১১ মার্চ, ১৯৮৫ তারিখে মোরাতুয়ায় জন্মগ্রহণকারী পেশাদার ক্রিকেটার। দলে মূলতঃ বোলার হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিন ধরনের ক্রিকেটের সবকটিতেই শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
২০০৯ সালে তাঁকে পরবর্তী ‘মুত্তিয়া মুরালিধরন’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল। ডান হাতে অফ-স্পিন ও লেগ-স্পিন উভয়টিতেই পারদর্শী ছিলেন। প্রায়শঃই ব্যাটসম্যানদেরকে তাঁর বল মোকাবেলা করা বেশ দুরূহ হয়ে পড়তো। এছাড়াও, নিচেরসারির ব্যাটসম্যান হিসেবেও নিজের গুরুত্বতা তুলে ধরেছেন। নিজ নামের পার্শ্বে একটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস লিখিয়েছেন।
২০০০ সালে বিদ্যালয়ের অনূর্ধ্ব-১৫ দলের পক্ষে খেলেন। ২০০১ ও ২০০২ সালে বড় ধরনের খেলায় অংশ নিয়ে উভয় বছরেই সেরা বোলারের পুরস্কার লাভ করেন। আর্মি অনূর্ধ্ব-২৩ দলের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলায় দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে, শ্রীলঙ্কা আর্টিলারিতে গানার হিসেবে শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনীতে নিয়মিতভাবে কাজ করার প্রস্তাবনা পান। আর্মির পক্ষে ২৩টি সীমিত-ওভারের খেলায় অংশ নিয়ে ৩৮ উইকেট এবং ৫৯টি দুই/তিনদিনের খেলা থেকে ২৪৪ উইকেট দখল করেন।
৫ ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার) উচ্চতার অধিকারী। ২০০৬-০৭ মৌসুম থেকে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে কম্বাইন্ড প্রভিন্সেস, শ্রীলঙ্কা আর্মি ও ওয়েয়াম্বা এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটস, কন্দারাতা ম্যারুন্স, কলকাতা নাইট রাইডার্স, লাহোর কালান্দার্স, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও পুনে ওয়ারিয়র্সের পক্ষে খেলেছেন। ১৭ নভেম্বর, ২০০৬ তারিখে বিলিসারায় অনুষ্ঠিত লঙ্কান ক্রিকেট ক্লাব বনাম শ্রীলঙ্কা আর্মির মধ্যকার খেলায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাত ঘটান।
তাঁর উত্থান পর্বটি এতোটাই বিস্ময়ের কারণ ছিল যে, ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা তাঁকে ভবিষ্যতের স্পিন বোলিংয়ের পথিকৃৎ হিসেবে মূল্যায়িত করতেন। ভিডিও বিশ্লেষক ও সুপার-স্লো-মোশন পুণঃপ্রচারের যুগে রহস্যময় স্পিনকে পুণরায় আবির্ভুত করেছেন। প্রকৃত রহস্যময় স্পিনার জ্যাক আইভারসন ও ‘আইভারসন্সের’ ধারক জন গ্লিসনের ন্যায় তিনি তাঁর আঙ্গুলের ঝাড়ায় লেগ-ব্রেক বোলিং করে ক্রিকেট বিশ্বকে বিস্মিত করে দিয়েছেন। ‘আইভারসন্সের’ নতুন নাম ‘ক্যারম বল’ নামাঙ্কিত করেন। ঐ সময়ে তাঁর প্রথম, সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ও সর্বাপেক্ষা ব্যাপক শিকারীদের তালিকায় সর্বাপেক্ষা রান সংগ্রহকারী মাঝারিসারির ব্যাটসম্যান রাহুল দ্রাবিড়, শচীন তেন্ডুলকর, ভিভিএস লক্ষ্মণ ও সৌরভ গাঙ্গুলী রয়েছেন।
২০০৮ থেকে ২০১৫ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ১৯ টেস্ট, ৮৭টি ওডিআই ও ৩৯টি টি২০আইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১০ এপ্রিল, ২০০৮ সালে পোর্ট অব স্পেনে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ক্রিস গেইলকে প্রথম শিকার করেন। খেলায় তিনি ৩/৩৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন।
তিন মাস পর প্রথমবারের মতো টেস্ট দলের সদস্য হন। ২০০৮ সালে নিজ দেশে অনিল কুম্বলে’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৩ জুলাই, ২০০৮ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে উদ্বোধনী টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। টেস্ট অভিষেক পর্বটি দূর্দান্ত করেছেন। ঐ টেস্টে আট উইকেট দখল করেন। উভয় ইনিংসে চারটি করে উইকেট পেয়েছিলেন। প্রতিপক্ষের মাঝারিসারিতে ধ্বস নামান। তন্মধ্যে, রাহুল দ্রাবিড় ও ভিভিএস লক্ষ্মণকে দুইবার বিদেয় করেছিলেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিক দল ইনিংস ও ২৩৯ রানের ব্যবধানে বিজয়ী হলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
পরের খেলায় ২০৯ রান খরচায় ১০ উইকেট দখল করেন। ঐ সিরিজে ২৬ উইকেট পেয়েছিলেন। তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া অভিষেক সিরিজে অ্যালেক বেডসারের গড়া রেকর্ডের চেয়েও দুই উইকেট অধিক পেয়েছেন।
অজন্তা মেন্ডিস ও মুত্তিয়া মুরালিধরন টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের তৃতীয় জোড়া হিসেবে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া ঐ সিরিজে উভয়ে ২০ বা তদূর্ধ্ব উইকেট উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন। তাঁরা এ দূর্লভ কৃতিত্বের অধিকারী হন। দুজনে মিলে সর্বমোট ৪৭ উইকেট পেয়েছিলেন। মেন্ডিস ২৬টি ও মুরালিধরন ২১টি উইকেট পান। ঐ সিরিজে শ্রীলঙ্কা দল বিজয়ী হয়েছিল। সিরিজ শেষে তাঁকে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের ভবিষ্যতের ‘মুত্তিয়া মুরালিধরন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হতে থাকে। তবে, এরপর থেকেই দলে স্থান লাভ নিশ্চিতকরণে তাঁকে বেশ হিমশিম খেতে হয়।
২০০৮-০৯ মৌসুমে নিজ দেশে অনিল কুম্বলে’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণ ক্রীড়াশৈলীর স্বাক্ষর রাখেন। ৮ আগস্ট, ২০০৮ তারিখে কলম্বোর পিএসএসে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ৫/৫৬ ও ৩/৮১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, কুমার সাঙ্গাকারা’র অসাধারণ ব্যাটিংয়ের সুবাদে সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। এ সিরিজে ২৬ উইকেট দখল করে তিনি ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
অক্টোবর, ২০০৮ সালে টি২০ কানাডা প্রতিযোগিতায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতর সংস্করণে অভিষেক ঘটে। জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ৪/১৫ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। কানাডা, জিম্বাবুয়ে ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বমোট ৫৫ রান খরচ করে ১১ উইকেট দখল করেন। ঐ প্রতিযোগিতায় ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।
২০০৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্ব টি২০ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের মর্যাদা পান। এছাড়াও, প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্টের অন্যতম দাবীদার ছিলেন। ২০০৯ সালের এশিয়া কাপে স্বীয় আবির্ভাবের কথা ঘোষণা করেন। ঐ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত খেলায় ভারতের বিপক্ষে ৬/১৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে শ্রীলঙ্কাকে তাদের চতুর্থ শিরোপা বিজয়ে সহায়তা করেন। ঐ সিরিজে সবমিলিয়ে ১৭ উইকেট দখল করে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার লাভ করেন।
২০১০-১১ মৌসুমে নিজ দেশে ড্যারেন স্যামি’র নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ১৫ নভেম্বর, ২০১০ তারিখে গলেতে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। ৬/১৬৮ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে ৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, ক্রিস গেইলের অসাধারণ ত্রি-শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
শুরুরদিকে এ সফলতা প্রাপ্তিতে অফ-ব্রেক, টপ স্পিন, ক্যারম বল, গুগলির বৈচিত্র্যময় ব্যবহারের অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়ে বেশ কয়েকবছর ধরে ব্যাটসম্যানদের উপর প্রভূত্ব ঘটিয়েছেন। এগুলোর বাইরে কেবলমাত্র নিখুঁততার অভাব ও মুত্তিয়া মুরালিধরনের সহযোগীদের কারণে এগুতে পারেননি। ক্রিকেট বিশ্বে নজর কাড়লেও শুরুরদিকের প্রতিশ্রুতিশীলতা আর ধরে রাখতে পারেননি। এক পর্যায়ে মুত্তিয়া মুরালিধরন অবসর গ্রহণ করলে নিজেকে তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের উপযোগী করে তুলতে পারেননি।
তবে, ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতর সংস্করণে কার্যকর স্পিনার হিসেবে নিজেকে চলমান রাখতে থাকেন। এ স্তরের ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানের উইকেটে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে মানিয়ে নেয়ার কোন উপায় নেই। টি২০আইয়ে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়ার রেকর্ডের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২ তারিখে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি২০আইয়ে ৬/৮ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছিলেন। এছাড়াও, একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টি২০আইয়ে দুইবার ছয়-উইকেট লাভের কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। তাসত্ত্বেও, দীর্ঘ সংস্করণের খেলায় নিজেকে শ্রীলঙ্কা দলের নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন।
২০১৪ সালে নিজ দেশে হাশিম আমলা’র নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের মুখোমুখি হন। ২৪ জুলাই, ২০১৪ তারিখে কলম্বোর এসএসসিতে অনুষ্ঠিত সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ০/৬৮ ও ০/১৭ বোলিং বিশ্লেষণ গড়েন। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। তবে, মাহেলা জয়াবর্ধনে’র অসাধারণ শতকের কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালেও সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়কালে বেশ কয়েকবার পিঠের আঘাতের কবলে পড়েন। এ সময়ে তিনি বোলিং করতে পারতেন না। আরোগ্যলাভের পর পাকিস্তান সুপার লীগে লাহোর কালান্দার্সের পক্ষে খেলেন। ইন্টার-প্রভিন্সিয়াল টুর্নামেন্টের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও ২০০৭ সাল থেকে ইন্টার-প্রভিন্সিয়াল টি২০ প্রতিযোগিতায় ওয়েয়াম্বারা প্রতিনিধিত্ব করেন। তন্মধ্যে, ২০০৮ সালের প্রভিন্সিয়াল টুর্নামেন্টে নয় খেলা থেকে ৬৮ উইকেট তুলে নিয়ে সফলতম বোলারের মর্যাদা লাভ করেন। এছাড়াও, ঘরোয়া পর্যায়ের যে-কোন স্তরের ক্রিকেটে নতুন রেকর্ড গড়েন। ২০১১ সালে ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেটের পক্ষে খেলেছেন। ২০০৮-০৯ মৌসুমে কোলকাতা নাইট রাইডার্সের পক্ষে খেলার পর পুনে ওয়ারিয়র্সে চলে যান। ২০১৩ সালের আইপিএলে $৭২৫,০০০ মার্কিন ডলারে তাঁর দর নির্ধারিত হয়।
২০০৮ সালে আইসিসি বর্ষসেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হিসেবে মনোনীত হন। সবমিলিয়ে টেস্টগুলো থেকে ৭০ উইকেট পেয়েছিলেন। ব্যক্তিগত সেরা ৬/৯৯ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েছেন। তাঁর ওডিআই খেলোয়াড়ী জীবন অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক ছিল। ২০-এর অধিক গড়ে ১৫২ উইকেট লাভ করেন। তন্মধ্যে, ব্যক্তিগত ৬/১৩ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন। মাত্র ১৯ খেলায় অংশ নিয়ে দ্রুততম ৫০ উইকেট লাভের রেকর্ড গড়েন। ২৮ আগস্ট, ২০১৯ তারিখে সকল স্তরের ক্রিকেটকে বিদেয় জানান।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। যোশিনী মেন্ডিস নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন।
