পর আরও একবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বি-শতক হাঁকিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো ইংল্যান্ড সফরে এসে বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তী ডন ব্র্যাডম্যানের নাম অনুসরণে ‘এশীয় ব্র্যাডম্যান’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ২৩ আগস্ট, ১৯৭৪ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে ২৪০ রানের ইনিংসটি বেশ মূল্যায়িত হয়। ৪১০ বল মোকাবেলা করে ২২টি দর্শনীয় চারের মারে এ রান পান। ৫৮.৫৪ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছিলেন। ডেরেক আন্ডারউডের বলে তিনি বিদেয় নিয়েছিলেন। এ দুটো ইনিংসেই ইংরেজ পিচে তাঁর প্রভূত্বের দৃষ্টিভঙ্গী প্রতিফলিত হয় ও কাউন্টি ক্রিকেটে কিংবদন্তী হিসেবে তাঁকে মর্যাদা এনে দেয়। ঐ টেস্ট সিরিজটি ০-০ ব্যবধানে ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল। এ সিরিজে ৬ ইনিংস থেকে ৫৪ গড়ে ৩২৪ রান পেয়েছিলেন।

১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরেও কিছু বড় অঙ্কের রান তুলেছিলেন। তন্মধ্যে, অ্যাডিলেড টেস্টে ১০১ রান সংগ্রহ করেন। অন্যতম খেলোয়াড় হিসেবে অস্ট্রেলীয় ধনকুবের ক্যারি প্যাকারের ব্যবস্থাপনায় বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে অংশ নেয়ার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। এরফলে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই সিরিজ খেলতে পারেননি। তবে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রত্যাবর্তনের পর পুণরায় সকলের মন জয় করেন। এ পর্যায়ে তিনি তাঁর স্বর্ণালী সময়ে অবস্থান করছিলেন। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে উপর্যুপরী তিনটি ওডিআইয়ে শতক হাঁকিয়েছেন। এছাড়াও, দুইজন ব্যাটসম্যানের অন্যতম হিসেবে উপর্যুপরী আন্তর্জাতিক ইনিংসে পাঁচটি শতরানের সন্ধান পেয়েছেন।

দূর্লভ কৃতিত্বের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। চারবার একই খেলায় দ্বি-শতক ও শতক হাঁকান এবং প্রত্যেকবারই অপরাজিত ছিলেন। আরও একটি রুদ্ধশ্বাসপূর্ণ রেকর্ডের সাথে যুক্ত রয়েছেন। একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে আটবার উভয় ইনিংসে শতক হাঁকিয়েছেন। কাউন্টি দলের সঙ্গী অ্যালেস্টায়ার হিগনেল ২২ বছর তাঁর সাথে খেলে সৌভাগ্যবান মনে করেছেন ও স্ট্রাইকবিহীন অবস্থায় তাঁর স্মরণীয় কীর্তিগুলো অবলোকন করেছিলেন।

ক্রমাগত কাউন্টি ক্রিকেটে রান সংগ্রহের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ ধারা অব্যাহত রাখেন। প্রথম ও একমাত্র এশীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০০ শতরানের অধিকারী হন। খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনালগ্নে ইংল্যান্ডের মাটিতে দুটি ঝড়ো ইনিংস উপহার দেয়ার পর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষেও দুইটি মনোমুগ্ধকর সিরিজ খেলেছিলেন।

১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে নিজ দেশে বিষেন বেদী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ফয়সালাবাদে ১৭৬ ও ৯৬ এবং পরবর্তীতে লাহোরে ২৩৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। ১ নভেম্বর, ১৯৭৮ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে শেষোক্ত ইনিংসটি খেলেন। তাঁর এ দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিক দল ৮ উইকেটে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

চার বছর পর আবারও ভারতের বিপক্ষে চড়াও হন। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিকে উপর্যুপরী তিনটি শতক হাঁকান। এরপর, ১৯৮২-৮৩ মৌসুমের লাহোর টেস্টে ২১৫ রানের আরও একটি দ্বি-শতরান করেন। ডিসেম্বর, ১৯৮২ সালে ভারতের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১০০ শতরানের মাইলফলকে পৌঁছেন। পরবর্তীতে ঐ সিরিজে আরও দুইটি শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন।

১৯৮২-৮৩ মৌসুমে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ৩ জানুয়ারি, ১৯৮৩ তারিখে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১৬৮ রানের শতক হাঁকান। ১৭৬ বল মোকাবেলান্তে ২৬৪ মিনিটে তেইশটি চার ও একটি ছক্কায় শতরানের ইনিংস খেলেন। এ পর্যায়ে তিনি দলের প্রথমবারের মতো এক ইনিংসে চারটি শতকের একটি শতরানের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। এরফলে, প্রথম পাকস্তানী হিসেবে উপর্যুপরী তিন ইনিংসে শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। তবে, ইমরান খানের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

এটিই তাঁর সর্বশেষ সেরা সিরিজ ছিল। তাসত্ত্বেও, ইমরান খানের আঘাতের কারণে অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। এ পর্যায়ে লাহোরে আবারও ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ১৬৮ রানের ইনিংস খেলেন। প্রকৃত পেসারদের বিপক্ষে কখনো স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন না। কিন্তু, তারপর থেকেই বয়সের সাথে সাথে নিজেকে আরও ক্ষীপ্রময় ও স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতেন।

‘জহির আব-বাস কারো’ অর্থাৎ, ‘জহির আব্বাস এবার থামো’ – মাঠে ভারতীয় খেলোয়াড়দের জনপ্রিয় চিৎকার ছিল। ‘ব্যাটিং মেশিন’ হিসেবে তিনি যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেলতেন তখন এ বাক্যগুলো আসতো। ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার তাঁর পাকিস্তানী প্রতিপক্ষের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন বলে ব্যক্ত করেছিলেন। তিনি মন্তব্য করেছেন যে, ‘যখন আপনি মাঠে এমনকি মাঠের বাইরে থেকে তাঁর ব্যাটিং দেখবেন তখন অবশ্যই আনন্দ উপভোগ করবেন। অবশ্য, বিষয়টি যদিও দলের জন্যে বিরাট বোঝা হিসেবে নিয়ে যেতে থাকে। তবে, দৃষ্টিনন্দন ও বিরাট মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখাবে। তিনি কখনো অর্ধ-শতক কিংবা শতক হাঁকিয়ে সন্তুষ্ট থাকতেন না, তিনি দ্বি-শতক হাঁকাতে চাইতেন।’

১৯৮১-৮২ মৌসুমে নিজ দেশে বান্দুলা বর্ণাপুরা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২২ মার্চ, ১৯৮২ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ১৩৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ইমরান খানের তোপে শ্রীলঙ্কা দল গুড়িয়ে যায়। ইমরান খানের খেলায় ১৪ উইকেট লাভে ইনিংস ও ১০২ রানে জয় পেয়ে স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যতীত বাদ-বাকী দলগুলোর বিপক্ষে বেশ ভালো খেলেছেন। তবে, ভারতের বিপক্ষেই অধিকতর সফল ছিলেন। ১৯ টেস্টে ৮৭ গড়ে ১৭৪০ রান তুলেছেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ করেছেন অপরাজিত ২৩৫ রান। পাকিস্তানের মাটিতে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে নিজেকে আরও অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। ছয়টি শতক সহযোগে ১৫৮.৫৫ গড়ে রান পেয়েছেন। কিন্তু, বেশ উঁচুতে ব্যাট তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিদেশের মাটিতে তেমন সফল ছিলেন না। নিজ দেশে অনুষ্ঠিত টেস্টে ৫৮.১৯ গড়ে সংগৃহীত রানের বিপরীতে বিদেশের মাটিতে ৩৬.৮৭ গড়ে রান পেয়েছেন।

জহির আব্বাসের জীবনকে ঘিরে ডেভিড ফুট ‘ইন জেড’ গ্রন্থে তাঁকে বিখ্যাত ইংরেজ ক্রিকেট তারকা ওয়ালি হ্যামন্ডের সাথে তুলনা করেছেন। ‘মনোগত বিশ্লেষণ করলে ওয়ালি হ্যামন্ডের ন্যায় তিনিও জটিল পথে অগ্রসর হয়েছিলেন। উভয়েই ক্রিজে মনোনিবেশ ঘটাতেন ও রক্ষণাত্মক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করতেন। উভয়েই শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন ও গোপনীয়তা রক্ষা করতেন। এ বিষয়গুলো কেবলমাত্র ক্রিকেটে সাজঘরেই বহমান ছিল না। এভাবেই আমি তাঁদের মধ্যকার তুলনা শেষ করবো। ওয়ালি হ্যামন্ড কর্কশ মেজাজ ও ঝগড়াটে দৃষ্টিভঙ্গীর হলেও জেডের ব্যক্তিত্ব সবমিলিয়ে মিষ্টতায় ভরপুর ছিল।’

১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে নিজ দেশে ডেভিড গাওয়ারের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১৯ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে অংশ নেন। ৮২* ও ৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এ পর্যায়ে উভয় ইনিংসেই তিনি রানারের সহায়তা নিয়েছিলেন। তবে, সরফরাজ নওয়াজের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে।

১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে নিজ দেশে জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৬ নভেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৪৩ ও ৩১ রান সংগ্রহ করেন। ইকবাল কাশিমের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়ানৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে নিজ দেশে দিলীপ মেন্ডিসের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২৭ অক্টোবর, ১৯৮৫ তারিখে শিয়ালকোটে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৪ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। যথাযথভাবে তাঁকে বিদেয় জানানো হয়নি। তবে, তিনি দলের জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড় তথা ইমরান খানের পরোক্ষ প্রভাবের বিষয়ে দোষারোপ করেন। টেস্ট থেকে অবসর নেয়ার পরও একদিনের খেলায় অংশ নেয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন।

অবসর গ্রহণকালীন টেস্টের ১২৪ ইনিংস থেকে ৪৪.৭৯ গড়ে ৫০৬২ রান পেয়েছেন। ১২টি শতকের চারটিই দ্বি-শতক ছিল। এছাড়াও, ওডিআইয়ে ৪৭.৬২ গড়ে ২,৫৭২ রান তুলেছেন। ৮৪.৮০ স্ট্রাইক রেটে ঐ সময়ে প্রকৃতই দূর্দান্ত ছিল। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটেও অসাধারণ ছিল। ৪৫৯টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৫০-ঊর্ধ্ব গড়ে ৩৪৮৪৩ রান করেছেন। ঐ খেলাগুলো থেকে ১০০টি শতরানের ইনিংস খেলে মাইলফলক স্পর্শ করেছেন।

টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান হিসেবে ৪০০০ ও ৫০০০ রানের মাইলফলকে পৌঁছেন। অবসর গ্রহণকালীন কেবলমাত্র জাভেদ মিয়াঁদাদই ৪০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন। অদ্যাবধি পাকিস্তানের পক্ষে সর্বকালের সেরা রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় ৮ম স্থানে অবস্থান করছেন।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ম্যাচ রেফারি, দলীয় ব্যবস্থাপক ও ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। শ্রীলঙ্কা বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যেকার একটি টেস্ট পরিচালনাসহ তিনটি ওডিআইয়ে ম্যাচ রেফারির দায়িত্বে ছিলেন। বলে আঁচড় লাগানোর ঘটনায় আম্পায়ারদ্বয়ের অভিযোগের শিকার ইনজামাম-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দলের ব্যবস্থাপক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এছাড়াও, ২৫ জুন, ২০১৫ তারিখে বার্বাডোসে অনুষ্ঠিত আইসিসির বার্ষিক সম্মেলনে কলিন কাউড্রে ও ক্লাইড ওয়ালকটের পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে তাঁকে আইসিসি সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয়। ২০১৬ সালে এ পদ অবলোপনের পূর্ব পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সর্বশেষ আইসিসি সভাপতি ছিলেন। ক্রিকেটে অসাধারণ ভূমিকা রাখার কারণে ২৩ আগস্ট, ২০২০ তারিখে জ্যাক ক্যালিস ও লিজা স্থালেকরের সাথে একযোগে আইসিসি হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন। এছাড়াও, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড প্রণীত পাকিস্তান ক্রিকেট হল অব ফেমের উদ্বোধনী তালিকায় ইমরান খান, জাভেদ মিয়াঁদাদ, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুসহানিফ মোহাম্মদের সাথে অন্তর্ভুক্ত হন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।