২২ এপ্রিল, ১৯৫৯ তারিখে ক্যান্ডিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও রেফারি। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন ও দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ক্যান্ডিভিত্তিক ট্রিনিটি কলেজে অধ্যয়ন করেছেন। এরপর, কলম্বোভিত্তিক রয়্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। এখানে অবস্থানকালেই ক্রিকেটের সাথে জড়িয়ে পরেন। পড়াশুনোর পাশাপাশি প্রথম একাদশের নেতৃত্বে ছিলেন। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি চমৎকার স্পিন বোলিং করতে পারতেন। এক পর্যায়ে বোলিং ছেড়ে দেন ও ব্যাটিংয়ের দিকে মনোনিবেশ ঘটান। বিদ্যালয় দলকে নেতৃত্ব দেন। খ্যাতিলাভ করা শততম ‘ব্লুয়ের লড়াইয়ে’ মাউন্ট লাভিনিয়াভিত্তিক সেন্ট টমাস কলেজের বিপক্ষে খেলে ক্রিকেটের অন্যতম স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন।

১৯৭৯ থেকে ১৯৮৮-৮৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে নন্দেস্ক্রিপ্টস ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পড়াশুনো শেষ করার পর এ ক্লাবে অংশ নেন। এখানে প্রচুর রান তুলেন।

১৯৭৯ থেকে ১৯৮৮ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ২১ টেস্ট ও ৬৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় আসরে অংশ নিয়েছিলেন। ১৬ জুন, ১৯৭৯ তারিখে ম্যানচেস্টারে ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। দলের অপ্রত্যাশিত বিজয়ে দারুণ ভূমিকা রাখেন।

১৯৮১-৮২ মৌসুমে নিজ দেশে কিথ ফ্লেচারের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। একই সফরের ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ তারিখে সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। কলম্বোর পিএসএসে অন্য সকলের সাথে তাঁর টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এরফলে, শ্রীলঙ্কার টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করেন। তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলেছিলেন। ২৯/৩ থাকা অবস্থায় শীর্ষসারিতে ভাঙ্গন সৃষ্টি হলেও প্রথম ইনিংসে ৬৫ রানের চমৎকার অর্ধ-শতরান করে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। কিন্তু, দূর্বলমানের ব্যাটিংয়ের কারণে ‘অফি’ জন এম্বুরির স্পিনে কুপোকাত হয় শ্রীলঙ্কা দল। অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন তিনি। ঐ টেস্টে ইয়ান বোথাম, বব উইলিস ও পল অ্যালটের পেস বোলিং মোকাবেলার পাশাপাশি ডেরেক আন্ডারউড ও জন এম্বুরি’র বোলিং চমৎকার পায়ের কারুকাজে ও সময়জ্ঞানে সামলিয়েছিলেন। তবে, জন এম্বুরি’র অসাধারণ বোলিংয়ের কল্যাণে সফরকারীরা ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয়।

তবে, নিজের গুরুত্বতা তুলে ধরার জন্যে ১৯৮৩-৮৪ মৌসুমে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের জন্যে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। রিচার্ড হ্যাডলিসমৃদ্ধ বোলারদের আক্রমণ রুখে দিয়ে ৬০ ঊর্ধ্ব গড়ে রান সংগ্রহ করেছিলেন। ৬০.৫০ গড়ে ২৪২ রান তুলেন।

একই মৌসুমে নিজ দেশে ফিরতি সফরে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৪ মার্চ, ১৯৮৪ তারিখে কলম্বোর সিসিসিতে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টে দলের সংগ্রহ ১৭২/৫ ও ব্যক্তিগত ৮৭ রানে থাকাকালীন রিচার্ড হ্যাডলি’র বলে মাথায় আঘাত পেলে মাঠ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে, দলের সংগ্রহ ২৪৯/৯ থাকাকালে পুণরায় মাঠে ফিরে আসেন। খেলায় তিনি ৮৯* ও ৩৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ইনিংস ও ৬১ রানে পরাজিত করে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।

১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে স্মরণীয় টেস্ট সিরিজে অংশ নেন। কলম্বোর এসএসসিতে সিরিজের প্রথম টেস্টে ১০৩ রানের দূর্দান্ত শতক হাঁকান। পরবর্তীতে এটিই তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে একমাত্র শতরানের ইনিংসে পরিণত হয়। এরপর, ৬ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৫ তারিখে পাইকিয়াসোথি সারাভানামুত্তু স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্ট জয়ে অনবদ্য ভূমিকা রাখেন। দলের ১৪৯ রানের বিজয়ে তিনি প্রথম ইনিংসে ৫৪ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে নেয়ার দরকার পড়েনি।

এ সফলতার পর তাঁকে শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। দুই টেস্ট ও ১৩ ওডিআইয়ে দলকে পরিচালনা করেন। তবে, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলোয়াড়ী জীবনের শেষ দুই টেস্টে নেতৃত্ব দেন। পার্থ ও লর্ডসে অনুষ্ঠিত ঐ টেস্টগুলোর উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর দল পরাজয়বরণ করেছিল।

১৯৮৮ সালে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ইংল্যান্ড সফর যান। ২৫ আগস্ট, ১৯৮৮ তারিখে লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ৩ ও ২০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, রবি রত্নায়েকের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন স্বত্ত্বেও স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়ে দলকে পরিচালনা করেছিলেন।

সবমিলিয়ে শ্রীলঙ্কার পক্ষে একটিমাত্র জয়ের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। একটি শতক ও সাতটি অর্ধ-শতক সহযোগে ১০২৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। নিজ দেশে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করে ৪২.৭৬ গড়ে রান তুলেন। তবে, বিদেশের মাটিতে মাত্র ২১.৫০ গড়ে রান পেয়েছিলেন। টেস্টে সফল হলেও ওডিআইয়ে তেমন সুবিধে করতে পারেননি। ২০-এর কম গড়ে তিনটি অর্ধ-শতক সহযোগে ৯৫০ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

দর্শনীয় শীর্ষসারির ডানহাতি ব্যাটসম্যান। দৃষ্টিনন্দন স্ট্রোকপ্লে মারতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। আলসে ভঙ্গীমায় মার্জিতভাব নিয়ে ফাঁকা স্থানে বল ফেলে রান সংগ্রহে তৎপর হতেন। বলের উপর পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টি রেখে অগ্রসর হতেন। তবে, সোজাসুজি ব্যাটিং কিংবা রিভার্স সুইপের ন্যায় দৃষ্টিকটূ ব্যাটিংয়ে অগ্রসর হতেন না। শ্রীলঙ্কার টেস্ট ক্রিকেট অঙ্গনে অন্তর্ভুক্তির পর থেকে কয়েক বছর দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। শ্রীলঙ্কার প্রথম ১৮ টেস্টে একাধারে অংশ নেন। তবে, পরিসংখ্যানগতভাবে নিজের প্রতিভাকে তেমন বিকশিত করতে পারেননি। টেস্ট পর্যায়ে তেমন বড় ধরনের রান তুলতে পারেননি। ২৯ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে পূজনীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট কর্তৃক ম্যাচ রেফারি হিসেবে মনোনয়ন পান। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল কর্তৃক নিযুক্তি লাভ করেন। ১৯৯৩ সালে আইসিসি ম্যাচ রেফারি ও ২০০১ সালে প্রথম মূখ্য রেফারি হিসেবে মনোনীত হন। ছয় শতাধিক আন্তর্জাতিক খেলায় ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন।

Similar Posts