|

প্রবীণ আম্রে

১৪ আগস্ট, ১৯৬৮ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বে এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৯০-এর দশকে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।

শচীন তেন্ডুলকর ও বিনোদ কাম্বলি’র প্রশিক্ষক রামাকান্ত আচরেকরের তীক্ষ্ণ নজরে ছিলেন। আকস্মিকভাবেই ক্রিকেটের সাথে পরিচিত হন। শৈশবকাল থেকেই সুপরিচিত শিবাজী পার্কে যাতায়াত করতেন। দুই বছর পর জনৈক শুভাকাঙ্খী তাঁকে তাঁর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। রামাকান্ত আচরেকরের শৃঙ্খলাবদ্ধ নিয়মের মাঝে প্রতিজ্ঞাবদ্ধতা ও বড় ধরনের রান সংগ্রহের অভিলাষের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করায় তাঁকে সুপরিচিত শারদাশ্রম স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বোম্বে স্কুলের ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি বৈচিত্র্যমুখীতার পরিচয় দেন ও হার না মানার মানসিকতা সম্পন্ন ছিলেন। কিশোর বয়সেই বড় ধরনের রানের দিকে ধাবিত ছিলেন।

১৯৮৩ সালে বোম্বের অনূর্ধ্ব-১৫ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলাকালীন জাতীয় পর্যায়ে তাঁর স্বীকৃতি চলে আসে। প্রথম খেলায় তিনি ১১৪ রান তুলেন। দুই সপ্তাহ পর পশ্চিম অঞ্চল অনূর্ধ্ব-১৫ দলের পক্ষে ৫৪ করেন। এভাবেই বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নিজেকে তৈরি করতে থাকেন ও সকল স্তরে সফলতা পান। ১৯৮৬ সালের শেষদিকে বোম্বের বিদ্যালয় দল ও পশ্চিম অঞ্চল বিদ্যালয় দলের পক্ষে ২৫৪ রান তুললে শক্তিধর বোম্বে দলের পক্ষে খেলার জন্যে তাঁকে নির্বাচিত করা হয়।

১৯৮৬-৮৭ মৌসুম থেকে ২০০০-০১ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলা, গোয়া, বোম্বে, রেলওয়েজ ও রাজস্থান এবং দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে বোল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, এয়ার ইন্ডিয়ার পক্ষে খেলেছেন।

১৯৮৬-৮৭ মৌসুমে তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত বোম্বে দলে প্রতিষ্ঠিত হতে তাঁকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। রঞ্জী ট্রফিতে দলের সাথে এক মৌসুম খেলার পরই ১৮ বছর বয়সেই অধিকতর সুযোগের সন্ধানে লিপ্ত হতে হয়। ঐ দলের পক্ষে মাত্র এক খেলায় অংশ নেয়ার পর রেলওয়ের সাথে যুক্ত হবার সিদ্ধান্ত নেন। রেডিফের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, ‘প্রস্তাবনাটি বেশ লোভনীয় ছিল। নিশ্চিত চাকুরীর পাশাপাশি আমার পরিবারকে সুরক্ষিত করবে। তাই আচরেকর স্যারের সাথে পরামর্শক্রমে স্থানান্তরিত হই। পাশাপাশি, সুনীল গাভাস্কারের ন্যায় খেলোয়াড় যদি মুম্বইয়ের পক্ষে খেলেন তাহলে কেউই দলে তাঁদের স্থান নিশ্চিত করতে পারবেন না। যখন আপনি খেলতে থাকবেন তাহলে জাতীয় দলে খেলার ক্ষেত্র সৃষ্টি হতে পারে।’

১৯৮৭-৮৮ মৌসুমে রেলওয়েজের পক্ষে প্রথম খেলতে নামেন। মধ্যপ্রদেশের বিপক্ষে ১৮৬ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন। এরফলে, নিউজিল্যান্ড ও পরবর্তীতে বিশ্বকাপে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে তাঁর সদস্যতা নিশ্চিত হয়। তবে, খেলায় ধারাবাহিকতার অভাবে পুণরায় ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে আসেন। পরবর্তী দুই মৌসুমে ১০ খেলায় ৮৫ গড়ে ৭৬৫ রান তুলেন। আঞ্চলিক খেলাগুলোয়ও একই ধারা অব্যাহত রাখেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ে পরিণত হন।

১৯৯০-৯১ মৌসুমে রাজস্থানে চলে যান। ইরানী ট্রফির খেলায় বাদ-বাকী ভারতের পক্ষে ২৪৬ রানের মনোরম দ্বি-শতরানের ইনিংস খেলেন। ঐ প্রতিযোগিতায় এ সংগ্রহটি ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের মর্যাদা পাচ্ছে। এছাড়াও, দিলীপ ট্রফি ও রঞ্জী ট্রফি প্রতিযোগিতায়ও বড় ধরনের ইনিংস খেলতে তৎপরতা দেখান। চাঙ্গা মনোভাব ও দৃঢ়তা প্রদর্শনে নিজেকে বড় আসরের উপযোগী করে তুলেন। এ ধরনের সংগ্রহের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করা তাঁর সময়ের ব্যাপার ছিল। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমের দিলীপ ট্রফিতে স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত হয়। তিন খেলা থেকে ১০৬, অপরাজিত ২৪০ ও ১১৩ রান তুলেন।

১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ১১ টেস্ট ও ৩৭টি ওডিআইয়ে অংশ নেন। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে নিজ দেশে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হন। ১০ নভেম্বর, ১৯৯১ তারিখে স্বর্ণালী মুহূর্ত চলে আসে। ভারতীয় ক্রিকেটের স্বর্গভূমি কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের সূচনালগ্নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওডিআই অভিষেক হয়। চাপ সামলে ৫৫ রান তুলে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন। খেলায় তিনি তাঁর পরিপক্কতার বহিঃপ্রকাশ ঘটান ও শারদাশ্রমের ছাত্র শচীন তেন্ডুলকরের সাথে তিনিও ভালো খেলেন। এরপর দলের সাথে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। এ সফরে তাঁকে কোন প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিতে দেখা যায়নি। কেবলমাত্র ওডিআইয়ে অংশগ্রহণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এছাড়াও, ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ভারত দলের সদস্য ছিলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পূর্বে ৮৩.৮০ গড়ে ২০৯৫ রান তুলেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। মার্চ, ১৯৭০ সালের পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটি প্রথম টেস্ট খেলা ছিল। ১৩ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। অজয় জাদেজা’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। শক্তিধর দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের পেস বোলিং আক্রমণ রুখে দিয়ে টেস্ট অভিষেকে শতক হাঁকানোর কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। ব্রায়ান ম্যাকমিলান, অ্যালান ডোনাল্ড, মেরিক প্রিঙ্গল ও ব্রেট শ্যুলজের বল রুখে দেন। দলের সংগ্রহ ৩৮/৪ থেকে কঠিন পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটান ও স্বল্প কিছু রানে এগিয়ে নিয়ে যেতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন। ১০৩ রান তুলে দলকে ২৪৭/৮ নিয়ে বিদেয় হন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হয়। তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

ম্যাচ রেফারি ক্লাইভ লয়েড মন্তব্য করেন যে, সুনীল গাভাস্কার ও গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথের ন্যায় তারকাখচিত ভারতীয় ব্যাটসম্যানের গুণাবলী তাঁর মাঝে বিদ্যমান এবং তিনি দীর্ঘদিন ভারতীয় ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করবেন। কিছুসংখ্যক ক্রিকেট বিশ্লেষকদের অভিমত ছিল যে, তিনি কেবলমাত্র স্পিনারদের বিপক্ষেই সফলতা পেয়েছেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাণবন্ত পিচে তাঁকে খুঁজেই পাওয়া যাবে না। তবে, দৃঢ়চিত্তে শতরানের ইনিংস খেলে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত রাখেন।

ক্রিকেটকান্ট্রিতে এক স্বাক্ষাৎকারে বলেন যে, ‘প্রথমবারের মতো টেস্টে অংশ নিয়ে প্রতিপক্ষীয় বোলারদের মোকাবেলা করে টিকে থাকাই শুধু নয়; বরঞ্চ দলের জন্যে কিছুটা অবদান রাখতে পারাটাই আনন্দদায়ক ছিল।’ তাসত্ত্বেও, মাত্র দশ টেস্ট পরই তাঁকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদেয় নিতে বাধ্য হন। এ সফরে ভারত দল বেশ হিমশিম খেলেও নিজেকে ঠিকই মেলে ধরেছিলেন। পাশাপাশি, ইস্ট লন্ডনে অনুষ্ঠিত সিরিজে শেষ ওডিআইয়ে অপরাজিত ৮৪ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগৃহীত ২০৩ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করে। ৪৩/৩ থাকা অবস্থায় শচীন তেন্ডুলকরের বিদেয় নেয়ার পর দলের হাল ধরে স্বান্তনাসূচক জয় এনে দেন।

১৯৯৩ সালের শুরুতে ইংল্যান্ড দল ভারতে তাদের কঠিন মুহূর্ত অতিবাহিত করে। এ সিরিজে শচীন তেন্ডুলকর ও বিনোদ কাম্বলি তাঁদের কর্তৃত্ববাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়; তিনিও দুইটি অর্ধ-শতক হাঁকিয়ে ভূমিকা রাখেন। মুম্বইয়ে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে দৃশ্যতঃ শারদাশ্রম বনাম ইংল্যান্ডের মধ্যকার খেলা চলছিল। কাম্বলি ২২৪ ও তেন্ডুলকর ৭৮ রান সংগ্রহ করেন। তাঁদের সাথে যোগ দিয়ে ৫৭ রান তুলেন ও কাম্বলির দ্বি-শতরানের ইনিংস পর্যবেক্ষণ করেন।

নিজ দেশে বেশ ভালো খেললেও শ্রীলঙ্কায় দূর্বলমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে টেস্ট দল থেকে ছিটকে পড়েন। অপরদিকে, ওডিআইয়েও তেমন কোন বড় ধরনের ইনিংস খেলেননি। এর প্রধান কারণ হয়তোবা নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ের কারণে হয়েছিল। এ বিষয়ে রেডিফে মন্তব্য করেন যে, ‘আমার ব্যাটিংয়ের অবস্থান ৬, কখনোবা ৭ নম্বরে ছিল। এছাড়াও, দলে কপিল দেব ছিলেন। ফলে, কেবলমাত্র ১০ কিংবা ১২ ওভার বাকী থাকতে কপিল দেবকে আমার সামনে রাখা হতো। স্বভাবতঃই আমার ব্যাট হাতে মাঠে নামার সম্ভাবনা আরও কমে যায় ও প্রায়শঃই শেষের ওভারগুলোর মুখোমুখি হতে হয়।’

১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা সফরে যান। ৪ আগস্ট, ১৯৯৩ তারিখে কলম্বোর পিএসএসে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও সফরকারীরা তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

ওডিআইয়ে তাঁর ইনিংসগুলো স্বীয় প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিল। হিরো কাপের সেমি-ফাইনালে ব্যাটিং ধ্বসের কারণে বেশ আগেভাগেই খেলার সুযোগ পান। ৪৮ রান তুলে বিরাট ভূমিকা রাখেন ও পরবর্তীতে নিম্নমূখী রানের খেলায় শচীন তেন্ডুলকর বল হাতে দারুণ সফলতা পেলে নাটকীয় জয় তুলে নেয় ভারত দল। এটিই তাঁর সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য ইনিংস ছিল। ১৯৯৪ সালের মধ্যে দল থেকে ছিটকে পড়েন ও আর তাঁকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়নি।

১৯৯৪ সালে ভারত ‘এ’ দলের পক্ষে খেলেন। এছাড়াও, একই বছরে সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান একাদশের বিপক্ষে খেলার জন্যে বোর্ড সভাপতি একাদশের সদস্যরূপে খেলার সুযোগ পান। তবে, মূল দলে তাঁকে রাখা হয়নি। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক খেলা থেকে বঞ্চিত হতে থাকেন এবং ১৯৯৬ সালে সৌরভ গাঙ্গুলীরাহুল দ্রাবিড়ের অন্তর্ভুক্তিতে ভারতের ব্যাটিংয়ের অবস্থান আরও মজবুত হতে থাকে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে প্রত্যাখ্যাত হবার পরও ঘরোয়া আসরে সরব ছিলেন ও রান সংগ্রহে তৎপরতা দেখান। তবে, নিজেকে আর আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে পারেননি। এক দল থেকে আরেক দলে চলে যেতে থাকেন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে বাংলা দলের পক্ষে খেলেন। দুই বছর পর পুণরায় রাজস্থান দলে ফিরে যান। ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে নিজ রাজ্য দল মুম্বইয়ে চলে আসেন। প্রথম খেলাতেই ১০৩ রান তুলে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। ২৯ বছর বয়সে ইন্ডিয়া মাস্টার্স দলে অশোক মালহোত্রা, বলবিন্দর সিং সাঁধু, সন্দীপ পাতিল ও যশপাল শর্মা’র ন্যায় খেলোয়াড়দের সাথে যুক্ত হন।

১৯৯২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তাঁর অবদানের কথা ভারতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে বিস্মৃতির অন্তরালে চলে গেলেও ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে অপ্রত্যাশিতভাবে বোল্যান্ড দলে খেলার জন্যে চু্ক্তিবদ্ধ হন। তেমন রান না তুললেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এ সময়ে দলটি প্রথমবারের মতো স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক কাপের শিরোপা জয় করে। অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই ভারত দলে তাঁর অন্তর্ভুক্তি না থাকার বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন যে, ‘প্রত্যেকবারই আমি আমার সেরা খেলা উপহারে সচেষ্ট ছিলাম। বাদ-বাকীটুকু আমার হাতে নেই।’

২০০০ সালে গোয়ার সাথে সর্বশেষ প্রতিনিধিত্বমূলক ক্রিকেটে অংশ নেন। সব মিলিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রিকেটে পাঁচটি দলের সাথে খেলেছেন। টেস্টে ৪২.৫০ গড়ে ৪২৫ রান পেলেও মাত্র একটি শতক হাঁকিয়েছিলেন। এছাড়াও, তিনটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেছেন। ওডিআইগুলো থেকে ২০.৫২ গড়ে ৫১৩ রান তুলেছেন। ৫৫ ও অপরাজিত ৮৪ রানের দুইটি অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছেন। কোন শতকের সন্ধান পাননি। বিস্ময়করভাবে উভয়টিই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, ৫৫ রানের ইনিংসটি ওডিআই অভিষেকে করেছেন। কলকাতায় অ্যালান ডোনাল্ডের ন্যায় বোলারদের রুখে দিয়ে দলকে জয় এনে দেন। এছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও একই সাফল্য পান। ইস্ট লন্ডনে অপরাজিত ৮৪ রান তুলে ঐ দেশে ভারতের স্বল্পসংখ্যক ওডিআই জয়লাভে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। এক সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন যে, ‘আমার কোন আক্ষেপ নেই। জাতীয় দলের সদস্য থেকে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে নিজের সেরা খেলা উপহার প্রদানে সচেষ্ট ছিলাম। ৪২ গড়ে টেস্টে রান তুলে খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করতে পেরে আমি আনন্দিত।’ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ৮৬ খেলা থেকে ৪৮.৮৬ গড়ে ৫৮১৫ রান করেছেন। ১৭টি শতক ও ২৫টি অর্ধ-শতকের মধ্যে সর্বোচ্চ করেছেন ২৪৬ রান।

ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পেয়েছিলেন। টেস্ট ও ওডিআইয়ে নিজের সহজাত প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। তবে, দীর্ঘ সময় ধরে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করতে পারেননি। ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচ হিসেবে যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করেছেন, বেশ কয়েকটি দল ও খেলোয়াড়দের সাথে কাজ করেছেন। টেস্ট অভিষেক ঘটার দুই দশকের অধিক সময় পর ক্রিকেটে নতুন দায়িত্ব নিয়ে অগ্রসর হন। অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। অনেকগুলো দলের সাথে কাজ করে ও অনেকাংশেই সফল হন। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী ভারত দলের কোচ ছিলেন। পাঁচ বছর মুম্বই দলের কোচ ছিলেন ও এ সময়ে কিছু শিরোপা বিজয়ে ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে পুনে ওয়ারিয়র্স ইন্ডিয়া ও দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের সহকারী কোচ হিসেবে যুক্ত থাকেন। ২০২০ সালের আইপিএলের আসরে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের শিরোপা বিজয়ে যথেষ্ট সহায়তা করেন।

Similar Posts

  • | |

    রস টেলর

    ৮ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে ওয়েলিংটনের লোয়ার হাট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার। দলে মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি মাঝে-মধ্যে ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে অগ্রসর হতেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে তিন স্তরের ক্রিকেটের সবকটিতেই অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, সকল স্তরেই দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। সামোয়ান বংশোদ্ভূত তিনি। এমসিসি’র পরিচালনায় কাউন্টি ক্রিকেটে কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার উদ্দেশ্যে এমসিসি ইয়ং…

  • | |

    মুশফিকুর রহিম

    ৯ জুন, ১৯৮৭ তারিখে বগুড়ায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। উইকেট-রক্ষণের পাশাপাশি ডানহাতে মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ে দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। বাংলাদেশের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

  • |

    হেনরি প্রমিৎজ

    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৪ তারিখে কেপ প্রভিন্সের কিং উইলিয়াম টাউনের কাছাকাছি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রাখতেন। ডানহাতে স্লো বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯২০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। তাঁর বোলিং অফ ও লেগ-স্পিনের মিশেলে গড়ে উঠেছিল। অনেকাংশেই তা দূর্বোধ্য ছিল। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান…

  • |

    শুভাগত হোম

    ১১ নভেম্বর, ১৯৮৬ তারিখে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ ব্যাটিংয়ের দিকেই অধিক মনোনিবেশ ঘটান। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। পাশাপাশি কার্যকর অফ-ব্রেক বোলিং করে থাকেন। ২০১০-এর দশকে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে অংশ নিয়েছেন। ২০০৯-১০ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর বাংলাদেশী ক্রিকেটে মধ্যাঞ্চল, ঢাকা বিভাগ ও রাজশাহী বিভাগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, বরিশাল…

  • |

    জেমস সাউদার্টন

    ১৬ নভেম্বর, ১৮২৭ তারিখে সাসেক্সের পেটওর্থ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন তিনি। ১৮৭০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। সাসেক্সের পেটওর্থ এলাকায় জন্মগ্রহণের পরের বছরই তাঁর পরিবার মিচামে চলে যায়। পিতা ১৮৪১ সালে মারা যান ও সেন্ট পিটার এন্ড পল চার্চে তাঁকে সমাহিত করা হয়। মাতা শার্লট ১৮৫১…

  • | |

    ট্রেভর চ্যাপেল

    ১২ অক্টোবর, ১৯৫২ তারিখে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার গ্লেনেল্গ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতে পারতেন। এছাড়াও, কভার অঞ্চলে দূর্দান্ত ফিল্ডিং করতেন। ১৯৮০-এর দশকে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। অ্যাডিলেডভিত্তিক প্রিন্স আলফ্রেড কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। ক্রিকেটপ্রিয় পরিবারে জন্ম। ১৯৭২-৭৩ মৌসুম থেকে ১৯৮৪-৮৫ মৌসুম পর্যন্ত…