Skip to content

রামাকান্ত দেশাই

1 min read

২০ জুন, ১৯৩৯ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের বোম্বে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

খাঁটো গড়ন ও বৃহৎ হৃদয় – দুটি ভিন্ন সত্তার অধিকারী ছিলেন। মোহাম্মদ নিসার ও অমর সিংয়ের সাথে তিনিও ভারতের অন্যতম দ্রুতগতিসম্পন্ন বোলারের মর্যাদা লাভ করেছিলেন। পর্যাপ্ত পেস আনয়ণ ও বাউন্সার প্রদানে সেরা ব্যাটসম্যানদের সমীহের পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন।

পেস বোলিংয়ের মাধ্যমে দূর্দান্ত খেলার কারণে বিরাটভাবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে ভারত দলের অপ্রচলিত পেস আক্রমণের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। শীর্ণকায় গড়নের কারণে ‘টিনি’ ডাকনামে পরিচিত ছিলেন। তবে, তাঁর হৃদয় বেশ বৃহৎ ছিল। ভারতের নিষ্প্রাণ পিচে নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। মনসুর আলী খান পতৌদি, সুনীল গাভাস্কারঅজিত ওয়াড়েকর বোলিং উদ্বোধন করলেও ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে অধিকাংশ দায়ভারই তাঁর উপর বর্তাতো।

১৯৫৮-৫৯ মৌসুম থেকে ১৯৭৫-৭৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বোম্বের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। মাত্র ছয়টি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণের পরপরই তাঁকে টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। ঐ ছয়টি খেলার একটি সিসিআইয়ের সদস্যরূপে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান একাদশের বিপক্ষে খেলেছিলেন। রোহন কানহাইয়ের স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেন ও খেলায় আট উইকেট দখল করেছিলেন। এরফলে, জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর নজর আকর্ষণে সক্ষম হন। পাশাপাশি ভারত দল আঘাতে জর্জড়িত ছিল।

১৯৫৯ থেকে ১৯৬৮ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ২৮ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে নিজ দেশে জেরি আলেকজান্ডারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৯ তারিখে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাঁর টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। সিরিজের চূড়ান্ত ও পঞ্চম টেস্টে অভিষেক ঘটলেও এর পূর্বেই সফরকারীরা সিরিজ জয়ে করেছিল। সিরিজের শেষ টেস্টের তেমন তাৎপর্য্য না থাকলেও তিনি ভারতের আশা বাঁচিয়ে রাখেন। দীর্ঘক্ষণ একাধারে বোলিং করেন। ৪৯ ওভারে ৪/১৬৯ লাভ করেছিলেন। অভিষেক টেস্টে রোহন কানহাইকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে বিদেয় করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ৩-০ ব্যবধান সফরকারীরা জয় করে নেয়।

১৯৫৯ সালে ভারত দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। পিটার মে, কেন ব্যারিংটন, কলিন কাউড্রে’র পাশাপাশি ব্রায়ান স্ট্যাদাম ও ফ্রেড ট্রুম্যানের ন্যায় তারকা খেলোয়াড়দের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলটি পেরে উঠেনি। স্বাগতিক দল খুব সহজেই সিরিজ জয় করে। তবে, তিনি ঠিকই সেরা খেলা উপহার দিতে তৎপর থাকেন বিশেষতঃ লর্ডসের উপযোগী পিচ বেশ মাননাসই ছিল। দল স্বল্প রানে গুটিয়ে যাবার পর তিনি স্বরূপ ধারন করেন। কলিন কাউড্রে ও কেন ব্যারিংটনের উইকেটসহ পাঁচ-উইকেট লাভ করেন। তবে, পরবর্তী খেই হারিয়ে ফেলেন ও নিচেরসারির ব্যাটসম্যানের কল্যাণে ইংল্যান্ড দল রক্ষা পায়।

১৯৫৯-৬০ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া দল ভারত সফরে আসলে আবারও উইকেট দখলে কৃতকার্য হন। মাদ্রাজ ও কলকাতায় প্রথম ইনিংসগুলোয় চার উইকেট পেয়েছিলেন। মাদ্রাজে স্ট্যাম্প বরাবর বল ফেলে সফল হন। ও’নীল ও নীল হার্ভে’র উইকেট পেয়েছিলেন।

১৯৬০-৬১ মৌসুমে পাকিস্তানের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজে নিজের সেরা ছন্দে ছিলেন। ঐ সিরিজে তিনি ২১ উইকেট দখল করেছিলেন। এছাড়াও, নিচেরসারির কার্যকর ব্যাটসম্যান হিসেবে বোম্বতে দ্রুতগতিতে ৮৫ রানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেন। এ পর্যায়ে নবম উইকেট জুটিতে নানা জোশী’র সাথে ১৪৯ রান তুলেছিলেন। দিল্লিতে দূর্দান্ত বোলিং করে দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেলেও সফরকারী দল খেলাটিকে রূদ্ধশ্বাসপূর্ণভাবে ড্রয়ে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিল। কেবলমাত্র হানিফ মোহাম্মদই তাঁর বল রুখতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাসত্ত্বেও হানিফ মোহাম্মদ তাঁর বাউন্সারে বেশ নাকানি-চুবানির শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। নয় ইনিংসের চারটিতেই তিনি হানিফ মোহাম্মদকে বিদেয় করেছিলেন।

ঐ সিরিজ পর খেলায় ছন্দ হারিয়ে ফেলেন। অবশ্য এরই মাঝে ১৯৬৫ সালে বোম্বেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ছয়-উইকেট লাভ করেছিলেন। কিন্তু, নিজ দেশে স্পিনারদের উপযোগী পিচে খুব কমই খেলার সুযোগ পেতেন।

১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মনসুর আলী খান পতৌদি’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৮ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ডিক মৎজের ভীতিদায়ক বাউন্সারে তাঁর চোয়াল ভেঙ্গে যায়। তাসত্ত্বেও, ক্রিজ আঁকড়ে কার্যকর অপরাজিত ৩২ রান তুলে বিদেশের মাটিতে ভারতের টেস্ট জয়ে দারুণ ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন। এছাড়াও, খেলায় তিনি ২/৬৫ ও ০/১৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। স্বাগতিক দল পাঁচ উইকেটে পরাজয়বরণ করলে ভারত দল চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

দূর্ভাগ্যজনকভাবে ৩০ বছর বয়সেই অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ক্রিকেট প্রশাসনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে হলেও দুই বছর সাহসী ভূমিকায় এ দায়িত্ব পালন করেন। শচীন তেন্ডুলকরের অধিনায়কত্ব প্রদান ও পরবর্তীতে তাঁকে দায়িত্ব থেকে ছেড়ে দেয়ার সাহসী পদক্ষেপ নেন। তবে, স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

কয়েক মাস পর ১৯৯৮ সালে হৃদযন্ত্রক্রীয়ায় তাঁর দেহাবসান ঘটে। এপ্রিল, ১৯৯৮ তারিখে তাঁকে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। চারদিন পর ২৭ এপ্রিল, ১৯৯৮ তারিখে ৫৮ বছর ৩১১ দিন বয়সে অস্ত্রোপচারের পূর্বে দুঃখজনকভাবে তাঁর মৃত্যু ঘটে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।