২ ডিসেম্বর, ১৯৭৯ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। পাশাপাশি ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হতেন। পাকিস্তানের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
প্রথিতযশা ও শক্তিধর অল-রাউন্ডার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। দীর্ঘদিনের খেলোয়াড়ী জীবনে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের কারণে সুনাম কুড়িয়েছেন। বলকে সীমানা পাড় করতে তৎপরতা দেখাতেন। তবে, শেষেরদিকের ওভারগুলোয় দ্রুতলয়ে রান তুলতে তেমন ধূর্ততার আশ্রয় নিতেন না।
১৯৯৬-৯৭ মৌসুম থেকে ২০১৩-১৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে খান রিসার্চ ল্যাবরেটরিজ, লাহোর, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স ও জারাই তারাকিয়াতি ব্যাংক লিমিটেড এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ার, লিচেস্টারশায়ার, মিডলসেক্স, ওরচেস্টারশায়ার ও সারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, এশিয়া একাদশ, আইসিএল পাকিস্তান একাদশ, দূরন্ত রাজশাহী, হায়দ্রাবাদ হিরোজ, লাহোর লায়ন্স, লাহোর কালান্দার্স ও মেলবোর্ন রেনেগাডেসের পক্ষে খেলেছেন।
এক পর্যায়ে তিনি বোলিং উদ্বোধনে নেমেছিলেন ও ব্যাট হাতে নিয়ে যে-কোন অবস্থানে মাঠে নামতেন। পরবর্তীতে তাঁকে নিচেরসারিতেই অধিক উপযোগী হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়। নিখুঁততা ও রিভার্স-সুইংয়ের সমন্বয়ে তাঁর বোলিং গড়ে উঠতো। কিন্তু, ব্যাটিংয়ের কারণেই মূলতঃ দলের বিজয়ে ভূমিকা রাখতেন। স্ট্রোকে সিদ্ধহস্তের অধিকারী ছিলেন। সচরাচর সামনের পা ও পিছনের পা – উভয়ক্ষেত্রেই কভার ও মিড-অফ অঞ্চলে বেশ সফলতা পেয়েছেন। মারমুখী ভঙ্গীমায় অগ্রসর হলেও অনেকক্ষেত্রে ধৈর্য্যের চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন।
১৯৯৬ থেকে ২০১৩ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ৪৬ টেস্ট, ২৬৫টি ওডিআই ও ৩২টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১ নভেম্বর, ১৯৯৬ তারিখে সপ্তদশ জন্মদিনের একমাস পূর্বে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। নিজ শহরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআইয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। খেলায় তিনি ২/২৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন।
১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ৫ নভেম্বর, ১৯৯৯ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ১১ ও ১ রান তুলতে সক্ষম হন এবং ০/৬৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। তবে, মাইকেল স্ল্যাটারের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলায় পাকিস্তান দল ১০ উইকেটে পরাজয়বরণ করে ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
২০০১-০২ মৌসুমে ওয়াকার ইউনুসের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান দলের অন্যতম সদস্যরূপে বাংলাদেশ সফরে যান। ৯ জানুয়ারি, ২০০২ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বাংলাদেশ দলের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ২/৪২ ও ২/২৯ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দলের একমাত্র ইনিংসে ১৩৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে ঐ খেলায় তাঁর দল ইনিংস ও ১৭৮ রানে জয় পেয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন মসৃণ ছিল না। এক পর্যায়ে ২০০২ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে বোলিংয়ে তেমন ছন্দ খুঁজে পাননি। তবে, দলে স্থানচ্যূতির কবলে পড়তে হয়নি। ২০০৪ সালে করাচী টেস্টে নিজস্ব প্রথম ও একমাত্র পাঁচ-উইকেট লাভ করেছিলেন। জানুয়ারি, ২০০৬ সালে একই মাঠে ভারতের বিপক্ষে দূর্দান্ত খেলেন। তবে, কামরান আকমলের শতকে জয় পেলে তাঁর অবদান ঢাকা পড়ে যায়। ৪৫ ও ৯০ রানের পাশাপাশি খেলায় সাত উইকেট দখল করেছিলেন।
২০০৫ সালে মোহালিতে দূর্দান্ত অর্ধ-শতক গড়ে দলের বিপর্যয় রোধ করেন। এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়ায় অত্যন্ত ধীরলয়ে খেলা উপহার দিয়েছিলেন। দুই ঘণ্টার অধিক সময় ক্রিজে অবস্থান করে মাত্র চার রান তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে, সময়ের প্রয়োজনে নিজেকে মেলে ধরতে তৎপরতা দেখিয়েছেন। ২০০৫ সালের শেষদিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআইয়ে ২২ বল থেকে ৫১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন। এরপর, পরবর্তী বছরের সেপ্টেম্বরে ওডিআইয়ে শেষ তিন ওভার থেকে প্রায় ৬০ রান আদায় করে নেন।
আঘাতপ্রাপ্তি ও দূর্বলমানের ক্রীড়াশৈলীর কারণে টেস্ট দলে তাঁর স্থান লাভ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। ২০০৬-০৭ মৌসুমে নিজ দেশে ব্রায়ান লারা’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৭ নভেম্বর, ২০০৬ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৭ ও ১০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ১/৪৪ ও ২/২৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মোহাম্মদ ইউসুফের অসাধারণ জোড়া শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ১৯৯ রানে জয় পেয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার পূর্বে হাঁটুর আঘাতের কারণে পাকিস্তানের সদস্য হতে পারেননি। আবুধাবিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ঘটে। প্রস্তুতিমূলক খেলাগুলোয় সাধারণমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে টি২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপের ১৫-সদস্যের পাকিস্তানী দলের বাইরে থাকেন। এরফলে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।
এরপর, ওরচেস্টারশায়ার দলের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। ঐ মৌসুমের শেষদিকে অনুমোদনবিহীন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে যুক্ত হবার ফলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের দৃষ্টির আড়ালে চলে যান। অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন ও আইসিএলে দুই মৌসুম খেলার কথা ঘোষণা করেন। এ পর্যায়ে হায়দ্রাবাদ হিরোজের অন্যতম তারকা খেলোয়াড়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন।
আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও আইসিএল ত্যাগ করার পর পাকিস্তান দলে পুণরায় ঠাঁই পান। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে পাকিস্তান দলের সদস্য হন। তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলে পাকিস্তানের শিরোপা জয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। জুনে শ্রীলঙ্কা সফরে ১৫-সদস্যের দলে অন্তর্ভুক্ত হন ও টেস্টে ফিরে আসেন।
অক্টোবর, ২০১০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দ্বিতীয় ওডিআইয়ে দূর্দান্ত খেলা উপহার দিয়েছিলেন। ৭২ বলে অপরাজিত ১০৯ রানের রোমাঞ্চকর খেলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দলকে এক বল বাকী থাকতে ১ উইকেটের বিস্ময়কর জয় এনে দেন। এরফলে, ওডিআইয়ের এক ইনিংসে কমপক্ষে ১০ ছক্কা হাঁকানো খেলোয়াড়দের তালিকায় নিজেকে অষ্টম স্থানে নিয়ে যান। খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনাকালে পাকিস্তানের অন্যতম উদীয়মান ক্রিকেটার ছিলেন। ইমরান খানের পর তাঁকে সর্বাধিক পূর্ণাঙ্গ অল-রাউন্ডার হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়েছিল। তবে, বিভিন্ন কারণে তিনি নিজেকে পূর্ণাঙ্গভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি।
