কপিল দেব
৬ জানুয়ারি, ১৯৫৯ তারিখে চণ্ডীগড়ে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং ও ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম জীবন্ত কিংবদন্তী। এককথায়, অদ্যাবধি ভারতের সেরা ফাস্ট বোলিং অল-রাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন স্ব-মহিমায়। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা পেস বোলার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। ‘হরিয়াণা হারিকেন’ নামে সবিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিলেন। মৃত্যুতুল্য আউট-সুইঙ্গার ও আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের কারণে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ভারতীয় ক্রিকেটের খেলার ধারাকে পরিবর্তন করতে অবিসংবাদিত ভূমিকা রেখেছেন।
১৯৭৮ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি তাঁর সময়কালের শীর্ষ অল-রাউন্ডারদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন। ইয়ান বোথাম, ইমরান খান ও রিচার্ড হ্যাডলি’র সাথে স্ব-মহিমায় নিজেকে যুক্ত করেন। ব্যাট ও বল হাতে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের পাশাপাশি মাঠের বহিরাংশেও দারুণ ভূমিকা রেখেছেন। ভারতের সেরা বোলারের মর্যাদা লাভের পাশাপাশি নিচেরসারির প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। এছাড়াও, দেশের সেরা গুরুত্বপূর্ণ ফিল্ডার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। সন্দেহাতীতভাবে ভারতের সেরা সহজাত ক্রিকেটার হিসেবে আবির্ভুত হয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর আবির্ভাবের পূর্বে প্রায়শঃই নতুন বল নিয়ে স্পিনারদেরকে আক্রমণ কার্য পরিচালনা করার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হতো। এছাড়াও, বুধি কুন্দরন ও সুনীল গাভাস্কারকে বোলিং করতে হতো। পর্যাপ্ত পেস নিয়ে তিনি এসে এ ধারা পরিবর্তনে অগ্রসর হন। অভিষেকেই সাদিক মোহাম্মদকে হেলমেট পরিধান করতে বাধ্য করেন।
এরপর লক্ষ্য করা যায় যে, তিনি ব্যাট হাতে নিয়েও সমানভাবে দক্ষ। শীর্ষমানের ব্যাটসম্যানের পর্যাপ্ত গুণাবলীও তাঁর মাঝে বিদ্যমান ছিল। ফিল্ডিংয়ের সীমাবদ্ধতার পূর্বেকার সময়ে ওডিআইয়ে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ৯৫। প্রায়শঃই বলকে দীর্ঘ দূরত্বে ফেলতে সচেষ্ট থাকতেন। ভারতীয় ক্রিকেটে মানসম্পন্ন অল-রাউন্ডার, ফাস্ট বোলার হিসেবে তাঁর পূর্বে আর কেউ আসেননি। লক্ষ লক্ষ তরুণের উজ্জ্বীবনী শক্তিতে পরিণত হন। আকস্মিকভাবে তরুণেরা তাঁর দীর্ঘ দূরত্ব নিয়ে দৌঁড়ে অংশ নিয়ে ছন্দোবদ্ধ বোলিংয়ে দেশব্যাপী উদ্বুদ্ধ হয়। তিনি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন।
১৯৭৫-৭৬ মৌসুম থেকে ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রেখেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে হরিয়াণা এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নর্দাম্পটনশায়ার ও ওরচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৫ নভেম্বর, ১৯৭৫ তারিখে রোহতকে অনুষ্ঠিত রঞ্জী ট্রফিতে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৬/৩৯ ও ২/৭৮ বোলিং পরিসংখ্যানের পাশাপাশি অপরাজিত ২৬ রান তুলে পাঞ্জাবের বিপক্ষে দলের ইনিংস ব্যবধানের জয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। এরফলে, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের চিহ্ন তুলে ধরেন। ২ ডিসেম্বর, ১৯৭৭ তারিখে সার্ভিসেস দলের বিপক্ষে ৮/৩৮ ও ৩/৩৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো খেলায় দশ-উইকেটের সন্ধান পান। এরফলে, ইরানী ট্রফি প্রতিযোগিতায় খেলার জন্যে মনোনীত হন।
১৯৭৮ থেকে ১৯৯৪ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ১৩১ টেস্ট ও ২২৫টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে বিষেন বেদী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে পাকিস্তান গমন করেন। ১ অক্টোবর, ১৯৭৮ তারিখে ১৯ বছর বয়সে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যেম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অঙ্গনে প্রবেশ করেন। কোয়েটায় অভিষেক ঘটা ঐ খেলায় ১২ বল মোকাবেলায় ১৩ রান ও ১/২৭ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে দলের চার রানের বিজয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন।
পনেরো দিন পর একই সফরের ১৬ অক্টোবর, ১৯৭৮ তারিখে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। তবে, টেস্ট অভিষেক পর্বটি তেমন সুখকর হয়নি। নিষ্প্রাণ ড্র হওয়া ঐ খেলায় ৯৬ রান খরচ করে ১ উইকেট দখল করেছিলেন।
তবে, ঐ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে দারুণ খেলেছিলেন। করাচীতে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে ব্যাট হাতে মারমূখী ভঙ্গীমায় মাত্র ৩৩ বল মোকাবেলা ঝড়োগতির অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। ঐ সময়ে এটিই যে-কোন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের দ্রুততম অর্ধ-শতরানের ইনিংস ছিল। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের ঐ ইনিংসটিকে তিনি তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের অন্যতম সেরা ইনিংস হিসেবে বর্ণনা করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৪ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/১৩২ ও ১/৪৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়েছিলেন। ঐ টেস্টে সফরকারীরা ৮ উইকেটে পরাজয়বরণ করে ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে পরাজিত হয়।
২৭ জানুয়ারি, ১৯৭৯ তারিখে দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম টেস্ট শতক হাঁকান। অর্থাৎ, ইনিংসে পাঁচ-উইকেট লাভের পূর্বেই শতরানের সন্ধান পেয়েছিলেন। তিন অঙ্কের কোটা স্পর্শের জন্যে মাত্র ১২৪ বল খরচ করেছিলেন। পূর্বদিনের ৯৪ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করেন। নরবার্ট ফিলিপের বল থেকে ছক্কা হাঁকিয়ে শতক পূর্ণ করেন। পরবর্তীতে, ৩/৫৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে প্রতিপক্ষকে ফলো-অনে ফেললেও সময়ের অভাবে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়।
১২ জুলাই, ১৯৭৯ তারিখে মূলতঃ একাকী স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রথমবারের মতো টেস্টে পাঁচ-উইকেট পেলেও অন্য কোন বোলার তাঁকে যোগ্য সহযোগিতা করতে পারেননি। এজবাস্টনে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে ইংল্যান্ড দল ৬৩৩/৫ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। ঐ খেলায় ভারত দল ইনিংস ও ৮৩ রানে পরাজিত হয়।
১৯৭৯ সালে নিজ দেশে অজি দলের বিপক্ষে সিরিজে দারুণ খেলেন। দুইবার পাঁচ-উইকেট নিয়ে ভারতের উল্লেখযোগ্য সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন। ১৯৭৯-৮০ মৌসুমে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজেও বিরাট ভূমিকা রাখেন। ঐ সিরিজে দুইবার ভারত দলের বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। বোম্বের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ৬৯ রান ও মাদ্রাজের চিপকে দ্বিতীয়বারের মতো খেলায় দশ উইকেট পেয়েছিলেন।
৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সফলতা পান। কলকাতা টেস্টে পাকিস্তানী ক্রিকেটার তসলিম আরিফকে বিদেয় করে শততম টেস্ট উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। নিজস্ব ২৫তম টেস্টে এ সাফল্যের পাশাপাশি সহস্র রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে টেস্টপ্রতি চার উইকেট ও ৪০ রান তুলেছিলেন। ২১ বছর ২৮ দিন বয়সে কনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ উইকেট ও ১০০০ রান সংগ্রহের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন।
পেস ও সুইংয়ে প্রতিপক্ষীয় খেলোয়াড়দের মাঝে ভীতিদায়ক ভূমিকা রাখতেন ও ভারতকে জয় এনে দিতেন। পাশাপাশি, দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে উজ্জ্বীবনী শক্তি আনয়ণে সচেষ্ট ছিলেন। খেলায় তিনি পাঁচ-উইকেট লাভসহ শতরানের ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। ১৯৮১ সালে মেলবোর্নে এ সাফল্য পান। বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগে বোলিং করতেন। আঘাত নিয়েও স্বল্প রানের লক্ষ্যমাত্রায় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে গুটিয়ে দিয়ে টেস্টে ভারতকে জয় এনে দেন। ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১ তারিখের চূড়ান্ত দিনে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল মাত্র ১১৯ রান ও হাতে ছিল সাত উইকেট। ৫/২৮ বোলিং করে প্রতিপক্ষকে ৮৩ রানে গুড়িয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা রাখেন।
১৯৮০-৮১ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি বল হাতে নিয়ে ৩/১১২ ও ৪/৩৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ০ ও ৯ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে গ্যারি ট্রুপের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। তবে, সন্দীপ পাতিলের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও সফরকারীরা ৬২ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
১৯৮১-৮২ মৌসুমে নিজ দেশে কিথ ফ্লেচারের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ২৭ নভেম্বর, ১৯৮১ তারিখে বোম্বের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ব্যাট হাতে ৩৮ ও ৪৬ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ১/২৯ ও ৫/৭০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে ১৩৮ রানে জয় পেয়ে স্বাগতিকরা ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৮২ সালে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। পুরো সিরিজে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড সফরে নিজস্ব প্রথম পাঁচ-উইকেট পান। লর্ডসে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে ৫/১২৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। পাঁচ-উইকেট লাভের স্বীকৃতিস্বরূপ লর্ডসের অনার্স বোর্ডসে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। তাসত্ত্বেও, স্বাগতিক দলের বিপক্ষে তাঁর দল পরাজিত হয়। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ এক পর্যায়ে ৯৪/৪ হয়। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানসহ সবগুলো উইকেটই তিনি করায়ত্ত্ব করেন। তবে, ডেরেক র্যান্ডলের মনোমুগ্ধকর শতকের কল্যাণে স্বাগতিক দল ৪৩৩ রান তুলতে সক্ষম হয়। জিওফ কুক, অ্যালান ল্যাম্ব, ক্রিস টাভারে, ডেভিড গাওয়ার ও ডেরেক র্যান্ডলের উইকেট পান। ৪৩ ওভারে ৮ মেইডেন সহকারে পাঁচ-উইকেট পান। ভারত দল ১২৮ রানে গুটিয়ে গেলে ফলো-অনের কবলে পড়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬৯ রান তুললে প্রতিপক্ষের জয়ের জন্য মাত্র ৬৫ রানের প্রয়োজন পড়ে। দ্বিতীয় ইনিংসেও তিনি তিন উইকেট পান। প্রাণান্তঃকর প্রয়াসের কারণে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
৮ জুলাই, ১৯৮২ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত সিরিজে তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। বল হাতে নিয়ে ১/১০৯ ও ১/৫৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৯৭ রান তুলেছিলেন। এ টেস্টও ড্রয়ের দিকে গড়ায়। সিরিজটিতে ২৯২ রান ও ১০ উইকেট পেয়েছিলেন। অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।
১৯৮২-৮৩ মৌসুমে নিজ দেশে বান্দুলা বর্ণাপুরা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৮২ তারিখে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। অমৃতসরে অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ওডিআইয়ে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হন। ৩১ বলে ৪৯ রান তুলেন। এরপর, বল হাতে নিয়ে ৮-৬-৯-১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ঐ খেলায় ভারত দল ৭৮ রানে জয় পেয়েছিল।
একই সফরের ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৮২ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ৩/৯৭ ও ৫/১১০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ৩১ ও ৩০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, দিলীপ মেন্ডিসের জোড়া শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।
একই মৌসুমে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে পাকিস্তানে ব্যর্থ সফরে অংশ নেন। এ সফরে ভারতের শোচনীয় ফলাফলের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। বড় ধরনের রান সংগ্রহের খেলাগুলো পরবর্তীতে ড্রয়ে পরিণত হয়।
২৩ ডিসেম্বর, ১৯৮২ তারিখে ভারতের পক্ষে দ্রুততম অর্ধ-শতকের নিজস্ব রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন। ৩০ বল মোকাবেলায় অর্ধ-শতরানের সন্ধান পান। পরবর্তীতে, ৫৩ বল থেকে ৭৩ রান তুলেছিলেন তিনি। এরপর বল হাতে নিয়ে ৫/১০২ লাভ করলেও ইমরান খানের ৮/৬০ বোলিং পরিসংখ্যানের কল্যাণে ভারত দল ইনিংস ও ৮৬ রানে পরাজয়বরণ করে।
৩ জানুয়ারি, ১৯৮৩ তারিখে ফয়সালাবাদে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৪১ ও ১৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৭/২২০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়কের শতক হাঁকানোকালে এক ওভার থেকে ২১ (৬-৪-০-৪-৬-১) রান প্রদান করেছিলেন। এছাড়াও, প্রথম বোলার হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই শতাধিক রান খরচ করেন। তবে, ইমরান খানের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে জয় পেলে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
একই সিরিজের ২৩ জানুয়ারি, ১৯৮৩ তারিখে লাহোরের গাদ্দাফী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ৮/৮৫ লাভ করেন। তন্মধ্যে, শেষ পাঁচ বল থেকে ৩ উইকেট পান (উ উ ০ ০ উ)। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও সফরকারীরা ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
মার্চ, ১৯৮৩ সালে টেস্টপ্রতি চার উইকেট লাভ ও ৪০ রান সংগ্রহের অধিকারী হন। ত্রিনিদাদে অনুষ্ঠিত নিজস্ব ৫০তম টেস্টে অ্যান্ডি রবার্টসকে বিদেয় করে ২০০তম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৫ বল থেকে শতক হাঁকান। এ পর্যায়ে ২০০০ রান সংগ্রহ করেন। এরফলে, ২৪ বছর ৬৮ দিন বয়সে কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে ‘ডাবল’ লাভের গৌরব অর্জন করেন। ২৯ মার্চ, ১৯৮৩ তারিখে বারবাইসে অনুষ্ঠিত ওডিআইয়ে অংশ নেন। ৩৮ বল মোকাবেলায় ৭২ রান তুলেন। এ সময়ে ভারতীয়দের মধ্যে দ্রুততম অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলার কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৮২/৫ তুলে ভারতের তৎকালীন সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করে। এরপর, ১০-০-৩৩-২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ফলশ্রুতিতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভারত দল তাদের প্রথম ওডিআইয়ে জয়ী হয়। পরবর্তীতে, ঐ বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দলের বিজয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
খুব দ্রুত বহুগুণে গুণান্বিত তারকা খেলোয়াড়কে অধিনায়কের ন্যায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্যে মনোনীত করা হয়। পরের বছরই ক্রিকেটের স্বর্গভূমিতে আবারও সেরা খেলা প্রদর্শন করেন। জুন, ১৯৮৩ সালে নিজের ও ভারতীয় ক্রিকেটের স্বর্ণালী মাসের সাথে জড়িত হন। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার তৃতীয় আসরে বিস্ময়করভাবে ভারতের শিরোপা বিজয়ে নেতৃত্ব দেন ও স্বর্ণালী মুহূর্ত অতিবাহিত করেন। ১৯৮৩ সালের প্রুডেন্সিয়াল বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অল-রাউন্ডার হিসেবে নিজের পরিচিতি ঘটান। ‘বি’ গ্রুপের খেলায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। ১৩৮ বল থেকে সংগৃহীত এ রানটি তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ হিসেবে পরবর্তীকালে চিত্রিত হয়ে পড়েন। এ সংগ্রহটি ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম ওডিআই শতক ছিল। দলের সংগ্রহ ১৭/৫ থাকা অবস্থায় তিনি মাঠে নেমেছিলেন। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের অনেকেই ইনিংসটিকে সর্বকালের সেরা ইনিংসগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচিত করে থাকেন। এরফলে, ভারত দল প্রতিযোগিতায় টিকে থাকে। এরপূর্বে ট্রেন্ট ব্রিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐ আসরে ৫/৪৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। এটিও ভারতের পক্ষে ওডিআইয়ে প্রথম পাঁচ-উইকেট লাভ ছিল।
লর্ডসে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার তৃতীয় আসরের চূড়ান্ত খেলায় ক্লাইভ লয়েডের পর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ভারত দলের প্রথম শিরোপা বিজয়ে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। প্রবল প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাজিত করতে ভারত দলের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে বিরাট কৃতিত্বের পরিচয় দেন। নিম্নমূখী রানের খেলায় ১৫ রান সংগ্রহ করেন। এরপর, ১১-৪-২১-১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান, উল্টোমুখী দৌঁড়ে বিস্ময়করভাবে ভিভ রিচার্ডসের ক্যাচ তালুবন্দী করেন।
ডিসেম্বর, ১৯৮৪ সালে ইতোমধ্যে সুনীল গাভাস্কারের কাছে অধিনায়কত্ব চলে যাবার পর বাজে শটে বিদেয় নেয়ার কারণে দল থেকে বাদ পড়েন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দিল্লি টেস্টে ছয় বলে দ্বিতীয় ছক্কা হাঁকানোকালে বিদেয় নেন। এরফলে, একাধারে ৬৭ টেস্ট পর প্রথমবারের মতো ভারত দল থেকে ছিটকে যান। অবশ্য এক টেস্ট পরই তাঁকে পুণরায় ভারত দলে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর, ধারাবাহিকভাবে আরও ৬৫ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। গোটা সিরিজে অপূর্ব অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ২ জানুয়ারি, ১৯৮৬ তারিখে সিডনিতে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ৪২ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, ১/৬৫ ও ০/১১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। কৃষ শ্রীকান্ত, সুনীল গাভাস্কার ও মহিন্দার অমরনাথের ব্যাটিংয়ের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও সিরিজটি ০-০ ব্যবধানে শেষ হয়। এ সিরিজে ১৩৫ রান ও ১২ উইকেট লাভ করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে, কৃষ শ্রীকান্তের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।
১৯৮৬ সালে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ইংল্যান্ড সফরে যান। ৫ জুন, ১৯৮৬ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ১/৬৭ ও ৪/৫২ বোলিং বিশ্লেষণসহ ১ ও ২৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৫ উইকেটে জয়লাভ করে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে মাদ্রাজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১৯ রানের মনোরম ইনিংস খেলেন। টাই হওয়া ঐ টেস্টে তাঁর ব্যাটিংশৈলী সন্দেহাতীতভাবে সেরাদের তালিকায় চলে আসে। দলের সংগ্রহ ২০৬/৫ থাকা অবস্থায় মাঠে নেমে ১১৯ বলে শতরানে পৌঁছেন। চুরাশি রানই বাউন্ডারি থেকে আসে। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় পঞ্চাশ রানের ৪৪ রান ছিল চারের মার থেকে।
একই মৌসুমে নিজ দেশে দিলীপ মেন্ডিসের নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপনায় সচেষ্ট ছিলেন। ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে দলকে পরিচালনা করেন। ২/৮১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ১৬৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ৪ জানুয়ারি, ১৯৮৭ তারিখে কটকে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কসূলভ ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ৬০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ৪/৬৯ ও ১/৩৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৬৭ রানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
সময়ের ব্যবধানে তাঁর বোলিংয়ের ধার কমে যায়। ১৯৮০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধে উইকেট পেতে তাঁকে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হয়। খ্যাতি লাভ করা কলার ন্যায় সুইংয়ের কার্যকারিতা কমে যায়। তবে, তাঁর ব্যাটিংশৈলী ঠিকই বজায় ছিল। কাউন্টি ক্রিকেটের ফিল্ডিং তাঁকে স্লিপ অঞ্চলে অবস্থান করে অতিরিক্ত মাত্রা যুক্ত করে। তবে, তাঁকে আর বোলার হিসেবে খেলতে দেখা যেতো না। ঐ বিশ্বকাপের পর সার্বিকভাবে তাঁর অধিনায়কত্ব ফলপ্রসূ হয়নি। এ দায়িত্ব পালনে সুনীল গাভাস্কারের সাথে স্নায়ুযুদ্ধ চলতে থাকে। তাঁদের সম্পর্ক তেমন উষ্ণ ছিল না। এক পর্যায়ে আগ্রাসী ভঙ্গীমায় ব্যাটিংয়ের কারণে দল থেকে বাদ পড়তে হয়। ১৯৮৭ সালের রিলায়েন্স বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে পরাজিত হলে তাঁকে অধিনায়কের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয়। তাসত্ত্বেও, দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ব্যাট ও বল হাতে নিয়ে মাঝে-মধ্যে অতীতের সাফল্যের পুণরাবৃত্তি ঘটাতেন।
১৯৮৯-৯০ মৌসুমে কৃষ শ্রীকান্তের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে পাকিস্তান সফরে যান। ১৫ নভেম্বর, ১৯৮৯ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে অভিষেক ঘটা ১৬ বছর বয়সী শচীন তেন্ডুলকরের সাথে একত্রে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৪/৬৯ ও ৩/৮২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ৫৫ রানের অর্ধ-শতক হাঁকান। তাঁর চমৎকার অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। ঐ টেস্টে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেছিলেন।
১৯৯০-এর দশকের সূচনালগ্নে অস্ট্রেলিয়ায় দারুণ সিরিজ খেলেন। সর্বাধিক টেস্ট উইকেট লাভের বিশ্বরেকর্ড গড়তে তুলনামূলকভাবে বেশ সময় নেন। রিচার্ড হ্যাডলি’র কৃতিত্বকে ম্লান করে দেয়ার পরপরই অবসর গ্রহণ করেন। ৪৩৪ উইকেটের পাশাপাশি পাঁচ সহস্রাধিক রান সংগ্রহ করে নিজেকে স্মরণীয় সাফল্যে নিয়ে যান।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। মার্চ, ১৯৭০ সালের পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটি প্রথম টেস্ট খেলা ছিল। ১৩ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৩/৪৩ ও ০/১৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। প্রবীণ আম্রে’র অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
ভারতীয় ক্রিকেটের অগ্রযাত্রায় অবশ্যম্ভাবী হিসেবে কপিল দেবের নাম অনস্বীকার্য্য। ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর অবদানকে কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। ভারতের প্রথম ফাস্ট বোলার হিসেবে বিশ্বের সর্বত্র সেরা ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে সমীহের পাত্রে পরিণত হন। তাঁর পূর্বে ভারত দলে মিডিয়াম পেসারের প্রাচুর্যতা ছিল। কিন্তু, তাঁর আবির্ভাবের সাথে সাথে ভারতে ফাস্ট বোলিংয়ের ধরন চিরতরে পাল্টে যায়। বলকে উভয় দিকেই সুইং করাতে পারতেন।
অসম্ভব দম সহযোগে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও সমান মারকুটে ভঙ্গীমায় অগ্রসর হয়েছিলেন। সমসমায়িক পাকিস্তানের ইমরান খান, নিউজিল্যান্ডের রিচার্ড হ্যাডলি ও ইংল্যান্ডের ইয়ান বোথামের ন্যায় শটের পর শট মেরেছেন। বোলিংয়ে তাঁদের সমমানে নিজেকে না নিয়ে গেলেও স্ট্রাইক-রেট অনুযায়ী প্রতি টেস্টে চার উইকেটের কম পেয়েছেন। তাসত্ত্বেও, বলে অসাধারণ নিখুঁততা আনয়ণ ও ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বলকে সুইং করানোয় অপূর্ব দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। বোলিংয়ের তুলনায় বলকে আঘাতও করেছেন আরও চমৎকার ভঙ্গীমায়, কোনরূপ জড়তা ছাড়াই। নিজ নামের পার্শ্বে আটটি শতরানের ইনিংস যুক্ত করেছেন। ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৪ তারিখে নিজ দেশে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ চলাকালে এক বছর পূর্বেকার রিচার্ড হ্যাডলি’র সংগৃহীত ৪৩১ উইকেট টপকে তৎকালীন বিশ্বরেকর্ড গড়েন। আহমেদাবাদ টেস্টে হাসান তিলকরত্নে’র উইকেট নিয়ে তিনি এ অর্জনের স্বাক্ষর রাখেন। এরপর, আর মাত্র একটি টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৯ মার্চ, ১৯৯৪ তারিখে হ্যামিল্টনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১/২৯ ও ১/৪৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ১৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। অভিষেকধারী স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের অসাধারণ সাফল্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়েছিল।
অনিল কুম্বলে’র এক ইনিংসে ১০/৭৪ লাভের পূর্বে ৯/৮৩ লাভ করে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে তৎকালীন সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন। নভেম্বর, ১৯৮৩ সালে একটির জন্যে ইনিংসের সবকটি উইকেট স্বীয় ঝুলিতে পুড়তে পারেননি। আহমেদাবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে এ সাফল্য পান। ডেসমন্ড হেইন্সের প্রথম উইকেটটি বলবিন্দর সাঁধু লাভ করেছিলেন। তবে, ভারতের ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে ১৩৮ রানের পরাজয় রোধ করতে পারেননি। ৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৩ তারিখে ওডিআইয়ে সহস্রতম রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এ কৃতিত্ব গড়েন।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অক্টোবর, ১৯৯৯ সাল থেকে আগস্ট, ২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ মাস ভারত দলের সাথে সাধারণমানের কোচ হিসেবে সময় অতিবাহিত করেন। পাতানো খেলা কেলেঙ্কারীর সাথে মনোজ প্রভাকরের সাথে তাঁর নামও উচ্চারিত হয়। পরবর্তীতে অবশ্য তিনি এ অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি লাভ করেন। ফলশ্রুতিতে, তাঁকে কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হয়। বিতর্ক চলাকালীন খেলা ছেড়ে চলে আসার কথা ঘোষণা করেন। তবে, উইজডেন কর্তৃক শতাব্দীর সেরা ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ঘোষণা করার ফলে কিছুদিন পরই পুণরায় খেলার জগতে ফিরে আসেন। বোলিং পরামর্শকের দায়িত্ব পালনসহ দুই বছর মেয়াদে ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমির সভাপতিত্ব করেন। ২০০৭ সালে বিসিসিআইয়ের অনুমোদনবিহীন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে নির্বাহী সদস্য হিসেবে যোগ দেন। এরফলে, এনসিএ থেকে তাঁকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
১৯৭৮ সালে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন। ১৯৭৯-৮০ মৌসুমে অর্জুন পদক লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটার ও ১৯৮৪ সালে উইজডেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন। ২০০২ সালে সুনীল গাভাস্কার ও শচীন তেন্ডুলকরকে পাশ কাটিয়ে ভোটের মাধ্যমে শতাব্দীর সেরা ভারতীয় ক্রিকেটারের পুরস্কার লাভ করেন। মহেন্দ্র সিং ধোনি’র পূর্বে ২০০৯ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে সম্মানসূচক ও মর্যাদাপূর্ণ লেফট্যানেন্ট কর্নেল পদবীতে ভূষিত করা হয়। ২০০৯ সালে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত ৫৫জন ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে মনোনীত হন। ভারত সরকার কর্তৃক ১৯৮২ সালে পদ্মশ্রী ও ১৯৯১ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালে সিকে নায়ড়ু আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পান। ‘ইকবাল’, ‘চেইন খুলি কি মে খুলি’ ও ‘মুঝশে শাদী করোগি’ প্রমূখ চলচ্চিত্র অংশ নিয়েছিলেন।
১৯৭৮ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ভারতের পক্ষে খেলেছেন। এ সময়ে ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। বিশ্বের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে পাঁচ সহস্রাধিক রান ও চার শতাধিক উইকেট পেয়েছেন। সবমিলিয়ে টেস্টগুলো থেকে ২৯.৬৫ গড়ে ৪৩৪ উইকেট লাভের পাশাপাশি ৩১.০৫ গড়ে ৫২৪৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ করেছেন ১৬৩ রান। ৪৩৪ উইকেট নিয়ে অদ্যাবধি ভারতের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহকারীর মর্যাদা লাভ করে আসছেন। টেস্টের ঊনিশজন শীর্ষ অল-রাউন্ডারের অন্যতম হিসেবে ২০০ উইকেট ও ৩০০০ রানের ন্যায় ‘ডাবল’ লাভের অধিকারী। এছাড়াও, ওডিআইগুলো থেকে ২৭.৪৫ গড়ে ২৫৩ উইকেট ও ২৩.৭৯ গড়ে ৩৭৮৩ রান তুলেছিলেন। ব্যক্তিগত সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছেন ৫/৪৩।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। ১৯৮০ সালে রোমি দেবের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। এ দম্পতির অমিয় দেব নাম্নী একমাত্র কন্যা রয়েছে। অবসর সময়ে গল্ফ খেলতে পছন্দ করেন। ‘ক্রিকেট, মাই স্টাইল’ ও ‘বাই গড’স ডিক্রি’ শীর্ষক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।