২৩ মে, ১৯৬৬ তারিখে রোডেশিয়ার সলসবারিতে জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ও কোচ। মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ভূমিকা রেখেছিলেন। ডানহাতে মাঝারিসারিতে ব্যাটিং করতেন। পাশাপাশি ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন।
ক্রিকেটের অন্যতম অবমূল্যায়িত খেলোয়াড়ের পরিচিতি পান। ইংল্যান্ডের ঘরোয়া আসরের ক্রিকেটে রানের ফুলঝুড়ি ছোটান ও দৃশ্যতঃ ইংরেজদের আশার আলো দেখিয়েছিলেন। ঘরোয়া পর্যায়ের কাউন্টি ক্রিকেটে তারকা খেলোয়াড়ের মর্যাদাপ্রাপ্ত হলেও বড়দের আসরে নিজের প্রতিভাকে বিকশিত করতে বেশ হিমশিম খান। ‘হিকি’ কিংবা ‘অ্যাশ’ ডাকনামে ভূষিত গ্রায়েম হিক ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী। জিম্বাবুয়ের প্রিন্স এডওয়ার্ড বয়েজ হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন।
ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ওরচেস্টারশায়ার, নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্টস ও অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে কুইন্সল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব ও চণ্ডীগড় লায়ন্সের পক্ষে খেলেছেন। ১৯৮৩-৮৪ মৌসুম থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরের সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রেখেছেন। ৫২.৪৩ গড়ে ৪১১১২ রান তুলেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিন নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নামতেন।
১৯৯১ থেকে ২০০১ সময়কালে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বমোট ৬৫ টেস্ট ও ১২০টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছেন। ১৯৯১ সালে নিজ দেশে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বাধীন ক্যারিবীয় দলের মুখোমুখি হন। ২৩ মে, ১৯৯১ তারিখে বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআইয়ে অংশ নেয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশ করেন। একই সফরের ৬ জুন, ১৯৯১ তারিখে লিডসের হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। মার্ক রামপ্রকাশ ও স্টিভ ওয়াটকিনের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। তবে, মোটেই সুবিধে করতে পারেননি। উভয় ইনিংস থেকে ছয় রান করে পেয়েছেন। পাশাপাশি, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। দলীয় অধিনায়ক গ্রাহাম গুচের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় স্বাগতিকরা পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
১৯৯১-৯২ মৌসুমে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে গ্রাহাম গুচের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৮ জানুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ৩৫ রান সংগ্রহসহ দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। এছাড়াও, উভয় ইনিংসে ০/১১ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, ফিল টাফনেলের অসাধারণ বোলিং সাফল্যে ঐ টেস্টে স্বাগতিকরা ইনিংস ও ৪ রানে পরাজয়বরণ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে পিছিয়ে পড়ে।
একই সফরের ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ তারিখে ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। কয়েকটি ব্যক্তিগত সফলতার সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ৪৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে পূর্বেকার সর্বোচ্চ রানের সমকক্ষ হন। খেলায় তিনি ৪৩ ও ২২ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে আরটি ল্যাথামকে বিদেয় করে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তাঁর পূর্বেকার সেরা ছিল ২/৭৭। খেলায় তিনি ৪/১২৬ লাভ করেন। অ্যালেক স্টুয়ার্টের অনবদ্য ব্যাটিংশৈলীর সুবাদে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ২-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়।
২০ আগস্ট, ১৯৯২ তারিখে ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত সফররত পাকিস্তানের বিপক্ষে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের ওডিআইয়ে তৎকালীন সর্বোচ্চ ৩৬৩/৭ সংগ্রহকালীন তিনি ৩৪ বল মোকাবেলায় ৫০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ খেলায় তাঁর দল ১৯৮ রানে জয় পায়।
১৯৯৫-৯৬ মৌসুমে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট খেলেন। ঐ মৌসুমে মাইক অ্যাথার্টনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। ১৬ নভেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে সেঞ্চুরিয়নে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলার একমাত্র ইনিংসে তিনি ১৪১ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তন্মধ্যে, তৃতীয় উইকেটে দলনায়কের সাথে ১৪২ রানের জুটি গড়েছিলেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত ও মন্দালোকের কবলে পড়া খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে ডারবানে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টে অংশ নেন। ব্যক্তিগত সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। প্রথম ইনিংসে ১৩ রানে পৌঁছানোকালে টেস্টে ২৫০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ৩১* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দীকরণে অগ্রসর হন। এছাড়াও, ০/৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, বৃষ্টিবিঘ্নিত ও মন্দালোকের কারণে খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ায়।
এরপর, ২৬ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে পোর্ট এলিজাবেথে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অংশ নেন। ঘটনাবহুল এ টেস্টের খেলার দ্বিতীয় দিন স্বাগতিক দলের সংগ্রহ ৩৭৬ রানে থাকাকালে ডেভ রিচার্ডসনের ক্যাচ তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন। খেলায় তিনি ৬২ ও ১১* রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেন। এছাড়াও, ০/৩২ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। তবে, গ্যারি কার্স্টেনের অসাধারণ ব্যাটিং বদান্যতায় খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে পাঁচ-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি ফলাফলবিহীন অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
১৯৯৮ সালে নিজ দেশে অর্জুনা রানাতুঙ্গা’র নেতৃত্বাধীন শ্রীলঙ্কান দলের মুখোমুখি হন। ২৭ আগস্ট, ১৯৯৮ তারিখে ওভালে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অংশ নেন। ১০৭ ও ০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। তবে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের অসাধারণ অল-রাউন্ড ক্রীড়া নৈপুণ্যে স্বাগতিকরা ১০ উইকেটে পরাজয়বরণ করে।
২০০০-০১ মৌসুমে নাসের হুসাইনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দলের সদস্যরূপে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ৭ মার্চ, ২০০১ তারিখে ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ০ ও ১৬ রান সংগ্রহসহ তিনটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। তবে, ড্যারেন গফের অসাধারণ বোলিংয়ের কল্যাণে স্বাগতিকরা ৩ উইকেটে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
গ্রাহাম গুচ ও শচীন তেন্ডুলকরের পর লিস্ট-এ ক্রিকেটে তিনজন খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে বিশ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে পঁচিশজন খেলোয়াড়ের অন্যতম হিসেবে ১০০টি শতরান করার কৃতিত্বের অধিকারী। ১৩৬টি শতক হাঁকিয়ে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছেন। তন্মধ্যে, মাত্র ছয়টি টেস্ট শতরান করেছিলেন।
২০০৮ মৌসুম শেষে কাউন্টি ক্রিকেটকে বিদেয় জানান। এরপর তিনি ২০০৮ সালের শীতকালে অনুমোদনহীন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে চণ্ডীগড় লায়ন্সের পক্ষে খেলেন। ক্রমাগত পিঠের আঘাতের কারণে ক্রিকেট জগৎ থেকে অবসর গ্রহণ করতে বাধ্য হন।
ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর কোচিং জগতের দিকে ধাবিত হন। ২০০৯ সালে ওবিই উপাধিতে ভূষিত হন। জানুয়ারি, ২০১৪ সালে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এক্সিলেন্স সেন্টারের হাই-পারফরম্যান্স কোচ হিসেবে মনোনীত হন। এরপর, ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া দলের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন।
