| |

রাসেল আর্নল্ড

২৫ অক্টোবর, ১৯৭৩ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে খেলতেন। বামহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সকল স্তরে অংশগ্রহণ করেছেন।

১৯৯২ সালে শ্রীলঙ্কার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্যরূপে টেস্ট খেলেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুম থেকে ২০০৬-০৭ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে নন্দেস্ক্রিপ্টস ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ৪৪ টেস্ট, ১৮০টি ওডিআই ও একটিমাত্র টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে নিজ দেশে রমিজ রাজা’র নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৯ এপ্রিল, ১৯৯৭ তারিখে কলম্বোর আরপিএসে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ২৪ ও ১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, সাকলাইন মুশতাকের অসামান্য অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

দুই বছর পর এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ খেলার জন্যে পুণরায় দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে হাসান তিলকরত্নে’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান সফরে যান। ৪ মার্চ, ১৯৯৯ তারিখে লাহোরে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের তৃতীয় খেলায় অংশ নেন। অসাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ১২৩ ও ৫৬* রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ওয়াজাহাতুল্লাহ ওয়াস্তি’র জোড়া শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও শ্রেয়তর রান-রেটে শ্রীলঙ্কান দল চূড়ান্ত খেলায় ভারতের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পায়।

কিন্তু, মারভান আতাপাত্তু’র সাথে সনথ জয়সুরিয়া’র জুটি থিতু অবস্থায় চলে আসে। ১৯৯৯-২০০০ মৌসুমে সনথ জয়সুরিয়া’র নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে জিম্বাবুয়ে সফরে যান। ৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৯ তারিখে হারারেতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১০৪* ও ১৪* সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয় ও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। ঐ টেস্টে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।

২০০০ সালের শেষদিকে এ অবস্থানে রান খরায় ভুগতে থাকেন। ফলশ্রুতিতে, মাঝারিসারিতে নিচের দিকে ব্যাটিংয়ে নামেন। কিন্তু, সনথ জয়সুরিয়া’র খেলার মান নীচের দিকে নামতে থাকলে ও আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে পড়লে ২০০২ সালে পুণরায় শীর্ষসারির ব্যাটসম্যানের সুযোগ পান। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ৬২ ও ১০৯ রানের বীরোচিত ইনিংস খেলেন। তবে, পরবর্তী সিরিজগুলোয় ব্যর্থতার পরিচয় দিলে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর বেশ দীর্ঘসময় মাঠের বাইরে থাকতে হয়।

২০০০-০১ মৌসুমে সনাথ জয়সুরিয়া’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ২ জানুয়ারি, ২০০১ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে এল ক্লুজনারকে বিদেয় ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ২/৮০। খেলায় তিনি ৩/৭৬ লাভ করেন। এছাড়াও, ০ ও ২৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। প্রতিপক্ষীয় অধিনায়ক শন পোলকের অসাধারণ বোলিং শৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ইনিংস ও ২২৯ রানে পরাজয়বরণ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে।

নিজ দেশে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার জন্যে দলে অন্তর্ভুক্ত হন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজের সর্বশেষ ওডিআইয়ে ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন। তাসত্ত্বেও জুলাই, ২০০৪ সালে ওডিআই ও টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েন। অশান্ত ডিমেলের নেতৃত্বাধীন সাত-সদস্যবিশিষ্ট দল নির্বাচকমণ্ডলী প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের সন্ধানে নামে ও তাঁর ভবিষ্যৎ ফিকে হয়ে আসে। কিন্তু, কঠোর অনুশীলন ও ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাপক হারে রান সংগ্রহের স্বীকৃতিস্বরূপ দল নির্বাচকমণ্ডলীর সুনজরে থাকেন। ডিসেম্বর, ২০০৪ সালে নিউজিল্যান্ড গমনার্থে দলের সদস্য হন।

২০০৪ সালে মারভান আতাপাত্তু’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ১ জুলাই, ২০০৪ তারিখে ডারউইনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৬ ও ১১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখেন। তবে, গ্লেন ম্যাকগ্রা’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ১৪৯ রানে জয়লাভ করলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

তিলকরত্নে দিলশানের ন্যায় তরুণদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হন। এরফলে তাঁকে স্থানচ্যুত হতে হয়। শুরুতে টেস্ট দলে স্থান হারান। ২০০৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে দূর্বলমানের খেলা প্রদর্শন করলেও অস্ট্রেলিয়ায় নিজেকে কিছুটা মেলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ থাকায় বড় ধরনের প্রতিযোগিতাগুলোয় গণনায় ছিলেন। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলের সদস্য হন। বিশ্বকাপ শেষে খেলার জগৎ থেকে অবসর নেন। অনুমোদনহীন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে যুক্ত হন। চেন্নাই সুপারস্টার্স ও আইসিএল বিশ্ব একাদশের পক্ষে খেলেন। সেপ্টেম্বর, ২০০৮ সালে তাঁকেসহ অপর চার শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

এরফলে, নিজ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে পুণরায় খেলার সুযোগ লাভ করেন। এছাড়াও, বেতার ধারাভাষ্যকর্মে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। ৭ এপ্রিল, ২০১৮ তারিখে লঙ্কান প্রিমিয়ার লীগের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন।

সীমিত-ওভারের ক্রিকেটে পরিস্থিতির কারণে ছয় নম্বর অবস্থানের উপযোগী করে নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। দলীয় সঙ্গীদের কাছে নিঃস্বার্থবান ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। জয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকালীন অত্যন্ত স্থির লয়ে ও ঠাণ্ডা মাথায় চাপ মোকাবেলায় যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়াও, মাঠে অবস্থান করে বিশ্বস্ততার সাথে নিজের হাতগুলোর সদ্ব্যবহার করতেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে কার্যকর অফ-ব্রেক বোলিংয়ে সক্ষমতা দেখিয়েছেন। দীর্ঘদেহী, লালিত্যহীন বামহাতি গড়ন এবং শান্ত ও ধৈর্য্যশীলতার মূর্ত প্রতীক তিনি। টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুতে ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমেছেন। কিন্তু তেমন সুবিধে করতে পারেননি।

Similar Posts

  • | | |

    আলভিন কালীচরণ

    ২১ মার্চ, ১৯৪৯ তারিখে ব্রিটিশ গায়ানার পোর্ট মোর‍্যান্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছেন। বামহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ইন্দো-গায়ানীয় বংশোদ্ভূত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যান। টেস্ট ক্রিকেটে যে ছোটখাটো গড়নের অধিকারীরাও সুন্দর খেলা উপহার দিতে পারেন তা ইতিবাচক প্রমাণ করে…

  • | |

    কিথ থমসন

    ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪১ তারিখে ক্যান্টারবারির মেথভেন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও আম্পায়ার ছিলেন। মূলতঃ মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে মনোনিবেশ ঘটাতেন। এছাড়াও, ডানহাতে বোলিং করতে পারতেন। ১৯৬০-এর দশকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ড দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেট ও হকি খেলায় প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৬১ সালে ল্যাঙ্কাস্টার পার্কে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে প্রথমবারের মতো হকি…

  • | |

    আর্নি হেইস

    ৬ নভেম্বর, ১৮৭৬ তারিখে লন্ডনের পেকহাম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও কোচ ছিলেন। দলে মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে অগ্রসর হতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। স্লিপ অঞ্চলে দূর্দান্ত ফিল্ডিং করতেন। ঘরোয়া পর্যায়ের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে লিচেস্টারশায়ার ও সারে দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, লন্ডন কাউন্টির পক্ষে খেলেছেন। নিজের দিনগুলোয়…

  • | |

    ক্লাইভ এক্সটিন

    ২ ডিসেম্বর, ১৯৬৬ তারিখে ট্রান্সভালের জোহানেসবার্গে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিং করতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে গটেং ও নর্দার্ন ট্রান্সভালের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুম থেকে ২০০৩-০৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী…

  • | |

    ফ্রাঙ্ক ওরেল

    ১ আগস্ট, ১৯২৪ তারিখে বার্বাডোসের ব্যাংক হল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও সাংবাদিক ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম কিংবা বামহাতে স্লো বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঝারিসারিতে তিনজন অসাধারণ ব্যাটসম্যানের অন্যতম ছিলেন। যেখানে ক্লাইড ওয়ালকট ও এভারটন উইকস শক্তিপ্রয়োগে খেলতেন;…

  • | | |

    শন পোলক

    ১৬ জুলাই, ১৯৭৩ তারিখে কেপ প্রভিন্সের পোর্ট এলিজাবেথে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সকল স্তরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি (১.৮৮ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ক্রমাগত সফলতা…