১৩ অক্টোবর, ১৯৬৪ তারিখে ট্রান্সভালের ভারিনিগিং এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করেছেন। ১৯৯০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
আফ্রিকানারভাষী কৃষক পরিবারে তাঁর জন্ম হলেও রাগবি খেলোয়াড়দেরকে আদর্শনিষ্ঠ করে শৈশবকাল অতিবাহিত করেন। পল্লী অঞ্চলে বড় হন। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ক্লাইভ রাইস, গ্রায়েম পোলক ও গার্থ লি রুক্সের নাম জানতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম রহস্যময় বিনোদনকারী হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। সরকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে নেলসন মান্ডেলা’র নাম প্রচারের সীমাবদ্ধতা থাকায় কৈশোরকাল পর্যন্ত তাঁর নাম জানতেন না। ২০-এর বয়সে এসে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট পদবীধারী হন। এক পর্যায়ে উত্তপ্ত চুন চোখে পড়লে প্রায় এক সপ্তাহ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। সাবলীল ভঙ্গীমায় ইংরেজী বলতে পারেন না; তবে, পড়তে ও লিখতে পারেন।
আফ্রিকানারভাষী সমর্থকদের কাছে ‘ভিনিগ ফ্যানি’ ডাকনামে পরিচিতি লাভ করেন। বলে সুইং আনয়ণে বিরাট পরিচিতি পেয়েছিলেন। আউট-সুইঙ্গার ও অফ-কাটারে অনেক ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলতেন। চাতুর্য্যপূর্ণ বোলিংশৈলীতে শচীন তেন্ডুলকরের উত্তরণে বিরূপ প্রভাব ফেলেছিলেন। বিনোদনধর্মী ক্রিকেট খেলা উপহার দেয়ার পাশাপাশি বিদ্বান ও সৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে নর্দার্ন ট্রান্সভাল ও ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুম থেকে ১৯৯৭-৯৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন।
১৯৯২ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে সর্বমোট ১৮ টেস্ট ও ৮৩টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ৭ ডিসেম্বর, ১৯৯২ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সফররত ভারতের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরূপে ঐ খেলায় তাঁর দল জয়লাভ করে। খেলায় তিনি ৭-০-২৪-০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান।
এর এক বছর পর ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে কেপলার ওয়েসেলসের নেতৃত্বাধীন স্প্রিংবকের সাথে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। গ্যারি কার্স্টেনের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি শেন ওয়ার্নকে শূন্য রানে এলবিডব্লিউতে বিদেয় করে ১/৮৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। আলোকস্বল্পতা ও বৃষ্টিবিঘ্নিত খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে নিজ দেশে কেন রাদারফোর্ডের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৪ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। খেলায় তিনি ৫/৬৪ ও ৩/৫৬ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ডেভিড রিচার্ডসনের সাথে দশম উইকেটে ৪৪ রানের জুটি গড়েন। খেলার দ্বিতীয় দিন একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ২৮ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। তাঁর চমৎকার অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৮ উইকেটে জয় পেলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে সমতা আনতে সক্ষম হয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
একই সফরের ২ জানুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ডিজে মারের প্রথম উইকেট লাভ করে টেস্টে ৫০ উইকেট লাভের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ১/৯০ ও ৫/৬১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ডেভিড রিচার্ডসনের অসাধারণ শতকের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৭ উইকেটে জয় পেলে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
একই মৌসুমে নিজ দেশে সেলিম মালিকের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ১৯ জানুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের একমাত্র টেস্টে সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেন। দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনে অগ্রসর হন। ৬/৮১ ও ৪/২৭ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, ব্যাট হাতে নিয়ে ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৩০ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৬৬* রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তাঁর অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩২৪ রানে জয় পায়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিজ দেশে রশীদ লতিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ৬ মার্চ, ১৯৯৮ তারিখে জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগতভাবে সফল ছিলেন। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ৬/৪৩। খেলার তৃতীয় দিন ব্যক্তিগত সেরা ৬/২৩ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। এছাড়াও, দ্বিতীয় ইনিংসে ২/২৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। পাশাপাশি, খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মার্ক বাউচারের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়াশৈলীর কল্যাণে স্বাগতিকরা ২৫৯ রানে জয় পেলে সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
টেস্টগুলো থেকে ২৪.২৭ গড়ে ৮৫ উইকেট দখল করেছেন। এছাড়াও, নিচেরসারির নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে দুইটি অর্ধ-শতক হাঁকিয়েছেন ও প্রায় ১৯ গড়ে রান তুলেছেন। ১৯৯৮ সালে ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর টেলিভিশনে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। এছাড়াও, দাতব্য কর্মের সাথে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। তাঁকে ঘিরে প্রয়াত ক্রিকেট সাংবাদিক ট্রেভর চেস্টারফিল্ড ২০০৩ সালে ‘ফ্যানি ডি ভিলিয়ার্স: পোর্ট্রেট অব এ টেস্ট বোলার’ শীর্ষক আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। বধির পুত্র সন্তানের জনক।
