গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথ
১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৯ তারিখে মহীশূরের ভদ্রবাটি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, প্রশাসক ও রেফারি। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
১৯৬৭-৬৮ মৌসুম থেকে ১৯৮৭-৮৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে কর্ণাটক ও মহীশূরের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
দলের জয়ে কিংবা ড্রয়ে তাঁর শতক বেশ কার্যকর ছিল। সব মিলিয়ে টেস্টে চৌদ্দটি শতরানের ইনিংস খেলেছেন। ১৯৭০-এর দশকে অগণিত দর্শক তাঁর শতরানের জন্যে মুখিয়ে থাকতো। পরবর্তীতে সুনীল গাভাস্কারের কাছ থেকেও একই প্রত্যাশা পোষণ করতেন সাধারণ দর্শকেরা। তাঁর কব্জির মোচরে বল আলতো ছোঁয়ায় অন-সাইডে ও স্কয়ার কাটের মাধ্যমে বল ইপ্সিত জায়গায় পৌঁছতো।
ছোটখাটো ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী ছিলেন। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বল মোকাবেলায় তৎপরতা দেখাতেন। প্রায়শঃই ত্রিশ কিংবা চল্লিশের কোটায় রান তুলে দর্শকদেরকে নিরাশ করতেন। ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমে মাদ্রাজে অ্যান্ডি রবার্টসের ন্যায় বোলারসমৃদ্ধ সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে ৯৭ রানের ইনিংস খেলেন। এ যাবৎকালে ভারতের মাটিতে তাঁর এ ইনিংসটি সর্বাপেক্ষা সেরা ইনিংসরূপে বিবেচিত হয়ে আসছে।
১৯৬৯ থেকে ১৯৮৩ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৯১ টেস্ট ও ২৫টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে নিজ দেশে বিল লরি’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১৫ নভেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ঐ টেস্টে শূন্য ও শতরান তুলেন। পরবর্তীতে, সুরিন্দর অমরনাথ ও প্রবীণ আম্রে এ তালিকায় যুক্ত হন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের অন্যতম সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ০ ও ১১* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৭৬ সালে ত্রিনিদাদের পোর্ট অব স্পেনে আরেকটি উল্লেখযোগ্য শতক হাঁকান। চতুর্থ ইনিংসে ৪০৪ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় এ সাফল্য পান।
১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে নিজ দেশে গ্লেন টার্নারের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৮ নভেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে কানপুরে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৬৮ ও ১০৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২৬ নভেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ১২ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৮৭ ও ১৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ২১৬ রানে পরাজিত পেলে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে মাদ্রাজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যাটিং অনুপযোগী উইকেটে নিম্নরানের খেলায় দলের বিজয়ে ভূমিকা রাখেন।
১৯৭৯-৮০ মৌসুমে ভারত দলকে নেতৃত্ব দেন। এক পর্যায়ে ক্রিজ থেকে বিদেয় নেয়া বব টেলরকে পুণরায় খেলা চালিয়ে যেতে আমন্ত্রণ জানান ও পরবর্তীতে আত্মঘাতি চিন্তাধারার শামিলরূপে বিবেচিত হয়।
কেবলমাত্র নির্দিষ্ট দলের বিপক্ষেই ভালো খেলেননি। প্রথম ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রত্যেক টেস্টভূক্ত দলের বিপক্ষে শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। এছাড়াও, একাধারে সর্বোচ্চ টেস্ট খেলে ভারতীয় রেকর্ড গড়েন। টেস্ট অভিষেকের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে খেলার পর ১৯৮২-৮৩ মৌসুমে সুনীল গাভাস্কারের নেতৃত্বে পাকিস্তানে ব্যর্থ সফর শেষে বাদ পড়েন। এ সফরে ভারতের শোচনীয় ফলাফলের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন। বড় ধরনের রান সংগ্রহের খেলাগুলো পরবর্তীতে ড্রয়ে পরিণত হয়। ২৩ জানুয়ারি, ১৯৮৩ তারিখে লাহোরের গাদ্দাফী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। এরফলে, উপর্যুপরী ৮৬ টেস্টে অংশ নিয়ে গ্যারি সোবার্সের রেকর্ড ভেঙ্গে নিজের করে নেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।
এরপর, ৩০ জানুয়ারি, ১৯৮৩ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সিরিজের ষষ্ঠ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও স্বাগতিকরা ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
এক দশকের অধিক সময় ধরে একাধারে টেস্ট খেলাকালীন দূর্দান্ত সাহসী ভূমিকায় অংশ নিয়েছিলেন ও পুরো খেলোয়াড়ী জীবনে ভারতের ব্যাটিংয়ে ভিত্তি আনয়ণে সচেষ্ট ছিলেন।
অবসর গ্রহণের পর জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে ভারত দল নিজ দেশে ব্যাপকভাবে সাফল্য পেতে থাকে। এক পর্যায়ে রেফারি হিসেবে মনোনীত হন। ১৫ টেস্ট, ৭৮টি ওডিআই পরিচালনা করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। ১৯৭৮ সালে সুনীল গাভাস্কারের ভগ্নীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এ পর্যায়ে ভারতের ব্যাটিং কেবলমাত্র একটি পরিবারে কুক্ষিগত ছিল। টেস্টে ছয় সহস্রাধিক রান তুলেন।