৩১ মে, ১৯৬৬ তারিখে কলম্বোয় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ম্যাচ রেফারি। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। শ্রীলঙ্কার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৮৪-৮৫ মৌসুম থেকে ১৯৯৮-৯৯ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে ব্লুমফিল্ড ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিক ক্লাব এবং কলম্বো ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
১৬ বছর বয়সে ১৯৮৩ সালের শুরুতে শ্রীলঙ্কার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দলটির পক্ষে খেলার পর অনূর্ধ্ব-২৩ দলে যুক্ত হন। পরিসংখ্যানগতভাবে তেমন সুবিধে করতে না পারলেও দল নির্বাচকমণ্ডলী তাঁর উপর আস্থা রেখেছিলেন। ১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ড ‘বি’ দলের বিপক্ষে খেলার পর তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের মোড় ঘুরে যায়। শ্রীলঙ্কার সদস্যরূপে তিনি একটি শতক ও দুইটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন। ফলশ্রুতিতে, জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্তির পথ সুগম হয়।
১৯৮৬ থেকে ১৯৯৯ সময়কালে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বমোট ৫২ টেস্ট ও ২১৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে নিজ দেশে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২ মার্চ, ১৯৮৬ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। এর কয়েকদিন পর একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে টেস্টে প্রথম খেলেন। একই সফরের ১৪ মার্চ, ১৯৮৬ তারিখে কলম্বোর সিসিসিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। কোশলা কুরুপ্পারাচ্চি ও ডন অনুরাসিরি’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। তবে, উভয় ইনিংসেই ব্যর্থ হয়েছিলেন। ১০ ও ৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেকে উপযোগী করে তুলতে কিছুটা সময় নেন। ১৯৮৭ সালের শুরুতে ভারতের বিপক্ষে প্রথম বড় ধরনের সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমে ৯৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮৯ রানের ইনিংস খেলে নিজেকে শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেন। হোবার্টে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজস্ব প্রথম অর্ধ-শতক হাঁকান।
১৯৯২-৯৩ মৌসুমে নিজ দেশে মার্টিন ক্রো’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৭ নভেম্বর, ১৯৯২ তারিখে মোরাতুয়ায় অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের সাথে নিজেকে জড়ান। প্রথম ইনিংসে ৮৬ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ রান অতিক্রম করেন। এছাড়াও, নিজস্ব প্রথম টেস্ট শতক ছিল। একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। পাশাপাশি, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ শতক সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ তারিখে কলম্বোয় অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। ১০৯ ও ২৯ রান সংগ্রহ করেন। তন্মধ্যে, উদ্বোধনী জুটিতে চণ্ডীকা হাথুরুসিংহা’র (২৭) সাথে ১০২ রানের জুটি গড়েন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, হাসান তিলকরত্নে’র অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৯ উইকেটে জয় পেলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার শিরোপা বিজয়ী শ্রীলঙ্কা দলের প্রধান সদস্য ছিলেন ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অরবিন্দ ডি সিলভা’র যাদুকরী ইনিংসে যোগ্য সঙ্গ দেন ও ৫৮ রান তুলে রিটায়ার হার্ট হন। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় দলের বিপর্যয়কর ফলাফল হয়। প্রথম পর্বেই পূর্বতন শিরোপাধারী দলকে বিদেয় নিতে হয়। খুব একটা খারাপ সংগ্রহ না করা সত্ত্বেও তরুণ, উদীয়মান খেলোয়াড়দের কাছে স্থানচ্যূত হতে হয়। কিন্তু, তাঁর চেয়েও বয়োজ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়দের পুণরায় দলে অন্তর্ভুক্তিতে মনক্ষুণ্ন হন। অতঃপর ভগ্ন হৃদয়ে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।
১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড সফরে যান। ১৪ মার্চ, ১৯৯৭ তারিখে হ্যামিল্টনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সাথে নিজেকে জড়ান। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫১ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ৪৫ ও ৬৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, চারটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি’র অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ১২০ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দুইটি উল্লেখযোগ্য ইনিংস উপহার দিয়েছেন। ২ থেকে ৬ আগস্ট, ১৯৯৭ তারিখে কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে সনথ জয়সুরিয়া’র সাথে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৫৭৬ রান তুলে বিশ্বরেকর্ড গড়ে স্মরণীয় হয়ে আছেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এ সংগ্রহটি প্রথমবারের মতো পাঁচ শতাধিক রানের মাইলফলক ছিল। দুই দিনের অল্প বেশী সময় ক্রিজে অবস্থান করে তাঁরা এ কৃতিত্বের অধিকারী হন। পরবর্তীতে, অবশ্য ২০০৬ সালে কুমার সাঙ্গাকারা ও মাহেলা জয়াবর্ধনে এ রেকর্ডটি নিজেদের করে নেন। তিনি করেছিলেন ২২৫ রান ও সনথ জয়সুরিয়া করেন ধীরলয়ে ৩৪০ রান। অনিল কুম্বলে’র বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়লে দলীয় ৬১৫ রানে এ জুটি ভেঙ্গে যায়। এ সংগ্রহটিই পরবর্তীকালে তাঁর ব্যক্তিগত সেরা সংগ্রহে পরিণত হয়।
দর্শনীয়, ডানহাতি ও আগ্রাসী ব্যাটসম্যান এবং দূর্দান্ত ফিল্ডার ছিলেন। ১৯৯০-এর দশকে শ্রীলঙ্কা দলের অন্যতম চালিকাশক্তি ছিলেন। ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ১৯ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ৯ ও ১১ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, একটি রান-আউটের সাথে নিজেকে জড়ান। শন পোলকের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা ৭০ রানে পরাজিত হলে দুই-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ২৭ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ৫০ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, অ্যালান ডোনাল্ডের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে জয় পেলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়। টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২২৫ রান তুললেও টেস্ট ও ওডিআই – উভয় স্তরের ক্রিকেটেই সাধারণমানের রান সংগ্রহ করেছিলেন। ২৯ ঊর্ধ্ব গড়ে রান পেয়েছেন। কিছুকাল পর ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ শীর্ষক আত্মজীবনীতে তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনের উত্থান-পতনের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। এছাড়াও, সনথ জয়সুরিয়াকে গ্লেন ম্যাকগ্রা’র ‘ব্ল্যাক মাংকি’ হিসেবে ডাকার বিষয় ব্যক্ত করেন। তবে, বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার এ অভিযোগটি অস্বীকার করেন। অমায়িক চরিত্রের অধিকারী ও সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান হিসেবে মে, ২০০৪ সালে রঞ্জন মাদুগালে’র পদাঙ্ক অনুসরণ করে আইসিসি ম্যাচ রেফারি হিসেবে নিযুক্তি পান ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট ছিলেন। সব মিলিয়ে ৬১ টেস্ট, ২২২টি ওডিআই ও ৩৫টি টি২০আই খেলা পরিচালনা করেছিলেন। ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখে আইসিসি ম্যাচ রেফারির নির্বাচিত তালিকা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।
