১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৫ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মজবুত কৌশল অবলম্বনে ডানহাতে ব্যাটিং করে থাকেন। উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। ২০০১-০২ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে বালুচিস্তান, মধ্য পাঞ্জাব, খান রিসার্চ ল্যাবরেটরিজ, লাহোর, পাঞ্জাব, রাওয়ালপিন্ডি, পাকিস্তান সুই গ্যাস কর্পোরেশন এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বালুচিস্তান ওয়ারিয়র্স, লাহোর ব্লুজ, লাহোর ঈগলস, লাহোর লায়ন্স, লাহোর কালান্দার্স, লাহোর রিজিওন হোয়াইটস, পাকিস্তান গ্রীনস, পাঞ্জাব স্ট্যালিয়ন্সের পক্ষে খেলেছেন।
২০০৬ সাল থেকে পাকিস্তানের ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে নিয়মিত খেলোয়াড়ের মর্যাদা পেয়ে আসছেন। ঐ মৌসুম থেকেই খান রিসার্চ ল্যাবরেটরিজের পক্ষে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে থাকেন। পাঁচ খেলায় দুইটি শতক ও দুইটি অর্ধ-শতকের ইনিংস খেলার পর আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রত্যেক রান সংগ্রহের জন্যে নিজস্ব কৌশল অবলম্বনে তৎপর হন। প্রত্যেক বলের কাছে ব্যাটকে নিয়ে যান। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের অভিমত তিনি খাঁটোমানের বল মোকাবেলায় দক্ষ নন, তবে, তাঁর ধৈর্য্যশীলতা অপরিসীম। ২০০৯ সালে পাকিস্তান ‘এ’ দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেছিলেন। দুইবার পাঁচ ঘণ্টা ক্রিজে অবস্থান করে ৭০-এর কোটায় অগ্রসর হয়েছিলেন। এ পর্যায়ে তাঁকে ডগ বলিঙ্গার, ক্লিন্ট ম্যাককে ও জেসন ক্রেজা’র বল মোকাবেলা করতে হয়েছিল। এ সিরিজের কল্যাণে তাঁকে বড়দের দলে খেলার জন্যে মনোনীত করা হয়। ২০০৯-১০ মৌসুমে তেমন খেলা উপহার দিতে পারেননি। কয়েকবার ইউনুস খানের সাথে স্থান অদল-বদল হয়। এছাড়াও, মোহাম্মদ ইউসুফের ন্যায় খেলেননি।
২০১০ সাল থেকে পাকিস্তানের পক্ষে টেস্ট ও ওডিআইয়ে অংশ নিচ্ছেন। ২০১০ সালে শহীদ আফ্রিদি’র অধিনায়কত্বে পাকিস্তানী দলের সাথে ইংল্যান্ড সফরে যান। ১৩ জুলাই, ২০১০ তারিখে লর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। উমর আমিনের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট অভিষেক পর্বকে স্বার্থক করে তোলেন। ১৬ ও ৪২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, সালমান বাটের অসামান্য ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন স্বত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া ১৫০ রানে জয় পেয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
এরপর থেকেই পাকিস্তানের শীর্ষসারির ব্যাটসম্যানে পরিণত করেন। নিজস্ব দ্বিতীয় টেস্টে প্রথমবারের মতো অর্ধ-শতকের সন্ধান পান। এ পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টে ১৮০ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় ব্যাটিং অনুপযোগী পিচে অগ্রসর হয়েছিল পাকিস্তান দল।
২০১০-১১ মৌসুমে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৭ জানুয়ারি, ২০১১ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, আব্দুর রেহমানের অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
দশটি অর্ধ-শতকের পর প্রথম টেস্ট শতক হাঁকান। তবে, এ শতকটি তেমন গুরুত্ব বহন করেনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঐ শতরানের পর ২০১১-১২ মৌসুমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন। অপরিসীম ধৈর্য্য ও সুন্দর মেজাজে খেলেন। দুবাইয়ে নিম্নমূখী রানের খেলায় দ্বিতীয় ইনিংসে আরেকটি শতক হাঁকান। ঐ সিরিজে বোলারদের আধিপত্য ছিল। উভয় দলের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০-এর অধিক গড়ে রান পেয়েছিলেন।
একই মৌসুমে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। ২৬ অক্টোবর, ২০১১ তারিখে দুবাইয়ের ডিএসসিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১০০ ও ২৯* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, সাঈদ আজমলের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর বদৌলতে পাকিস্তান দল ৯ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
২০১৩-১৪ মৌসুমে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। ১৬ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় অনুষ্ঠিত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। ৮ ও ১০৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, চারটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসামান্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় পাকিস্তান দল ৫ উইকেটে জয় পেলে ১-১ ব্যবধানে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা শেষে পাকিস্তানের ওডিআই দলের অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। মিসবাহ-উল-হকের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে পাকিস্তানের অধিনায়কত্ব করেছেন।
২০১৬-১৭ মৌসুমে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। ১৩ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। দারুণ খেলে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দিবা-রাত্রির টেস্টে প্রথম শতরান করার কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। এরপর তিন অঙ্কের সংগ্রহকে ৩০২ রানের অপরাজিত ত্রি-শতকে রূপান্তর করেছিলেন। তাঁর ত্রি-শতকের কল্যাণে পাকিস্তান দল ৫৬ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।
২০১৬-১৭ মৌসুমে ‘ডাউন আন্ডার’ সফরে পাকিস্তান দলের প্রধান চালিকাশক্তি ছিলেন। তবে, তিনি সমস্যায় নিপতিত দলের দায়িত্বে ছিলেন। পাকিস্তান দল তাদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্থানে চলে যায়। নয় নম্বর অবস্থান থেকে কোনক্রমে উত্থান ঘটিয়ে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা করে। ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে পরাজয়বরণের ফলে তাঁকে অধিনায়কত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ২০২২-২৩ মৌসুমে নিজ দেশে বেন স্টোকসের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের মুখোমুখি হন। ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৪৫ ও ০ রান সংগ্রহ করেন। তবে, হ্যারি ব্রুকসের অসাধারণ শতকের সুবাদে সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয় পেয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
