গুলাম গার্ড
১২ ডিসেম্বর, ১৯২৫ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের গুজরাতের সুরাতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
বড়সড় গড়নের অধিকারী হবার সুবাদে তুলনামূলকভাবে সমসাময়িকদের চেয়ে বেশ আগেভাগে হাতেখড়ি ঘটে তাঁর। ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে থাকেন। এক পর্যায়ে গুজরাত পুলিশে চাকুরী লাভের পূর্বে ইন্টারমিডিয়েট লেভেল বিএ শেষ করেন।
১৯৪৬-৪৭ মৌসুম থেকে ১৯৬২-৬৩ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে গুজরাত ও বোম্বের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ঐ মৌসুমের শীতকালে অনাকাঙ্খিত ঘটনার মধ্য দিয়ে তাঁর অভিষেক ঘটে। বিনু মানকড়ের নেতৃত্বাধীন গুজরাত দলের সদস্যরূপে খেলার সুযোগ পান। প্রথম পরিবর্তিত বোলার হিসেবে বজুভাকে বিদেয় করেন ও নিচেরসারিতে ধ্বস নামান। ৪/৫০ বোলিং পরিসংখ্যান গড়লেও আকবর খানের কল্যাণে কাঠিয়াবর ৬ রানে জয় পায়। কিন্তু, বিসিসিআই গুজরাতের আপত্তিতে দুই সপ্তাহ পর পুণরায় খেলার আয়োজন করে। গুজরাত ইনিংস ব্যবধানে জয় পেলেও তিনি খেলার সুযোগ পাননি। পরের মৌসুমে বোম্বের সদস্যরূপে কাঠিয়াবরের বিপক্ষে পরের খেলায় অংশ নেন।
সাদামাটাভাবে তাঁর অভিষেক হয়। হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে নিজেকে মেলে ধরেন। প্রথম সকালেই প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করেন। প্রতিপক্ষীয় দলের সংগ্রহকে ১৫/৩-এ নিয়ে যান। ঐ খেলায় ৩/৫৩ ও ৬/৪৬ পান। তবে, চূড়ান্ত খেলায় সিকে নায়ড়ু’র নেতৃত্বাধীন হোলকারের বিপক্ষে সাফল্য পাননি। তাঁকে উইকেট শূন্য অবস্থায় মাঠ ত্যাগ করতে হয়েছিল।
এরপর থেকে তাঁকে বোম্বে দলে টিকে থাকতে বেশ হিমশিম খেতে হয়। ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমে গুজরাতের পক্ষে খেলেন। তবে, এরপরের মৌসুমেই পুণরায় বোম্বে দলে ফিরে যান। পেশাগত কারণেই সম্ভবতঃ তাঁকে দল পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। তারপর থেকে দলে খেলার কোন নিশ্চয়তা পাননি। টেস্ট দলে খেলার বিষয়টিতো একেবারেই অসম্ভব কল্পনা ছিল। এরপরই চলে আসে ১৯৫৭-৫৮ মৌসুম। দ্রুত তাঁর অবস্থানের উত্তরণ ঘটতে থাকে।
১৯৫৮ থেকে ১৯৬০ সময়কালে ভারতের পক্ষে দুইটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে নিজ দেশে জেরি আলেকজান্ডারের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৮ নভেম্বর, ১৯৫৮ তারিখে বোম্বের বিএসে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। চান্দু বোর্দে ও মনোহর হর্দিকরের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। বল হাতে নিয়ে ১/১৯ ও ২/৬৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৫৯-৬০ মৌসুমে নিজ দেশে রিচি বেনো’র নেতৃত্বাধীন অজি দলের মুখোমুখি হন। ১ জানুয়ারি, ১৯৬০ তারিখে বোম্বের বিএসে অনুষ্ঠিত সফররত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৯৩ রান খরচ করলেও কোন উইকেটের সন্ধান পাননি। এছাড়াও, ব্যাট হাতে ৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
ভারতের প্রথম বামহাতি সিম বোলার হিসেবে বোলিং উদ্বোধনে নামেন। প্রাণবন্তঃ পেস বোলিং করতেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দূর্দান্ত খেললেও অধিক টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি। ক্রিকেটের বাইরে পুলিশ সুপার ছিলেন। শুরুতে সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে নিযুক্তি লাভ করেন। সমসাময়িক দলীয় সঙ্গীদের সাথে উচ্চতায় নিজেকে বেশ এগিয়ে রেখেছিলেন। ধারনা করা হয় যে, লধা রামজী (৬-৪) ও অবেয় কুরুবিল্লা’র (৬-৫) মধ্যবর্তী ৬৫ বছরে ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে ভারতের লম্বাটে টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন। এছাড়াও, লম্বাটে কাঁধের অধিকারী ছিলেন। বারো কদম দূরত্ব অতিক্রম করে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। ডানহাতি ব্যাটসম্যানদেরকে মিডিয়াম পেসের চেয়ে একটু বেশী গতিতে বল ফেলতেন। রামচন্দ্র গুহ তাঁর ‘উইকেটস ইন দি ইস্ট’ গ্রন্থে তাঁকে দীর্ঘদেহী ও দীর্ঘপদের অধিকারী হিসেবে চিত্রিত করেছেন। অপরদিকে, মিহির বসু ‘এ হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে’ শক্তিধর ও দক্ষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
১৬ বছর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করে ৪১টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। অধিকাংশই বোম্বের পক্ষে খেলেন। তবে, খেলোয়াড়ী জীবনের শুরু ও শেষ করেন গুজরাতের পক্ষাবলম্বন করে। ২০.৫৩ গড়ে ১২৪ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে, ৩০-এর বয়সে এসে ১৯.৩৩ গড়ে ৯৩ উইকেট পান। দূর্ভাগ্যজনকভাবে ত্রিশের কোটা পূর্তির পূর্বে টেস্টে অংশ নেয়ার সুযোগ পাননি। প্রথম খেলায় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে তাঁকে মাঠের বাইরে অবস্থান করতে হয়েছিল।
১৩ মার্চ, ১৯৭৮ তারিখে গুজরাতের আহমেদাবাদে মাত্র ৫২ বছর ৯১ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। মৃত্যুকালীন তিনি গুজরাতের পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন।