|

লরেন্স রো

৮ জানুয়ারি, ১৯৪৯ তারিখে জ্যামাইকার হুইটফিল্ড টাউন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

হাত ও চোখের অপূর্ব সমন্বয় ঘটাতেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে জ্যামাইকা এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডার্বিশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৬৮-৬৯ মৌসুম থেকে ১৯৮১-৮২ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন।

১৯৭২ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বমোট ৩০ টেস্ট ও ১১টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭১-৭২ মৌসুমে নিজ দেশে গ্রাহাম ডাউলিংয়ের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে কিংস্টনে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেক টেস্টে নিজের প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটান। দৃষ্টিনন্দন ড্রাইভসহ লেট-কাট ও হুকে প্রথম ইনিংসে বিস্ময়কর দ্বি-শতক (২১৪) হাঁকান। এরপর, দ্বিতীয় ইনিংসেও শতরানের (১০০*) ইনিংস খেলেছিলেন। ফলশ্রুতিতে, টেস্টের ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেকে দ্বি-শতক ও শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। অদ্যাবধি এ অনন্য কীর্তিগাঁথার সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

তবে, পরবর্তী সফলতার জন্যে তাঁকে দুই বছর অপেক্ষা করতে হন। এবার জ্যামাইকার কিংস্টনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন অঙ্কের সন্ধান পান। দারুণ পায়ের কারুকাজ ও ভারসাম্য বজায় রেখে শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। বার্বাডোসের ব্রিজটাউনে অনুষ্ঠিত পরের টেস্টে ইংরেজ আক্রমণকে দুমরে মোচড়ে ত্রি-শতরানে নিয়ে যান। ঐ ইনিংসে বব উইলিসের বল থেকে হুক শটের বিষয়টি অগণিত ক্রিকেটপ্রেমীদের মন জয় করে। মাথা উঁচু বরাবর বলটি অত্যন্ত দ্রুততার সাথে স্থান পরিবর্তন করে মারলে উপস্থিত দর্শকেরা দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায়। ঐ সময়ে মাইকেল হোল্ডিং তাঁর দেখা সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁকে চিত্রিত করেন। এ পর্যায়ে ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা তাঁকে ডন ব্র্যাডম্যান ও জর্জ হ্যাডলি’র সাথে তুলনা করতে থাকেন।

ইংরেজ কাউন্টি দল ডার্বিশায়ারের গোচরীভূত হন ও চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। দূর্ভাগ্যবশতঃ তাঁর খেলার মান নিচেরদিকে যেতে থাকে। সর্দি জ্বরের চিকিৎসা করান। ঘাসের সংস্পর্শে অ্যালার্জির সৃষ্ট হয়। এছাড়াও, তাঁর চোখও এতে সংক্রমিত হতে থাকে। কিন্তু, তাঁর দৃষ্টি স্বাভাবিক থাকার কথা জানানো হয়। চশমা পরিধান করে ছন্দ ফিরে পেতে হিমশিম খান।

১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অনানুষ্ঠানিক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপে অংশ নেন। ব্রিসবেনের গাব্বায় শতক হাঁকিয়ে ছন্দ ফিরে পান। বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেটে অস্ট্রেলীয়দের বিপক্ষে ১৭৫ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেলেন। পরবর্তীতে এটিই তাঁর সর্বশেষ সেরা ইনিংসে পরিণত হয়।

১৯৭৯-৮০ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। এ মৌসুমে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড করেন। ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে ডুনেডিনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১ ও ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সফরকারীরা ১ উইকেটে নাটকীয়ভাবে পরাভূত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই সফরের ২৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৫০ ও ৫ রান সংগ্রহ করেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। এছাড়াও, এ সফরের ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮০ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে সর্বশেষ ওডিআইয়ে অংশ নেন।

১৯৮০ সালে ক্রিকেট খেলা থেকে দূরে সড়ে আসেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্রোহী দলের সদস্যরূপে গমন করেন। এরফলে, নিজ শহর কিংস্টনে পরিত্যাজ্য হন। এক পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় নিবাস গড়েন। এক পর্যায়ে তাঁকে সম্মাননা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জুন, ২০১১ সালে তাঁর নামানুসরণে একটি ছাউনীর নামকরণ করা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্রোহী দলের সদস্যরূপে গমনের বিষয়ে তিনি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেননি মন্তব্য করেন। দূর্ভাগ্যবশতঃ কয়েক মাস পর ৮ অক্টোবর, ২০১১ তারিখে জ্যামাইকা বোর্ড এ সম্মাননা প্রদানের বিষয়টি স্থগিত করে। অতঃপর, ১১ নভেম্বর, ২০১১ তারিখে জ্যামাইকা বোর্ডের বিরুদ্ধে আইনগত লড়াইয়ে অগ্রসর হন।

Similar Posts

  • | |

    ওয়ালি হ্যামন্ড

    ১৯ জুন, ১৯০৩ তারিখে কেন্টের বাকল্যান্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটিং কর্মে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। ইংল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। সিরেনচেস্টার গ্রামার স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। প্রায় যে-কোন বয়সী প্রজন্মের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করবেন। কেন্টে জন্মগ্রহণ করলেও ঘরোয়া…

  • | | |

    পমি এমবাঙ্গা

    ২৬ জুন, ১৯৭৬ তারিখে মাতাবেলেল্যান্ডের প্লামট্রি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। জিম্বাবুয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ক্রিকেটের সাথে পারিবারের কোন সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও বেশ প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। আধুনিক যুগের অন্যতম ক্রেতাদূরস্ত টেলিভিশন ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ…

  • |

    মার্ক বুচার

    ২৩ আগস্ট, ১৯৭২ তারিখে সারের ক্রয়ডন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ‘বুচ’ কিংবা ‘ব্যাজ’ ডাকনামে পরিচিত মার্ক বুচার ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ক্রয়ডনভিত্তিক ট্রিনিটি স্কুল ও আর্চবিশপ টেনিসন্সে অধ্যয়ন করেছেন। মাতা এলেন জ্যামাইকীয় ও…

  • | |

    বিল অ্যাথে

    ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৭ তারিখে ইয়র্কশায়ারের মিডলসবোরায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, দলের প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যে ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে অগ্রসর হতেন। ১৯৮০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আট বছর সময়কাল অতিবাহিত করেছেন। তবে, থেমে থেমে বা আসা-যাবার পালায় ছিলেন ও সাধারণমানের খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত…

  • | |

    ফ্রাঙ্ক লেভার

    ৭ ডিসেম্বর, ১৮৬৯ তারিখে ভিক্টোরিয়ার ক্যাসলমেইন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও লেখক ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। জোনাস লেভার ও মেরি অ্যান দম্পতির সাত পুত্র সন্তানের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন। ক্যাসলমেইন গ্রামার স্কুলে অধ্যয়ন করেন। ১৮৮৭ থেকে ১৮৯৫ সময়কালে আইন…

  • | |

    ড্যানি মরিসন

    ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ তারিখে অকল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। বিপজ্জ্বনক আউট-সুইঙ্গারের পাশাপাশি পেস বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম দ্রুততম গতিদানবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। দৃশ্যতঃ রিচার্ড হ্যাডলি’র উপযুক্ত উত্তরসূরী ছিলেন।১৯৮০-এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৯০-এর…