৩১ মে, ১৯৯৮ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের কলকাতায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
কিশোর বয়সে ফুটবল খেলতেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। তবে, খেলায় আঘাত পেলে ক্রিকেটের দিকে মনোনিবেশ ঘটান। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুম থেকে ১৯৬৭-৬৮ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর অভিষেকে শতক হাঁকানোর কৃতিত্বের অধিকারী হন। এরপর থেকে ক্রমাগত সাফল্যের সন্ধান পেতে থাকেন।
১৯৫১ থেকে ১৯৬০ সময়কালে ভারতের পক্ষে সর্বমোট ৪৩ টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। সবগুলো টেস্টেই ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমেছিলেন। ১৯৫১-৫২ মৌসুমে নিজ দেশে নাইজেল হাওয়ার্ডের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ২ নভেম্বর, ১৯৫১ তারিখে দিল্লির কোটলায় অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলেন। নানা জোশী’র সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অভিষেক ইনিংসে মাত্র ১২ রান তুললেও তাঁর দলে ঠাঁই লাভে স্বার্থকতার পরিচয় দেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। ঐ সিরিজে দুইটি শতরানের ইনিংস খেলেন। তাঁর টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবন ব্যতিক্রমের পূর্ণাঙ্গ চিত্র ছিল। একটি সিরিজে দূর্দান্ত খেলার পর দূর্বল সিরিজ খেলেন। এরপর আবারও ভালো সিরিজের পুণরাবৃত্তি ঘটাতেন।
১৯৫২ সালের গ্রীষ্মে দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। ঐ সিরিজে তাঁর খেলার মান তথৈবাচৈ ছিল। ফ্রেড ট্রুম্যানের তোপের মুখে পড়েন। ৭ ইনিংসের পাঁচটিতেই শূন্য রানের সন্ধান পেয়েছিলেন। তন্মধ্যে, ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে জোড়া শূন্য রান করেন। সফরকারী পাকিস্তান দলের বিপক্ষে কিছুটা ভালো খেলেন। তবে, ১৯৫৩ সালে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ সফরে আবারও খেলায় ছন্দ ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হন। এ সফরের প্রত্যেক খেলাতেই তাঁর উত্তরণ ঘটতে থাকে। জ্যামাইকায় সিরিজের চূড়ান্ত খেলায় ৮৫ ও ১৫০ রান তুলেছিলেন।
১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আবারও তাঁর ছন্দপতন দিয়ে যাত্রা শুরু হয়। নিজ দেশে হ্যারি কেভের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। প্রথম টেস্টে শূন্য রান সংগ্রহ করেন। তবে, এর পরপরই নিজেকে মেলে ধরতে সচেষ্ট হন। কলকাতায় পরের টেস্টেই শতক হাঁকান।
৬ জানুয়ারি, ১৯৫৬ তারিখে মাদ্রাজে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত খেলায় নিজের সেরাটি ব্যাটিং উপহার দেন। ব্যক্তিগত সফলতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ১৫০ রান অতিক্রম করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাট হাতে নিয়ে ১৭৩ রানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান তুলেন। এ পর্যায়ে বিনু মানকড়ের সাথে উদ্বোধনী জুটিতে ৪১৩ রানের বিশ্বরেকর্ড সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করেন। ৫২ বছর তাঁদের এ কীর্তিগাঁথা টিকেছিল স্ব-মহিমায়। পরবর্তীতে গ্রায়েম স্মিথ এবং নীল ম্যাকেঞ্জি বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪১৫ রান তুলে রেকর্ডটি নিজেদের করে নেন। বীরেন্দ্র শেহবাগ ও রাহুল দ্রাবিড় মাত্র তিন রানের জন্যে তাঁদের রেকর্ড স্পর্শ করতে পারেননি। জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বীরেন্দ্র শেহবাগ বিশ্বরেকর্ড থেকে বঞ্চিত হবার বিষয়ে মন্তব্য করেন যে, ‘তাঁদের নাম তিনি কখনো শুনেননি।’ এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ইনিংস ও ১০৯ রানে পরাজিত হলে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।
এছাড়াও, ১৯৫৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার জন্যে ভারত দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। ঐ খেলায় স্বাগতিক ইংল্যান্ড দল ৮ উইকেটে জয়লাভ করেছিলেন। ১৯৬০-৬১ মৌসুমে নিজ দেশে ফজল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানী দলের মুখোমুখি হন। ২ ডিসেম্বর, ১৯৬০ তারিখে বোম্বের বিএসে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অংশ নেন। একমাত্র ইনিংসে ২৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায় ও পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
সব মিলিয়ে টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে পাঁচটি শতরানের ইনিংস খেলেছেন। টেস্টগুলোর ৭৯ ইনিংস থেকে ৩২.৫৬ গড়ে ২৪৪২ রান পেয়েছেন। সকল রানই তাঁকে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে সংগ্রহ করতে হয়েছিল। তন্মধ্যে, উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে ৩১.৭১ গড়ে তুলেছিলেন। এ গড়টি গৌতম গম্ভীর, বিনু মানকড় ও রবি শাস্ত্রী’র সংগৃহীত গড়ের কাছাকাছি।
১৮৫টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। ৩৩ শতক সহযোগে ৪২.৩৮ গড়ে ১১৮৬৮ রান তুলেছেন। ১৯৬২-৬৩ মৌসুমে রঞ্জী ট্রফির কোয়ার্টার-ফাইনালে রয় গিলক্রিস্টের বল রুখে দিয়ে দারুণ সাফল্য পান। ইডেন গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় জোড়া শতক হাঁকিয়ে সর্বাধিক সাড়া জাগান।
ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের পর প্রশাসনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। জাতীয় দল নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপের শিরোপা বিজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য নির্বাচনে অংশ নেন। মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন, অজয় জাদেজা ও অন্যান্যদেরকে দল থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ২০০০ সালে কলকাতার শেরিফ হিসেবে মনোনীত হন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। তাঁর সন্তান প্রণব রায় ও ভ্রাতৃষ্পুত্র অম্বর রায় ভারতের পক্ষে টেস্টে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০১ তারিখে হৃদযন্ত্রক্রীয়ায় আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় ৭২ বছর ২৪৯ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। মৃত্যু পরবর্তীকালে ২৮ এপ্রিল, ২০১৮ তারিখে অংশুমান গায়কোয়াড়ের সাথে তাঁকে বিসিসিআই কর্তৃক সিকে নায়ড়ু আজীবন সম্মাননা প্রদানের জন্যে মনোনীত করা হয়।
