| | | |

মাইক গ্যাটিং

৬ জুন, ১৯৫৭ তারিখে মিডলসেক্সের কিংসবারি এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার, কোচ ও ধারাভাষ্যকার। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখে গেছেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী তিনি। ইংল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।

‘গ্যাট’ ডাকনামে পরিচিতি পান। ইংল্যান্ডের তারকা খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান। দ্রুত পদচালনায় অগ্রসর হওয়াসহ স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে বেশ আগুয়ান ছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে মিডলসেক্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন।

১৯৭৭ থেকে ১৯৯৫ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে ৭৯ টেস্ট ও ৯২টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। টেস্টগুলো থেকে ৪৪০৯ রান ও ওডিআই থেকে ২০৯৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে দলের সাথে পাকিস্তান গমন করেন। ২৩ ডিসেম্বর, ১৯৭৭ তারিখে শাহীওয়ালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সূচনা ঘটান।

১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে জিওফ বয়কটের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। ১৮ জানুয়ারি, ১৯৭৮ তারিখে করাচীতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে তাঁর অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। ৫ ও ৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ফিল এডমন্ডসের অসাধারণ বোলিংশৈলীর কল্যাণে সফরকারীরা খেলাটিকে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যেতে সমর্থ হয় ও তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।

১৯৮৩ সালে নিজ দেশে জিওফ হাওয়ার্থের নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ১১ আগস্ট, ১৯৮৩ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৫৯ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি ৮১ ও ১৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ডেভিড গাওয়ারের অসামান্য ব্যাটিংশৈলীর সুবাদে স্বাগতিকরা ১২৭ রানে জয় পেলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।

১৯৮৬ সালে নিজ দেশে কপিল দেবের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের মুখোমুখি হন। পুরো সিরিজে অসাধারণত্বের পরিচয় দেন। ৩ জুলাই, ১৯৮৬ তারিখে বার্মিংহামের এজবাস্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে সফররত ভারতের বিপক্ষে অংশ নেন। দূর্দান্ত ক্রীড়া নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। খেলায় তিনি ১৮৩* ও ২৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, বল হাতে নিয়ে ০/১০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর অসাধারণ ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন সত্ত্বেও খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হলে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নেয়। খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, এ সিরিজে ২৯৩ রান সংগ্রহ করে দিলীপ বেঙ্গসরকারের সাথে যৌথভাবে ম্যান অব দ্য সিরিজের পুরস্কার পান।

একই বছর নিজ দেশে জেরেমি কোনি’র নেতৃত্বাধীন কিউই দলের মুখোমুখি হন। ২১ আগস্ট, ১৯৮৬ তারিখে লন্ডনের ওভালে অনুষ্ঠিত সফররত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ১২১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, জন রাইটের অসাধারণ ব্যাটিংশৈলীর কল্যাণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে স্বাগতিকরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে নেয়।

১৯৮৭ সালে এমসিসি’র দ্বি-শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে লর্ডসে স্মারকসূচক একটি টেস্টের আয়োজন করা হয়। এমসিসি বনাম বিশ্ব একাদশের মধ্যকার খেলায় তিনি এমসিসি’র অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। টসে জয়লাভ করে এমসিসি দল মাঠে নামে। গ্রাহাম গুচের শতরানের পর তিনি পঞ্চম উইকেটে ক্লাইভ রাইসের সাথে ২০১ রানের জুটি গড়েন। প্রায় সোয়া পাঁচ ঘণ্টা ক্রিজে থেকে ২৬ চারের মারে ১৭৯ রানের ইনিংস উপহার দেন। কোর্টনি ওয়ালসের বল বোল্ড হবার পর ৪৫৫/৫ তুলে ইনিংস ঘোষণা করেন। চতুর্থ ইনিংসে বিশ্ব একাদশের ৩৫৩ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বৃষ্টির কারণে ড্রয়ে পরিণত হয়।

১৯৯৩ সালে অ্যাশেজ টেস্টে শেন ওয়ার্নের প্রথম বলে বিদেয় নিয়ে অগণিত ক্রিকেট বিশ্লেষকের কাছে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখেন। ঐ বলটি পরবর্তীকালে ‘শতাব্দীর সেরা বল’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ভারতের মাটিতে স্পিনারদের উপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন। ওডিআইয়ে রবি শাস্ত্রী’র এক ওভার থেকে চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে তৎকালীন বিশ্বরেকর্ডের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। এছাড়াও, চিপক টেস্টে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে দ্বি-শতক হাঁকান।

১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাশেজ সিরিজ শেষে বর্ণাঢ্যময় খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি টানেন। ঐ মৌসুমে মাইক অ্যাথার্টনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের অন্যতম সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া সফরে যান। ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৫ তারিখে পার্থে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্ট খেলেন। খেলায় তিনি প্রথম ইনিংসে গ্লেন ম্যাকগ্রা’র প্রথম বলেই শূন্য রানে বিদেয় নেন। এরপর, দ্বিতীয় ইনিংসে ক্রেগ ম্যাকডারমটের বলে বিদেয় নেয়ার পূর্বে ৮ রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। স্টিভ ওয়াহ’র অনবদ্য ব্যাটিং নৈপুণ্যে সফরকারীরা ৩২৯ রানে পরাজিত হলে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।

সব মিলিয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে ছত্রিশ হাজারের অধিক রান সংগ্রহ করেছিলেন। ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এছাড়াও, কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। ১৯৮৪ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননাপ্রাপ্ত হন। ১৯৮৭ সালে ওবিই উপাধিতে ভূষিত হন। ২০১৩ সালে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত। জেআই ডব্লিউ গ্যাটিং ও এএমবি গ্যাটিং নামীয় পুত্রদ্বয়ের জনক।

Similar Posts

  • | |

    ডগলাস জার্ডিন

    ২৩ অক্টোবর, ১৯০০ তারিখে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মালাবার হিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ ডানহাতে ব্যাটিং কর্মে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিং করতে পারতেন। ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা অধিনায়ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন ও নিজের সময়কালে শীর্ষস্থানীয় শৌখিন ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি পান। ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ বিতর্কের মূল হোতা হিসেবে ক্রিকেটের খলনায়ক হিসেবে বৈশ্বিকভাবে পরিগণিত হয়ে আসছেন। শারীরিক…

  • | |

    স্কচ টেলর

    ২৫ জুলাই, ১৯২৫ তারিখে ট্রান্সভালের জোহানেসবার্গে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, লেগ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ১৯৫০-এর দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। এরপর, উইওয়াটারস্রান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে খনিবিষয়ক ডিগ্রীধারী হন। ইনিংস উদ্বোধনে নির্ভরযোগ্যতার পরিচয় দিতেন। ১৯৪৯-৫০ মৌসুম থেকে ১৯৬০-৬১ মৌসুম…

  • |

    রয় মিলার

    ২৪ ডিসেম্বর, ১৯২৪ তারিখে জ্যামাইকার কিংস্টনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ে নামতেন। এছাড়াও, ডানহাতে কার্যকর ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতে পারতেন। ১৯৫০-এর দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে জ্যামাইকার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৫০-৫১ মৌসুম থেকে ১৯৫৩-৫৪ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। সংক্ষিপ্ত…

  • | |

    মন্টি নোবেল

    ২৮ জানুয়ারি, ১৮৭৩ তারিখে নিউ সাউথ ওয়েলসের ডিক্সন স্ট্রিট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে মিডিয়াম কিংবা ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিং করতেন। অস্ট্রেলিয়া দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। যোসেফ নোবেল ও মারিয়া দম্পতির অষ্টম ও কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন। ক্রাউন স্ট্রিট সুপারিয়র পাবলিক স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন। ‘মেরি অ্যান’, ‘আল্ফ’ কিংবা…

  • | |

    ডেনিস কম্পটন

    ২৩ মে, ১৯১৮ তারিখে মিডলসেক্সের হেনডন এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার ছিলেন। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে ব্যাটিং করতেন। এছাড়াও, বামহাতে রিস্ট স্পিন বোলিং করতেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন। উইকেটের সর্বত্র বিস্তৃত স্ট্রোকপ্লের কারণে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। ১৯৩৬ থেকে ১৯৬৪ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর…

  • | |

    অ্যালান ডসন

    ২৭ নভেম্বর, ১৯৬৯ তারিখে কেপ প্রভিন্সের কেপটাউনে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও প্রশাসক। মূলতঃ বোলার হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে মিডিয়াম-ফাস্ট বোলিং করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে নিচেরসারিতে কার্যকর ব্যাটিংশৈলী প্রদর্শন করতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯২-৯৩ মৌসুম থেকে ২০০৫-০৬ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রাখেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে কেপ কোবরাস…