জাভেদ মিয়াঁদাদ
১২ জুন, ১৯৫৭ তারিখে সিন্ধু প্রদেশের করাচীতে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। সোজা-সাপ্টা, ক্রেতাদূরস্ত, বিচক্ষণ ও হাল ছেড়ে না দেয়ার মানসিকতা নিয়ে গড়ার ফলে খুব সহজেই স্বতন্ত্র সত্ত্বার অধিকারী ছিলেন। পাশাপাশি অগণিত রেকর্ড ধারনের কারণে অন্যতম সেরা ও ব্যতিক্রমধর্মী ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিগণিত হতেন এবং যে-কোন অধিনায়কই সর্বাগ্রে তাঁকে কাছে রাখতে চাইতেন। ভীতিহীন চিত্তে, ধারাবাহিকতার সাথে লড়াকু মনোবৃত্তির অধিকারী ছিলেন। ২১ বছরের অধিক সময় পাকিস্তানের পক্ষে বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। এ পর্যায়ে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী পাকিস্তান দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অধিনায়ক হিসেবেও পাকিস্তান দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বিশ্ববাসী তাঁর তুলনায় অধিকতর ভালোমানের ব্যাটসম্যানকে দেখতে পেলেও খুব কমই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূখর ব্যাটসম্যান দেখতে পেয়েছে। ক্রিজে থাকা অবস্থায় খেলাকে শেষ হয়ে যেতো না কিংবা প্রতিপক্ষ তাঁদের জয় নিশ্চিত করতে পারতো না। শুধুমাত্র রান সংগ্রহ করেই ক্ষান্ত হননি; বরঞ্চ দলের ভঙ্গুর অবস্থার উত্তরণসহ আলতো বলগুলো দর্শনীয়তার সাথে কাট করতেন। ছন্দে থাকাকালীন প্রতিপক্ষের দুঃশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতেন কিংবা স্বাভাবিকভাবে থেকে আরও কিছু করতে চাইতেন যেন আরও সহজভাবে খেলছেন। গিডিওন হেই তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে, ইতোমধ্যে অপরাজিত ১৮০ রান তুললেও তিনি যেন মাত্র মাঠে নেমেছেন। অপরদিকে, ১৯৮৮ সালে ইডেন পার্কে ২৭১ রানের প্রসিদ্ধ ইনিংস খেলাকালীন ফিল্ডিংরত জন রাইট মন্তব্য করেন যে, তিনি যেন স্বীয় কক্ষের সামনে সোফায় বসে আছেন। বিদেয় হবার পর নিউজিল্যান্ডীয় খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য করে ‘দিনটি ভালো কাটুক’ বলতে শোনা যায়।
কৈশোরকালীন বিদ্যালয় ক্রিকেটে তাঁর মাঝে সম্ভাবনার দ্বার লক্ষ্য করা যায়। করাচী সিটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন। ১৯৭০-এর দশকের সূচনালগ্নে পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক আব্দুল হাফিজ কারদারের ছত্রচ্ছায়ায় চলে আসেন ও ‘দশকের সেরা আবিস্কার’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্যরূপে তাঁর লড়াকু চিত্তের গুণাবলী প্রশংসিত হয়।
তাঁর ব্যাটিংয়ে নান্দনিকতার ছাঁপ পরিলক্ষিত হয়নি। তাসত্ত্বেও, বেশ সুন্দরভাবে স্কয়ার কাটের মার মারতেন। অধিকাংশ শটই ফলদায়ক ছিল। রিভার্স-সুইপের শুরুরদিকের অন্যতম হিসেবে চমৎকার খেলতেন। এছাড়াও, কৌণিক ও দূরত্বের বিষয়টিও সমানভাবে ফেলতেন। সবকিছু করায়ত্ত্ব করার ফলে যে-কোন পরিবেশ পরিস্থিতিতেই রান তুলতে তৎপরতা দেখাতেন। এ সকল গুণাবলী পুরো খেলোয়াড়ী জীবনেই বহমান ছিল। বলা হয়ে থাকে যে, ওডিআইয়ে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি প্রান্ত বদল, বলকে যথোচিত স্থানে প্রেরণ ও মানসিক দৃঢ়তার কারণেই অসাধারণ ফলাফল করতে পেরেছিলেন।
ক্রিকেটপ্রিয় পরিবারের সন্তান তিনি। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি (১.৭৩ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ১৬ বছর বয়সে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের যাত্রা শুরু করেন। ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে করাচী হোয়াইটসের পক্ষে খেলতে থাকেন। তাঁর এ অভিষেক পর্বটি অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর মাঝে স্মরণীয় করে রাখেন। প্রথম খেলাতেই অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছিলেন। তবে, মৌসুমের বাদ-বাকী সময়টুকু তেমন ভালো কাটেনি তাঁর। ইজাজ ফাকিহ, আব্দুর রাকিব ও জামাল আলভী’র ন্যায় খেলোয়াড়দের সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে হয়। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুম শেষে ১২ খেলা থেকে ৪৭.৩৫ গড়ে ৯৪৭ রান তুলেন। তন্মধ্যে, কারদার সামার শীল্ডে ৩১১ রানের অতিকায় ইনিংস ছিল। ফলশ্রুতিতে, জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁকে পাকিস্তান দলে অন্তর্ভুক্ত করে।
এক পর্যায়ে ল্যাঙ্কাশায়ারভিত্তিক বোল্টন লীগে অংশ নেন। এরপর কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের সাথে যুক্ত হন। প্রথমে সাসেক্স ও পরবর্তীতে গ্ল্যামারগনের সাথে সফলতার সাথে খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেন। সাসেক্সের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পূর্বে সাসেক্স দ্বিতীয় একাদশের সদস্যরূপে যাচাই-বাছাইয়ের খেলায় দ্বি-শতক হাঁকান। ১৯৮০ সালে দল ত্যাগ করে গ্ল্যামারগনে চলে যান ও ১৯৮২ সালে ক্লাবটির অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ১২৪ টেস্ট ও ২৩৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। তন্মধ্যে, টেস্টগুলো থেকে ৫২.৫৭ গড়ে ৮৮৩২ রান তুলেছেন। টেস্টে অংশগ্রহণের দিক দিয়ে পাকিস্তানী খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছেন।
ঘরোয়া পর্যায়ে দূর্দান্ত খেলার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আসরে অংশ নেয়ার উদ্দেশ্যে তাঁকে পাকিস্তান দলের সদস্য করা হয়। ১৭ বছর বয়সে ১১ জুন, ১৯৭৫ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনের বর্ণাঢ্যময় সূচনা ঘটে। খেলায় তিনি ২৪ রান তুলতে সমর্থ হন ও বাদ-বাকী খেলাগুলোয় গড়পড়তা খেলা উপহার দেন। পাশাপাশি, বিশ্বকাপ শেষে তাঁকে দলে রেখে দেয়া হয়।
সব মিলিয়ে তাঁর টেস্ট অভিষেক পর্বটি ভিন্নতর চিত্র ছিল। ১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে নিজ দেশে জন পার্কারের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন ও বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের শুভসূচনা ঘটান। ১৯ বছর বয়সে ৯ অক্টোবর, ১৯৭৬ তারিখে সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে তাঁর টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। লাহোরে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে ১৬৩ রানের অপরাজিত টেস্ট শতরান করেন। এরফলে, অভিষেকে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট শতক হাঁকানোর কৃতিত্বের অধিকারী হন। খালিদ ইবাদুল্লাহ’র পর দ্বিতীয় পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক ইনিংসে এ সফলতার সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। এ পর্যায়ে আসিফ ইকবালের (১৬৬) সাথে পঞ্চম উইকেটে ২৮১ রানের জুটি গড়ে নতুন পাকিস্তানী রেকর্ড দাঁড় করান। পিটার প্যাথেরিক এ জুটি ভেঙ্গে ফেলেন ও নিজের প্রথম টেস্টের প্রথমদিনে হ্যাট্রিক করেন। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার খেলায় এম.জে.সি. অলমের পর তিনি এ সফলতা পান। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫* রান সংগ্রহ করেছিলেন। স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
এছাড়াও, ৩০ অক্টোবর, ১৯৭৬ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৪১০ মিনিট ক্রিজে অবস্থান করে দুইটি ছক্কা ও ২৯টি চারের মারে দ্বি-শতক হাঁকান। এরফলে, সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ১৯ বছর ১৪১ দিন বয়সে দ্বি-শতক হাঁকানোর কৃতিত্বের অধিকারী হন। তাঁর এ দ্বি-শতরানের বদৌলতে করাচীতে পাকিস্তান দল ৫৬৫ রান সংগ্রহ করে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিক দল তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে।
১৯৭৯-৮০ মৌসুমে মুশতাক মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৯ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় ৮১ ও ১৬০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। সফরকারীরা ১২৮ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
এ ধরনের অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের কারণে দলে স্বীয় স্থান পাকাপোক্ত করে ফেলেন। আর তাঁকে পিছনে ফিরে যেতে হয়নি। এছাড়াও, নিজস্ব শততম টেস্টেও শতরান করার কৃতিত্বের অধিকারী হন।
স্বল্প কয়েকজন ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে পুরো টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে গড় রান ৫০-এর নীচে চলে আসেনি। ৮৮৩২ রান তুলে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের সর্বোচ্চ টেস্ট রান সংগ্রহের অধিকারী হন। এছাড়াও ছয়টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এক পর্যায়ে ১৯৮৭ সালে ওডিআইয়ে উপর্যুপরী নয়বার পঞ্চাশোর্ধ্ব রান সংগ্রহ করেছিলেন।
তবে, তাঁর এ ধরনের অসামান্য ব্যাটিং শুধুমাত্র প্রতিপক্ষের বিরক্তির কারণ হয়েই উঠেনি; বরঞ্চ, ফিল্ডার ও বোলারদের উত্ত্যক্তের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ব্যাটিংকালে ক্যাঙ্গারুর ন্যায় লাফানোর বিষয়টির বিপরীতে কিরণ মোরে’র ক্রমাগত আবেদনের বিষয়টি বেশ দৃষ্টিকটু পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।
১৯৮২-৮৩ মৌসুমে নিজ দেশে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৪ জানুয়ারি, ১৯৮৩ তারিখে হায়দ্রাবাদের সিন্ধুতে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। নিয়াজ স্টেডিয়ামে ২৮০ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন। এ ইনিংসটি ছয়টি দ্বি-শতকের অন্যতম ও পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরবর্তীতে এটিই তাঁর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানে পরিণত হয়। দ্বিতীয় উইকেটে মুদাসসর নজরের (২৩১) সাথে ৪৫১ রানের জুটি গড়েন। এরফলে, বিল পন্সফোর্ড ও ডন ব্র্যাডম্যানের গড়া দীর্ঘদিনের রেকর্ডের সাথে তাঁদের নাম যুক্ত হয়। তাঁর অসাধারণ দ্বি-শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ১১৯ রানে জয় পেলে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
১৯৮৩ সালে ভারতে ফিরতি সফরে যান। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৯৯, ৬৬ ও ৬০ রানের ইনিংস খেলেন। ঐ সিরিজটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল। ঐ বছরের শেষদিকে ড্র হওয়া অ্যাডিলেড টেস্টে জিওফ লসন, ডেনিস লিলি, রডনি হগের পেস বোলার এবং টমাস হোগান ও গ্রেগ চ্যাপেল স্পিনারদ্বয়ের বোলিং আক্রমণ মোকাবেলা করে ১৩১ রান তুলেছিলেন। এরপর, এক বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে হায়দ্রাবাদ টেস্টে জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে উভয় ইনিংসে শতক হাঁকিয়েছিলেন।
১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে পাকিস্তানী দলকে নিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৫ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৭৯ ও ২ রান সংগ্রহ করেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। খেলার প্রথম দিনে জহির আব্বাসের পর দ্বিতীয় পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬৮ টেস্টে অংশ নিয়ে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। প্রথম ইনিংসে ৩৭ রানে পৌঁছানোকালে এ সফলতা পান। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ওয়াসিম আকরামের দূর্দান্ত বোলিংশৈলী স্বত্ত্বেও স্বাগতিকরা ২ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।
১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে নিজ দেশে দিলীপ মেন্ডিসের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ফয়সালাবাদ টেস্টে সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে নিজস্ব তৃতীয় দ্বি-শতক হাঁকান।
৭ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ৬৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। তবে, অরবিন্দ ডি সিলভা’র অসাধারণ শতক সত্ত্বেও স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ৩০৬ রান সংগ্রহ করে অরবিন্দ ডি সিলভা’র সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
এরপর, ১৯৮৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজস্ব চতুর্থ ও সর্বশেষ দ্বি-শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। তন্মধ্যে, ওভালে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে ২৬০ রান তুলে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে দলকে রক্ষা করেন ও হেডিংলি টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে জয় পেয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে দলের জয়ে ভূমিকা রাখেন।
ইংল্যান্ড সফরের পূর্বে ভারতের মাটিতে ইমরান খান আগাগোড়া দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনটি উচ্চ রানের খেলায় ড্র হলে ব্যাঙ্গালোরে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে রাবার নির্ধারিত হয়। এ সিরিজে তাঁর খেলার মান নিচেরদিকে চলে যায়। পাঁচ ইনিংস থেকে চারটিতে অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছেন। চূড়ান্ত টেস্টে পাকিস্তান দল ১৬ রানে বিজয়ী হয়। এ টেস্টে সুনীল গাভাস্কার তাঁর শেষ টেস্টে অংশ নিয়ে ২১ ও ৯৬ রান করলেও তিনি ব্যাট হাতে মাত্র ৭ ও ১৭ রান তুলতে সমর্থ হয়েছিলেন।
১৯৮০-এর দশকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামুখর সফরে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। এ পর্যায়ে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছিলেন। গায়ানায় সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত ওডিআইয়ে শতরান করেন। এরপর, গায়ানা ও পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত টেস্টগুলোয় উপর্যুপরী শতক হাঁকিয়েছিলেন। এ পর্যায়ে পেসার চতুষ্টয় – প্যাট্রিক প্যাটারসন, কার্টলি অ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশ ও উইনস্টোন বেঞ্জামিন এবং তাঁদের সহায়তাকল্পে দলে যুক্ত অফ-স্পিনার কার্ল হুপারের বল সামলিয়েছিলেন।
১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যালান বর্ডারের নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণ খেলেন। ৭ অক্টোবর, ১৯৮৮ তারিখে লাহোরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ২৭ ও ২৪ রান সংগ্রহের পাশাপাশি একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, জিওফ মার্শের জোড়া অর্ধ-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে জয় পায়। ৪১২ রান তুলে ব্রুস রিডের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।
একই মৌসুমে ইমরান খানের অধিনায়কত্বে পাকিস্তানী দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৯ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ২৭১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর দ্বি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও একটি টেস্ট পরিত্যক্ত ঘোষিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার ছয়টি আসরে অংশ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে, শচীন তেন্ডুলকর এ তালিকায় তাঁর সাথে যুক্ত হন। এ পর্যায়ে ছয়টি শতক হাঁকান। ৩৫ খেলা থেকে ৪৩.৩২ গড়ে ১০৮৩ রান তুলেন। তন্মধ্যে, ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় পাকিস্তান দল শিরোপা জয় করে। নিউজিল্যান্ডীয় তারকা ব্যাটসম্যান মার্টিন ক্রো’র পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। বয়সের ভারে ন্যূহ ও পিঠের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও দূর্দান্ত খেলেছিলেন। এ আসরে ছয়টি অর্ধ-শতক হাঁকান। ৬২ গড়ে ৪৩৭ রান তুলেছিলেন।
ইমরান খানের কাঁধের আঘাতের কারণে তাঁকে পুণরায় অধিনায়কের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়। ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ড সফরে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। অপরাজিত ১৫৩, ৯, ০, ৮৮, অপরাজিত ৪৫, ৬, ৪ ও ৫৯ রান তুলেন। তন্মধ্যে, ১৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংসটি তাঁর নিজস্ব ২৩তম ও সর্বশেষ শতক ছিল। পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া ঐ সিরিজে পাকিস্তান দল ২-১ ব্যবধানে জয় পায়।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে পাকিস্তানী দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২ জানুয়ারি, ১৯৯৩ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৩৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৮৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ৯২ ও ১২ রান তুলে উভয় ইনিংসে মার্ফি সু’য়ার শিকারে পরিণত হন। তবে, ওয়াসিম আকরামের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩৩ রানে পরাজিত হয়।
১৯৯০-এর দশক স্পর্শের সুযোগ পাননি। ১৯৯৩ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এ পর্যায়ে তিনি পাকিস্তানের সর্বাধিক রান সংগ্রহের অধিকারী ছিলেন ও পরবর্তীতে ইউনুস খান তাঁকে টপকিয়ে যান। তিন সহস্রাধিক রান সংগ্রহকারী পাকিস্তানী ক্রিকেটারদের মধ্যে গড়ের দিক দিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছেন। সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে দ্বি-শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। তবে, ওডিআইয়ের প্রতি তাঁর বেশ ঝোঁক ছিল। ১৯৯৬ সালে নিজস্ব ষষ্ঠ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এর পরপরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদেয় জানান।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে নিজ দেশে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ী দলের মুখোমুখি হন। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পেয়ে ৩১ রান সংগ্রহ করে ডেভিড ব্রেইনের এলবিডব্লিউতে বিদেয় নেন। ডেভিড ব্রেইনের অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীতে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
এর তিন বছর পর ১৯৯৬ সালে ব্যাঙ্গালোরে বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৩৯ রানে পরাজিত হয় পাকিস্তান দল। ৪৯ ওভারে ২৮৮ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় নেমে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদেয় নেন। দলের ২৩৮ রানের মধ্যে তাঁর অবদান ছিল ৩৮ রান।
সর্বদাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ভালোবাসতেন। ভারতের বিপক্ষে একবার শেষ বলে ছয় রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯৮৬ সালে শারজায় অনুষ্ঠিত অস্ট্রাল-এশিয়া কাপ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় দলের জয়ের জন্যে শেষ ওভারে ১১ রানে প্রয়োজন পড়ে। শেষ বলে চার রানের দরকার থাকাবস্থায় খেলার চেতন শর্মা’র বল থেকে মিড-উইকেট এলাকা দিয়ে ছক্কা হাঁকান ও স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিবাহিত করেন। এরপর থেকেই ঘরে ঘরে তাঁর নাম সমুচ্চারিত হতে থাকে। তিনি যখন মাঠে নামেন, তখন দল বেশ কঠিন সময় পাড় করছিল। এ সাফল্যের পর থেকে পরবর্তী এক দশকের অধিক সময় দলের ভারসাম্য পাকিস্তানের দিকে চলে আসে ও ভারতকে ক্রমাগত হিমশিম খেতে হয়েছিল।
৩১টি শতক ও ৯৩টি অর্ধ-শতক সহযোগে ৪০৭ ইনিংস থেকে ৪৬.৯৯ গড়ে ১৬২১৩ আন্তর্জাতিক রান পেয়েছেন। কেবলমাত্র ইনজামাম-উল-হক, ইউনুস খান ও মোহাম্মদ ইউসুফ তাঁর চেয়ে এগিয়ে আছেন। সব মিলিয়ে টেস্টগুলো থেকে ২৩ শতক সহযোগে ৮৮৩২ রান সংগ্রহ করেছেন। ১৯৮০-৮১ মৌসুমে মাত্র ২২ বছর বয়সে অপরিপক্ক অবস্থাতেই অধিনায়কের গুরুদায়িত্ব লাভ করেন। তবে, খুব শীঘ্রই তাঁকে এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর অবশ্য বেশ কয়েকবার দলে আসা-যাবার পালায় থেকে দলকে নেতৃত্ব দেন। ইমরান খানকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাঁকে অধিনায়কত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয় ও ১৯৮২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজ শেষে বাদ দেয়া হয়।
৩৪ টেস্টে দলের অধিনায়ক থেকে ১৪ জয়, ৬ পরাজয় ও ১৪ ড্রয়ের সাথে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। অন্যদিকে, ওডিআইয়ে আট শতক ও ৫০টি অর্ধ-শতক সহযোগে ৭৩৮১ রান তুলেন। তন্মধ্যে, ৬২টি ওডিআইয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রায়শঃই ইমরান খানের সাথে ব্যক্তিত্বের সংঘাতে লিপ্ত হতেন। মিয়াঁদাদের জয়-পরাজয়ের অনুপাত যেখানে ২.৩৩ সেখানে ইমরানের ছিল ১.৭৫। এছাড়াও, তিনি আটটি সিরিজে জয় ও তিনটিতে পরাজিত হলেও তুলনান্তে ইমরান খানের ছিল পাঁচটি সিরিজে জয় ও তিনটিতে পরাজয়।
বিনয়ী, নিরভামিনী ও বন্ধুত্বসুলভ মনোভাবের অধিকারী। তাসত্ত্বেও, এক পর্যায়ে যারা তাঁকে জানতেন না, তাঁদের সাথে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। অধিনায়ক হিসেবে পার্থে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্ট চলাকালীন ভয় দেখানো ও উত্ত্যক্ততার বিষয়ে ডেনিস লিলি’র সাথে অনাকাঙ্খিত ঘটনার সাথে তাঁর নাম যুক্ত হয়ে পড়ে। লিলি তাঁকে পায়ের পিছনে লাথি মারেন। এর জবাবে তিনি ব্যাট হাতে তেড়ে আসেন। আম্পায়ারের হস্তক্ষেপে অবশ্য তাঁদের এ বিরোধ মিটে যায়।
১৯৮৭ সালে ফয়সালাবাদে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্টে অধিনায়কের দায়িত্বে থাকাকালে পরাজয় এড়াতে কৌশলগতভাবে দেরীতে বোলিংয়ে আশ্রয় নেয়ার দায়ে অভিযুক্ত হন। বোলিংয়ের জন্যে আম্পায়ার শাকুর রাণা ও ইংরেজ অধিনায়ক মাইক গ্যাটিং আঙ্গুলে ইশারা দেন। সেলিম মালিক এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে দিনের খেলা শেষ হয়ে যায়।
অভিষেকের পর থেকে অনেকগুলো অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন, অনেকগুলো রেকর্ড ভেঙ্গেছেন। ২১ বছর বয়সে টেস্টে সহস্র রান সংগ্রহের মাইলফলক স্পর্শ করে। এরফলে, দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে এ কৃতিত্বের অধিকারী হন। বলা হয়ে থাকে যে, তিনি তাঁর সেরা খেলাগুলো ভারতের বিপক্ষে খেলার জন্যে রেখে দিতেন ও খেলায় বিজয়ী ইনিংসগুলো থেকে এর সত্যতা মিলে। ১৯৭৮ সালে ভারতের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম খেলায় ১৫৪ রান তুলেন। এরপর, ঐ সিরিজে আরও একটি শতক হাঁকান। পাঁচ ইনিংস থেকে ১৭৮.৫০ গড়ে রান তুলেছিলেন।
স্বীয় আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন যে, ‘ক্রিকেট যুদ্ধক্ষেত্রবিশেষ। যখন আমি খেলতে নামতাম তখন যেন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি।’ যে-কোন ক্ষেত্রেই পরাজয়কে ঘৃণা করতেন। এতে তিনি স্বীকার করেছেন যে, পরাজয়ে তাঁর চোখ ভিজে যেতো। ফলাফলের কারণে খুব কমই এর প্রভাব পড়েছিল। ভারতীয় বোলিংয়ের বিপক্ষে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন, প্রায়শঃই ভারতীয় ক্রিকেটারসহ সমর্থকদের দুঃশ্চিন্তার পাত্রে পরিণত হতেন। টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ৮০ ও ওডিআইয়ে ৫১ গড়ে রান পেয়েছেন। গড়ের দিক দিয়ে অন্য যে-কোন দেশের চেয়ে অধিক ছিল। আন্তর্জাতিক শতকগুলোর এক-চতুর্থাংশের অধিক ভারতের বিপক্ষে পেয়েছেন। এ কারণেই তিনি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ওয়ার্স উইদ ইন্ডিয়া’য় একটি অধ্যায়ের নাম লিখেছিলেন।
ওডিআইয়ে ৮ শতক সহযোগে ৪১.৭০ গড়ে ৭৩৮১ রান সংগ্রহ করেছেন। রান সংগ্রহের দিক দিয়ে পাকিস্তানের সর্বকালের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে অবস্থান করছেন। এছাড়াও, উইকেট-রক্ষণে দক্ষ ছিলেন। লেগ-স্পিন বোলিং করে ১৯১টি প্রথম-শ্রেণীর উইকেট পেয়েছেন। তবে, সর্বদাই তিনি ব্যাটিংয়ের কারণে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। নব্বুইয়ের দশকের শুরুতে তাঁর খেলার মান দূর্বলতর হতে থাকে। অংশগ্রহণকৃত স্বল্প কয়েকটি খেলা তাঁর পূর্বেকার ছায়াচিত্র ছিল। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় নিজেকে মেলে ধরার প্রয়াস চালালেও সুবিধে করতে পারেননি।
ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। তিন মেয়াদে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। ২০০৪ সালে দলের সাথে যুক্ত থাকেন এবং ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের ওডিআই ও টেস্টে পরাজয়বরণের পর বব উলমারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। অক্টোবর, ২০০৮ সালে পাকিস্তানের কোচের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাবনা নাকচ করে দেন। তবে, খুব শীঘ্রই পিসিবি থেকে মহাপরিচালক হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। এ দায়িত্ব পালনে অধিক প্রভাব বিস্তারে সহায়ক হয়। অনেক পাকিস্তানী তাঁর এ পদে যোগদানকে স্বাগতঃ জানায়। কিন্তু, এ দায়িত্ব পালনের বিষয়ে ক্ষেত্র নির্ধারণে বোর্ডের সাথে মতবিরোধের জের ধরে জানুয়ারি, ২০০৯ সালে তাঁকে চলে আসতে হয়েছিল।
১৯৮২ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। ইএসপিএন প্রণীত সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় তিনি ৪৪তম অবস্থানে রয়েছেন। এছাড়াও, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড প্রণীত পাকিস্তান ক্রিকেট হল অব ফেমের উদ্বোধনী তালিকায় ইমরান খান, হানিফ মোহাম্মদ, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস ও জহির আব্বাসের সাথে অন্তর্ভুক্ত হন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। তাহিরা সায়গল নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির জুনায়েদ মিয়াঁদাদ নামীয় সন্তান রয়েছে। আনোয়ার মিয়াঁদাদ, সোহেল মিয়াঁদাদ ও বশির মিয়াঁদাদ নামীয় ভ্রাতৃত্রয় রয়েছে। এছাড়াও, ফয়সাল ইকবাল তাঁর ভ্রাতৃষ্পুত্র।