২৯ নভেম্বর, ১৯৭৭ তারিখে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মারদান এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, মাঝে-মধ্যে ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে অংশ নিতেন। পাকিস্তানের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

মারদানে জন্মগ্রহণ করলেও শৈশবেই পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচীতে চলে যান। ক্রিকেট খেলায় অংশ নিতে মাইলের পর মাইল ভ্রমণ করেছেন। তরুণ অবস্থায় পাকিস্তানী উইকেট-রক্ষক রশীদ লতিফের ছত্রচ্ছায়ায় নিজেকে গড়ে তুলেন। এক পর্যায়ে উভয়ে পাকিস্তান দলে একত্রে খেলেছেন। ব্যাট হাতে নিয়ে তাঁর ক্রীড়া প্রতিভা কোচদের নজর কাড়ে। নতুন প্রজন্মের ভ্রমণপ্রিয় ক্রিকেটারদের অন্যতম ছিলেন। বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ১৬টি বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুম থেকে ২০১৭-১৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানী ক্রিকেটে হাবিব ব্যাংক লিমিটেড ও পেশাওয়ার ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন, ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে নটিংহ্যামশায়ার, সারে, ওয়ারউইকশায়ার ও ইয়র্কশায়ার এবং অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, রাজস্থান রয়্যালসের পক্ষে খেলেছেন।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমের পাকিস্তানের ঘরোয়া পর্যায়ের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। করাচীতে ক্রিকেট খেললেও এবং কৈশোর নগরে অতিবাহিত করলেও পরের স্তরের ক্রিকেটে অংশ নিতে পারেননি। ফলশ্রুতিতে, নিজ এলাকা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে চলে যান। জন্মগতভাবে পাঠান ছিলেন। পেশাওয়ার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পক্ষে খেলেন ও ১৯৯৯ সালে পেশাওয়ারের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়।

পাকিস্তানের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম চীরহাস্যময়ের অধীকারী সেরা ব্যাটসম্যান। একবিংশ শতকে পাকিস্তানী ক্রিকেটে অনেকগুলো পরিবর্তনে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন অঙ্গাঙ্গীভাবে। মাঠ ও মাঠের বাইরে বিরাট ভূমিকা রাখেন। মাঝারিসারির চমৎকার ও খাঁটিমানসম্পন্ন ব্যাটসম্যান ছিলেন। এক দশকের অধিক সময় নিয়ে গড়া খেলোয়াড়ী জীবনে দশ হাজারের অধিক রান (১০০৯৯) তুলেছেন। সকল স্তরের ক্রিকেটে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। পাশাপাশি টেস্টে ত্রি-শতক হাঁকিয়েছেন। স্লিপ অঞ্চলে ব্যতিক্রমধর্মী ক্ষীপ্রগতিসম্পন্ন ফিল্ডার ছিলেন ও চমৎকার স্লো-মিডিয়াম বোলিং করতেন। ২০০০-এর দশকের শুরু থেকে ব্যাটিংয়ে ফুলঝুড়ি ছুটিয়েছেন ও টেস্ট ক্রিকেটে তিন নম্বর অবস্থানটি স্বীয় কব্জায় রেখেছিলেন।

স্বল্পসংখ্যক ক্রিকেট বিশ্লেষকই তাঁকে পাকিস্তানের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে মানতে চাইবেন। তবে, প্রথম পাকিস্তানী ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ৯০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করার গৌরব অর্জন করেছেন। ১৩ অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট চলাকালীন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। বিখ্যাত ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াঁদাদের সংগৃহীত ৮৮৩২ রানের রেকর্ড ভঙ্গ করেন। এছাড়াও, নিজের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে প্রথম পাকিস্তানী টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে পাঁচ অঙ্কের কোটা স্পর্শ করেছিলেন। পাকিস্তানের পক্ষে সর্বাধিক ৩৪টি টেস্ট শতক সহযোগে সর্বমোট ১০০৯৯ রান তুলেছেন। ৩৪ শতকের বিপরীতে ৩৩ অর্ধ-শতকের সন্ধান পেয়েছেন। বড় ধরনের রান সংগ্রহের দিকে নজর রাখতেন ও সহজাত প্রতিভার অধিকারী হিসেবে পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে নিজেকে মেলে ধরতেন।

কমপক্ষে এক হাজার টেস্ট রান সংগ্রহকারী পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেরা ব্যাটিং গড়ের অধিকারী। ১১৮ টেস্টে ৫২.০৫ গড়ে রান পেয়েছেন। এছাড়াও, অগৌরবজনক রেকর্ডের সাথেও স্বীয় নামকে জড়িয়ে রেখেছেন। দানিশ কানেরিয়া (২৫), ওয়াকার ইউনুস (২১), ওয়াসিম বারি’র (১৯) পর ওয়াসিম আকরামের সাথে যৌথভাবে সর্বাধিক ১৭টি শূন্য রানের সাথে তালিকায় চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছেন।

বলকে সপাটে ড্রাইভ মারতেন। এছাড়াও, সীমানার বাইরে বল ফেলতে ইতস্তত বোধ করতেন না। কাট এবং পুলেও বেশ দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থেকেও নিজেকে সংযত রেখেছেন। চতুর্থ ইনিংসে ব্যতিক্রমী রেকর্ড রয়েছে। ৫০.৫১ গড়ে ১৪৬৫ রান সংগ্রহ করেছেন। ডন ব্র্যাডম্যান ও হার্বার্ট সাটক্লিফের পর তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে চার ইনিংসের সবকটিতেই ৫০-এর অধিক গড়ে রান পেয়েছেন। একমাত্র পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান হিসেবে ১১টি দেশের বিপক্ষে টেস্ট শতক হাঁকিয়েছেন। পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান হিসেবে জাভেদ মিয়াঁদাদের সাথে যৌথভাবে সর্বোচ্চ ছয়টি দ্বি-শতক হাঁকানোর সাথে জড়িয়ে রেখেছেন।

২০০০ থেকে ২০১৭ সময়কালে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বমোট ১১৮ টেস্ট, ২৬৫টি ওডিআই ও ২৫টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশগ্রহণের এক বছর পরই ফেব্রুয়ারি, ২০০০ সালে পাকিস্তানের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০০ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম ওডিআইয়ে ৪৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে নিজ দেশে সনথ জয়সুরিয়া’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০০ তারিখে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেক টেস্টেই শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৭ রান সংগ্রহের পর পুরো খেলোয়াড়ী জীবনেই শতক হাঁকাতে তৎপরতা দেখাতে শুরু করেন। এছাড়াও, প্রথম ইনিংসে ১২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, উভয় স্তরের ক্রিকেট অভিষেকেই তাঁর দল পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদন করেছিল। অরবিন্দ ডি সিলভা’র অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা টেস্টে ২ উইকেটে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

অবশ্য পরবর্তী কয়েক বছর তাঁর ব্যাটিংশৈলী তেমন নজর কাড়েনি। তাসত্ত্বেও, স্ট্রাইক রেট পরিবর্তনের ক্ষমতা ও ব্যাটিং অর্ডারের পরিবর্তন ঘটিয়ে স্ট্রোকপ্লের অপূর্ব নিদর্শনের কারণে তাঁকে দলে রাখা হয়েছিল। ২০০১ সালে মুলতান টেস্ট চলাকালীন শতকধারী সাঈদ আনোয়ার স্বীয় তনয়ার মৃত্যুতে গৃহে প্রত্যাবর্তন করলে অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে খেলেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস চলাকালীন দীর্ঘ সময় মাঠে অবস্থান করেন ও লেগ-স্পিনার দানিশ কানেরিয়া’র বলে চারটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এরফলে, ১৯৮৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত টেস্টে ভারতের অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে গুরুশরণ সিংয়ের রেকর্ডের সাথে স্বীয় নামকে যুক্ত করেন। তবে, এক ইনিংসে অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে সর্বাধিক ক্যাচ মুঠোয় পুড়ার রেকর্ড নিজের করে নেন ও ৯৭ বছর পূর্বেকার বার্ট স্ট্রাডউইকের তিন ক্যাচের রেকর্ড ম্লান করে দেন।

২০০০-০১ মৌসুমে মঈন খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের অন্যতম সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ৮ মার্চ, ২০০১ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ পর্যায়ে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১১৬ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৯১ ও ১৪৯* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, মোহাম্মদ সামি’র অসামান্য বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ২৯৯ রানে জয় পেয়ে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।

অক্টোবর, ২০০৪ সালে নিজের বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটানোর সুযোগ পান। সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে মুখোমুখি হন। তিন নম্বর অবস্থানে থেকে শতক হাঁকান। তবে, অস্ট্রেলিয়া সফরে ২৫৯ রান তুলে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের মর্যাদা পেলেও ৩-০ ব্যবধানে ধবল ধোলাইয়ের শিকার হয় পাকিস্তান দল।

২০০৫ ও ২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে বড় ধরনের রান পেয়েছিলেন। ২০০৪-০৫ মৌসুমে ইনজামাম-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে ভারত সফরে দলের সহঃঅধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। তন্মধ্যে, চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ২৬৭ ও অপরাজিত ৮৪ রান তুলেন ভারতের মাটিতে দুর্লভ টেস্ট অংশ নেন। শুরুতে ধীরলয়ে খেললেও ২৪ মার্চ, ২০০৫ তারিখে ব্যাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে দারুণ খেলেন। ২৬৭ রান তুলে সিরিজের চূড়ান্ত টেস্টে দলের বিজয়ে বিরাট ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৪* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে শেষ অধিবেশনে ১৬৮ রানে জয় পেয়ে পাকিস্তানকে সিরিজে সমতা আনতে সহায়তা করেন।

পরবর্তী দুই বছরে আরও তিনটি শতক হাঁকিয়েছিলেন। নিজ দেশে ১৯৯, ৮৩ ও ১৯৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। সব মিলিয়ে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে যথেষ্ট ভালোমানের খেলা উপহার দিয়েছিলেন। টেস্টে ১০৬ গড়ে রান তুলে উভয় দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে নিজেকে সর্বোচ্চ স্থানে নিয়ে গেছেন। নয় টেস্টে পাঁচ শতক ও চারটি অর্ধ-শতক সহযোগে ১৩২১ রান পেয়েছেন। বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের মাটিতে ৭৬.৮০ গড়ে রান তুলেছেন। পাশাপাশি ওডিআইয়েও ভারতের বিপক্ষে সর্বাপেক্ষা কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন। সাতটি শতকের তিনটিই ভারতের বিপক্ষে পেয়েছেন।

২০০৮-০৯ মৌসুমে নিজ দেশে মাহেলা জয়াবর্ধনে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত ব্যাটিং উপযোগী পিচে সফররত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ তারিখে ৭৬০ মিনিটে ৩১৩ রান তুলে দলের সংগ্রহকে ৬৪৪/৭ রানে নিয়ে যান। করাচীর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে নিষ্প্রাণ পিচের সুবিধে নিয়ে নিজস্ব প্রথম ত্রি-শতকের সন্ধান পান। এরফলে, তৃতীয় পাকিস্তানী হিসেবে তিনশত রান তোলার গৌরব অর্জন করেন। ৫৫৮ বল মোকাবেলান্তে তাঁর ঐ ইনিংসে ২৭টি চার ও একটি ছক্কার মার ছিল। এছাড়াও, এটি টেস্টের ইতিহাসের ২৩তম ও অধিনায়ক হিসেবে ষষ্ঠ তিনশত রানের ইনিংস ছিল। তাঁর অসাধারণ ত্রি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০১০-১১ মৌসুমে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বে পাকিস্তানী দলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। সেখানে গ্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ১২ নভেম্বর, ২০১০ তারিখে দুবাইয়ের ডিএসসিতে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৩৫ ও ১৩১* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০১৪ সালে নিজের স্বর্ণালী সময়ে পৌঁছেন। এ বছর ৫টি শতক সহযোগে ৬৬.৫০ গড়ে ১০৬৪ রান তুলেছিলেন। তন্মধ্যে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০৬, ১০৩*, ২১৩ ও ৪৬ রান তুলেন। পাঁচজন পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানের অন্যতম হিসেবে উপর্যুপরী তিন টেস্ট ইনিংসে শতক হাঁকানোর গৌরব অর্জন করেন। ঘটনাক্রমে বিখ্যাত ক্রিকেটার হার্বার্ট সাটক্লিফের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ সফলতা পেয়েছেন। সাতজন পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানের অন্যতম হিসেবে টেস্টের উভয় ইনিংসে শতরানের ইনিংস খেলেছেন। একই সিরিজে এ অর্জনের সাথে যুক্ত হন। এছাড়াও, প্রথম পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন।

২০১৪-১৫ মৌসুমে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের অন্যতম সদস্যরূপে সংযুক্ত আরব আমিরাত গমন করেন। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। ২২ অক্টোবর, ২০১৪ তারিখে দুবাইয়ের ডিএসসিতে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। ১০৬ ও ১০৩* রান সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর জোড়া শতকের কল্যাণে পাকিস্তান দল ২২১ রানে জয় পেলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

এছাড়াও, একই সফরের ৩ নভেম্বর, ২০১৪ তারিখে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ২১৩ ও ৪৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মিসবাহ-উল-হকের জোড়া শতকের সুবাদে পাকিস্তান দল ৩৫৬ রানে জয় তুলে নিলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। ঐ সিরিজে ৪৬৮ রান সংগ্রহ করলে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

২০১৬ সালে ওভালে মনোমুগ্ধকর দ্বি-শতরানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানকে সিরিজে সময়তায় আনেন ও আইসিসি টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বর অবস্থানে নিজেকে নিয়ে যান। এরপর থেকে তাঁর কীর্তিগাথায় নেতিবাচকতার ছায়া পড়তে থাকে। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়েই খেলার জগতের সাথে যুক্ত ছিলেন। মিসবাহ-উল-হককে নিয়ে বছরের পর বছর ধরে নিজ দেশে টেস্ট আয়োজন না করা সত্ত্বেও যখন লড়াই করে যাচ্ছিলেন; তখন একই সময়ে খেলা গড়াপেটার সাথেও তাঁদের যুদ্ধ করতে হয়েছিল। এগুলোর পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনে দূর্ভাগ্যের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন।

২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে প্রিয়জনদের বিয়োগ ঘটে। ২০০৪-০৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরকালীন পিতার জীবনাবসান ঘটে। এরফলে, তাঁকে দেশে ফিরে আসতে হয়। ২০০৫ সালে কনিষ্ঠ ভ্রাতা ইউক্রেনে অবস্থানকালে দূর্ঘটনায় নিহত হয়। এক বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে ওডিআই খেলাকালীন জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা জার্মানীতে মারা যান। ২০১১ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবার প্রস্তুতিকালীন আরও এক জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা শামসাদের দেহাবসান কথা জানতে পারেন। এরপর, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার পর ২০১৪ সালে ভ্রাতুষ্পুত্রের মৃত্যু ঘটে। এরই মাঝে পিতৃসমতুল্য বব উলমারের আকস্মিক মৃত্যুতেও শোকে জর্জড়িত হন।

তাসত্ত্বেও পুণরায় খেলার জগতে ফিরে আসেন। খেলা ছেড়ে চলে আসার বিষয়েও সচেতনতা অবলম্বন করেন। এমনকি নিজস্ব শেষ সিরিজেও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার প্রশ্নে দলের যে-কারোর চেয়েও কম ছিলেন না। দশটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এগুলোর কয়েকটি ছিল বেশ দৃষ্টিনন্দন। এরফলে, তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে আউটফিল্ডার হিসেবে ক্যাচ মুঠোয় পুরার বিষয়ে পাকিস্তানের নতুন রেকর্ড গড়েন। ১৩৯ ক্যাচ নিয়ে অদ্যাবধি পাকিস্তানী রেকর্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। ব্যতিক্রমধর্মী ফিল্ডার হিসেবে খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুরদিকের দিনগুলোয় ব্যাট-প্যাড এলাকায় অবস্থান করতেন। পরবর্তীতে স্লিপ অঞ্চলে চলে যান।

সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে নটিংহ্যামশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তবে, বিস্ময়করভাবে বোলিংয়ের মাধ্যমেই কাউন্টি ক্রিকেটে নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছেন। জুলাই, ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে স্টিফেন ফ্লেমিং নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়ে চলে যান। ফলশ্রুতিতে, তাঁর এ শূন্যতা পূরণে তাঁকে নটসে চুক্তিবদ্ধ করা হয়। চ্যাম্পিয়নশীপে পাঁচ খেলায় অংশ নেন। ৬ জুলাই ট্রেন্ট ব্রিজে সারের বিপক্ষে প্রথম ও ৬ সেপ্টেম্বর একই মাঠে গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে শেষ খেলায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়াও, তিনটি লিস্ট-এ খেলায় ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

টটস্পোর্ট প্রতিযোগিতায় অভিষেক খেলায় ছোটখাটো অবদান রাখেন। দলের চতুর্থ পরিবর্তিত বোলার হিসেবে আক্রমণে নামেন। গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে একদিনের খেলার প্রথম বলেই এক উইকেট পান ও খেলা শেষে ৩.১ ওভারে ৩/৫ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। তন্মধ্যে, রামনরেশ সারওয়ানকে বিদেয় করেছিলেন। এটিই নটিংহ্যামশায়ারের পক্ষে তাঁর প্রথম একদিনের খেলায় অংশগ্রহণ ছিল। ট্রেন্ট ব্রিজে অবস্থানের পূর্বে ১৩১টি একদিনের খেলায় অংশ নিয়ে সর্বসাকুল্যে মাত্র ১০ উইকেট দখল করেছিলেন। টটস্পোর্টের পরের খেলায় তিনি আরও তিন উইকেট পান। এ পর্যায়ে নর্দান্টসের সুপরিচিত ব্যাটসম্যান লাভ, সেলস ও শাফায়াত তাঁর শিকারে পরিণত হয়েছিলেন। এর বিপরীতে ব্যাট হাতে নিয়ে নটসের পক্ষে সাধারণমানের সফলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। সাত ইনিংস থেকে মাত্র একবার ৫৩ রানের অর্ধ-শতকের সন্ধান পান। অথচ, টেস্ট ক্রিকেটে তিনি পাকিস্তানের পক্ষে সর্বাধিক ৩৪টি শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন।

২০০৩, ২০০৭ ও ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। সব মিলিয়ে এ প্রতিযোগিতায় ১১ খেলার সাথে নিজেকে যুক্ত রাখেন। তন্মধ্যে, ২০১১ সালের আসরে সেরা সাফল্য পান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭২ ও কেনিয়ার বিপক্ষে ৫০ রান তুলেন। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের শোচনীয় ফলাফলের পর স্বল্পসংখ্যক খেলোয়াড়দের অন্যতম হিসেবে দলে স্বীয় স্থান ধরে রেখেছিলেন। তবে, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজ দেশে দূর্বলমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে বাদ পড়েন। চীরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে খেলার সুযোগ পেলেও টেস্ট দলে ঠাঁই পেতে তাঁকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ১৫-সদস্যের পাকিস্তান দলের সদস্য ছিলেন। তবে, ঐ প্রতিযোগিতায় খুব কমই ভূমিকা রেখেছিলেন। তিন খেলা থেকে মাত্র ৪৩ রান তুলতে সক্ষম হন ও দল থেকে বাদ পড়েন। নভেম্বর, ২০১৫ সালে ওডিআই থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন।

আগস্ট, ২০০৬ সালে হেডিংলি কার্নেগি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টের তৃতীয় উইকেট জুটিতে মোহাম্মদ ইউসুফকে সাথে নিয়ে ৩৬৩ রানের জুটি গড়েন। ১৭৩ রান তুলে রান আউটের শিকারে পরিণত হন। কিন্তু, দ্বিতীয় ইনিংসে দল ব্যাটিং বিপর্যয়ের কবলে পড়ে। ঐ টেস্টে তাঁর দল ১৬৭ রানে পরাজয়বরণ করেছিল। তাঁদের সংগৃহীত এ রানটি পরাজিত খেলায় সর্বোচ্চ জুটির স্বীকৃতি পায়।

প্রথম পাকিস্তানী ক্রিকেটার হিসেবে ‘হোয়াইট রোজ’ কাউন্টি নামে খ্যাত ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবে প্রতিনিধিত্ব করার গৌরব অর্জন করেন। মাইনরিটি এথনিক এন্টারপ্রাইজ নেটওয়ার্কের ব্যবসায়িক শাখা এবিডিএনের স্পন্সরশিপে এক বছর মেয়াদে ইয়র্কশায়ারে যোগ দেন।

লেগ-স্পিন ও মিডিয়াম পেস সহযোগে মাঝে-মধ্যে বোলিং কর্মে অগ্রসর হতেন। ২০০৭ সালের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের খেলায় ৩৫ সেকেন্ডের মধ্যে এক ওভার বোলিং করেছিলেন বলে উইজডেনে উল্লেখ করা হয়। এ পর্যায়ে তাঁর দল ইয়র্কশায়ার ধীরগতিতে বোলিংয়ের কারণ জরিমানা থেকে উত্তরণের চেষ্টা চালায় ও বৃষ্টির কারণে দেরীতে শুরু হওয়া খেলায় যথাসাধ্য অধিক ওভার সম্পন্ন করার দিকে মনোযোগী হয়।

টি২০ খেলায় তেমন জনপ্রিয়তা পাননি। তবে, ২০০৮ সালের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়াল লীগে রাজস্থান রয়্যালসের সদস্যরূপে যুক্ত ছিলেন। শেন ওয়ার্নের নেতৃত্বাধীন দলটিতে কামরান আকমল ও সোহেল তানভীরের সাথে খেলেন। শক্তিধর দলে খেলার সুবাদে একটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। মৌসুমের অধিকাংশ সময়ই ব্যক্তিগত কারণে খেলা থেকে দূরে ছিলেন। এ মৌসুমেই কেবলমাত্র পাকিস্তানী খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ ছিল।

২০০৮ সালের শেষদিকে শেফিল্ড শীল্ডে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রথম-শ্রেণীর অভিষেক খেলাতেই দলটির পক্ষে ১১৮ রান তুলে। সব মিলিয়ে অ্যাডিলেডভিত্তিক দলটির পক্ষে দুইটি প্রথম-শ্রেণীর খেলা ও তিনটি একদিনের খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।

উজ্জ্বীবনী শক্তি নিয়ে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০০৫ সালে দায়িত্ব লাভের পর প্রথমবারের মতো দলকে নিয়ে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে যান। কিন্তু, দল শোচনীয় ফলাফল করে। তবে, পরের বছর নিজ দেশে সফরকারী ভারতের বিপক্ষে করাচী টেস্টে দলের বিজয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেপ্টেম্বরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রতিযোগিতায় ছদ্ম অধিনায়কত্ব করার প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। তবে, একদিন পরই দলকে নেতৃত্ব দিতে দলে ফিরে আসেন। কিন্তু, প্রথম রাউন্ডেই তাঁর দল বিদেয় নিয়েছিল। ২০০৭ সালে আরও একবার দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাব পান। তবে, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় প্রথম রাউন্ডের দলের বিদেয় নেয়া পাকিস্তান দলকে পরিচালনায় আঘাত ও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে যান।

তেমন ভালোমানের নেতৃত্ব না দেয়া সত্ত্বেও ইজাজ বাটের পরিচালনায় পিসিবি থেকে ২৭ জানুয়ারি, ২০০৯ তারিখে শোয়েব মালিকের পরিবর্তে তাঁকে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালনের আমন্ত্রণ জানানো হয়। দুই বছর এ দায়িত্বের বাইরে অবস্থান করেছিলেন। তবে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওডিআই সিরিজে দলের শোচনীয় পরাজয়ের পর নেতৃত্ব পরিবর্তনের বিষয়ে এবার তিনি এ প্রস্তাবনা লুফে নেন। নিজ দেশে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজের মাধ্যমে তাঁর মেয়াদ শুরু হয়। অধিনায়কের দায়িত্ব পালনকালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০০৯ সালের আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতায় দলকে শিরোপা এনে দেন।

২১ জুন, ২০০৯ তারিখে টি২০আই থেকে অবসর নিয়েছিলেন। লর্ডসে শ্রীলঙ্কা দলকে আট উইকেটে জয় এনে দেন। কিন্তু, এ দায়িত্ব গ্রহণে দলের জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়দের অসহযোগিতার ফলে শারজায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলার পর অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীকালে খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে দলের এ দায়িত্ব পালনে আর আগ্রহী হননি। তবে, অস্ট্রেলিয়ায় ওডিআই সিরিজে হিমশিম খাওয়া দলে মাঝামাঝি সময়ে তাঁকে পুণরায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এ পর্যায়ে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে আকস্মিক ছন্দপতন ঘটে। মার্চ, ২০১০ সালে মোহাম্মদ ইউসুফের সাথে ঝগড়ায় অংশ নেয়ার কারণে নিষিদ্ধতার কবলে পড়েন। তবে, অক্টোবর, ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার জন্যে পুণরায় তাঁকে জাতীয় দলে ফিরিয়ে আনা হয়। সিরিজে সেরা ছন্দে ছিলেন। অপরাজিত শতরানের ইনিংস খেলে দলকে ড্র এনে দেন। এরপর, ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় পাকিস্তান দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। ওডিআই ও টেস্ট দলের উভয়টিতে নিয়মিতভাবে খেলতে থাকেন।

বোলিংয়ের কারণে সুপরিচিতি লাভ না করলেও শীর্ষসারির ব্যাটসম্যানদেরকে বিদেয় করার কৃতিত্বের অধিকারী তিনি। মিডিয়াম পেস ও লেগ-স্পিন বোলিং করতেন। প্রাপ্ত নয় উইকেটের সাতটি শীর্ষসারির ব্যাটসম্যানের ছিল। তন্মধ্যে, শ্রীলঙ্কার পক্ষে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামা রঙ্গনা হেরাথ ছিলেন। এছাড়াও, টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক রান খরচের অগৌরবজনক রেকর্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। ক্রেগ ম্যাকমিলান তাঁর কাছ থেকে এক ওভারে ২৬ রান তুলে নেন। চমৎকার শট খেলায় প্রসিদ্ধি লাভ করলেও ওডিআইয়ে গড় তেমন সুবিধে ছিল না। ২৬৫টি খেলা থেকে ৩১ গড়ে রান পেয়েছেন।

২০১৬ সালে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। ১১ আগস্ট, ২০১৬ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ২১৮ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস খেলেন। তাঁর দূর্দান্ত ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে পরাজিত হলে ২-২ ব্যবধানে অমিমাংসিত অবস্থায় সিরিজটি শেষ হয়। ঐ টেস্টে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০১৭ সালে মিসবাহ-উল-হকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের সাথে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ গমন করেন। ১০ মে, ২০১৭ তারিখে রোজিওতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। পরবর্তীতে, এটি তাঁর সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। ঐ খেলার পর দলনায়ক মিসবাহ-উল-হকের সাথে তিনিও একযোগে অবসর গ্রহণ করেন। ১৮ ও ৩৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ঐ টেস্টে রোস্টন চেজের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন স্বত্ত্বেও শেষ মুহূর্তে তাঁর দল ১০১ রানে বিজয়ী হয়েছিল ও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়।

পাকিস্তানী খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও ২০১৬ সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ভারতীয় ক্রিকেটার ও ২০১৭ সালে অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। এ বছরেই তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এছাড়াও, ২০২২ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড প্রণীত পাকিস্তান ক্রিকেট হল অব ফেমে আব্দুল হাফিজ কারদারের সাথে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মে, ২০১৭ সালে অবসর গ্রহণকালীন টেস্টগুলো থেকে ১০০০৯ রান তুলেন। এছাড়াও, ওডিআইগুলো থেকে ৭২৪৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অবসর গ্রহণের পর অনেকটা আকস্মিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উত্থান ঘটা আফগানিস্তান জাতীয় দলের কোচ হবার প্রস্তাবনা পেলেও তা নাকচ করে দেন। আগস্ট, ২০২০ সালে পাকিস্তান দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে ইংল্যান্ড গমনার্থে মনোনীত হন। কোভিড-১৯ বৈশ্বিক অতিমারী চলাকালীন নিবিড় অনুশীলনের পর তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে অংশ নেয়।

Similar Posts

  • | | |

    এইচডি অ্যাকারম্যান

    ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩ তারিখে কেপ প্রভিন্সের কেপটাউনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৯০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। শীর্ষসারির প্রভাববিস্তারকারী ব্যাটসম্যান ছিলেন। বেশ প্রতিভাবান খেলোয়াড় হলেও দূর্দান্ত সূচনা করলেও নিজের…

  • |

    ডেনিস বেগবি

    ১২ ডিসেম্বর, ১৯১৪ তারিখে ট্রান্সভালের মিডেলবার্গ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে কার্যকর অফ-ব্রেক কিংবা লেগ-ব্রেক গুগলি বোলিংয়ে পারদর্শীতা প্রদর্শন করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। দ্রুতলয়ে রান সংগ্রহে বেশ তৎপরতা দেখাতেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৩৩-৩৪ মৌসুম থেকে…

  • |

    ইয়ান সিনক্লেয়ার

    ১ জুন, ১৯৩৩ তারিখে ক্যান্টারবারির র‍্যাঙ্গিওরা এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ডানহাতি অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৯৫০-এর দশকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৫৩-৫৪ মৌসুম থেকে ১৯৫৬-৫৭ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রেখেছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারির প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিন মৌসুম জুড়ে মাত্র ১৫টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ…

  • | |

    অজিঙ্কা রাহানে

    ৬ জুন, ১৯৮৮ তারিখে মহারাষ্ট্রের অশ্বি-কেডি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। দলে মূলতঃ শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী। ভারতের পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি, ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি (১.৬৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। বাবুরাও রাহানে ও সুজাত রাহানে দম্পতির সন্তান। শশাঙ্ক রাহানে…

  • |

    টম আর্মিটেজ

    ২৫ এপ্রিল, ১৮৪৮ তারিখে ইয়র্কশায়ারের শেফিল্ডের ওয়াক্লি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। ১৮৭০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৫ জুন, ১৮৭২ তারিখে কেইলি বনাম ওয়াকফিল্ডের মধ্যকার খেলার প্রথম ইনিংসে আট উইকেট ও দ্বিতীয় ইনিংসে দশ উইকেটের সবগুলো করায়ত্ত্ব করেন।…

  • |

    ইয়ান লেগাট

    ৭ জুন, ১৯৩০ তারিখে সাউথল্যান্ডের ইনভারকার্গিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের দায়িত্ব পালন করতেন। ডানহাতে ব্যাটিংকর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর মিডিয়াম বোলিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। ১৯৫০-এর দশকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। নেলসন কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ছিলেন। এ সময়ে তিনি ক্রিকেট ও রাগবি খেলায় অংশ নিতেন। পরবর্তীতে ক্রিকেট খেলাকেই বেছে নেন। অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের…