২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ তারিখে পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, প্রশাসক ও কোচ। দলে মূলতঃ উইকেট-রক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। পাকিস্তান দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

হাল ছেড়ে না দেয়ার মানসিকতার কারণে সবিশেষ পরিচিতি লাভ করেছিলেন। দলের বিপর্যয় রোধে নিচেরসারিতে বেশ তৎপরতা দেখিয়েছিলেন। একদিনের ক্রিকেটে দ্রুতলয়ে পদ সঞ্চালনে ভূমিকা রাখতেন। ‘ওয়েল বোল্ড’ ও ‘সাবাশ’ শব্দ সর্বদাই তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে আসতো। ১৯৮৬-৮৭ মৌসুম থেকে ২০০৫-০৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে করাচী ও পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৯০ থেকে ২০০৪ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ৬৯ টেস্ট ও ২১৯টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। এ পর্যায়ে দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। ১৯৯০-৯১ মৌসুমে নিজ দেশে ডেসমন্ড হেইন্সের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৩ নভেম্বর, ১৯৯০ তারিখে মুলতানে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন।

একই সফরের ২৩ নভেম্বর, ১৯৯০ তারিখে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। সাঈদ আনোয়ারের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ২৪ ও ৩২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, রিচি রিচার্ডসনের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে ঐ খেলায় সফরকারীরা সাত উইকেটের ব্যবধানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সমতায় ফেরে।

১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী পাকিস্তান দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। সেমি-ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ বলে ৯ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় ছক্কা হাঁকালে ৭ বলে ৩ রানে নিয়ে যান। পরবর্তীতে জাভেদ মিয়াঁদাদ জয়সূচক বাউন্ডারি মারেন। চূড়ান্ত খেলায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের সংগৃহীত ৫০ ওভারে ২৪৯ রান সংগ্রহ করলেও তিনি ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি। তবে, ওয়াসিম আকরামের ইন-সুইঙ্গারে ইয়ান বোথামের শূন্য রানে বিদায় করতে দারুণ ভূমিকা রাখেন। ঐ খেলায় তিন ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন।

১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে সেলিম মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৯ জানুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেন। খেলায় তিনি ৯ ও ০ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়াও, উইকেটের পিছনে অবস্থান করে ছয়টি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্সের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩২৪ রানে জয় পায়।

১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে শিয়ালকোটে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ২৬ ও ১১৭* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, প্রতিপক্ষীয় দলনায়কের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে ১৪৪ রানে জয় পেলে সফরকারীরা ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ে সমর্থ হয়। এ সিরিজে ২৭৪ রান সংগ্রহ করে হাসান তিলকরত্নে’র সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে রমিজ রাজা’র নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ২৬ এপ্রিল, ১৯৯৭ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। প্রথম ইনিংসে একটি স্ট্যাম্পিংয়ের সাথে নিজেকে জড়ান। তবে, দ্বিতীয় ইনিংসে আঘাতের কবলে পড়লে সেলিম ইলাহীকে উইকেট-রক্ষণে অগ্রসর হতে হয়। এছাড়াও, ৯৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, অরবিন্দ ডি সিলভা’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়।

১৯৯৯ সালে তাঁর দল ঐ প্রতিযোগিতায় রানার্স আপ হয়েছিল। তবে, গ্লাভসের কর্ম শেষে শ্রেয়তর ব্যাটিংয়ে তিনি বেশ আগুয়ান। টেস্টে ব্যাটিং গড় একই পর্যায়ের থাকলেও ওডিআই গড়ে রশীদ লতিফের তুলনায় বেশ এগিয়েছিলেন ও অধিক রান সংগ্রহ করেছিলেন। অধিনায়কের দায়িত্ব পালনকালে পাকিস্তান দলকে লড়াইয়ে উজ্জ্বীবিত করার প্রয়াস চালাতেন। পাশাপাশি রক্ষণাত্মক ভূমিকায়ও অগ্রসর হয়েছিলেন।

২০০০-০১ মৌসুমে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অধিনায়ক হিসেবে দলকে পরিচালনা করেছিলেন। তবে, করাচীর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টেস্টে পরাজয়ের পাশাপাশি নিজ দেশে সিরিজ পরাজিত হয় তাঁর দল। এরফলে, প্রথম পাকিস্তানী অধিনায়ক হিসেবে ৩৯ বছরের মধ্যে দলের পরাজয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে, পরাজয় এড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন ও চূড়ান্ত দিনে ইংল্যান্ডের বিজয় আটকাতে অপ্রত্যাশিতভাবে বোলিংয়ে দেরী করার কৌশল অবলম্বন করেন। ঘণ্টায় ওভার করার হার নয়ের নীচে চলে গেলেও স্টিভ বাকনর আম্পায়ারের দায়িত্বে থেকে বিচক্ষণতার পরিচয় দেন। ন্যায় বিচার করতে প্রায় অন্ধকারের মধ্যেও খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন। এ ধরনের ঘটনা ও বিতর্ক আর কখনো হয়নি।

২০০৩-০৪ মৌসুমের অধিকাংশ সময়ই খেলেছেন। কেবলমাত্র আঘাতের কারণে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের শেষ দুই টেস্টে অংশ নিতে পারেননি। তবে, তাঁর উইকেট-রক্ষণের মান পুরোপুরি নিখুঁত ধরনের ছিল না। কামরান আকমল এ অবস্থানে শক্তভাবে নিজেকে গড়ে তুলতে থাকলে ২০০৪ সালের শেষদিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। এর এক বছর পর সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেন।

২০০৪-০৫ মৌসুমে নিজ দেশে মারভান আতাপাত্তু’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২০ অক্টোবর, ২০০৪ তারিখে ফয়সালাবাদে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ৫ ও ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, তিনটি ক্যাচ গ্লাভসবন্দী করেছিলেন। তবে, সনথ জয়সুরিয়া’র অনবদ্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ২০১ রানে জয় পেয়ে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

টেস্ট ক্রিকেটে ১৪৮টি ডিসমিসাল ঘটিয়েছেন। ওডিআইয়ে ৩২৬৬ রান ও ২৮৭টি ডিসমিসালের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন। সাকলাইন মুশতাকের লেগ থেকে অফের দিকে চলে আসা রহস্যময় দুসরা বোলিংয়ে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছিলেন। পুরো আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবনে আরেক উইকেট-রক্ষক রশীদ লতিফের সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে হয়েছিল তাঁকে।

২০০৫ সালে পাকিস্তানের ঘরোয়া টি২০ প্রতিযোগিতায় প্রথম শতক হাঁকান। এবিএন-এএমআরও টি২০ কাপে করাচী ডলফিন্সের সদস্যরূপে লাহোর লায়ন্সের বিপক্ষে ৫৯ বলে ১১২ রানের দূর্দান্ত ইনিংস খেলেন। হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ২০০ রান করেন। ঐ মৌসুম শেষে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন।

২০০৭ সালে অনুমোদনবিহীন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন ও হায়দ্রাবাদ হিরোজের কোচের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৮ সালের আসরে সম্প্রসারিত দল লাহোর বাদশাহের কোচ হিসেবে নিযুক্ত হন।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর আগস্ট, ২০১৩ সালে জাতীয় দলের ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ তারিখে ডেভ হোয়াটমোরের পরিবর্তে জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে মনোনীত হন। এ পর্যায়ে দলকে নিয়ে এশিয়া কাপ ও বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এপ্রিল, ২০১৪ সালে ইকবাল কাসিমের পরিবর্তে পাকিস্তান দলের প্রধান দল নির্বাচক হিসেবে স্থলাভিষিক্ত হন ও জাতীয় দলের ব্যবস্থাপক হন। তবে, ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা চলাকালীন খেলার দুই দিন পূর্বে ক্যাসিনো খেলতে দেখা যাবার পর তাঁকে এ দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত রাখা হয়। ২০১৬ সালে পিএসএলে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। আজম খান নামীয় তাঁর সন্তান রয়েছে।

Similar Posts