Skip to content

নাজির আলী

1 min read

৮ জুন, ১৯০৬ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৩০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

আগ্রাসী ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে বলকে বেশ জোড়ালোভাবে আঘাত করতেন, মিডিয়াম-পেস বোলিংসহ দূর্দান্তভাবে ফিল্ডিং করতেন। অল-রাউন্ডার হিসেবে খেললেও সিকে নায়ড়ু ও অমর সিংয়ের ন্যায় খেলোয়াড়দের দাপটে দলে খেলার সুযোগ পাননি।

১৯২৩-২৪ মৌসুম থেকে ১৯৫৩-৫৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মুসলিম, সাউদার্ন পাঞ্জাব ও পাতিয়ালার মহারাজা একাদশ এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সাসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

ভারতের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে জনপ্রিয় খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু, ঘরোয়া ক্রিকেটের সফলতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মেলে ধরতে পারেননি। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তেমন সফলতার সাথে নিজের নামকে যুক্ত রাখতে পারেননি। তবে, প্রথম ভারতীয় হিসেবে ডন ব্র্যাডম্যানকে বিদেয় করে স্বীয় নামকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ডে সফররত অস্ট্রেলীয় একাদশের বিপক্ষে ক্লাব ক্রিকেট কনফারেন্স দলের সদস্যরূপে এ কীর্তিগাঁথায় অংশ নেন। তবে ঐ উইকেট বাদে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ওয়াজির আলী’র সাফল্যের কাছে ম্লান ছিলেন।

১৯২৬-২৭ মৌসুমে ভারত সফররত আর্থার জিলিগানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের বিপক্ষে চমকপ্রদ খেলে ইংল্যান্ডে খেলার সুযোগ পান। আট খেলায় অংশ নিয়ে তিনবার ছয় উইকেট পেয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে আর্থার জিলিগানের সুপারিশক্রমে সাসেক্স দলের পক্ষে অংশ নেয়ার সুযোগ লাভ করেন। পাতিয়ালার মহারাজার সহযোগিতায় বিদ্যুৎ প্রকৌশলে অধ্যয়নের জন্যে ইংল্যান্ডে চলে যান। কিন্তু, ক্লাব দলটির পক্ষে একটিমাত্র খেলায় অংশ নিতে পেরেছিলেন।

১৯৩২ থেকে ১৯৩৪ সময়কালে ভারতের পক্ষে দুইটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। উভয় টেস্টই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন। ভারতের সর্বপ্রথম টেস্টে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৩২ সালে সি.কে. নায়ড়ু’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ২৫ জুন, ১৯৩২ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। দলের অন্য সকলের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ব্যাট হাতে ১৩ ও ৬ রান তুলতে সক্ষম হন। ঐ টেস্টে স্বাগতিকরা ১৫৮ রানে জয়লাভ করেছিল। একই খেলায় ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ফিল্ডিংকালে আঘাতের কবলে পড়েন। ঐ সফরে ৩১.৮৭ গড়ে ১০২০ রান তুলেছিলেন। বল হাতে ২১.৮৭ গড়ে ২৩ উইকেট দখল করেন।

এরপর, ১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে মাদ্রাজে আরও একটি টেস্টে অংশ নেন। এ মৌসুমে ডগলাস জার্ডিনের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৪ তারিখে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে খেলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীরা ইনিংস ঘোষণা করলেও তিনি ৪/৮৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন। এগুলোই টেস্টে তাঁর প্রথম উইকেট ছিল। সফরকারীরা ২০২ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ইংল্যান্ড সফরের এক মাস পর হ্যারোগেটে কিছুটা দর্শনীয় ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ভারতীয় একাদশের সংগৃহীত ৬৬ রানের মধ্যে তিনি একাকী করেছিলেন ৫২ রান। কেউই তিন রানের কোটা অতিক্রম করতে পারেননি। কেবলমাত্র অতিরিক্ত রান এসেছিল ৫। অদ্যপি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অর্ধশতক সহযোগে সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহের উদাহরণ হয়ে আছে।

২৫ বছরের অধিক প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবনে ৩০ গড়ে ৩৪৪০ রান ও ২৫ গড়ে ১৫৮ উইকেট দখল করে স্বীয় প্রতিভা বিকাশে সোচ্চার ছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে উপেক্ষিত হলেও সাউদার্ন পাঞ্জাবের পক্ষে রঞ্জী ট্রফি দলে খেলতে থাকেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ভারত বিভাজিত হলে পাকিস্তানে চলে যান। অনেকগুলো বছর পাকিস্তান ক্রিকেট প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। আসিফ নাজির নামীয় সন্তানের জনক। ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে ৬৮ বছর ২৫৫ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।