Skip to content

সৌম্য সরকার

1 min read

২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৩ তারিখে সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। বামহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিংয়ে পারদর্শী। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।

পিতার ন্যায় শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। দর্শনীয় ব্যাটিংশৈলীর অধিকারী ও মিডিয়াম পেস বোলিং করে থাকেন। কিশোর অবস্থাতেই দর্শনীয়ভাবে ব্যাটিং করতে অভ্যস্ত ছিলেন। মিডিয়াম পেস বোলিংয়েও যথেষ্ট নজর কাড়েন। বলে পেস না থাকলেও বেশ পারঙ্গমতা প্রদর্শন করছেন। শীর্ষসারিতে ব্যাটিং করলেও বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক ও ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে অনেক কোচেরই অভিমত তাঁর সিম বোলিং অধিক কার্যকর। ক্রিকেটীয় প্রতিভা ও দেশের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাভারের বিকেএসপিতে অধ্যয়ন করার সুবাদে ক্রিকেটকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। ঝটপট ক্রিকেট দলটিতে যুক্ত হন। ২০০৮-০৯ মৌসুমে বিকেএসপির লীগ খেলায় অংশ নেন।

২০১০ ও ২০১২ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ২০১০ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় একটিমাত্র খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করেছিলেন। দুই বছর পর অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ঐ প্রতিযোগিতায় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। ঐ প্রতিযোগিতার মাঝামাঝি সময়ে কুয়ালালামপুরে কাতারের বিপক্ষে একদিনের খেলায় দ্বি-শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। তন্মধ্যে শেষের আসরে টাউন্সভিলে অনুষ্ঠিত কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার জিমি পিয়ারসনকে ‘মানকড়ীয় পন্থা’য় আউট করে সংবাদ শিরোনামে চলে আসেন।

৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। ২০১০-১১ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে খুলনা বিভাগ ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ও খুলনা টাইগার্সের পক্ষে খেলেছেন। ৪ অক্টোবর, ২০১০ তারিখে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত খুলনা বিভাগ বনাম রাজশাহীর মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান। ২০১৩ সালে জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হন। তবে অভিষেকের জন্যে প্রায় এক বছর অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়েছিল।

নভেম্বর, ২০১৩ সালে বাংলাদেশের টি২০আই দলে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ পান। তবে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি। তাসত্ত্বেও দল নির্বাচকমণ্ডলীর সুনজরে ছিলেন। মে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশের কোচ হিসেবে চণ্ডিকা হাথুরুসিংহা’র নিয়োগের ফলে পুণরায় দলে অন্তর্ভুক্ত হন।

২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের পক্ষে টেস্ট, ওডিআই ও টি২০আইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ডিসেম্বর, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে সফররত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজের শেষ খেলায় প্রথমবারের মতো অংশ নেন। ১ ডিসেম্বর, ২০১৪ তারিখে মিরপুরে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় তিন নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৮ বলে ২০ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। তবে, বোলিং করার সুযোগ পাননি।

২০১৫ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা সময়ে তিনি নিজেও ভাস্বর ছিলেন। নিজ দেশে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উপর্যুপরী সিরিজ বিজয়ী বাংলাদেশ দলের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিলেন। একটি শতক ও তিনটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। সবমিলিয়ে নয় খেলা থেকে ৪৯৭ রান তুলেন। তন্মধ্যে, তিনটি অর্ধ-শতরান ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩৩ রানের অপরাজিত শতক হাঁকান। মরনে মরকেল, কাগিসো রাবাদা, ক্রিস মরিস ও ইমরান তাহিরের ন্যায় দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের রুখে দিয়ে ২৭, ৮৮* ও ৯০ রানের ইনিংস উপহার দেন। এরফলে, ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

২০১৫ সালে নিজ দেশে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২৪ এপ্রিল, ২০১৫ তারিখে মিরপুরে প্রথমবারের মতো টি২০আইয়ে অংশ নেন। একই সফরের ২৮ এপ্রিল, ২০১৫ তারিখে দীর্ঘ সংস্করণের খেলা হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নেন। মোহাম্মদ শহীদের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খুলনায় অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টের উভয় ইনিংসেই ৩৩ রান করে সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, তামিম ইকবালের অসামান্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হওয়াসহ দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত থাকে।

পরের খেলাগুলোয় ব্যর্থ হলে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েন। তবে, ইমরুল কায়েসের আঘাতের কারণে ২০১৭ সালে পুণরায় দলে যুক্ত হন ও ক্রাইস্টচার্চে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে পাঁচ-দিনের খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। প্রথম টেস্টে ৮৬ রান তুলে প্রথম একাদশের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজেও বেশ ভালোমানের খেলা উপহার দেন। দুই টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে উপর্যুপরী তিনটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত করেন ও ১-১ ব্যবধানে সিরিজ ড্র করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন। পি সারা ওভালে ৬১ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক শততম টেস্টের বিজয়ে অংশ নেন।

২০১৭-১৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ৬ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে ব্লোমফন্তেইনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৯ ও ৩ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে কাগিসো রাবাদা’র শিকারে পরিণত হন। এছাড়াও, ০/২১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। কাগিসো রাবাদা’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ২৫৪ রানে জয়লাভ করলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

সংখ্যাগত দিক দিয়ে টি২০আইয়ে তেমন সুবিধে করতে পারছেন না। ২৪ খেলায় অংশ নিয়ে ২০-এর কম গড়ে রান তুলেন। তবে, শীর্ষসারিতে ব্যাটিংয়ে নেমে অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছিলেন। ৫০-ওভারের কয়েকটি খেলায় দূর্বলমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের পর আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় সিরিজে স্বরূপ ধারন করেন। মে, ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ড দলের সমন্বয়ে গড়া ঐ সিরিজে বাংলাদেশ দল শ্রীলঙ্কাকে টপকে ওডিআই র‍্যাঙ্কিংয়ে ষষ্ঠ ধাঁপে চলে আসে।

শৈশবকাল থেকেই ব্রায়ান লারা ও সৌরভ গাঙ্গুলী’র খেলা পছন্দ করে আসছেন। মূখ্যতঃ ডানহাতে ব্যাটিং করতে অভ্যস্ত হলেও পরবর্তীতে বামহাতি ব্যাটসম্যানে পরিণত হন। মোহাম্মদ কাইফ ও উমর আকমলের সাথে বিশ্বকাপের একটি খেলায় সর্বাধিক চারটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণের ন্যায় অনন্য রেকর্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছেন।

ওডিআই অভিষেকের অল্প কয়েক মাস পরেই দল নির্বাচকমণ্ডলীর আস্থা অর্জনে সমর্থ হন ও ২১ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করেন। এ বৃহৎ আসরে ছয় খেলায় অংশ নিয়ে ১৭৫ রান তুলেন। তন্মধ্যে, পাঁচটি খেলার শুরুতে বেশ ভালোভাবে সূচনা করলেও একটিমাত্র অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন। তবে, অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দলকে কোয়ার্টার-ফাইনালে নিয়ে যান। একদিনের আন্তর্জাতিকে ফিল্ডার হিসেবে জন্টি রোডসের ৫টি ক্যাচ তালুবন্দী করার পর আরও অনেকের সাথে এবং বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ওডিআইয়ে ৪টি ক্যাচ তালুবন্দী করে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছেন। ৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এ কৃতিত্বের সাথে নিজেকে জড়িত করেন।

ঘরোয়া আসরে কয়েকটি খেলায় সুন্দর ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের কারণে দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এছাড়াও, ডাবলিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও স্বাগতিক আয়ারল্যান্ডের অংশগ্রহণে মালাহাইডে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় সিরিজের শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রেখেছেন। পরপর তিনটি অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছেন। ২০১৯ সালে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে আবাহনী লিমিটেডের পক্ষে খেলেন। বাংলাদেশের পক্ষে লিস্ট-এ ক্রিকেটে দ্বি-শতরানের অধিকারী প্রথম খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান।

টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে তেমন সাফল্য পাননি। তাসত্ত্বেও, ২০১৯ সালে হ্যামিল্টন টেস্টে অবিস্মরণীয় কীর্তি স্থাপন করেন। বাংলাদেশের পক্ষে ২০১০ সালে লর্ডসে তামিম ইকবালের গড়া দ্রুততম শতকের সাথে যৌথভাবে নাম লেখান ও লাল-বলের ক্রিকেটে নিজের শক্তিমত্তার প্রকাশ ঘটান। ২০১৮-১৯ মৌসুমে দলের সাথে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া প্রথম দুই টেস্টে অংশ নেন। তৃতীয় টেস্টটি মসজিদে হামলার কারণে পরিত্যক্ত হয়। তন্মধ্যে, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। ১৭১ বল মোকাবেলায় ২১টি চার ও ৫টি ছক্কার সমন্বয়ে ১৪৯ রান তুলেন ট্রেন্ট বোল্টের শিকারে পরিণত হন। ৯৪ বলে তিন অঙ্কের কোটায় পৌঁছেন। এ পর্যায়ে দল ফলো-অনের কবলে পড়লেও ৫ম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ’র সাথে ২৩৫ রান সংগ্রহ করেন। খেলায় তাঁর দল ইনিংস ও ৫২ রানে পরাজিত হয়। খেলায় ধারাবাহিক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের দলীয় নির্বাচকমণ্ডলী ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলের অন্যতম সদস্যরূপে যুক্ত করে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।