২৬ জুলাই, ১৮৭১ তারিখে হ্যাম্পশায়ারের বাসেট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ক্রিকেটার ছিলেন। মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতেন। ১৮৯০-এর দশকে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছিলেন।
মার্লবোরা কলেজে অধ্যয়ন শেষে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো করেন। পেশাদার ব্যাংকার ছিলেন ও প্রায় সকল ধরনের খেলাধূলায় সিদ্ধ হস্তের পরিচয় দিয়েছেন। দীর্ঘদেহী ও ধ্রুপদীশৈলীর অধিকারী ব্যাটসম্যান ছিলেন। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও সহজাত ভঙ্গীমায় খেলায় অংশ নিতেন। কার্যকর ফাস্ট বোলিং করতেন ও পরবর্তীতে লব বোলিংয়ের দিকে অগ্রসর হন। এছাড়াও, বিশ্বস্ত ফিল্ডার হিসেবেও সুনাম কুড়ান। সচরাচর, শর্ট স্লিপ অঞ্চলে দণ্ডায়মান থাকতেন।
ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে হ্যাম্পশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এছাড়াও, মার্লবোরা কলেজ, উইল্টশায়ার ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে খেলেছেন। ১৮৯০ থেকে ১৯২১ সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন।
১৮৮৭ সালে ষোল বছর পূর্ণ হবার একদিন পর লর্ডসে খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম অংশ নেন। মার্লবোরা একাদশের পক্ষে তিন মৌসুম খেলেন। এ সময়ে তিনি ১৮৮৮ সালে উইল্টশায়ারে চলে যান। এরপর কেমব্রিজে চলে যাবার পর ১৮৯০ থেকে ১৮৯৩ সাল পর্যন্ত চারবার অক্সফোর্ডের পক্ষে খেলেন। তন্মধ্যে, মে, ১৮৯১ সালে ইউনিভার্সিটির সদস্যরূপে নেক্সট সিক্সটিনের বিপক্ষে হ্যাট্রিক করেন। পরের বছর লর্ড হকের দলের সদস্যরূপে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির বিপক্ষেও এ সফলতার স্বাক্ষর রাখেন।
১৮৯৮ সালে ওভালে কাউন্টির সদস্যরূপে সারের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৯৯ রান তুলেন। ১৯০৪ সালে ওরচেস্টারে হ্যাম্পশায়ার হিলের সদস্যরূপে অপরাজিত ৯৮ ও ১১৭ রান এবং ১৯০৫ সালে সাউদাম্পটনে হ্যাম্পশায়ার-সমারসেটের মধ্যকার খেলায় ১২৪ ও ১১৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে মেজর ই. জি. ওয়েনিয়ার্ডের সাথে ১৫০ রানের স্মরণীয় জুটি গড়েন। তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ভাঙ্গা বৃদ্ধাঙ্গুলে এবং ওয়েনিয়ার্ড কেবলমাত্র এক হাতে খেলেন। দুই ঘণ্টা ক্রিজে অবস্থান করে একটি ছক্কা, একটি পাঁচ ও বাইশটি চারের মার মারেন। তিনি যখন ৮০ রানে ছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গী ৭ রান তুলেছিলেন। অধিকন্তু, মেজর ওয়েনিয়ার্ড তাঁর প্রথম দুই রানের জন্যে ঘণ্টাধিক সময় ব্যয় করেছিলেন।
১৮৯৬ সালে ইংল্যান্ডের পক্ষে তিনটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৮৯৫-৯৬ মৌসুমে লর্ড হকের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সদস্যরূপে দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৬ তারিখে পোর্ট এলিজাবেথের জিকিবার্হায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। হ্যারি বাট, অডলি মিলার, সি. বি. ফ্রাই, চার্লস রাইট, হিউ ব্রোমলি-ডেভেনপোর্ট, লর্ড হক ও টম হেওয়ার্ডের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। খেলায় তিনি ব্যাট হাতে নিয়ে ২৫ ও ৩৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ খেলায় তাঁর দল ২৮৮ রানে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়। স্মর্তব্য যে, ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে নিউজিল্যান্ড দলের সর্বনিম্ন ২৬ রান সংগ্রহের পূর্ব-পর্যন্ত দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা দল ৯৪ বলে মাত্র ৩০ রান সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে।
এরপর, ২ মার্চ, ১৮৯৬ তারিখে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে খেলেন। পরবর্তীতে খেলাটি টেস্টের মর্যাদা পায়। ব্যক্তিগত সাফল্যের সন্ধান পান। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৩৭ রান অতিক্রম করেন। খেলায় তিনি একবার ব্যাটিংয়ে নেমে ৬৫ রান সংগ্রহসহ একটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ইনিংস ও ১৯৭ রানে জয়লাভ করলে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২১ মার্চ, ১৮৯৬ তারিখে কেপটাউনে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। বেশ কয়েকবার ব্যক্তিগত সাফল্যের ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৬৫ রান অতিক্রম করেন। এ পর্যায়ে টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতক হাঁকান। খেলায় তিনি দলের একমাত্র ইনিংসে ব্যাট হাতে নিয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১২৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত সেরা বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। বল হাতে নিয়ে বোলিং ৪/৮ বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলায় তাঁর দল ইনিংস ও ৩৩ রানে জয়লাভ করলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজে বিজয়ী হয়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
এছাড়াও, লর্ড হকের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের সাথে থেকে ১৮৯২-৯৩ মৌসুমে ভারত উপমহাদেশ, ১৮৯৪ সালে আমেরিকা ও ১৯১১-১২ মৌসুমে আর্জেন্টিনা গমন করেন। সব মিলিয়ে ত্রিশ বছরব্যাপী তাঁর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। এমনকি শেষ খেলায় স্বীয় সন্তানের সাথে হ্যাম্পশায়ার দলে একত্রে খেলেন। ক্রিকেটের পাশাপাশি রাগবি ইউনিয়ন ও হকি খেলায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। উভয় স্তরের খেলায় হ্যাম্পশায়ারের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও, র্যাকেট ও মুষ্টিযুদ্ধে বেশ সফল ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। এইএল হিল নামীয় সন্তানের জনক। ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৫০ তারিখে হ্যাম্পশায়ারের স্পার্সহল্ট হাউজ এলাকায় ৭৯ বছর ৪২ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
