২৭ জুলাই, ১৯৫৫ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের ক্রিমোর্ন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক। মূলতঃ মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। এছাড়াও, সেকেন্ড স্লিপ কিংবা শর্ট-মিড উইকেট অঞ্চলে দূর্দান্ত ফিল্ডিং করতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন।

আদর করে তাঁকে ‘ক্যাপ্টেন গ্রাম্পি’ নামে পরিচিতি ঘটানো হলেও তিনি ‘এবি’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। নর্থ সিডনি বয়েজ হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯৭৬-৭৭ মৌসুম থেকে ১৯৯৫-৯৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে নিউ সাউথ ওয়েলস ও কুইন্সল্যান্ড এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে এসেক্স ও গ্লুচেস্টারশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

বামহাতি ক্রিকেটার হিসেবে তিনি বর্ণাঢ্য খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। হার না মানার অধিকারী হিসেবে মাঠে অবস্থান করতেন ও রান সংগ্রহে তৎপরতা দেখান। টেস্ট ক্রিকেটে এগারো হাজারের অধিক রান তুলে সুনীল গাভাস্কারের গড়া দীর্ঘদিনের রেকর্ড ভেঙ্গে নিজের করে নেন।

১৯৭৯ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বমোট ১৫৬ টেস্ট ও ২৭৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে নিজ দেশে মাইক ব্রিয়ার্লি’র নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৮ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ২৯ ও ০ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১৪ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, গ্রায়েম উডের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০৩ রানে জয় পেলেও ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়ে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

১৯৮১ সালে কিম হিউজের নেতৃত্বাধীন অজি দলের অন্যতম সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করে। ১৩ আগস্ট, ১৯৮১ তারিখে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১১ ও ১২৩* রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ইয়ান বোথামের অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১০৩ রানে পরাভূত হলে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

১৯৮১-৮২ মৌসুমে গ্রেগ চ্যাপেলের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলাটিতে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও পঞ্চম দিন খেলাটি মাঠে গড়ায়। তন্মধ্যে, কেবলমাত্র পঞ্চম দিন পুরোটা সময় খেলা সম্ভব হয়। তিনি ব্যাটিং করার সুযোগ পাননি। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই সফরের ১৯ মার্চ, ১৯৮২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে এমসি স্নেডেনকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ২/৩৫। বল হাতে নিয়ে ৩/২০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাট হাতে নিয়ে ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, দলীয় অধিনায়কের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয়লাভ করলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।

১৯৮২-৮৩ মৌসুমে নিজ দেশে বব উইলিসের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২৬ নভেম্বর, ১৯৮২ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০০০ রান তুলেন। খেলায় তিনি ০ ও ১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। কেপলার ওয়েসেলসের অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের সুবাদে স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে কিম হিউজের নেতৃত্বাধীন অজি দলের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। ১৬ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ঐ খেলায় তিনি ৯৮* ও ১০০* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিং সাফল্যে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে ব্রিসবেনে অশ্রুসিক্ত নয়নে কিম হিউজ পদত্যাগ করলে তাঁকে দলের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ঐ মৌসুমে নিজ দেশে ক্লাইভ লয়েডের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২২ ডিসেম্বর, ১৯৮৪ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৩৫ ও ৪১ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। অ্যান্ড্রু হিলডিচের ব্যাটিং সাফল্যের খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সফরকারীরা ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

১৯৮৫ সালে অজি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ইংল্যান্ড সফরে যান। ১ আগস্ট, ১৯৮৫ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্ট খেলেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৮ ও ১৪৬* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ক্রেগ ম্যাকডারমট অসাধারণ বোলিংশৈলী প্রদর্শন করলেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অগ্রসর হতে থাকে।

অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনগুলোয় অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ভাগ্যের দোলাচলে এগিয়ে আসেন। বিখ্যাত কোচ বব সিম্পসনের সাথে চমৎকার বোঝাপড়ায় তুখোড় দলনেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৯৮০-এর দশক থেকে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের স্বর্ণযুগে ফিরিয়ে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য্য। বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী অস্ট্রেলীয় দলকে নেতৃত্ব দেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলকে জয় এনে দেয়াসহ ১৯৮৯ সালের অ্যাশেজ সিরিজ বিজয়ে অংশ নেন।

১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে নিজ দেশে জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৮ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যাট হাতে ১ ও ১৫২* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করানোসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। রিচার্ড হ্যাডলি’র অনবদ্য অল-রাউন্ড সাফল্যে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৪১ রানে পরাজিত হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।

একই সফরের ২২ নভেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ১৫ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ২০ ও ১১ রান সংগ্রহ করে উভয় ইনিংসে জন ব্রেসওয়েলের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। জন ব্রেসওয়েলের প্রাণান্তঃকর অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও স্বাগতিকরা ৪ উইকেটে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

একই মৌসুমে ফিরতি সফরে অজি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে নিউজিল্যান্ডে যান। ২৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৬০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ১৪০ ও ১১৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর জোড়া শতক সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। 

১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে নিজ দেশে কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে মেলবোর্নের বক্সিং ডে টেস্টে সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ১১ ও ১৬৩ রান তুলেন। তাঁর মনোরম শতক সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে নিজ দেশে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৪ বছর বয়সে ২৬ জানুয়ারি, ১৯৮৯ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ৭৫ ও ১৬ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ৭/৪৬ ও ৪/৫০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর বদৌলতে স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পেলে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান।

১৯৯২ সালে অজি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২ তারিখে মোরাতুয়ায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যে প্রদর্শনে অগ্রসর হন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ১০৬ ও ৭৮ রান সংগ্রহ করে উভয় ক্ষেত্রে চম্পকা রামানায়েকে’র শিকারে পরিণত হন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিং কৃতিত্ব প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে নিজ দেশে রিচি রিচার্ডসনের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২ জানুয়ারি, ১৯৯৩ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টে খেলার দ্বিতীয় দিন নিজস্ব ১৩৬তম টেস্টে এসএম গাভাস্কারের পর দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে দশ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৭৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/৪১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। ব্রায়ান লারা’র অসাধারণ দ্বি-শতক সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে নিজ দেশে কেন রাদারফোর্ডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে ব্রিসবেনে সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১০৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, শেন ওয়ার্নের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে ঐ খেলায় অস্ট্রেলিয়া দল ইনিংস ও ৯৬ রানের ব্যবধানে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সফরকারীরা সিরিজ খোঁয়ায়।

একই মৌসুমে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ২৫ মার্চ, ১৯৯৪ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১৭ ও ৪২* রান তুলেছিলেন। এছাড়াও, ০/৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, মার্ক ওয়াহ’র অনবদ্য ব্যাটিং দৃঢ়তায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

১৯৮৭ সালে ৯৪ টেস্ট থেকে ৭৩৪৩ রান তুলে টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী হবার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৯৩ সালে ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কারের সংগৃহীত ১০১২২ রান অতিক্রম করে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বাধিক রান সংগ্রাহকে পরিণত হন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১১০০০ রান সংগ্রহের মাইলফলক স্পর্শ করেন। টেস্টগুলো থেকে ৫০.৫৬ গড়ে ১১১৭৪ রান ও ৩৯.১০ গড়ে ৩৯ উইকেট পেয়েছেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৫১.৩৮ গড়ে ২৭১৩১ রান সংগ্রহসহ ৩৯.২৫ গড়ে ১০৬ উইকেট পেয়েছিলেন। এছাড়াও, ওডিআইয়ে ৩০.৬২ গড়ে ৬৫২৪ রান ও ২৮.৩৬ গড়ে ৭৩ উইকেট দখল করেন। ১৯৯৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৯৩ থেকে ২০০৫ সময়কালে সর্বাধিক টেস্ট রান সংগ্রহের কৃতিত্বের অধিকারী হন। পরবর্তীতে, ব্রায়ান লারা তাঁর এ সাফল্যকে ছাঁপিয়ে যান।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর নীল হার্ভে, গ্রেগ চ্যাপেল, স্টিভ ওয়াহ ও রিকি পন্টিংয়ের পর পঞ্চম সেরা ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পেয়েছেন। সাধারণমানের দলকে পরবর্তীতে সেরা দলে রূপান্তর করেছেন। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্টের উভয় ইনিংসে দেড় শতাধিক রান তুলেছেন। অবসর গ্রহণকালীন টেস্টের ইতিহাসের সর্বাধিক ১৫৬ টেস্টে অংশ নেন। পরবর্তীতে, স্টিভ ওয়াহ তাঁর এ রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন। উপর্যুপরী ১৫৩ টেস্টে অংশ নেয়ার অনবদ্য রেকর্ড গড়েন।

বিখ্যাত ভারতীয় ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কারের সাথে অস্ট্রেলিয়া-ভারত সিরিজের নামকরণ বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি রাখা হয়। অস্ট্রেলিয়ার সাংবার্ষিক পুরস্কার হিসেবে অ্যালান বর্ডার পদক প্রদান করা হয়। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের দ্বিতীয় টাই টেস্টের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখেন। টিএনসিএ কর্তৃক ঐ টেস্টের ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ডিন জোন্স, রবি শাস্ত্রীকৃষ শ্রীকান্তের সাথে অংশ নেন। শেন ওয়ার্ন, আর্থার মরিস, ইয়ান হিলি ও নীল হার্ভে’র সাথে অস্ট্রেলিয়ার শতাব্দীর সেরা টেস্ট দলে ঠাঁই পেয়েছেন। গিডিওন হেই তাঁকে ‘অস্ট্রেলিয়ার উত্থানকারী’ হিসেবে চিত্রিত করেছেন।

১৯৮২ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১২ ডিসেম্বর, ১৯৯০ তারিখে স্পোর্ট অস্ট্রেলিয়া হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার শতাব্দীর সেরা দলে দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে মনোনীত হন।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। এরপর, প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত তিনি। জেন হিসকক্স নাম্নী রমণীর সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।

Similar Posts

  • | |

    সাকলাইন মুশতাক

    ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৬ তারিখে পাঞ্জাবের লাহোরে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হতেন। পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। বিশ্বের সেরা স্পিনারদের অন্যতম ছিলেন। স্পিনের উপর তাঁর অসম্ভব নিয়ন্ত্রণ ছিল। দুসরার জন্যে সবিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। ব্যাটসম্যানের কাছে…

  • | |

    নিপ পেলিও

    ২১ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৩ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পোর্ট পিরি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতে পারতেন। ১৯২০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ‘নিপ’ ডাকনামে ভূষিত হয়েছিলেন। অ্যাডিলেডভিত্তিক সেন্ট পিটার কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। ১৯১২ সালে ক্রিকেটে সেন্টস দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ফুটবলেও পর্যাপ্ত…

  • |

    ইয়াসির আলী

    ১৫ অক্টোবর, ১৯৮৫ তারিখে পাঞ্জাবের হাজরো এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ২০০০-এর দশকে পাকিস্তানের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পাকিস্তানের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলিং প্রতিভা ছিলেন। প্রচণ্ড দম নিয়ে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। আটকের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পক্ষে খেলাকালীন ইয়াসির আলী প্রথমবারের মতো…

  • | |

    জোনাথন অ্যাগ্নিউ

    ১৪ এপ্রিল, ১৯৬০ তারিখে চেশায়ারের ম্যাকলসফিল্ড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ১৯৮০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী জোনাথন অ্যাগ্নিউ ‘স্পাইরো কিংবা ‘অ্যাজার্স’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। আপিংহাম স্কুলে…

  • | |

    ক্লিন্ট ম্যাককে

    ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩ তারিখে ভিক্টোরিয়ার মেলবোর্নে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১.৯৪ মিটার উচ্চতার অধিকারী। বেশ নিখুঁত মানসম্পন্ন ও দক্ষতার সাথে ধীরগতির বোলিং করতেন। বেশ ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের সাথে যুক্ত হন। নর্থ ওয়েস্ট ক্রিকেট…

  • | | |

    মাইক অ্যাথার্টন

    ২৩ মার্চ, ১৯৬৮ তারিখে ল্যাঙ্কাশায়ারের ফেইলসওয়ার্থ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, সাংবাদিক ও লেখক। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৬ ফুট উচ্চতার অধিকারী মাইকেল অ্যাথারটন ‘কোকরোচ’, ‘এফইসি’, ‘অ্যাথার্স’ কিংবা ‘ড্রেড’ ডাকনামে পরিচিত ছিলেন। ম্যানচেস্টার গ্রামার স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। এরপর, কেমব্রিজের ডাউনিং…