১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৮ তারিখে হকস বে’র ফার্নহিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ক্রিকেটার ও প্রশাসক ছিলেন। মূলতঃ উইকেট-রক্ষকের দায়িত্ব পালন করতেন। পাশাপাশি, ডানহাতে ব্যাটিংয়ে পারদর্শী ছিলেন ও ডানহাতে স্লো-মিডিয়াম বোলিং করতেন। ১৯৩০-এর দশকে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও, নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন।
নিউজিল্যান্ড দলের টেস্ট ক্রিকেটের সূচনালগ্নে অন্যতম ভূমিকা রাখেন। উইকেট-রক্ষণের দায়িত্বে থেকে পরবর্তীতে অপ্রত্যাশিতভাবে বিকাশমান অধিনায়কের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের অধিকারী হিসেবে দলের জয়ের দিকে দৃষ্টিনিবদ্ধ ঘটাতেন। একদা তাঁকে ‘আনুগত্যের চেয়ে অধিক আদেশদানকারী’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছিল। অসাধারণ অধিনায়ক হিসেবে জয়ের দিকেই তিনি অধিক দৃষ্টিপাত করতেন। ড্রয়ের দিকে নজর দিতেন না। সেজন্যে শৃঙ্খলা আনয়ণের পাশাপাশি সময়ের যাতে অপচয় না হয় সেদিকে মনোনিবেশ ঘটাতেন। বেশ শক্তিমত্তার অধিকারী ক্রিকেটার হিসেবে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতেন, সর্বদাই দলের সঙ্কটময় মুহূর্তে নিজের সেরা খেলা প্রদর্শনে সোচ্চার হতেন, উইকেটের কাছাকাছি এলাকায় ফিল্ডিং করতেন। প্রয়োজনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাসুলভ উইকেট-রক্ষকের ভূমিকা পালন করতেন ও কার্যকর ধীরগতির বোলার হিসেবে বলকে শূন্যে ভাসিয়ে বোলিং করতেও পিছু হটতেন না।
১৯১৯ থেকে ১৯৩২-৩৩ মৌসুম পর্যন্ত সময়কালে প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন অতিবাহিত করেছেন। ঘরোয়া আসরের প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে অকল্যান্ড ও ওয়েলিংটন এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সমারসেটের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২৩ বছর বয়সে ইংল্যান্ডে চলে যান। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও সমারসেটের পক্ষে ক্রিকেট খেলায় অংশ নিতেন। পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০ বছরের অধিক খেলোয়াড়ী জীবনে ৩১ ঊর্ধ্ব গড়ে ১৮টি প্রথম-শ্রেণীর শতক হাঁকান।
শিক্ষা জীবনের শেষেরদিকে কেবলমাত্র সমারসেটের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছিলেন। ক্রাইস্টস কলেজে অধ্যয়ন করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে রয়্যাল ফ্লাইং কোরে যুক্ত হন। ১৯২১ সালে কেমব্রিজে চলে যান। প্রথম বর্ষের খেলায় ১৮৩ রান তুলেন। ঐ বছরসহ পরবর্তী বছর ব্লু লাভ করতে পারেননি। তবে, উভয় মৌসুমেই সমারসেটের পক্ষে দূর্দান্ত খেলেছিলেন। ১৯২১ সালের কেমব্রিজ ক্রিকেট দলটি খুবই শক্তিধর ছিল; নতুবা, তাঁকে দলের বাইরে রাখা বেশ অসম্ভব ছিল।
১৯২২ সালে ম্যাকলারিনের দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড গমন করেন। ১৯২৩ সালে প্রথম খেলায় ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে দুই ঘণ্টা পঞ্চাশ মিনিটে ১৬১ রানের মনোরম ইনিংস উপহার দেন। এরফলে, কেমব্রিজ দলে তাঁর ঠাঁই হয়। বিশ্ববিদ্যালয় দলের পক্ষে সহস্রাধিক রান তুলেন ও লর্ডসে জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে খেলেন। ১৯২৪ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনায়কের দায়িত্ব পালনের পর নিউজিল্যান্ডে ফিরে যান। তবে, ১৯২৭ ও ১৯৩১ সালে ইংল্যান্ড অভিমুখে নিউজিল্যান্ড দলের প্রথম দুই সফরে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৩০ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সাতটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। ১৯২৯-৩০ মৌসুমে নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের ইতিহাসের উদ্বোধনী টেস্টে নেতৃত্ব দেন। ঐ মৌসুমে নিজ দেশে হ্যারল্ড জিলিগানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দলের মুখোমুখি হন। ১০ জানুয়ারি, ১৯৩০ তারিখে ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত সফররত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। স্মর্তব্য যে, এটিই নিউজিল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম খেলা ছিল। অ্যাল্বি রবার্টস, স্টুই ডেম্পস্টার, টেড ব্যাডকক, জর্জ ডিকিনসন, হেনরি ফোলি, ম্যাট হেন্ডারসন, কার্লি পেজ, রজার ব্লান্ট ও বিল মেরিটের সাথে তাঁর একযোগে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে খেলায় তিনি ০ ও ৪০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। সফরকারীরা ৮ উইকেটে জয় পেলে চার-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে এগিয়ে যায়।
একই সফরের ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩০ তারিখে অকল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সিরিজের চতুর্থ ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যক্তিগত সফলতার ছাঁপ রাখেন। প্রথম ইনিংসে ব্যক্তিগত পূর্বতন সর্বোচ্চ ৪০ রান অতিক্রম করেন। দলের একমাত্র ইনিংসে তিনি ৮০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, ০/০ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করান। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজে জয়লাভ করে।
১৯৩১ সালে নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড গমন করেন। এটিই নিউজিল্যান্ড দলের প্রথম বিদেশ সফর ছিল। ২৭ জুন, ১৯৩১ তারিখে লর্ডসে অনুষ্ঠিত স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে অংশ নেন। খেলায় তিনি ১ ও ৩৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন। এছাড়াও, দুইটি ক্যাচ তালুবন্দী করেছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে তিন-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজটি অমিমাংসিত অবস্থায় অগ্রসর হতে থাকে।
একই সফরের ১৫ আগস্ট, ১৯৩১ তারিখে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টে অংশ নেন। বৃষ্টিবিঘ্নিত ঐ টেস্টটি শেষদিনের শেষ বিকেলে শুরু হয়েছিল। অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ০/৫ বোলিং বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়েছিলেন। খেলাটি ড্রয়ের দিকে গড়ালে সফরকারীরা ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়। পরবর্তীতে, এটিই তাঁর সর্বশেষ টেস্টে পরিণত হয়।
সব মিলিয়ে টেস্টগুলো থেকে ২৭.৮৭ গড়ে রান সংগ্রহ করেছেন। ১৯২৭ ও ১৯৩১ সালের ইংল্যান্ড সফরে ব্যাট হাতে দলের অন্যতম বিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়েছেন।
১৯৩৭ সালে ইংল্যান্ড সফরে নিউজিল্যান্ড দলের ব্যবস্থাপকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তবে, দলের প্রয়োজনে মাঠে নেমেছেন। নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে ১০৫ মিনিটে ১২১ রানের ইনিংস খেলে দলে স্থান লাভে স্বীয় সক্ষমতা তুলে ধরেন। জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যসহ জীবনের শেষদিকে ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সময়কালে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি হন। ১৯৯৬ সালে নিউজিল্যান্ড স্পোর্টস হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন। তাঁর এক বোন আর. এইচ. বেটিংটন ও অপর বোন এ. পি. এফ. চ্যাপম্যানের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। জুন, ১৯৩৩ সালে হ্যাস্টিংসে মার্গারেট (মার্গট) নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির দুই পুত্র ও দুই কন্যা ছিল। ২০ জুলাই, ১৯৭৬ তারিখে হ্যাস্টিংসের ওকাওয়া এলাকায় ৭৮ বছর ১৫৪ দিন বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে।
