২৬ ডিসেম্বর, ১৯৩৫ তারিখে ব্রিটিশ গায়ানার বারবাইসের পোর্ট মোর‍্যান্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছিলেন। গ্যারি সোবার্সের সমসাময়িক ছিলেন। আল্ফ গোভারের আরেক জনপ্রিয় শিক্ষার্থী ছিলেন। গ্যারি সোবার্সকে নিয়ে ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা মাঝারিসারির জুটি গড়েছিলেন। ১৯৫৪-৫৫ মৌসুম থেকে ১৯৭৭ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে ব্রিটিশ গায়ানা, গায়ানা ও ত্রিনিদাদ; অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে তাসমানিয়া ও ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া; দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ট্রান্সভাল এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওয়ারউইকশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুর দিনগুলোয় উইকেট-রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন। পাশাপাশি মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান ছিলেন। কাউন্টি ক্রিকেট কিংবা টেস্ট পর্যায়ে তিনি সেরা খেলোয়াড়দের কাতারে অবস্থান করেন। ইংল্যান্ডে অবস্থানকালে ওয়ারউইকশায়ারের পক্ষে খেলেন। জন জেমসন, ডেনিস অ্যামিস, আলভিন কালীচরণ ও এমজেকে স্মিথের সাথে শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যানের অন্যতম ছিলেন। দশবার মৌসুমে সহস্রাধিক রান তুলেছেন। ১৯৭০ সালে সর্বাধিক সফলতম মৌসুম অতিবাহিত করেছেন। ৫৭.৩৯ গড়ে ১৮৯৪ রান তুলেন। ১৯৬৮ সালে ট্রেন্ট ব্রিজে নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৫৩ রান তুলেন। ১৯৭৪ সালে এজবাস্টনে গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে ৪৬৫ রানের নিরবচ্ছিন্ন জুটি গড়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। জন জেমসনের ২৪০ রানের সাথে তিনি করেন ২১৩ রান। এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়ায় এক মৌসুমসহ ভারত ও পাকিস্তান সফরে সহস্র রানের সন্ধান পান।

১৯৫৪-৫৫ মৌসুম থেকে ১৯৭৩-৭৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ৭৯ টেস্ট ও সাতটিমাত্র ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫৭ সালে জন গডার্ডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২২ বছর বয়সে ৩০ মে, ১৯৫৭ তারিখে বার্মিংহামের এজবাস্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। রয় গিলক্রিস্টের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ৪২ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হয়ে একটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

ঐ টেস্টে তিনি সনি রামাদিন, ক্লাইড ওয়ালকট, এভারটন উইকস, গারফিল্ড সোবার্স, ওয়েস হল, ল্যান্স গিবসের ন্যায় প্রমূখ ক্রিকেটারদেরকে পেয়েছেন। দশ বছর পর চার্লি গ্রিফিথ, ওয়েস হল ও ল্যান্স গিবসের সঙ্গ পান। খেলোয়াড়ী জীবনের শেষ পর্যায়ে রয় ফ্রেডরিক্স, আলভিন কালীচরণ, ক্লাইভ লয়েড, ভ্যানবার্ন হোল্ডার ও অ্যান্ডি রবার্টসের সাথে খেলেন।

নিজস্ব প্রথম তিন টেস্টে উইকেট-রক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে, ফ্রাঞ্জ আলেকজান্ডার তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। বেশ কয়েকবার দলের বিকল্প উইকেট-রক্ষক ছিলেন। ১৬ বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেন। নিজস্ব ত্রয়োদশ টেস্টের পূর্ব-পর্যন্ত কোন শতকের সন্ধান পাননি। কলকাতায় ভারতীয় বোলিং আক্রমণ প্রতিহত করে ২৫৬ রানের দারুণ ইনিংস উপহার দেন। পাশাপাশি, গ্যারি সোবার্স ও ব্যাসিল বুচারের শতকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ইনিংস ও ৩৩৬ রানের বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হয়।

পরের টেস্টে ৯৯ রান তুলে দলের ৩-০ ব্যবধানের সিরিজ বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। বিদেশের মাটিতে একই সফরে আরেকটি দ্বি-শতক হাঁকান তিনি। লাহোরে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে এ সাফল্য পান।

১৯৭২-৭৩ মৌসুমে নিজ দেশে অজি দলের বিপক্ষে অধিনায়কত্ব করার জন্যে মনোনীত হন। পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল পরাজিত হলেও পরবর্তী গ্রীষ্মে ইংল্যান্ড সফরের জন্যে তাঁকে দলের নেতৃত্বে রাখা হয়। এবার তিনি সফলতার মুখ দেখেন। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল বিজয়ী হয়। কিন্তু, পরবর্তী শীতকালে নিজ দেশে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে ১-১ ব্যবধানে সিরিজ ড্রয়ে রেখেই তাঁকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। নিজের খেলায় খুশী হতে পারেননি তিনি। এ সিরিজ শেষে তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে নিজ দেশে মাইক ডেনিসের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ৩০ মার্চ, ১৯৭৪ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ২ ও ৭ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে টনি গ্রেগের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। মাত্র ২৬ রানে জয় পেয়ে সফরকারীরা ১-১ ব্যবধানে সিরিজ শেষ করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল।

সব মিলিয়ে অংশগ্রহণকৃত টেস্টগুলো থেকে ১৫ শতক সহযোগে ৪৭.৫৩ গড়ে রান পান। খেলোয়াড়ী জীবনের শেষার্ধ্বে এসে একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নেয়ার সুযোগ হয় তাঁর। স্বল্পসংখ্যক ওডিআইয়ে অংশ নিলেও বেশ সফল ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সদস্য ছিলেন। ২১ জুন, ১৯৭৫ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চূড়ান্ত খেলায় ৫৫ রান তুলেন। দলের সংগ্রহ ৫০/৩ থাকা অবস্থায় ক্লাইভ লয়েডের সাথে ১৪৯ রান যুক্ত করেন। ১৭ রানে বিজয়ী হয়ে শিরোপা লাভ করে তাঁর দল। ১৯৭৪ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন।

Similar Posts

  • |

    মার্ক বুচার

    ২৩ আগস্ট, ১৯৭২ তারিখে সারের ক্রয়ডন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘বুচ’ কিংবা ‘ব্যাজ’ ডাকনামে পরিচিত মার্ক বুচার ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ক্রয়ডনভিত্তিক ট্রিনিটি স্কুল ও আর্চবিশপ টেনিসন্সে অধ্যয়ন করেছেন। মাতা এলেন জ্যামাইকীয় ও…

  • |

    ক্রেগ ইভান্স

    ২৯ নভেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে সলসবারিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর জিম্বাবুয়ীয় ক্রিকেটে ম্যাশোনাল্যান্ড, মাতাবেলেল্যান্ড ও ম্যাশোনাল্যান্ড কান্ট্রি ডিস্ট্রিক্টসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, হারারেভিত্তিক ওল্ড গ্রিগোরিয়ান্সের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৯০-৯১ মৌসুম থেকে ২০০৩-০৪ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী…

  • |

    ইএম গ্রেস

    ২৮ নভেম্বর, ১৮৪১ তারিখে ব্রিস্টলের ডাউনএন্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। ১৮৮০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘দ্য করোনার’ ডাকনামে পরিচিত ই. এম. গ্রেস ১৮৬০-এর দশকে ইংল্যান্ডের সেরা ক্রিকেটারদের অন্যতম হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলেন। ক্রিকেটপ্রিয় পরিবারের সন্তান ছিলেন। ড. হেনরি মিলস গ্রেস ও…

  • | | |

    আসিফ ইকবাল

    ৬ জুন, ১৯৪৩ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও রেফারি। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়েও পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্রিকেটপ্রেমী পরিবারের সন্তান। তাঁর কয়েকজন চাচা উচ্চ স্তরের ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ভারতীয় অধিনায়ক ও অফ-স্পিনার গুলাম আহমেদের ভ্রাতৃষ্পুত্র তিনি। যৌথ পরিবারে বড় হন।…

  • | |

    পলি উমরিগড়

    ২৮ মার্চ, ১৯২৬ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মহারাষ্ট্রের শোলাপুর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেন। ১৯৪৪-৪৫ মৌসুম থেকে ১৯৬২-৬৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে…

  • |

    টমাস গ্রুব

    ২ সেপ্টেম্বর, ১৮৫৭ তারিখে নিউজিল্যান্ডের নিউ প্লাইমাউথ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৮৮০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। মেলবোর্নে ভিক্টোরিয়ার অষ্টাদশের সদস্যরূপে অস্ট্রেলীয় একাদশের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো খেলেন। ফ্রাঙ্ক অ্যালানের তোপে পড়ে তাঁর দল। ২ ও ১৩ রান তুলেছিলেন। এমসিজিতে একই…